তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_১৫

0
2208
  • #তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
    #শোভা_আক্তার(লাভলী)
    #পর্ব_১৫

মাশরাত অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুজন মানুষের কথায় এত মিল। হতে পারে আধুনিক্তা আর তাবাসসুমের কথাগুলো কো-ইন্সিডেন্স মিলে গিয়েছে। কিন্তু মাশরাতের ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে। আধুনিক্তা মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাত এখনো দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তা কোমড়ে হাত রেখে বলল-
“তোমার কথায় আমি বৃষ্টিতে ভিজলাম। এখন তুমি নিজেই দাঁড়িয়ে আছো?”
মাশরাত কিছু বলল না। ধীরপায়ে হেটে এসে আধুনিক্তার সামনাসামনি দাঁড়াল। আধুনিক্তা হাসি মাখা মুখে কোমড় থেকে হাত নামিয়ে বলল-
“মাশরাত, আমি কথা লুকাতে পারি না। আমার মনের কথা আমি খোলা পৃষ্ঠার মতো রেখে দেই। আজ তোমাকে একটা কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু..”
আধুনিক্তা পুরো কথা বলার আগেই মাশরাত আধুনিক্তার দু’কাঁধে হাত রেখে টেনে আর একটু কাছে নিয়ে আসলো। আধুনিক্তার হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে গেল। বৃষ্টির পানি মাশরাতে গাল বেয়ে নামছে। আধুনিক্তা ঘোরের মাঝে ডুবে গেল। মাশরাত বলল-
“তুমি এখন কী বললে?”
আধুনিক্তা কিছুটা লজ্জা পেল। আমতা আমতা করে বলল-
“বলি নি বলতে চাই।”
“কিছুক্ষণ আগে কিছু বলেছো তুমি।”
আধুনিক্তা ভ্রু কুঁচকালো। তার মনে আসছে না সে কি বলেছে। কিছুক্ষণ ভেবে বলল-
“রেইন ইজ দ্যা মোস্ট বিউটিফুল পার্ট অফ নেইচার এমন কিছু বলেছিলাম সেটা?”
“হ্য..হ্যাঁ”
“কেন কি হয়েছে?”
মাশরাত কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। আধুনিক্তার কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে দু কদম পিছিয়ে গেল। আধুনিক্তা মাশরাতের কাছে গিয়ে বলল-
“কি হয়েছে মাশরাত? হঠাৎ করে তোমার মন খারাপ হয়ে গেল কেন?”
“না, আমার মন খারাপ হয় নি। আচ্ছা তুমি কি যেন বলতে চেয়েছিলে?”
আধুনিক্তা ভাবলো বলবে কী না। সামনে ন্যাশনাল কম্পিটিশন। এখন না বলাই শ্রেয়। কম্পিটিশনের পর না হয় বলবে। আধুনিক্তাকে চুপ থাকতে দেখে মাশরাত বলল-
“কি হলো বলছো না যে।”
“তেমন কিছু না। আমার খুব শীত করছে চলো চলে যাই।”
মাশরাত আর কথা বাড়াল না। তার ভালো লাগছে না। বাসায় চলে যাওয়াই ভালো হবে। আধুনিক্তা আর মাশরাত গাড়িতে গিয়ে বসলো। ড্রাইভার মামা লুকিং গ্লাস দিয়ে দুজনকে দেখে গাড়ি স্টার্ট দিলো। আধুনিক্তা তার হিজাব খুলে ফেলল। গায়ে জড়িয়ে ধরে মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাত মনমরা হয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা বাসায় পৌঁছে গেল। মাশরাত গাড়ি থেকে নেমে আধুনিক্তাকে বলল-
“ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে যেও।”
“তুমিও, আর সাবধানে হসপিটাল যেও।”
“ভাবছি বাসায় চলে যাব। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে আমার।”
“ঠিক আছে, আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”
মাশরাত হাঁটা ধরলো। বৃষ্টি এখন ফোটা ফোটা পড়ছে। কিছু রাস্তা হেটে গিয়ে দাঁড়াল। নিরব রাস্তা। মাশরাত আকাশের দিকে তাকাল৷ ফোটা ফোটা বৃষ্টি তার চেহারায় এসে পড়ছে৷ মাশরাতের চোখের কোণা বেয়ে অশ্রু পরলো। বৃষ্টির পানি ঢাকতে পারলো বা মাশরাতের অশ্রুকে।

পরের দিন…..
