#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৭
মাশরাত আর আধুনিক্তা থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাবা উনার পাশে দাঁড়ানো একটা মানুষকে কি যেন জিজ্ঞেস করে তারাতাড়ি ছাদ থেকে নেমে গেল। আধুনিক্তা ভয়ে কাঁপছে। মাশরাত স্বাভাবিক গলায় বলল-
“চিন্তা করো না। তোমাকে কিছু বলবে না।”
“জানি, তাই তো ভয় করছে আমার। আমি হাজার ভুল করলেও আব্বু আমাকে কিছু বলবে না।”
মাশরাত শব্দ করে হাসলো। আধুনিক্তা বিরক্ত হয়ে বলল-
“হেসো না মাশরাত আমার টেনশন হচ্ছে। আর আমার আব্বু এইখানে কেন আসছে বুঝতে পারছি না।”
“এই বাড়ি ভাঙা হবে।”
“বলো কি? তার মানে আব্বু এই বাড়ির কনট্রাক্ট পেয়েছে।”
“হুম হয় তো”
তখনই মাশরাতের মায়ের কন্ঠ ভেসে আসলো। উনি আধুনিক্তাকে ডাকছেন। মালিহা বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। সব যেন তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মাশরাত বলল-
“চলো তোমার বাবা এসেছে।”
“বাবা?”
“হ্যাঁ তোমাকে নিতে এসেছে। আর আমাকে এক গাদা কথা শোনাতে।”
“পারবে না তোমাকে বকতে আমি আছি। চলো নিচে যাই।”
মাশরাত হেসে মাথা নাড়াল। মাশরাত সবসময় কিভাবে এত স্বাভাবিক থাকতে পারে? আধুনিক্তা অবাক না হয়ে পারে না। তারা ছাদ থেকে নিচে নেমে আসলো। আধুনিক্তা বাবাকে দেখে ঢোক গিলল। মাশরাত পকেটে হাত দিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আধুনিক্তার বাবার দিকে। মাশরাতের মা বলল-
“আধুনিক্তা তোমার বাবা এত তারাতাড়ি তোমাকে নিতে আসলো যে।”
আধুনিক্তা কিছু বলার আগেই বাবা বলল-
“আসলে সন্তান যত-ই বড়ো হয়ে যাক বাবা মায়ের জন্য ছোটো-ই থাকে সবসময়। সন্তান যদি না বলে কোথাও চলে যায় বড্ড চিন্তা হয়। আর যদি বাবার পছন্দের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করে তাহলে তো বাবার রাগ হওয়া স্বাভাবিক।”
মা কিছু বুঝলেন না। উনার কেন যেন মনে হচ্ছে আধুনিক্তার বাবা ভীষণ রেগে আছে। জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে রেখেছে চেহারায়। মাশরাত ধীরে ধীরে হেটে এসে আধুনিক্তার বাবার বরাবর দাঁড়িয়ে বলল-
“বাসায় নিয়ে গিয়ে অকারণে আধুনিক্তাকে বকাঝকা করে লাভ নেই। তাই না বকে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলবেন ও বুঝে যাবে।”
“তোমার থেকে এডভাইস চাই নি আমি। তুমি যে আমার মেয়েকে ফাসানোর চেষ্টায় আছো আমি আগে থেকেই জানি।”
মা, মালিহা, আধুনিক্তা তিনজনই অবাক হয়ে গেল বাবার কথা শুনে। আধুনিক্তা বলল-
“আব্বু কি বলছো এসব?”
“তুমি কেন বার বার মাঝে কথা বলো? এগুলো ব্যাড মেনার্স।”
মাশরাত তালিচ্ছ্যের হাসি দিয়ে বলল-
“যার মেনার্স নেই সে মেনার্সের পাঠ পড়াচ্ছে? স্ট্রেঞ্জ।”
“মাশরাত, তোমার কি মনে হয় না তোমার যোগ্যতার বাহিরে গিয়ে তুমি কথা বলছো?”
