তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_৬

0
2644

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৬

আধুনিক্তা তার অতীতের বক্স খুলে বসেছে। তার ন্যাশনাল এওয়ার্ড, মেডেল, ছবি, ব্যাচ, টি-শার্ট সাজানো রয়েছে খাটে। টি-শার্টটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে রইলো। টি-শার্টের পেছনে লিখা “A. Majumdar- Team Tigresses”। আধুনিক্তা নামের উপর হাত বুলিয়ে কেঁদে উঠলো। টি-শার্টটা জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ আসলো। আধুনিক্তা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে বাবা দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটি মগ নিয়ে। তারা চোখের পানি মুছে সবকিছু গুছাতে লাগলো। বাবা কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে এগিয়ে গেল। আধুনিক্তার পাশে বসে জিনিসগুলোর দিকে তাকালো। আধুনিক্তার হাত কাঁপছে। বাবা মগটা ড্রেসিংটেবিলের উপর রেখে আধুনিক্তার হাত ধরলো। আধুনিক্তা থেমে গেল। গলা ধরে আসছে তার আবার।
“যখন কাঁদতে ইচ্ছে করবে কাওকে দেখে থামবে না। কান্না করলে মন হালকা হয়। তুমি কখনো মন খুলে কাঁদো না তাই তো কষ্ট বুকে জমে আছে।”
আধুনিক্তা আবার কেঁদে উঠলো। বাবা আধুনিক্তাকে টেনে আলতো করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। আধুনিক্তা হাউমাউ করে কাঁদছে। বাবারও কান্না আসছে কিন্তু এখন যদি উনিও কান্না করে মেয়ে আরো ভেঙে পরবে।
“আব্বু আমার সাথেই এমন কেন হলো? আমি তো কারো ক্ষতি করি নি।”
বাবা কিছু বললো না। উনার কাছে এই প্রশ্নের উত্তর নেই। আধুনিক্তা বাবার দিকে তাকিয়ে বললো-
“তিন মাস পর ন্যাশনাল ম্যাচ। গত তিন বছর ধরে আমি খেলছি না। এই তিন বছরে একবারো আমাদের ভার্সিটি জিতে নি।”
“জানো টিম রাইডারস কেন বার বার জিতে যায়? কারণ তুমি এখন টিম টাইগ্রিসেস এ নেই। তুমি একমাত্র খেলোয়াড় ছিলে যে এক বছরে ৭ বার মেডেল জিতেছিলে। যখন তুমি খেলতে সবাই শুধু তোমার দিকে ফোকাস করতো। ভুলেই যেত যে তারা খেলতে এসেছে৷ সবাই শুধু ভয় পেত যদি তুমি তাদের কাছ থেকে বল ছিনে নাও। এখন তুমি নেই সবার রাস্তা ক্লিয়ার।”
“আমি কী আবার খেলতে পারি না আব্বু?”
“আমি তো চাই আমার মেয়ে তার স্বপ্নের পথে আবার হাটুক। কিন্তু আমার ভয় করছে যদি তোমার কিছু হয়ে যায়। আমি কখনো সহ্য করতে পারবো না মা।”
“আব্বু একবার চেষ্টা করে দেখি প্লিজ।”
“ডাক্তার কী বলেছিলো মনে নেই? যদি তুমি বাস্কেটবল খেলো তোমার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তোমার দৌড়াদৌড়ি করা নিষেধ।”
আধুনিক্তা সোজা হয়ে বসে মাথা নিচু করে রাখলো। প্রচুর রাগ হচ্ছে তার। চোখের সামনে সেই মেয়েটার চেহারা ভাসছে। বাবা আধুনিক্তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো-
“রাগ করো না মা আমরা তোমার ভালোর জন্যই এমন করছি।”
“ছাড়বো না আমি তাকে। এত বছর চুপ ছিলাম কিন্তু আর না।”
“কার কথা বলছো?”