আধুনিক্তার কানে আযানের ধ্বনি ভেসে আসতেই লাফ দিয়ে উঠল। ঘড়ির দিকে তাকাতেই তার চোখ বের হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। ১২ টা ৪৬ বাজে, আজ সে এত দেরি করে উঠল। ভার্সিটিও যাওয়া হলো না। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে মল্লিকার দু’টো মিসড কল ভেসে আছে। আধুনিক্তা ঢোক গিলল। মল্লিকা হয় তো জেনে গিয়েছে এতক্ষণে। আধুনিক্তা কল ব্যাক করলো। তিন বার রিং বাজার রং রিসিভ হলো-
“হ্যালো”
“ক..কল দিয়েছিলি?”
“হ্যাঁ কোথায় তোরা? তুই মেহরিন কেও আসলি না আজ আমাকে নিতে। আমি একাই ভার্সিটি এসে পরলাম।”
আধুনিক্তা নিশ্চিন্তের নিশ্বাস ফেলল। মল্লিকার আবার বলল-
“তোরা আজ আসবি না আমাকেও বলতি। আমার খুব বোরিং লাগছে। আবার আজ রিয়াজ, নাজমুল আর কবিরও আসে নি। মাশরাত স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম উনি বললেন উনি কিছু জানে না।”
“মাশরাত আজ গিয়েছে?”
“হ্যাঁ উনি তো ট্রেইনিং দিচ্ছে বাকিদের। আমি কিছুক্ষণ বসে থেকে ক্লাসে এসে পরলাম।”
“তাহলে সাবধানে বাসায় চলে যা।”
“আগে বল তোরা আসিস নি কেন?”
“পরে বলবো এখন রাখছি আল্লাহ হাফেজ।”
আধুনিক্তা কল কেটে মাশরাতকে কল করলো। রিং বাজছে কিন্তু কেও ধরছে না। আধুনিক্তা ভাবলো হয় তো প্র্যাকটিস করাচ্ছে বলে শুনছে না৷ মাশরাত প্র্যাকটিসের সময় মোবাইল সাইলেন্ট মোড রাখে। আধুনিক্ত মেহরিনকে কল করলো। কল রিসিভ হতেই মেহরিন ঘুমন্ত কন্ঠে বলল-
“হুম বল”
“ঘুম তুই?”
“হুম”
“বাসায় নাকি হসপিটাল?”
“বাসায়, ফজরের সময় এসেছি।”
“কবির কেমন আছে?”
“সুস্থ, রক্ত বেশী যাওয়ার কারণে জ্ঞান ফিরছে না।”
“মল্লিকা কল দিয়েছিল এখনো ও কিছু জানে না। কবিরের জ্ঞান না ফেরার পর্যন্ত কিছু বলিস না।”
“ঠিক আছে এখন রাখি আমি ঘুমাবো।”
“ওকে ঘুমা”
আধুনিক্তা কল কেটে মোবাইল পাশে রেখে আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছেড়ে নামলো৷ আলমারি থেকে জামা বের করে বাথরুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আরমান দরজা ঠেলে ভেতরে আসলো৷ পড়নে তার স্কুল ইউনিফর্ম। আধুনিক্তাকে না দেখে বিছানায় উঠে বসলো। বাথরুম থেকে পানির শব্দ পেতেই বুঝল আধুনিক্তা বাথরুমে আছে। বোনকে না দেখলে তার দিন শুরু হয় না। আজ স্কুলে যাওয়ার সময় আধুনিক্তা ঘুম ছিলো। তাই স্কুল থেকে এসেই ডাইরেক্ট বোনের ঘরে এসেছে। বসে বসে পা নাড়াচ্ছিল তখনই আধুনিক্তার মোবাইল বেজে উঠল। আরমান মোবাইল হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে ধরলো-
“হ্যালো”
অপরদিক থেকে বাচ্চা কন্ঠ পেয়ে মাশরাত ভ্রু কুঁচকালো৷ আধুনিক্তা কন্ঠ বাচ্চাদের মতো হয়ে গেল কেন হঠাৎ? আরমান অপরদিক দিয়ে কোনো কথা না শুনতে চেয়ে বলল-
“কথা না বললে কল দিতে নেই৷ এটা ব্যাড মেনার্স।”
মাশরাত হাসলো। সে বুঝে গিয়েছে কন্ঠটা আরমানের। মাশরাত বলল-
“সরি স্যার আমি আজকের পর থেকে গুড মেনার্স শিখবো।”
“গুড বয়, কে আপনি?”
