তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_১৬

0
2406

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৬

মাশরাত শব্দ করে হেসে উঠল। আধুনিক্তা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল-
“একটা কথা বলি?”
“বলো”
“আই লাভ ইউ”
মাশরাত চমকে উঠল। আধুনিক্তা হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মাশরাত বলল-
“কী বললে?”
“আই লাভ ইউ বললাম।”
মাশরাত কিছু বলার আগেই আধুনিক্তা আবার বলল-
“হসপিটালে আছি এখন। এই বিষয়ে পরে কথা হবে।”
বলেই আধুনিক্তা হেটে গিয়ে মেহরিন আর মল্লিকার সাথে দাঁড়াল। মাশরাত কি করবে ভাবতে পারছে না। আধুনিক্তা আড়চোখে মাশরাতকে দেখে মুচকি হেসে মনে মনে বলল-
“আমি জানি তুমি আমার ভালোবাসা গ্রহন করবে না। যদি কম্পিটিশনের পর তোমাকে মনের কথা বলতাম তুমি কখনো আমার সাথে দেখা করতে না আর। এখন প্র্যাকটিস চলছে তোমার প্রতিদিন আমাকে সহ্য করতে হবে। তোমার মনে আমি জায়গা করে নিবোই।”

কিছুক্ষণ থেকে সবাই হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল। শুধু মল্লিকা রয়ে গেছে হসপিটালে। সে কিছুক্ষণ পর বাসায় যাবে। আবার আগামীকাল আসবে বাকি সবাই। মাশরাত আধুনিক্তার দিকে তাকাতেও পারছে না। মেয়েটার চোখ দেখলে তার ভয় করে। সে চায় না দ্বিতীয় বার ভালোবাসতে। আধুনিক্তার পরিবার কোনোদিন মানবে না তাদের সম্পর্ক। রিয়াজ বাইকে বসে মেহরিনকে বলল-
“যদি কিছু মনে না করো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।”
“লাগবে না আমি যেতে পারবো।”
রিয়াজের মন খারাপ হলো। আধুনিক্তা কিছু একটা ভেবে মেহরিনের হাত ধরে টেনে রিয়াজের বাইকের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল-
“রিয়াজ তুমি ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসো।”
“আরে আমি যেতে পারবো তো।”
“রিয়াজের বাইকে বস।”
“আধুনি..”
“বসতে বলেছি।”
আধুনিক্তা রাগান্বিত কন্ঠ শুনে মেহরিন চুপসে গেল। চুপচাপ রিয়াজের বাইকে উঠে বসলো। রিয়াজের ইশারায় আধুনিক্তাকে থ্যাঙ্ক ইউ জানালো। আধুনিক্তা চোখ টিপ দিয়ে ইশারায় বলল তারাতাড়ি বাইক স্টার্ট দিতে। রিয়াজ মেহরিনকে নিয়ে যেতেই আধুনিক্তা পেছনে ফিরলো। পেছনে ফিরে দেখে মাশরাত নেই। আধুনিক্তা অবাক হলো। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে মাশরাত দ্রুত পায়ে হেটে চলে যাচ্ছে। আধুনিক্তা দৌড়ে মাশরাতের পেছনে গেল। মাশরাত খুব জোরে হাটছে। আধুনিক্তা গিয়ে মাশরাতের সামনে দাঁড়াল। মাশরাত আধুনিক্তাকে দেখে একটা ঢোক গিলে এদিক সেদিন দেখছে। আধুনিক্তা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল-
“তোমার জবাব আমি জানি। তো পালাচ্ছো কেন?”
“বাসায় যাব, দেরি হচ্ছে।”
“তো না বলে যাচ্ছো কেন?”
“তোমার থেকে পারমিশন নিতে হবে আমার?”
“যত মন চায় দুর্ব্যবহার করো আমার মনে তোমার প্রতি ভালোবাসা কমবে না।”
মাশরাত হাতমুঠো শক্ত করে ফেলল। আধুনিক্তার থেকে পিছু কিভাবে ছাড়াবে এখন। আধুনিক্তা আবার বলল-
“আমি আমার মনে কোনো কথা দাবিয়ে রাখতে পারি না। আমি তোমাকে জোরও করছি না। তুমি যত চাও সময় নও।”
“আমার সময়ের প্রয়োজন নেই। আমার মনে তোমার প্রতি এমন কোনো অনুভূতি নেই। সময় নষ্ট করছো আমাকে ভালোবেসে।”
“যদি তোমাকে ভালোবেসে সময় নষ্ট করতে হয় আমি রাজি।”
“পাগলামি করো না।”
“যে ভালোবাসায় পাগলামি নেই সেই ভালোবাসা ভালোবাসা না।”
মাশরাত এইবার রেগে গেল। উঁচু স্বরে বলল-
“একটা থাপ্পড় মেরে সব দাঁত ফেলে দিব তোমার। তুমি কি ভুলে গেলে আমি কে?”