“আলিয়া, এইবারের ন্যাশনাল এওয়ার্ড কম্পিটিশনে ওরা হারবে।”
“আধুনিক্তা, আমরা তোমাকে খেলতে দিব না।”
আধুনিক্তা চুপচাপ বসে রইলো। তার চোখ মুখ দেখেই বাবা বুঝতে পারছে আধুনিক্তা কোনো অঘটন ঘটাবে। আপাতত মেয়ের মাথা গরম আছে তাই কিছু না বলাই শ্রেয়। ড্রেসিংটেবিল থেকে মগ নিয়ে আধুনিক্তার দিকে দিয়ে বললো-
“এখন এই গ্রিন টি পান করে নাও। তোমার নাকি ওজন বেড়ে যাচ্ছে তোমার আম্মু বললো।”
আধুনিক্তা বাবার দিকে তাকিয়ে বললো-
“হ্যাঁ আমার ৩ কেজি বেড়ে গিয়েছে। দাও দাও খেয়ে নেই।”
বাবা হাসলো। কোথায় গেল আধুনিক্তার রাগ? ওজনের কথা শুনলেই মেয়ে ভয় পেয়ে যায়। আধুনিক্তা তার জিনিস গুছাতে গুছাতে চায়ে চুমুক বসালো। বাবা হেসে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

পরেরদিন……
মাশরাত একপাশে দাঁড়িয়ে সবার প্র্যাকটিস দেখছে। শুনেছে এই ভার্সিটির ফিমেল টিম নাকি মাত্র দু’বার ন্যাশনাল এওয়ার্ড জিতেছে। কিন্তু অন্যান্য ভার্সিটির ফিমেল টিম ৪ বারের বেশী এওয়ার্ড জিতেছে। তাই তো সবাই মন দিয়ে প্র্যাকটিস করছে যাতে এইবার জিততে পারে। আধুনিক্তা মাশরাতের দাঁড়িয়ে বললো-
“স্যার একটা কথা বলি?”
মাশরাত চমকে উঠলো। পাশে তাকিয়ে দেখে আধুনিক্তা দাঁড়িয়ে আছে। পরণে টাওজার আর টি-শার্ট। মাশরাত আধুনিক্তাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে লম্বা নিশ্বাস ফেললো। হঠাৎ শব্দ শুনলে সে প্রায়ই চমকে যায়।
“বলো”
“আমি এইবার ন্যাশনাল কম্পিটিশনে খেলতে চাই।”
“সম্ভব না”
“সম্ভব, যদি আপনি আমাকে ট্রেইনিং দিতে রাজি হন।”
“আমি যেহেতু জানি তুমি অসুস্থ তোমার খেলা বারণ তাই আমি তোমাকে খেলতে দিতে পারবো না।”
“স্যার প্লিজ ইটস এ রিকুয়েষ্ট।”
“আমি তোমার মৃত্যুর কারণ হতে চাই না।”
“আমার মৃত্যু হবে না। আমার আত্মবিশ্বাস আছে।”
“নিশ্বাসের উপর তোমার আত্মবিশ্বাস আছে? হাসালে মিস আধুনিক্তা।”
“আপনি কি চান আমি প্রমাণ করি খেলতে পারবো কী না।”
“দরকার…”
মাশরাত তার পুরো কথা শেষ করতে পারলো না। আধুনিক্তা তুফানের গতিতে দৌড়ে গেলো। মাশরাত কিছু বলার সুযোগও পেলো না। সে অবাক হয়ে আধুনিক্তার দিকে তাকালো। মেহরিন বল বাউন্স করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ কেও এসে তার হাত থেকে বল নিয়ে চলে গেল। মেহরিন থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। আধুনিক্তা দৌড়ে গিয়ে বল বাস্কেটে ফেলে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আধুনিক্তার দিকে। সবচেয়ে বেশী অবাক হলো আধুনিক্তা নিজেই। কারণ দৌড়ানোর পরও তার খারাপ লাগছে না। বুক ব্যাথাও করছে না। শুধু একটু ক্লান্তি অনুভব হচ্ছে। হয় তো অনেকদিন খেলে নি তাই। হঠাৎ তালি বাজানোর শব্দ আসলো। সবাই পেছনে ফিরে দেখে মাশরাত তালি বাজাচ্ছে। এখন সবাই তালি বাজানো শুরু করলো। মেহরিন তো দৌড়ে এসে আধুনিক্তাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। সবাই ঘিরে ধরলো আধুনিক্তাকে। আধুনিক্তা সবার মুখে প্রশংসা শুনে ইমোশনাল হয়ে গেল। আড়ালে চোখ মুছে হাসলো। মাশরাত এগিয়ে এসে হাত আড়াআড়ি করে ভাজ করে মুচকি হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আধুনিক্তা এগিয়ে গেলো মাশরাতের দিকে৷ মাশরাতের বরাবর দাঁড়িয়ে বললো-
“এখন বলুন আপনার কী মনে হয়।”
“তুমি খুব ভালো খেলোয়াড়। কিন্তু তোমার পরিবারের পারমিশন না নেওয়ার পর্যন্ত আমি রাজি হবো না।”
“ঠিক আছে, কিন্তু আমার ছোট্ট একটা সাহায্য লাগবে।”
“কী সাহায্য?”