“আমার নাম মাশরাত আমি আপনার মাম্মামকে খুঁজছিলাম।”
“কেন?”
“আজ উনি ভার্সিটি আসেন নি কেন সেটাই জিজ্ঞেস করতাম।”
“আম্মু বলেছে মাম্মাম অসুস্থ তাই আজ ভার্সিটি যাবে না।”
“ওও আচ্ছা আপনার নামটা জানতে পারি?”
“আরমান মজুমদার।”
মাশরাত আবার হাসলো। আরমান পুরোই আধুনিক্তার কার্বন কপি৷ আধুনিক্তা যখন তার পুরো নাম বলে বেশ গর্বের সাথে বলে। আরমানও ঠিক সেভাবেই বলল। তখনই আধুনিক্তা বের হলো বাথরুম থেকে। আরমানকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসলো-
“গুড মর্নিং ছোটু।”
“নো নো দুপুরের ১ টা বাজে গুড আফটারনুন বলতে হয়।”
আধুনিক্তা হেসে আরমানের পাশে বসলো।
“কার সাথে কথা বলছো?”
“একটা আঙ্কেল কল দিয়েছে।”
আধুনিক্তা আরমানের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে দেখে মাশরাতের নাম। আধুনিক্তা হাসলো৷ কানে ধরে হ্যালো বলতেই মাশরাত বলল-
“আমি কোন এঙ্গেল দিয়ে আঙ্কেল জানতে পারি?”
“কল এ তোমার কন্ঠ বয়স্ক ব্যক্তিদের মতো শোনায়। এতে আমার ছোটুর কিছু করার নেই।”
“তোমাকে মাম্মাম ডাকে ইটস ওকে কিন্তু আমাকে আঙ্কেল কেন? আরমানকে বলো আমাকে ভাইয়া ডাকতে।”
আধুনিক্তা আরমানের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আপনার মনে আছে আমার সাথে ভার্সিটি গিয়েছিলে তখন দেখেছো না আমি একটা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছি?”
“হ্যাঁ”
“উনাকে তুমি ভাইয়া ডাকবে ওকে?”
“কিন্তু উনি তো আঙ্কেল হয়।”
মাশরাত শুনেই মুখ লটকালো। আধুনিক্তার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। আরমান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে আছে আধুনিক্তার হাসি দেখে। আধুনিক্তা মোবাইল কানে ধরে বলল-
“শুনলে আমার ছোটু কি বলেছে? ও তোমাকে আঙ্কেল ডাকবে। আর মাশরাত ওর বয়সের অনুযায়ী তোমার মতো বয়সী মানুষদের আঙ্কেল-ই ডাকার কথা।”
বলেই আধুনিক্তা আবার হেসে উঠলো। মাশরাত ভেংচি কাটলো আধুনিক্তার হাসি শুনে। মাশরাত বলল-
“হয়েছে আর হাসতে হবে না। কল দিয়েছিলে কেন সেটা বলো।”
“বাহ রে আমি কি তোমাকে কল দিতে পারি না?”
“হ্যাঁ পারো”
“তো জিজ্ঞেস করো কেন? আর তুমি আজ ভার্সিটি গিয়েছো কেন রাতে দেরি করে ঘুমিয়েছ তো বিশ্রাম নিতে। আমি দাদাইর সাথে কথা বলতাম।”
“লাগবে না ম্যাম লাগবে না। আমার কোনো মতো ৪ ঘন্টা ঘুম হলেই বিশ্রাম নেওয়া হয়ে যায়। আচ্ছা শুনো আমি হসপিটাল যাচ্ছি। যাবে তুমি?”