“তুমি আমার ট্রেইনার, তো?”
“আধুনিক্তা তোমার মাথায়ও সমস্যা আছে। হার্ট সুস্থ হয়ে তোমার মস্তিষ্ক অসুস্থ হয়ে গেছে।”
“ঠিক বললে, তোমাকে ভালোবেসে আমি পাগল হয়ে গিয়েছি।”
মাশরাত আর কিছু বলল না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে তামাশা করলে লোকে মন্দ বলবে। চুপচাপ আধুনিক্তার পাশ কাটিয়ে হাঁটা ধরলো। আধুনিক্তা হেসে পেছনে ফিরে চিল্লিয়ে বলল-
“মিস্টার মাশরাত তোফাজ্জল হোসেন, ভালোবাসি তোমাকে। তোমার মনে আমার প্রতি ভালোবাসা না জাগরন করার পর্যন্ত আমি হার মানবো না।”
মাশরাত আরো জোরে হাঁটা ধরলো। আশে পাশের সবাই আধুনিক্তার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আধুনিক্তা নাচতে নাচতে হেটে গিয়ে তার গাড়িতে উঠে বসলো।

আর মাত্র এক সপ্তাহর পর ন্যাশনাল কম্পিটিশন। এই কিছুদিনে আধুনিক্তা মাশরাতকে বেশ জ্বালিয়েছে। মাশরাত আধুনিক্তার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। কিন্তু আধুনিক্তা প্র্যাকটিস বেশ মনোযোগ দিয়ে করে। এরই মাঝে একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। এখন আধুনিক্তা নিজেও টেনশন করছে। প্র্যাকটিস তো যেভাবে সেভাবে করে ফেলে। কিন্তু আসল খেলায় যদি কোনো সমস্যা হয়। প্রতিদিন প্র্যাকটিসের সময় আধুনিক্তা ক্যামেরা অফ করিয়ে দেয় দারোয়ান মামাকে ঘুষ দিয়ে। মাশরাত বেঞ্চে বসে সবার খেলা দেখছিল তখনই প্রিন্সিপাল স্যার প্রবেশ করলো। আধুনিক্তা সহ সবাই চমকে উঠলো। স্যার আধুনিক্তাকে ট্রেইনিং স্যুটে দেখে অবাক হলেন। আধুনিক্তা হাত মুঠো শক্ত করে ফেলল। এবার নিশ্চয়ই তার দাদাই জেনে যাবে। মাশরাত তারাতাড়ি স্যারের সামনে দাঁড়াল। কোনো মতো কথার মধ্যে রাখার চেষ্টা করলো। কিন্তু লাভ হলো না স্যার মাশরাতকে জিজ্ঞেস করলো আধুনিক্তা প্র্যাকটিস কেন করছে। মাশরাত একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল-
“স্যার, আধুনিক্তা প্রতিদিন প্র্যাকটিস করে। একজন ফিমেল বাস্কেটবল প্লেয়ার আর খেলবে না। যার কারণে মেম্বার কম পরছিল।”
“ভার্সিটিতে আরো স্টুডেন্ট আছে। চেয়ারম্যান সাহেব জানলে আমাদের আস্ত রাখবেন না।”
আধুনিক্তা তারাতাড়ি হেটে এসে স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
“স্যার প্লিজ আমি রিকুয়েষ্ট করছি কাওকে বলবেন না। আমাকে দেখুন আমি একদম সুস্থ আছি। আমার পরিবার অতিরিক্ত টেনশন করে আমাকে নিয়ে। কিন্তু আমি তো এখন পুরোপুরি সুস্থ। তিন বছর ধরে আমাদের ভার্সিটি জিতে নি। আমি চাই এইবার আমাদের ভার্সিটি ন্যাশনাল এওয়ার্ড নিজের নামে করে নিক।”
“এওয়ার্ড থেকে তোমার প্রাণ বেশী জরুরি। তোমার অপ্পোনেন্ট টিমে আলিয়া নামের মেয়েটা প্রতি বছর খেলে। তুমি ভালো মতো জানো এই মেয়েটা তোমাকে সহ্য করতে পারে না।”