“আমার সাথে আমার বাসায় চলুন। আমার দাদাই আর বাবাকে মানাতে পারলেই হবে।”
“হুম আর তোমার দাদাই আর বাবা আমাকে মেরে তাড়িয়ে দিক তাই তো?”
“আমার দাদাই বাবা আপনাকে কিছু বলবে না। তারা অনেক ভালো। প্রথম রাজি না হলেও পরে রাজি হতে পারে।”
“চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু উনারা রাজি না হলে আমি তোমাকে খেলতে দিবো না। কারণ তোমার প্রাণ বেশী জরুরি। পরে জোর করতে পারবে না, রাজি তুমি?”
“আমি রাজি।”

আধুনিক্তা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মাশরাতের দিকে। মাশরাত এমন ভাব ধরে আছে যেন কিছুই হয় নি। আধুনিক্তা বললো-
“আমাকে আগে বলেন নি কেন আপনার গাড়িতে উঠলে বমি হয়?”
“বলা জরুরি?”
“তো আর কী? বাসায় পৌঁছাতে আর মাত্র ৫ মিনিট দেরি হলেই আমার গাড়ি নষ্ট করে দিতেন আপনি।”
“করে দিতাম, করি নি। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি।”
“স্যার আপনি আগে বলতেন। আমরা অন্য কোনো ভাবে আসতাম। এট লিস্ট আপনার কষ্ট হতো না। দেখুন আপনার চোখ লাল হয়ে গিয়েছে।”
মাশরাত থতমত খেয়ে গেলো। আধুনিক্তা তার চিন্তা করছে? আধুনিক্তা আবার বললো-
“আচ্ছা স্যার বাসার ভেতরে চলুন। হাত মুখ ধুয়ে নিলে আপনার ভালো লাগবে।”
“চলো তো ভেতরে তুমি অনেক কথা বলো।”
আধুনিক্তা ভেংচি কাটলো। দুজনই হাঁটা ধরলো। পার্কিং প্লেস ছেড়ে মেইন খুলে ভেতরে যেতেই মাশরাত দাঁড়িয়ে গেলো। এইটা আধুনিক্তার বাড়ি নাকি পুরো এলাকা? আধুনিক্তা মাশরাতকে পাশে না পেয়ে পেছনে ফিরে দেখে মাশরাত দাঁড়িয়ে আছে। তার ভ্রু কুঁচকানো দৃষ্টি বাড়ির দিকে। আধুনিক্তা বললো-
“স্যার এনি প্রবলেম?”
“আই থিংক আমার চলে যাওয়া উচিত।”
“কিন্তু কেন স্যার? আমরা তো কথা বলতে এসেছি।”
“তোমার দাদাই আর বাবাকে বলো বাহিরে আসতে আমি ভেতরে যাবো না।”
আধুনিক্তা বিষয়টা বুঝতে পারলো। দ্রুত এগিয়ে এসে মাশরাতের হাত ধরে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেলো। মাশরাত কী বলবে কী করবে কিছুই বুঝতে পারলো না। আধুনিক্তা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল বাজালো। মাশরাত ডান বাম দেখে বললো-
“আধুনিক্তা, আমার যাওয়া উচিত। আমি না হয় চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে উনার কনফারেন্স ক্লাবে গিয়ে কথা বলে নিবো।”
“আর আমার আব্বু? আমার আম্মু আর দাদীও তো আছে।”
“কোথায় ফাসালে তুমি আমাকে।”
“আমার কিছু করার নেই আপনি রাজি হয়েছেন কেন?”