“হ্যাঁ যাব আমার বেশ টেনশন হচ্ছে কবিরের জন্য।”
“সুস্থ হয়ে যাবে।”
“হুম আচ্ছা আমি নাশতা করে আসি। প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে।”
“ওকে বাই”
“বাই”
আধুনিক্তা কল কেটে চুল শুকিয়ে নিলো। বিছানা গুছিয়ে আরমানকে নিয়ে ড্রইংরুমে গেল। কেও নেই আশে পাশে। আধুনিক্তা মায়ের ঘরে গেল। মা নামাজ পড়ছেন। আরমানের জামা ড্রয়ার থেকে বের করে আরমানকে গোসল করিয়ে জামা পরিবর্তন করে দিলো আধুনিক্তা। আরমানকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে রান্নাঘরে গেল। মা নাশতা ঢেকে রেখেছে তাদের জন্য। আধুনিক্তা পরম যত্নে আরমানকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে নিলো। মা ঘর থেকে বের হয়ে আধুনিক্তা আর আরমানকে দেখে মুচকি হাসলো। আধুনিক্তা হঠাৎ মাথায় স্পর্শ পেল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মা দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তা মুচকি হাসলো। আধুনিক্তা আরমানকে গ্লাসে দুধ ঢেলে দিয়ে উঠে দাঁড়াল।
“আম্মু ,আব্বু কোথায়?”
“ফ্যাক্টরি গিয়েছে। তোমার সেই বন্ধু কেমন আছে খবর পেয়েছো?”
“মেহরিনকে কল দিয়েছিলাম। এখন সুস্থ আছে। প্রচুর রক্ত ঝরেছে ছেলেটার তাই এখনো জ্ঞান ফিরে নি।”
“সুইসাইড কেন করতে গেল ছেলেটা? জীবন কি এত-ই সস্তা? ওর আম্মুকে বলবি দু’টো থাপ্পড় দিতে ও সুস্থ হলে।”
“ঠিক বললে, কবির ধৈর্যশীল কিন্তু হঠাৎ এমন কোনো কান্ড ঘটাবে কেও বুঝতে পারে নি।”
তখনই আধুনিক্তার মোবাইল বেজে উঠল। মল্লিকার নাম দেখে রিসিভ করলো। অপরদিক থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসতেই আধুনিক্তা হাতমুঠো শক্ত করে ফেলল।
“তোরা বন্ধুর নামে কলঙ্ক। কবির সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে এটা তোরা লুকালি আমার থেকে?”
“তুই কিভাবে জানলি?”
“কিভাবে জানলাম সেটা আসল কথা না। আসল কথা তোরা আমার থেকে লুকিয়েছিস।”
“আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি।”
“পুরো ভার্সিটিতে ছড়িয়ে গিয়েছে এই ঘটনা। আমি প্রথম বুঝতে পারছিলাম না কোন বিষয় নিয়ে গসিপ চলছে৷ ভার্সিটির একটা মেয়ে বলল এই ঘটনা আমাকে। দোস্ত কি এমন ক্ষতি হতো আমাকে বললে বল তো?”
“আমি আসছি তোর বাসায় অপেক্ষা কর।”
বলেই আধুনিক্তা কল কেটে দিলো। মাকে বলে তারাতাড়ি বাসা বের হয়ে মল্লিকার বাসায় গেল। মল্লিকার বাবা মা যাতে এসব বিষয়ে না জানে তাই মল্লিকা বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। আধুনিক্তা মল্লিকাকে নিয়ে। হসপিটাল চলে গেল। মল্লিকা চেয়েছিলো আধুনিক্তাকে ইচ্ছে মতো বকবে কিন্তু আধুনিক্তার রাগী চেহারা দেখে সে চুপসে গিয়েছে। হসপিটালের সামনে গাড়ি থামিয়ে আধুনিক্তা গাড়ি থেকে বের হয়ে মল্লিকার হাত ধরে টেনে হসপিটালের ভেতরে নিয়ে গেল। মল্লিকা অবাক হলো। হঠাৎ আধুনিক্তার কি হয়েছে সে বুঝতে পারছে না। আধুনিক্তা কবিরের কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। কবিরের জ্ঞান ফিরেছে। হেলান দিয়ে বসে পানি পান করছিলো মল্লিকাকে দেখে থমকে গেলো। মল্লিকার চোখের কোণায় পানি ছলছল করছে। কবিরের মা বলল-
“আধুনিক্তা ও কে?”