“আমার যোগ্যতা যাচাই করতে হলে আপনার ক্ষমতা প্রয়োজন।”
আধুনিক্তার বাবা হেসে উঠলেন। হাসতে হাসতে বললেন-
“ভাব দেখিয়ে লাভ নেই। তুমি কি চাও আমি ভালো মতো জানি। কিন্তু এর জন্য আমার মেয়েকে ব্যবহার করতে হবে না। তুমি একবার আমাকে বলে দেখো।”
“স্যার, আমার টাকার প্রয়োজন হলে আপনার মেয়েকে কেন ফাসাতে যাব? আজকাল টাকা কামানোর রাস্তার অভাব নেই। আমার অভাবের সংসার হলেও স্বভাব নষ্ট করি নি।”
মাশরাত এইটুকু বলে থামলো। মাশরাতের মা হঠাৎ রাগী কন্ঠে বলল-
“আধুনিক্তার বাবা আপনি দেখেই আমার অবাক লাগছে। আপনার স্ত্রী নিশ্চয়ই অনেক ভালো মানুষ তাই আপনার মেয়ে এত ভালো হয়েছে।”
আধুনিক্তা দ্রুত হেটে এসে মায়ের হাত ধরে বলল-
“আন্টি, আব্বুর তরফ থেকে আমি সরি বলছি। আপনি প্লিজ ভুল বুঝবেন না আব্বুকে।”
“আমি নিজ চোখে তোমার বাবার ব্যবহার আজ দেখলাম। উনি হয় তো মনে করেন আমরা দরিদ্র বলে কোটিপতিদের ফাসাই। তোমাকে মেয়ের মতো স্নেহ করি আমি। যদি তুমি আমাকে নিজের মায়ের মতো শ্রদ্ধা করো একটা কথা রাখবে?”
“কী আন্টি?”
“তুমি আর কখনো আমাদের বাসায় এসো না।”
আধুনিক্তা মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেলল। মাশরাত আধুনিক্তার হাত ধরে টেনে তার বাবার কাছে দিয়ে বলল-
“আপনার মেয়ে নিজে এসেছিল আমাদের বাসায়। আপনাকে প্রথম দেখাতেই আমি বুঝেছিলাম আপনার একটু বেশী বুঝার ক্ষমতা আছে। নিয়ে যান আপনার মেয়েকে।”
আধুনিক্তা বাবা শক্ত করে আধুনিক্তার হাত ধরলো। রাগে উনার গা জ্বলছে। আধুনিক্তার হাত ধরে হাঁটা ধরতেই মা ডাকলেন আধুনিক্তাকে। আধুনিক্তা থেমে পেছনে ফিরলো। মা আধুনিক্তাকে দাঁড়াতে বলে ঘরের ভেতরে গিয়ে ৫ মিনিটের মধ্যে ফিরলো। আধুনিক্তা গলা ধরে আসছে হঠাৎ। মা হেটে এসে আধুনিক্তার দিকে শাড়ি আর রং এর প্যাকেট এগিয়ে দিলো। আধুনিক্তা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল-
“আমি আপনাদের জন্য উপহার এনেছিলাম। ফিরিয়ে দিচ্ছেন?”