“ও এইবার আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
“আধুনিক্তা তুমি বুঝতে পারছো না। মেয়েটাকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। সেই টিমের চিফ টাকার সাহায্যে যে কিছু করতে পারে। তোমার বাবা তাকে পুলিশের কাছে ধরিয়েছিল। কি লাভ হলো? ৩ ঘন্টাও সে জেলে থাকে নি কিছুক্ষণের মধ্যেই সে নির্দোষ প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এত গুলো মানুষের সামনে সে তোমাকে আঘাত করলো কিন্তু প্রমাণ হলো তুমি খেলতে গিয়ে একা একা ব্যাথা পেয়েছো।”
“স্যার, আলিয়া আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আমি অনুরোধ করছি স্যার প্লিজ।”
স্যার লম্বা নিশ্বাস ফেলল। উনার ভয় করছে খুব। যদি আধুনিক্তার পরিবার জানে এই বিষয়ে তাহলে গন্ডগোল হয়ে যাবে৷ আধুনিক্তা মন খারাপ করে বলল-
“আর মাত্র ৭ দিন পর খেলা। এত কষ্ট করে প্র্যাকটিস করেছি। এখন আমি থামতে পারবো না।”
প্রিন্সিপাল স্যার মাশরাতের হাতে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলল-
“এই ফাইলে সব খেলোয়াড়দের নাম লিখে নিন। আর আপনার সাইনও লাগবে। ধন্যবাদ আপনাকে সবাইকে এত ভালো ট্রেইনিং দেওয়ার জন্য।”
“স্বাগতম, আমি সবার নাম লিখে অফিস-রুমে দিয়ে আসবো নি।”
স্যার মুচকি হেসে চলে গেলেন। আধুনিক্তা খুশীতে লাফিয়ে উঠলো। মাশরাতের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে বলল-
“দেখলে সবাইকে মানানো আমার বাম হাতের কাজ। এইবার ভালোই ভালোই আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাও।”
মাশরাত কিছু বলল না। আধুনিক্তার পাশ থেকে সরে অন্যদিকে হেটে গেল। আধুনিক্তা হাসলো, মাশরাতকে মানানো এত কঠিন হবে সে কল্পনাও করে নি। কিন্তু আধুনিক্তা হার মানার মানুষ না।

প্র্যাকটিস শেষে মাশরাত ফাইল নিয়ে অফিস-রুমে গেল। গিয়ে সে চুপসে গেল। আধুনিক্তা দাদাই বসে স্যার ম্যামদের সাথে কথা বলছে। মাশরাত পারমিশন নিয়ে ভেতরে ঢুকে ফাইল দিয়ে ঘুরে তারাতাড়ি হাঁটা ধরলো। কিন্তু পেছন থেকে আধুনিক্তার দাদাই মাশরাতকে ডাকলো৷ মাশরাত হাতমুঠো শক্ত করে রেখেছে। দাদাইকে কি স্যার বলে দিয়েছে? মাশরাত পেছনে ফিরে দেখে দাদাই হেটে এসে তার বরাবর দাঁড়ালেন।
“প্রিন্সিপাল স্যার বলল তুমি খুব ভালো ট্রেইনিং দিয়েছো সবাইকে।”
“ধন্যবাদ স্যার”
দাদাই মাশরাতের দিকে একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বললেন-
“প্রতি মাসে আমরা তোমাকে তোমার বেতন দিচ্ছি ঠিক কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি ট্রেইনার হিসেবে খুব কষ্ট করেছো। এতগুলো মানুষকে একসাথে ট্রেইনিং দেওয়া খুব কঠিন। আমার তরফ থেকে তোমার জন্য ছোট্ট একটা উপহার।”
“স্যার আমি..আমি এটা নিতে পারবো না।”