“আপনার ছেলের সুইসাইড করার একমাত্র কারণ ওর সাথে জড়িত।”
কবিরের বাবা মা দুজনই চমকে উঠলেন।মল্লিকা কবিরের দিকে হেটে গিয়ে তাকিয়ে রইল। কবিরের গলা দিয়েও শব্দ বের হচ্ছে না। আধুনিক্তা আবার বলা শুরু করলো-
“ওর নাম মল্লিকা। মল্লিকা ৩ বছর ধরে আপনাদের ছেলেকে ভালোবাসে। কিন্তু কবির মল্লিকাকে একদমই পছন্দ করতো না। উপরে উপরে বিরক্ত হলেও এক সময় কবিরও ভালোবেসে ফেলে মল্লিকাকে। কিন্তু এখন মল্লিকা অন্য কারোর বাগদত্তা। কবির এটা জানার পর ভেঙে পড়ে। গতকাল দুপুরে মল্লিকার এনগেজমেন্টের কথা শুনে রাতের মধ্যে সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে কবির।”
মল্লিকা মুখ চেপে ধরে কেঁদে উঠল। কবির মাথা নিচু করে ফেলল। কবিরের বাবা মা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আধুনিক্তা আবার বলল-
“এতে মল্লিকার কোনো দোষ নেই। কবির নিজেই আগে মল্লিকাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।”
কবিরের মা বলল-
“ও আমাদের এসব বিষয়ে কিছুই বলে নি। বললে আমরা নাহয় মল্লিকার মা বাবার সাথে কথা বলতাম।”
“আন্টি আপনার ছেলে খুব ভীতু। সে সবাইকে দেখায় সে খুব সাহসী খুব রাগী। কিন্তু এমন কিছুই না। ভেতরে ও একটা ভেজা বিড়াল। আমার আম্মু বলেছে কবির সুস্থ হলে ওর গালে দু’টো থাপ্পড় দিতে। কারণ জীবন এত সস্তা না। মল্লিকা চল এখন।”
মল্লিকা আধুনিক্তার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকাল। আধুনিক্তা বিরক্ত নিয়ে বলল-
“তুই এইখানে কোন অধিকারে থাকবি বল। বন্ধু নাকি প্রেমিকা? তোদের মাঝে এমন কোনো সম্পর্ক নেই। কবির হঠাৎ তোকে এত-ই ভালোবেসে ফেলল যে সুইসাইড করার চেষ্টা করলো। এটা একটু বেশী হলো না? ওর উচিত ছিল তোর সম্পর্কে সব জেনে তারপর তোকে রিজেক্ট করা।”
“ওর এতে কী দোষ বল? পুরো এলাকা আমার সম্পর্কে যাতা বলে। ও কার থেকে সত্যিটা জানবে?”
“লজ্জা করে না তোর অন্য কারো বাগদত্তা হয়ে আর একজনের কথা ভাবিস।”
মল্লিকা কিছু বলার আগে কবির বলে উঠলো-
“মল্লিকা, কলেজে আমাদের ফেয়ারওয়েল এর কথা মনে আছে? তোমরাই ডেকোরেশন করেছিলে। তুমি যখন আমাদের সবার জন্য একটা চিঠি পড়ে শুনিয়েছিলে ঠিক তখনই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম৷ কিন্তু আমি নিজেও বুঝতে পারি নি। তোমার সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি আমি। এমন না যে আমি জানার চেষ্টা করি নি আসল কারণ। কেও আমাকে তোমার সম্পর্কে ভালো কিছু বলে নি। তাই বিরক্ত লাগতো। এত গুলো মানুষ মিথ্যে কথা বলবে আমার মনে হয় নি। ধীরে ধীরে সব জানতে পারি। আমি শুনেছিলাম তোমার বিয়ে ঠিক হচ্ছে কিন্তু জানতাম না যে এনগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে।”
মল্লিকা দাঁতে দাঁত চেপে কাঁদছে। আধুনিক্তা বিরক্ত চেহারা বানিয়ে বলল-
“ওহ প্লিজ এটা কেমন ফিল্মি টাইপ হয়ে যাচ্ছে না? তুমি সুইসাইড কেন করতে গেলে?”