মা আধুনিক্তার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বললেন-
“তুমি এসেছো আমরা এতেই খুশী। আজ এমন ঘটনা না ঘটলে তোমার দেওয়া উপহার রেখে দিতাম। কিন্তু এত কিছু দেখার পর আমরা এগুলো রাখতে পারবো না।”
আধুনিক্তা চুপচাপ মায়ের হাত থেকে প্যাকেটটা নিলো। তার গড়িয়ে অশ্রু পড়ছে। মা আর কিছু বলল না। আধুনিক্তা দাঁড়াল না। দ্রুত হেটে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। বাবা এক নজর মাশরাতকে দেখে আধুনিক্তার পেছনে হাঁটা ধরলো। মা মাশরাতের দিকে এগিয়ে এসে বলল-
“মেয়েটার থেকে দূরত্ব বজিয়ে রাখিস বাবা। ও তোর প্রতি খুব দুর্বল। আমি চাই না তোর জীবনের সাথে ও জড়িয়ে কষ্ট পাক।”
মাশরাত মুচকি হেসে মাকে জড়িয়ে ধরলো। তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে হঠাৎ। মনে হচ্ছে তার হৃদপিণ্ডে কেও ছুরি দিয়ে আঘাত করছে। মাশরাত অনেকদিন পর আজ আবার বুকে কষ্টের ব্যাথা অনুভব করলো।
বাসায় এসে আধুনিক্তা রাগে সোফার উপর প্যাকেটগুলো ছুঁড়ে মেরে সোফার উপর পা মুড়িয়ে বসে মাথা নিচু করে ফেলল। দাদী আরমানকে খাইয়ে দিচ্ছিলেন। হঠাৎ নাতনিকে এমন অবস্থায় দেখে অবাক হলেন। মা ডাইনিং টেবিল গুছাচ্ছিলেন। আধুনিক্তার বাবাকে আসতে দেখে অবাক হলেন। আবার মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো গন্ডগোল হয়েছে। উনি দ্রুত হেটে আসলেন। বাবা রাগী কন্ঠে বলল-
“ওকে বাসা থেকে বের হতে কে দিয়েছে?”
দাদী বললেন-
“তোর বাবা, ও নাকি ওর বান্ধবীদের সাথে শপিং-এ যাবে বলেছে।”
“আজকের পর থেকে ওর বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ। আমি আব্বুকে বলে ওর ভার্সিটি পরিবর্তন করার ব্যবস্থা করছি।”
আধুনিক্তা রাগে গজগজ করতে করতে দাড়িয়ে বলল-
“তুমি আবার আমার জীবনে ইন্টারফেয়ার করছো?”
“কেন তোমার জীবনে আমি নেই?”
“আব্বু তুমি এত ভুল বুঝো কেন সবসময়?”
মা বলল-
“আচ্ছা কি হয়েছে বলবে তো?”
“তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো ও কোথায় ছিলো?”
আধুনিক্তা বলল-
“যেখানেই ছিলাম, এই নরকের থেকে ভালো ছিলো ও জায়গা। তোমার ব্যবহারে ইদানীং আমার দম বন্ধ হয়ে আসে আব্বু।”
“তোমার ভালো চাওয়া কি আমার অপরাধ?”
“তুমি একটা দরিদ্র পরিবারকে এত বাজে ভাবে অপমান করলে এখন বলছো তুমি আমার ভালো চাও?”
“তুই বুঝতে পারছিস না সেই মাশরাত ছেলেটা তোকে ফাসানোর চেষ্টা করছে।”
“ফাসানোর চেষ্টা করছে না। অলরেডি ফাসিয়ে ফেলেছে। আই লাভ হিম।”
বাবা থমকে গেল। মায়ের মুখ নিমিষেই হা হয়ে গেল। দাদী বসা থেকে দাড়িয়ে গেলেন। কেও যেন নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারছে না। আধুনিক্তা আবার বলল-
“একটা সময় ছিলো যখন আমি টাকা নিয়ে খুব অহংকার করতাম। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা নষ্ট করতাম। ভাবতাম এটাকেই বলে জীবন। কিন্তু কথায় আছে না অহংকার পতনের মূল। আমার অহংকারের কারণে আমি শাস্তি পেলাম। আমার প্রিয় খেলা থেকে আমি বঞ্চিত হলাম। তোমার টাকা আমাকে বাঁচিয়ে ফেলেছে আব্বু। কিন্তু আমার ভেতরে একটা অপরাধ আছে। যে সবসময় ভাবে এত অহংকার করতে নেই। আজ আমি মাশরাতের পরিবারকে দেখলাম। এত কম টাকা দিয়ে ভালো থাকা যায় তাদের না দেখলে আমি জানতাম না। হতে পারে মাশরাত তোমার মতো প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা কামায় না। কিন্তু সে যতটুকু মাসে ইনকাম করে তার পরিবার বেশ ভালো তে কাটায় জীবন। যদি কোনোদিন তাদের পরিবারের অংশ হতে পারি আমার মত সুখী আর কেও হবে না।”
“প্র্যাকটিক্যাল ইস্যু বলতে কিছু বুঝো তুমি?”