“এটা আমি উপহার হিসেবে দিচ্ছি। আমাদের ভার্সিটি বিজয়ী হোক বা না হোক তুমি প্রতি বছর আমাদের ভার্সিটিতে ট্রেইনার হিসেবে কাজ করবে।”
মাশরাতের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে খুশী মনে দাদাইর হাত থেকে খাম নিলো। অবশেষে পার্মানেন্ট একটা কাজ পেয়েছে সে এতেই খুশী।
“ধন্যবাদ স্যার অসংখ্য ধন্যবাদ। আজ আসি তাহলে।”
“হুম”
মাশরাত বেরিয়ে গেল অফিস-রুম থেকে। দাদাইর মুখে হাসি। মাশরাত মানুষ হিসেবে খুব ভালো। মাশরাত রাস্তা হাঁটছে। বাসায় যাওয়ার সময় কিছু বাজার করে যাবে। খামটা বের করে দেখে এক হাজার নোটের বান্ডেল। সেখান থেকে তিন হাজার টাকা বের করে খাম পকেটে রেখে দিলো। বাজারে গিয়ে মাছ, মুরগী কিছু শাক-সবজি কিনে বাসায় ফিরলো। মাশরাতের হাতে আজ বাজার দেখে বা অবাক হলো। মাশরাত সবকিছু রান্নাঘরে রেখে মাকে বলল-
“ভার্সিটি থেকে এডভান্স হিসেবে আমাকে টাকা দিয়েছে। তাই ভাবলাম বাজার করে একেবারে বাসায় যাই।”
মা মাশরাতের মাথায় হাত বুলালো। মাশরাত মুচকি হেসে তার ঘরে চলে গেল। খাটে বসে পকেট থেকে টাকা গুলো বের করে গুনে দেখে ৪৭ হাজার টাকা আছে। তার মানে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলো। মাশরাত নিশ্চিন্তের নিশ্বাস ফেলল। কিছু মাস নিশ্চিন্তে কাটাতে পারবে। ১৭ হাজার টাকা রেখে বাকি টাকা মায়ের কাছে দিয়ে দিলো। আবার ঘরে এসে জামা নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হলো। খাটে বসে মাথা মুছছিলো তখনই মোবাইল বেজে উঠল। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে আধুনিক্তা কল করেছে। মাশরাত প্রথম হাসলো। মেয়েটার পাগলামি আজকাল তার ভালোই লাগে। কিন্তু আধুনিক্তার সামনে প্রকাশ করে না। কল রিসিভ করে কানে ধরলো-
“কি চাই”
“মাশরাত তোফাজ্জল হোসেন নামের একটা ছেলে আছে। তাকে চাই।”
“রং নাম্বার কল কাটুন।”
“এই মিস্টার অনেক হচ্ছে এইবার। ঢং সাইডে রাখুন। আর আন্টিকে বলুন উনার পুত্রবধূ আসছে তাই রান্না করে রাখতে। উনার পুত্রবধূ খুব পেটুক।”
মাশরাত মুখ টিপে হাসলো। আধুনিক্তা আবার বলল-
“আমি চার টার মধ্যে আসছি।”
“কোনো প্রয়োজন নেই।”
“প্রয়োজন আছে। আমাকে থামানোর সাহস কার আছে আমি জানতে চাই।”
“আমার আছে”
“হা হা হা হাসালে, সাহস থাকলে আমাকে থামিয়ে দেখাও৷”
বলেই আধুনিক্তা কল কেটে দিলো। মাশরাত কান থেকে মোবাইল সরিয়ে হাসলো। সে জানে আধুনিক্তা নিশ্চয়ই আসবে। ঘর থেকে বের হয়ে রান্নাঘরে গেল। মা মাছ পরিষ্কার করছে। মাশরাত মাথা চুল্কাতে চুল্কাতে বলল-
“আম্মু একটা কথা বলি?”
“হ্যাঁ বল”
“সেই মেয়েটার কথা মনে আছে তোমার?”
“কার কথা বলছিস?”
“আমার বাগদান যে ভেঙে দিলো মেয়েটা।”
“ওহ আচ্ছা ওই পাগলিটা৷ কি যেন নাম?”
“আধুনিক্তা”
“হ্যাঁ হ্যাঁ আধুনিক্তা, কি হয়েছে এখন?”
“ও আসছে”
“বলিস কি?”