কবির কিছু বলল না। আধুনিক্তা তালিচ্ছ্যের হাসি দিয়ে বলল-
“আজব প্রকৃতির ভালোবাসা। যে ভালোবাসা মৃত্যু ডেকে আনে সে ভালোবাসার মানে হয় না। মল্লিকা চল অনেক ড্রামা হয়েছে আর ভালো লাগছে না।”
তখনই মাশরাত, রিয়াজ ও মেহরিন প্রবেশ করলো। এমন পরিস্থিতি দেখে তিনজনই অবাক হলো। মল্লিকাকে দেখে মেহরিন ঢোক গিলল। আধুনিক্তা পেছনে ফিরে দেখে তাদের। কবিরকে দেখে রিয়াজ দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। সাথে কিছু আদুরে স্বরের বকা আছেই। আধুনিক্তা মল্লিকার হাত ধরে বলল-
“চল, যা হয়েছিল তা স্বপ্ন ভেবে ভুলে যা।”
আধুনিক্তা টানতে টানতে মল্লিকাকে নিয়ে যাচ্ছে। কবির হাত মুঠো শক্ত করে বসে আছে। মল্লিকা হঠাৎ এক ঝটকাশ আধুনিক্তার হাত ছেড়ে বলল-
“ছাড় আমাকে। তুই কে যে আমার জীবনের ডিসিশন নিবি?”
আধুনিক্তা বাঁকা হাসি দিলো। আবার নিজেকে সামলে নিয়ে ঘুরে মল্লিকার দিকে রাগী দৃষ্টি বানিয়ে তাকাল। মল্লিকা আধুনিক্তার দিকে আঙুল তুলে বলল-
“তুই বন্ধু আছিস বন্ধুর মতো থাক। ভালোবাসি আমি কবিরকে।”
“ওহ প্লিজ মল্লিকা এইবার তো থাম। তোদের ড্রামা দেখে আমার মাথা ঘুরছে।”
“তো বেরিয়ে যা এখান থেকে৷ আমার জীবন আমি বুঝে নিব।”
“সত্যি নিতে পারবি? তোর বাম হাতে কারো নামের আংটি আছে ভুলে গেলি?”
মল্লিকা তারাতাড়ি আংটি খুলে মাটিতে ছুঁড়ে মারলো। রাগান্বিত কন্ঠে বলল-
“খুলে দিলাম সব বাঁধন। এখন আমি কারো বাগদত্তা নই। পারবো না কারো টাকা দিয়ে কেনা বস্ত্র হতে।”
মেহরিন অবাক হয়ে বলল-
“টাকা দিয়ে কেনা বস্ত্র মানে? কি বলছিস?”