“তোমাকে তো আমি…”
“আমাকে মেরে ফেলার সাহস নেই আপনার।”
মাশরাত ধ্যাত বলে দাঁড়িয়ে রইলো। তখনই কেও এসে দরজা খুললো। আধুনিক্তা হেসে দাদী বলে জড়িয়ে ধরলো। মাশরাত কেমন রিয়্যাকশন দিবে বুঝতে পারছে না। দুজন দুজনকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যেন অনেক বছর পর দেখা হলো। অথচ তারা এক বাসায় বসবাস করে। আধুনিক্তা দাদীকে ছেড়ে বললো-
“দাদী উনার নাম মাশরাত। আমাদের ভার্সিটির বাস্কেটবল ট্রেইনার।”
“আসসালামু আলাইকুম দাদী..মা..মানে স্যার ধ্যাত কী বলি? ম্যাম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, এত ভ্যাবাচ্যাকা খেলে চলে? তুমি তো খুব ছোট আমাকে দাদীই ডাকো।”
আধুনিক্তা দুষ্টুমি ভঙ্গিতে বললো-
“কী বলো দাদী? উনি ছোট? উনার ৩০ বছর চলছে। তোমার ছোট ভাইয়ের মতো।”
মাশরাত বিরক্ত হলো। তার বয়স নিয়ে কেন ছিনিমিনি করছে আধুনিক্তা? দাদী আধুনিক্তার কান ধরে টেনে বললো-
“দুষ্টুমি শুধু রগে রগে ঘুরে তাই না। তুমি কিছু মনে করো না মাশরাত।”
“না কিছু মনে করি নি।”
“আসো তোমরা ভেতরে।”
দাদী সরে দাঁড়াতেই আধুনিক্তা ও মাশরাত ভেতরে এগিয়ে গেল। দুজনের পা একসাথে ভেতরে প্রবেশ করলো। আধুনিক্তা মাশরাতকে সোফায় বসতে বলে দৌড়ে তার ঘরে চলে গেল। মাশরাতের বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। বাহিরে গিয়ে বাড়িটাকে যত বড়ো দেখা যায় ভেতর থেকে তার থেকেও বড়ো। আধুনিক্তার পরিবারের মানুষগুলো কেমন হবে কে জানে। আধুনিক্তা দাদাই দাদীকে বেশ ভালো লাগলো মাশরাতের। তখনই কেও একজন কাশি দিয়ে এগিয়ে আসলো। মাশরাত দেখে চেয়ারম্যান সাহেবকে। তারাতাড়ি দাঁড়িয়ে গেল।
“আসসালামু আলাইকুম চেয়ারম্যান সাহেব।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, বসুন।”
কাজের লোক এসে নাস্তা দিয়ে গেল। মাশরাতের অস্বস্তি আরো বেড়ে গেল এতকিছু দেখে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আধুনিক্তা আসলো। মাত্র গোসল করে এসেছে। চুল এখনো ভেজা। দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। মাশরাত চোখ ফিরিয়ে নিয়ে দাদাইর দিকে তাকালো।
“আধুনিক্তার বাবা তো অফিসে। আপনি চাইলে আমাকে বলতে পারেন।”
“আসলে চেয়্যারম্যান সাহেব.. আমি আজ এমন কিছু বলতে এসেছি যা শুনে আপনারা হয়তো খুব রাগ করবেন।”
দাদাই ভ্রু কুঁচকালো। ছেলেটাকে উনার নাতনিকে পছন্দ করে? বিয়ে প্রস্তাব দিতে এসেছে? এমনটা হলে তো সমস্যা। কারণ মাশরাতের ব্যাপারে দাদাই অনেক কিছুই জানে। ছেলে ভালো হলেও আর্থিক অবস্থা ভালো না।
“বলুন, আমরা ব্যাপারটা না বুঝার পর্যন্ত রাগ করবো না।”
আধুনিক্তার দাদী আর মাও আসলো। মাশরাত মাকে সালাম দিলো। সবার মনে নানান প্রশ্ন ঘুরছে। মাশরাত এমন কী বলতে চাচ্ছে। আধুনিক্তা বললো-
“স্যার আপনি বলবেন নাকি আমি বলবো?”