“হ্যাঁ ওর মাথায় মাঝে মধ্যে ভূত চেপে বসে।”
“আমার মেয়েটাকে ভালোই লাগে।”
“আম্মু উল্টা পাল্টা ভেবো না৷ যেহেতু ও মেহমান হিসেবে আসছে তাই তোমাকে বললাম। ও খুব পেটুক তাই রান্না করতে বলেছে।”
মা শব্দ করে হাসলো। মাশরাত আর কিছু বলল না। মালিহার ঘরে গিয়ে দেখে মালিহা তার পেইন্টিং নিয়ে ব্যস্ত। তার রং প্রায় শেষ তাই মন খারাপ। মাশরাত ভেবেছে পরেরদিন মালিহার জন্য রং কিনে নিয়ে আসবে। মাশরাত ছাদে চলে গেল। সিগারেটে আগুন ধরিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাবাসসুমদের বাড়ি নাকি ভেঙে ফেলবে৷ শোনার পর থেকে মাশরাতের মন খারাপ। আজকাল তাবাসসুমের ভাবনা তাকে কষ্ট দেয় না৷ জীবনে প্রথম মাশরাত গত পরশু তাবাসসুমের নাম্বারে কল দিতে ভুলে গিয়েছিল। মাশরাত বুঝতে পারছে না। সে কি ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে?

আধুনিক্তা মার্কেটে ঘোরাঘুরি করছে। মাশরাতের মা আর বোনের জন্য কিছু কিনে নিবে ভেবেছে। কম্পিটিশনের পর মাশরাত আবার ৬ মাসের জন্য ট্রেইনারের কাজ থেকে ছুটি পাবে। এর মধ্যে যদি মাশরাত তার থেকে দূরে চলে যায়? আধুনিক্তার যেভাবেই হোক মাশরাতের পরিবারকে হাত করে রাখতে হবে। এক ক্রিম রং এর সিম্পল শাড়ি দেখে তার পছন্দ হলো। সেটা মাশরাতের মায়ের জন্য কিনে নিলো। মালিহা আধুনিক্তার বয়সী। তার জন্য কি নেওয়া উচিত আধুনিক্তা ভাবছে। সে শুনেছে মালিহা আর্ট করতে বেশ ভালোবাসে। মালিহার জন্য রং এর সেট কিনে নিলো। তাদের দুজনের সামনে সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে। তাহলেই মাশরাতকে সে ভবিষ্যতে নিজের করে পাবে। আধুনিক্তা আজ ড্রাইভার মামাকে নিয়ে আসে নি। একাই এসেছে গাড়ি চালিয়ে। আধুনিক্তা গাড়িতে বসে মাশরাতকে মেসেজ দিয়ে বলল সে আসছে ১০ মিনিটের মধ্যে। বাবা আজ রাত ১ টার আগে বাসায় ফিরবে না। আধুনিক্তা এই গোল্ডেন চান্স মিস দিবে না। তারাতাড়ি গাড়ি চালিয়ে মাশরাতদের বাসায় গেল। আধুনিক্তা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ নার্ভাস হচ্ছে সে। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে নিজেরে সামলিয়ে কলিংবেল চাপলো। দরজা খুলল মালিহা। মালিহা আধুনিক্তাকে দেখে মুখে বড়ো হাসি ফুটিয়ে সালাম দিলো। আধুনিক্তা হাসিমুখে সালামের জবাব দিলো। সে তো ভয় পেয়ে গিয়েছিল। মা বেরিয়ে আধুনিক্তাকে দেখে রাগী চেহারা বানালো। একটু ভয় না দেখালে হয়? আধুনিক্তা চুপসে গেল মায়ের চেহারা দেখে। মা হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তা ধীরে ধীরে ভেতরে প্রবেশ করে মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সালাম দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। মা সালামের জবাব নিয়ে হেসে দিলেন। আধুনিক্তা মাথা তুলে মায়ের হাসি দেখে নিজেও হেসে দিলো। সাথে সাথে মাকে জড়িয়ে ধরলো। মাশরাত ছাদ থেকে নেমে এমন দৃশ্য দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠল। মা আধুনিক্তাকে সোফায় বসতে বলল।
“ডিস্টার্ব করলাম না তো আন্টি?”