“বুঝি, তাই তো আমি আর টাকা নিয়ে অহংকার করি না। আমি বুঝে গিয়েছি আসল জীবন কাকে বলে।”
“ওটাকে জীবন বলে না। যদি কোনো একদিন মাশরাতের ইনকাম করার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় তখন কী করবে? ফিরে আসতে হবে আমাদের কাছে।”
“আমার তার উপর ভরসা আছে।”
বাবা রাগে কটমট করছে। উনার মনে হচ্ছে মাশরাত ওর ব্রেইনওয়াশ করেছে। মেয়ে তো এমন ছিলো না। তখনই দাদাই আসলেন-
“কি হচ্ছে এখানে? এত চেচামেচি কেন?”
আধুনিক্তা দাদাইকে দেখে মাথা নিচু করে ফেলল। দাদী বললেন-
“তোমার নাতনি প্রেমে পরেছে।”
আধুনিক্তা লজ্জায় দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো। দাদাই কিছু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ হেসে উঠলেন। বাবা অবাক হয়ে বলল-
“আব্বু আপনি হাসছেন?”
“তো আর কি করবো? নাতনি প্রেমে পরেছে এটা তো খুশীর খবর।”
আধুনিক্তা মাথা তুলে দাদাইর দিকে তাকাল। তার দাদাই আর দাদী বেশ খুশী হয়েছে শুনে। আধুনিক্তা মায়ের দিকে তাকাল৷ তার মা তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। আধুনিক্তা একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে দাদাইর দিকে তাকিয়ে বলল-
“দাদাই, আব্বুকে একটু বুঝাবে কথায় কথায় সবার যোগ্যতা না মাপতে।”
“কি করেছে তোমার বাবা?”
আধুনিক্তা দাদাইকে সব খুলে বলল। দাদাই রাগী দৃষ্টি বানিয়ে ছেলের দিকে তাকালেন। বাবা কিছুটা অপ্রস্তুত হলো।
“তুমি সবাইকে এক ভাবো কেন? তোমার অফিসের একজন দরিদ্র কর্মচারী তোমার সাথে প্রতারণা করার পর থেকে তুমি এমন হয়ে গিয়েছো। সবাইকে এক পাল্লায় মাপতে নেই।”
“বাবা আমার মাশরাত ছেলেটাকে একদম পছন্দ না।”
আধুনিক্তা বলল-
“সংসার আমি করবো না তুমি করবে?”
“তুমি না বুঝে বেশী কথা বলো না।”
“সত্যি করে বলো মাশরাত তোমার কি ক্ষতি করেছে?”
বাবা কিছু বলল না। চুপচাপ মাথা নিচু করে ফেলল। আধুনিক্তা কিছুক্ষণ বাবার দিকে তাকিয়ে থেকে দাদাইর দিকে তাকাল। দাদাই মুচকি হেসে চোখের ইশারায় আধুনিক্তাকে ঘরে যেতে বললেন। আধুনিক্তা আবার এক নজর বাবাকে দেখে তার ঘরে চলে আসলো। ঘরে এসে তার মনে তুফান শুরু হলো। বেশ অস্থিরতা কাজ করছে মনের ভেতরে। মোবাইল নিয়ে মাশরাতকে কল করলো। রিং হচ্ছে কিন্তু কেও ধরছে না। আধুনিক্তা দুই তিনবার ট্রাই করলো। মাশরাত হয় তো ইচ্ছে করেই ধরছে না। আধুনিক্তা রাগে মোবাইল বিছানায় ছুঁড়ে মেরে খাটে হেলান দিয়ে বসলো। মুখ শক্ত করে বসে আছে আধুনিক্তা। হঠাৎ কেঁদে উঠলো। হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে কাঁদছে। মা দরজার আড়াল থেকে মেয়েকে দেখে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। এখন নাহয় আধুনিক্তা কিছুক্ষণ একা থাক৷
রাতেরবেলা……
মাশরাত ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ থেকে মেঘ গর্জনের শব্দ আসছে। চারপাশে ঠান্ডা বাতাস। তাবাসসুমের হাসিমাখা চেহারা মাশরাতের কষ্ট কমানোর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আজ তার মন শান্ত হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আধুনিক্তা ভালো নেই। বাম হাতে থাকা সিগারেট মুখে নিয়ে টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো। সিঁড়ি বেয়ে কারো আসার শব্দ আসছে। মাশরাত মোবাইল পকেটে রেখে ঘুরে দাঁড়াল। মা এসেছে,
“এত রাতে ছাদে কেন আসলি?”