“আ..আমিই বলবো তুমি চুপ..চুপ করে বসো।”
“এইভাবে বসে থাকলে বছর পেরিয়ে যাবে।”
“এই বাঁচাল মেয়ে চুপচাপ বসতে বলেছি তোমাকে।”
“দেখলে দাদাই স্যার আমাকে বকছে।”
দাদাই ধমকের স্বরে বললো-
“তুমি চুপচাপ বসবে। উনি কথা বলতে এসেছেন উনাকে বলতে দাও।”
আধুনিক্তা চুপসে গেল। ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিল তার। মাশরাত একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বললো-
“চেয়ারম্যান সাহেব তিন মাস পর ন্যাশনাল কম্পিটিশন। সবাই বেশ মনোযোগ দিয়ে প্র্যাকটিস করছে। আমি গতকাল শুনলাম একজন মেয়ে নাকি আর খেলবে না।”
“হ্যাঁ সে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে আর আসবে না ভার্সিটি।”
“তার মানে একজন প্লেয়ার এখন কম আমাদের কাছে।”
“ভার্সিটিতে মেয়ের অভাব নেই। অনেকজন আছে যারা খেলার জন্য সুযোগ চাচ্ছে। আমি কালই ব্যবস্থা করছি।”
“কিন্তু স্যার যাকে নতুন সুযোগ দেওয়া হবে সে কী পারবে এই তিন মাসে ভালো প্লেয়ার হতে?”
দাদাই কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। মাশরাতের প্রশ্নটা বেশ গভীর। কারণ মাত্র তিন মাসে কেওই ভালো খেলোয়াড় হতে পারবে না। চেয়ারম্যান সাহেব বললো-
“এ ছাড়া তো কোনো উপায় নেই।”
“আছে, যদি আপনি রাজি থাকেন।”
“কী?”
মাশরাত আধুনিক্তার দিকে তাকালো। আধুনিক্তা বসে নখ কামড়াচ্ছে। দাদাই কিছুটা আভাস পেল। মাশরাত দাদাইর দিকে তাকিয়ে বললো-
“একমাত্র আধুনিক্তাই পারবে এই খেলায় অংশগ্রহণ করতে।”
দাদাই শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মাশরাতের দিকে। মা হঠাৎ বলে উঠলো-
“অসম্ভব, আমরা রাজি হবো না।”
“কিন্তু ম্যাম..”
“তুমি হয় তো কিছু জানো না। আধুনিক্তার হার্টে…”
“আমি জানি ওর হার্টে সমস্যা আছে। কিন্তু ম্যাম ও যদি নিজের ইচ্ছায় খেলতে চায়। সবাই থাকে বাঁধা কেন দিচ্ছে। আপনারা হয় তো বিশ্বাস করবেন না আজ আধুনিক্তার বাস্কেটবল খেলেছে।”
দাদাই বললো-
“মিথ্যে বলছো তুমি। ও যদি বাস্কেটবল খেলতো এখন হসপিটালে থাকতো।”
“আমি সত্যি বলছি আপনি সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করতে পারেন।”
“দাদাই তারাতাড়ি দাঁড়িয়ে মোবাইল নিয়ে আসলো। ভার্সিটির প্রত্যেক ক্যামেরা উনার মোবাইলের সাথে জড়িত। বাস্কেটবল সেকশনের ক্যামেরার অন করে ৪০ মিনিট আগের রেকর্ডিং অন করলো। আধুনিক্তা সত্যি খেলেছে কেও বিশ্বাস করতে পারছে না। মা আধুনিক্তার দিকে দ্রুত হেটে গিয়ে বললো-
“তুমি ঠিক আছো তো? কষ্ট হচ্ছে না তো? হসপিটাল যাবে?”
আধুনিক্তা দাঁড়িয়ে মায়ের হাত ধরে বললো-
“মাই ডিয়ার মাদার। আমি একদম ঠিক আছি। আর বিশ্বাস করো আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না।”
“মিথ্যে বলো না মা। তুমি জানো না তোমার জীবন এখন কতটা রিস্কি।”
“আম্মু আমার নিজের উপর আত্মবিশ্বাস আছে। আমি জানি আমি খেললে কিছু হবে না। আমি সময়ের মতো ঔধষ খাচ্ছি বিশ্রাম নিচ্ছি। আমার কী হবে বলো। প্লিজ আম্মু রাজি হয়ে যাও আমি বাস্কেটবল খেলতে চাই।”
সবাই চুপ করে রইলো। দাদাই গভীর চিন্তায় ডুবে গিয়েছে। কিছু বলতে যাবে তখনই দরজার পাশ থেকে বাবার কন্ঠ ভেসে আসলো-
“তোমাকে আমি পারমিশন দিয়েছি খেলার?”