“একদম না, আমার ভালো লেগেছে তুমি এসেছো। সেদিন তো তোমার সাথে ঠিক মতো কথাও হলো না।”
সেদিনের কথা ভাবতেই আধুনিক্তা জিহ্বায় কামড় দিয়ে হাসলো। মা মুগ্ধ হলো আধুনিক্তার হাসি দেখে। আধুনিক্তা মা আর মালিহাকে যার যার গিফট দিয়ে মাশরাতের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তোমার জন্য গিফট আনি নি৷ মন খারাপ করো না।”
“না থাক, আমার ঘুষ লাগবে না।”
আধুনিক্তা ভেংচি কাটলো। মা হাসতে হাসতে বলল-
“আমি তোমাদের দেখেই বুঝেছি তোমাদের মাঝে একজনই বনাবনি হয় না।”
“হবে কি করে আন্টি? আপনার ছেলে এক নাম্বারের সাইকো। সারাদিন ভ্রু কুঁচকে ঘুরে বেড়ায়। কোনোদিন আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলে না৷ নিজে তো কল দেয় না আবার আমি কল দিলে ধরে না। আপনি কি ওকে জন্মের সময় মুখে মধু দেন নি। ও কথা বললে মনে হয় মুখে কেও করলা দিয়ে রেখেছে।”
মা আর মালিহা শব্দ করে হেসে উঠলো। মাশরাত রাগী চেহারা বানিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তা মাশরাতকে দেখে বলল-
“ওই দেখুন আন্টি ওর চেহারা। এমন বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে। এই তুমি কি হাসতে পারো না।”
“অতিরিক্ত কথা বলছো।”
“তো কি করবো? তোমার মতো সবসময় সিরিয়াস থাকতে পারবো না।”
মা হাসতে হাসতে বলল-
“তোরা থাম আমি আর হাসতে পারবো না। আধুনিক্তা তুমি বসো আমি লেবুর শরবত বানিয়েছি। নিয়ে আসছি তুমি মালিহার সাথে কথা বলো।”
“ওকে আন্টি”
মা বলে গেল। মালিহা আর আধুনিক্তা বসে কথা বলছে। মাশরাত অন্য সোফায় বসে তাদের কথা শুনছে। মা এসে তাদের শরবত দিলো। আধুনিক্তা মায়ের হাত ধরে পাশে বসালো। মাশরাত শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বাহ, এত সুন্দর সম্পর্ক সে আগে দেখেনি। আজ মা আর মালিহা মাশরাতকে ভুলেই গিয়েছে। কিছুক্ষণ বসে কথা বলার পর মা বলল আধুনিক্তাকে নিয়ে ছাদে গেতে। উনি খাবার পরিবেশন করে ডাকবেন। তাদের বাড়িতে এসি নেই। আধুনিক্তা কিছুক্ষণেই ঘেমে একাকার। মালিহা আধুনিক্তা ও মাশরাত ছাদে গেল।
“আপু, আমি শুনেছি তুমি নাকি অসুস্থ ছিলে?”
“হ্যাঁ সেটা অনেক আগে এখন আমি সুস্থ আছি।”
“শুনে ভালে লাগলো৷ চেয়ারম্যান সাহেব অনেক ভালো মানুষ। উনি চেয়ারম্যান হওয়ায় এলাকায় অনেক উন্নতি হয়েছে।”
“হ্যাঁ আমার দাদাই অনেক ভালো মানুষ। আমি উনার নাতনি হয়ে গর্বিত।”
“আর কিছুদিন আগে তোমার বাবা স্ট্রিট মানুষদের জন্য বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে শুনেছি।”
“বাবাও যথেষ্ট ভালো। শুধু একটু রাগী আর কি। আব্বু কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি বিল্ডারের কাজও করেন। আমার ইচ্ছে আমি আব্বুর কাজকে ভবিষ্যতে আরো বড়ো করবো।”
“নিশ্চয়ই পারবে।”
তারা আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বলল। মাশরাত তাকিয়ে আছে তাবাসসুমের বাড়ির দিকে। আজ থেকে নাকি এই বাসায় কাজ শুরু করবে। আধুনিক্তা মাশরাতকে দেখে তার দিকে হেটে আসলো। তার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বলল-
“কি ভাবছো?”
“সামনে বাড়িটা দেখতে পারছো?”
“হ্যাঁ”
“এটা তাবাসসুমদের বাসা ছিল।”
“এত কাছাকাছি ছিলো তোমাদের বাসা?!
“হুম, এখন আমরা হাজার কিলোমিটার দূর।”
“তুমি আমার সামনে নিজের ভালোবাসার কথা বলো না তো।”
“কেন?”
“আমার কষ্ট হয়।”
মাশরাত আধুনিক্তার দিকে তাকাল। আধুনিক্তা তার দিকে উদাসীন চোখে তাকিয়ে আছে। মাশরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই পাশের বাসার ছাদ থেকে কেও আধুনিক্তা বলে গর্জে উঠলো। আধুনিক্তা আর মাশরাত সেখানে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে গেল। আধুনিক্তা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-“আব্বু”

চলবে……..

আগের পর্বের লিংক ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here