“ঘুম আসছে না৷ আর তুমি আসলে কেন? যাও ঘুমিয়ে পড়ো।”
“ছেলে না ঘুমিয়ে ছটফট করছে আমি কিভাবে ঘুমাই?”
“আমি ঠিক আছি আম্মু”
মা ধীরে ধীরে হেটে এসে মাশরাতের পাশাপাশি দাঁড়াল।
“একটা কথা বলি?”
“বলো”
“তুই কি সত্যি বুঝতে পারছিস না যে তুই দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়েছিস।”
“আম্মু.. কি..কি বলছো এসব?”
“আমি তোর মা, হয় তো লজ্জা পাচ্ছিস সত্যি বলতে। কিন্তু বাবা, তুই কারো সাথে মনের কথা শেয়ার করিস না। আমি তোর মনের খবর কিছুটা হলেও রাখি। শুন, যদি সত্যি ভালোবেসে থাকিস তাকে গিয়ে বলে দে৷ কারণ দেরি হয়ে গেলে হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা বেশী।”
“আম্মু আজ তুমি ওর বাবার ব্যবহার দেখেছো? আধুনিক্তার উপরও আমার ভরসা নেই। সত্যি যদি ভবিষ্যতে আমাদের পরিবার কোনো বড়ো ধরণের আর্থিক সমস্যা মোকাবিলা করে এই মেয়ে সব ফেলে রেখে চলে যাবে তার আরাম আয়েশের দিনে।”
“একদম চুপ, আমার আধুনিক্তার উপর ভরসা আছে৷ সে অনেক ভালো মেয়ে।”
“বিশ্বাস করা ভালো অন্ধ বিশ্বাস না।”
“হয়েছে তোর জ্ঞান দেওয়া? এখন চুপচাপ ঘুমাতে যা।”
মাশরাত একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে হাঁটা ধরলো। মা ছাদের চারদিকে চোখ বুলালো। তিনদিন আগে ছাদ পরিষ্কার করা হয়েছিল আবার সিগারেট ও ময়লা দিয়ে ভরে গিয়েছে। মা বিরক্ত হলো। মাশরাত আজকাল অতিরিক্ত সিগারেট খাচ্ছে। হঠাৎ মেঘ গর্জে বৃষ্টি নেমে এলো। মা তারাতাড়ি ছাদে থাকা জামাগুলো নিয়ে দৌড়ে ছাদ থেকে নামলো।
মাশরাত খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে। নিজে শান্ত হয়ে বসতে পারলেও মনকে শান্ত রাখতে পারছে না। ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে মায়ের কথা ভাবতেই। মাশরাত বুঝতে পারছে না সে কি সত্যি আবার ভালোবাসা জালে ফেলে গেল। আজকাল আধুনিক্তার কথা অতিরিক্ত ভাবছে। একদিন তাকে না দেখলে ভালো লাগে না৷ প্রতিদিন একবার হলেও আধুনিক্তাকে তার কল দিতেই হবে নাহলে সময় কাটবে না। হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো। মাশরাত পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে আধুনিক্তার কল এসেছে। মেয়েটা অনেকক্ষণ ধরে কল দিচ্ছে মাশরাত ইচ্ছে করে ধরছে না। এখন নাহয় একবার কথা বলে নেওয়া যাক। মাশরাত কল রিসিভ করে কানে ধরল-
“হ্যালো”
“কোথায় ছিলে তুমি?”