সবাই দরজার দিকে তাকালো। বাবা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আধুনিক্তার দিকে। আধুনিক্তা ঢোক গিললো বাবাকে দেখে। বাবা দ্রুত এগিয়ে এসে বললো-
“আজকের পর থেকে আর খেলার কথা ভাববে না।”
“আব্বু প্লিজ রাজি হয়ে যাও।”
“আধুনিক্তা আমি কী বলেছি?”
“আব্বু তুমি…”
আধুনিক্তা বলার আগেই মাশরাত দাঁড়িয়ে বলে উঠলো-
“স্যার আমি কি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে পারি?”
বাবা মাশরাতের দিকে তাকালো। মাশরাত শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে। বাবা ধীরপায়ে হেটে গিয়ে মাশরাতের বরাবর দাঁড়িয়ে বললো-
“কী বলতে চাও তুমি?”
“স্যার আধুনিক্তা আজ বাস্কেটবল খেলেছে। আর আপনি অবাক হবেন শুনে ওর কোনো কষ্ট হয় নি। এতে এই বুঝা যায় সে নিজ থেকে চেষ্টা করতে চায়। যদি ও খেলার জন্য রাজি না হত আর অন্য কেও জোর করতো নিশ্চয়ই ওর সমস্যা হত। কিন্তু ওর মন বাস্কেটবল খেলার জন্য ছটফট করছে। আমি চাই আপনারা একবার ওর প্র্যাকটিস দেখুন। যদি ওর সমস্যা হয় আমি নিজেই ওকে খেলতে দিব না।”
“ওর বাবা আমি। ট্রেইনার আছো ট্রেইনারের মতো থাকো। যদি ওর সমস্যা হয় আমি নিজেই ওকে খেলতে দিব না। এই কথা দিয়ে কী বুঝাতে চাচ্ছো? যদি ওর কিছু হয়ে যায় পারবে আমার একমাত্র মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে।”
“ভবিষ্যতে কী হবে আমি জানি না স্যার৷ কিন্তু আপনার মেয়ে অসাধারণ খেলোয়াড়। ও যদি খেলে ওর কিছু হবে না আমার মন বলছে।”
“ওকে দেন তোমার মন নিয়ে তুমি বের হও আমার বাসা থেকে। আমার মেয়ের মাথায় তুমি এই খেলার ভূত ঢুকিয়েছো তাই না?”
মাশরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আধুনিক্তা দ্রুত এসে মাশরাতের সামনে দাঁড়িয়ে বাবাকে বললো-
“আমাকে ম্যানার্স শেখাতে শেখাতে তুমি নিজেই ম্যানার্স ভুলে গেলে? তুমি না জেনে একজনের উপর অপবাদ দিচ্ছো কেন? আমি প্রতিদিন তোমাদের বলি আমি বাস্কেটবল খেলতে চাই তবুও তুমি ভাবলে কী করে মাশরাত স্যার আমার মাথায় খেলার ভূত ঢুকাবে?”
“আধুনিক্তা তুমি জীবনে প্রথম আমার সাথে এইভাবে কথা বলছো তাও একটা বাহিরের পরপুরুষের জন্য।”
“আব্বু এইবার একটু বেশী বলছো। উনি একজন বাস্কেটবল ট্রেইনার। আমার কর্তব্য আমার সিনিয়রের সম্মান করা। আমার বাবা আমার সিনিয়রকে যা পারছে তাই বলছে আমি দেখেও কী প্রতিবাদ করবো না?”
“লাস্ট ওয়ার্নিং আধুনিক্তা ব্যবহার ঠিক করো তোমার।”
“আমিও তোমাকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি আমার সিনিয়রের সাথে ঠিক মতো ব্যবহার করো।”
বাবার রাগ এইবার সপ্তম আসমানে উঠে গেল। আধুনিক্তা কথা শেষ হতেই সজোরে মেয়ের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। থাপ্পড়টা হয় তো জোরেই লেগেছে।??

চলবে……

[অনেকজন চাচ্ছেন তাবাসসুম ফিরে আসুক। গল্প নিয়ে কনফিউশান তৈরী হচ্ছে। মাত্র ৬ টা পর্ব দেওয়া হলো। আমি ধীরে ধীরে সব কনফিউশান দূর করে দিবো। শুধু ধৈর্য রেখে পড়তে থাকুন এইটুকু আমার অনুরোধ রইলো। ভুল ক্রুটি ধরিয়ে দিবেন প্লিজ❤️]

আগের পর্বের লিংক ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here