মল্লিকা চুপ হয়ে গেল। আধুনিক্তা হঠাৎ শব্দ করে হেসে উঠল। মাশরাত হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে মুচকি হাসি দিয়ে আধুনিক্তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে আধুনিক্তার ব্যবহার দেখেই বুঝতে পারছিলো আধুনিক্তার কোনো প্ল্যান আছে। মেয়েটাকে এই কিছু দিনে ভালো মতো চিনেছে সে। আধুনিক্তা হাসি থামিয়ে বলল-
“অনেক হলো ভিলেন দের মতো হাসা। এখন শুন সবাই, মল্লিকা কিছুদিন আগে তার মামীর গ্রামে গিয়েছিল ঘুরতে। সে গ্রামের মাতবরের শালা মল্লিকাকে দেখে পছন্দ করেছে। মল্লিকা ঢাকায় ফেরার পর তারা আসে প্রস্তাব নিয়ে। কিন্তু এসে এলাকায় অনেক বাজে কথা শুনে। এতে পরিবারে আরো ঝামেলা হয়। কিন্তু মল্লিকার মামা মল্লিকাকে যেভাবেই হোক বিয়ে দিতে চান। সেই মাতবর বলেছে যদি যৌতুক হিসেবে তারা ২০ লক্ষ টাকা দেয় তাহলে মল্লিকাকে তারা বাড়ির বউ বানাবে।”
এইটুকু বলে আধুনিক্তা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। মাশরাত ডান বাম দেখলো। টেবিলের উপর পানির বোতল রাখা। হেটে গিয়ে বোতল নিয়ে আধুনিক্তার দিকে এগিয়ে দিলো৷ আধুনিক্তা তারাতাড়ি দু ঢোক পানি পান করে আবার বলা শুরু করলো-
“মল্লিকার মামা আমার দাদাইর কাছে গিয়েছিলেন সাহায্যের জন্য। দাদাই দিয়েছে টাকা৷ টাকা পাওয়ার পর তারা মল্লিকাকে আংটি পড়িয়ে রেখে যায়। আমি রাতে যখন বাসায় ফিরি সবাই জেগে ছিলো। দাদাই আর বাবা এই বিষয়ে কথা বলছিলো। দাদাই যখন বলল আমার বান্ধবীর মামার সাহায্য করেছে আমি পুরো ঘটনা জানতে চাই। উনি বলায় আমি একটা কথাই ভাবি সেটা হলো মল্লিকার মনের ক্ষোভ বের করা।”
আধুনিক্তা মল্লিকার চোখে চোখ রেখে বলল-
“এখন যে কথাগুলো আমাকে বললি সেদিন যদি তোর পরিবারকে বলতি তাহলে এইদিন দেখতে হতো না।”
মল্লিকা আধুনিক্তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল৷ আধুনিক্তা মুচকি হেসে মল্লিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল-
“হতে পারে আমাদের বন্ধুত্বের ৫ মাসও হয় নি। কিন্তু আমি তোর বয়সে বড়ো। বড়ো বোন হিসেবে আমার কর্তব্য তোর ভালো মন্দা ভাবা।”
“আই লাভ ইউ দোস্ত আই লাভ ইউ।”
“বাহ কিছুক্ষণ আগে তো আমি পর হয়ে গিয়েছিলাম।”
মল্লিকা আধুনিক্তাকে ছেড়ে কান ধরে নাক টানতে টানতে সরি বলল। আধুনিক্তা নাক মুখ কুঁচকে বলল-
“এহহ নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেললি। থাক আর জড়িয়ে ধরিস না। আই লাভ ইউ টু্।”
কবিরের মা আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বললেন-
“অনেক হয়েছে কান্নাকাটি। কবির একটু সুস্থ হোক আমরা যাব মল্লিকাদের বাসায়।”
আধুনিক্তা খুশীতে লাফ দিয়ে বলল-
“উ লা লা দোস্ত তোর বিয়ে৷ ও মাই গড কংগ্রেস কংগ্রেস।”
মল্লিকা হেসে মুখ লুকিয়ে ফেলল। মেহরিন দৌড়ে গিয়ে দুজনকে জড়িয়ে ধরলো। মাশরাত মনে মনে বলল-
“এই মেয়েকে বোঝা মুশকিল না বরং রোমাঞ্চকর। যত জানছি ততই অবাক হচ্ছি। সোজা কাজ উল্টো ভাবে করে। একা একাই সব সামলালো। আর এখন, হাসতে হাসতে যেন সব দাঁত বেরিয়ে যাবে।”
আধুনিক্তা মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাত তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। আধুনিক্তা সবার পাশ কাটিয়ে মাশরাতের সামনে এসে দাঁড়াল।
“হাসছো যে”
“আপনাকে আমি কী নামে ডাকবো ম্যাম?”
“কেন? আমার তো একটাই নাম।”
মাশরাত শব্দ করে হেসে উঠল। আধুনিক্তা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল-
“একটা কথা বলি?”
“বলো”
“আই লাভ ইউ”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here