আধুনিক্তার ধমক শুনে মাশরাত মুচকি হাসলো। এতক্ষণে তার মনে হচ্ছে তার মন শান্ত হয়েছে। আধুনিক্তা আবার গর্জে উঠলো-
“কি হলো উত্তর দাও না কেন?”
“কি উত্তর দিব?”
“তুমি আমাকে একবারো কল দাও নি। আবার আমি কল দিচ্ছি সেটাও ধরছো না।”
“কি হবে কল দিয়ে বা রিসিভ করে?”
“তুমি ভালো মতো জানো তোমার সাথে কথা না বললে আমার ভালো লাগে না। তুমি ভালো মতো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। তুমি ভালো মতো জানো তোমাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ।”
হঠাৎ আধুনিক্তা কান্না করে উঠলো। মাশরাতের মনে হচ্ছে তার দম এখনই বন্ধ হয়ে যাবে। ধমকের স্বরে বলল-
“এই মেয়ে কান্না বন্ধ করো।”
আধুনিক্তা মুখ চেপে কেঁদেই চলেছে। মাশরাত কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে কল কেটে দিলো। হঠাৎ কল কাটায় আধুনিক্তা অবাক হয়ে মোবাইলের দিকে তাকাল। আরো কয়েকবার কল করলো কিন্তু মাশরাত ধরছে না। আধুনিক্তা কান্না করতে করতে নিজের চুল টেনে ধরলো। ভালোবাসায় এত কষ্ট সে জানলে কখনো এই অনুভূতির মায়াজালে বন্দী হতো না।
সময় কেটে ২০ মিনিট পার হলো। আধুনিক্তা মাথা ব্যাথা করছে কাঁদতে কাঁদতে। চোখ মুছে সোজা হয়ে বসলো। বৃষ্টি এখনো পড়ছে। যেদিন আধুনিক্তার মন খারাপ থাকে সেদিনই বৃষ্টি কেন হয় আধুনিক্তা বুঝতে পারে না। আধুনিক্তার মোবাইল বাজলো৷ মোবাইলে মাশরাতের নাম ভাসতে দেখে তারাতাড়ি রিসিভ করলো। রিসিভ করার সাথে সাথে অপরদিক থেকে একটাই কথা ভেসে আসলো- “এখনই বাহিরে আসো আমি অপেক্ষা করছি।” বলেই কল কেটে দিলো। আধুনিক্তা থতমত খেয়ে বসে আছে। হুশ আসতেই তারাহুড়ো করে ঘর থেকে বের হলো। হলরুমে এখন কেও নেই। দরজা খুলে দৌড়ে বের হলো। প্রতিবারের মতো আজও জুতা পড়তে ভুলে গিয়েছে। বৃষ্টির পানিতে চারপাশ ভেজা। পানির উপর দিয়ে দৌড়ে গিয়ে আধুনিক্তা মেইন দরজা খুলল। মাশরাত দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে কাক হয়ে গিয়েছে। আধুনিক্তা হাসি মুখে দৌড়ে গিয়ে মাশরাতের সামনে দাঁড়াল। তখনই বিদ্যুৎ চলে গেল এলাকার। মাশরাত চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল-
“প্রকৃতিও আমার সাথে প্রতারণা করে। এখনই বিদ্যুৎ যাওয়ার দরকার ছিল?”
“ভালোই হয়েছে কেও আমাদের দেখতে পারবে না।”
“আমিও যে তোমাকে দেখতে পারছি না।”
আধুনিক্তা হাসলো, এখন তার কাঁদতে ইচ্ছে করছে না। মাশরাত আধুনিক্তার ডান হাত দিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কাছে টেনে নিলো। আধুনিক্তা বরফের মতো জমে গেল৷ মাশরাত আধুনিক্তার দিকে তাকাল। অন্ধকারে চেহারা দেখতে পারছে না। আজ রাতে আধুনিক্তার চেহারা দেখার সৌভাগ্য তার হলো না।
“আধুনিক্তা তুমি কিছুদিন আগে তোমার মনের কথা আমাকে বলেছো। আমি রাজি হই নি। কারণ এখন আমি ভালোবাসতে ভয় পাই। মনে হয় আবার যদি হারিয়ে ফেলি তখন? তাবাসসুম ছেড়ে যাওয়ায় নিজেকে সামলে নিয়েছি। দ্বিতীয়বার একা হয়ে গেলে তখন কি করবো? আমার তো ভাগ্য এমন আত্মহত্যা করেও নিজেকে মুক্ত করতে পারবো না। আজ তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।”
আধুনিক্তা চোখপ মুখে চমক ফুটে উঠলো। তার হৃদয়ে বিস্ফোরণ ঘটার মতো অবস্থা। তার কান যেন ছটফট করছে মাশরাতের মুখ থেকে তার প্রিয় কথাটা শোনার জন্য। মাশরাত মুচকি হেসে বলল-
“কিন্তু বলবো না।”
আধুনিক্তার হাসি উড়ে গেল। মনের পাখি আকাশে ডানা মেলে উড়ছিলো হঠাৎ করেই মাটিতে পড়ে গেল। মাশরাত আবার বলল-
“তোমার অপেক্ষা করতে হবে। এখন তুমি ভার্সিটিতে পড়ছো। পড়াশোনা নিশ্চিন্তে শেষ করো। এতদিনে আমি নিজেকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যাব যেখানে তোমার মতো কষ্ট হবে না। আমি শটকাট কিছু বলতে চাই না। তাই তোমাকে আমার প্রত্যেক কথা বুঝে নিতে হবে। এখন বলো অপেক্ষা করবে তো?”
আধুনিক্তার তার দু-হাত দিয়ে মাশরাতের হাত ধরে বলল-
“করবো অপেক্ষা, আমি সবসময় তোমার অপেক্ষায় আছি।”
“হতে পারে এখন আবেগের কারণে বলছো। পরে যদি তোমার মন ঘুরে যায়?”
“ঘুরবে না, কখনো ঘুরবে না। আর.. আর যদি কখনো তোমার সাথে প্রতারণা করি তাহলে, তাহলে আমাকে জোর করে নিজের করে নিও। আমি সত্যি তোমাকে ছাড়া নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবতে পারি না।”
আধুনিক্তা আবার কেঁদে উঠলো। মাশরাত হেসে আধুনিক্তাকে বুকে ভরে নিলো৷ আধুনিক্তা মাশরাতকে জাপটে ধরে মাশরাতের বুকে মুখ গুঁজে কাঁদছে। মাশরাত আধুনিক্তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল-
“জীবনের যুদ্ধে প্রতি মুহূর্তে, তোমাকে কাছে চাই।
তুমি ছাড়া মোর জীবনে, আর কেহ নাই।
জীবন থেকে অতীত আজ মুছে ফেলতে চাই।
হৃদয়ের স্পন্দন করলাম তোমার নামে, তুমি আছো হৃদয়ে তাই।”
চলবে……
[কবিতা আমি তেমন লিখতে পারি না। একটু আকটু ট্রাই করি?♀️ ভালো না হলে আই এম সরি? এনি ওয়ে, গতকাল গল্প দেই নি তাই আজ দু’টো পর্ব পাবেন। রাত ১০ টার মধ্যে আর একটা পর্ব দিব। হতে পারে পর্বটা একটু ছোটো হবে। কিন্তু বড়ো করে দেওয়ার চেষ্টা করবো। অপেক্ষা করবেন প্লিজ❤️❤️]
আগের পর্বের লিংক ?