তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_১৪

0
2160

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৪

[আগেই বলছি অনেকগুলা সরি। কিছু ব্যক্তিগত কারণের জন্য দেরি হলো গল্প দিতে। ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল❤️]

আধুনিক্তা কিছু বলার আগেই দাদাই মাশরাতের গালে সজোরে থাপ্পড় দিয়ে বসলো।

হঠাৎ আধুনিক্তা মাশরাতকে কনুই দিয়ে খোঁচা মেরে বলল-
“দাদাই যাতে কিছু না জানে৷ নর্মাল বিহেভ করো।”
মাশরাত জবাব দিলো না। আধুনিক্তা মাশরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে মাশরাত গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তা হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল-
“এই তোমার আবার কী হলো?”
তখনই মাশরাতের হুঁশ ফিরলো। ডান বাম দেখে আবার সামনে তাকাল৷ দাদাই দরজার দিকে দু’টো লোকের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। মাশরাত গালে হাত দিলো। তার মানে সে স্বপ্নে হারিয়ে গিয়েছিল কিন্তু এই স্বপ্ন সত্যি হতে কতক্ষণ? আধুনিক্তা আবার বলল-
“তোমার কি হয়েছে বলবে?”
“না..না কিছু না।”
“ওকে দাদাই আসলে সবাই নর্মাল বিহেভ করবে।”
সবাই মাথা নাড়াল। তখনই দাদাই এগিয়ে আসলো। আধুনিক্তার ভয় করছে। মাশরাতের হাত পা কাঁপছে থরথর করে। যদি তার স্বপ্ন সত্যি হয়ে যায়? দাদাই আধুনিক্তার সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
“বাসায় যাও কেন?”
“প্র্য..প্র্যাকটিস দেখছিলাম দাদাই।”
“ঠিক আছে, এখন চলে যাও বাসায়। আচ্ছা তোমরা জানো সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট কিভাবে হয়েছে? অনেকক্ষণ ধরে সবাই চেষ্টা করছে কিন্তু মনিটরে কোনো ফুটেজ আসছে না।”
সবাই আড়চোখে আধুনিক্তার দিকে তাকাল৷ আধুনিক্তা মাথা নিচু করে হাসছে। মাশরাত নার্ভাস হচ্ছে খুব। দাদাই আবার বলল-
“আচ্ছা বাদ দাও তোমরা তো বাচ্চা তোমরা কি করে জানবে।”
“হ্যাঁ দাদাই ঠিক বললে। আমরা তো বাচ্চা।”
“হুম, আচ্ছা তোমরা তাহলে চলে যাও৷ ভার্সিটি বন্ধ করে দিবে। আমি ক্যামেরা ঠিক করিয়ে বাসায় আসছি।”
সবাই মাথা নাড়াল। তারাতাড়ি যার যার ব্যাগ নিয়ে হাঁটা ধরলো। মাশরাত হাঁটার সময় আধুনিক্তার দিকে তাকাল। এমন ডেঞ্জারাস মেয়ে সে জীবনে দেখেনি৷ আধুনিক্তা মাশরাতের দিকে তাকাল। ছেলেটা তার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে। আধুনিক্তাও মুচকি হাসলো।

রাতেরবেলা…..
আধুনিক্তা বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে নিউজফিড ঘুরছে। রিফ্রেশ করতেই একটা পোস্ট ভেসে আসলো। এক মিনিট আগে মাশরাত পোস্ট করেছে। “মানেনা মন” গানের কিছু লাইন।
“রোজ হয় দেখা তবুও লাগে একা
মন চায় আর কাছে যাই
ভাবনার নদী ছুটে নীর বোধি
তুমি আছো হৃদয়ে তাই”
আধুনিক্তা মুচকি হাসলো পোস্টটা দেখে। হঠাৎ মেহরিনের কল আসলো। আধুনিক্তা কল রিসিভ করে কানে ধরলো-
“হ্যাঁ বল”
“দোস্ত একটা অঘটন ঘটেছে।”
আধুনিক্তা ধরফরিয়ে উঠে বসে জিজ্ঞেস করল-
“কী অঘটন?”
“রিয়াজ কল দিয়েছিলো তার বন্ধু কবির নাকি সুইসাইড করেছে।”
আধুনিক্তা থমকে বসে রইল। আজ সে কবিরকে বেশ মনমরা হয়ে যেতে দেখেছিল। আধুনিক্তা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-
“মল্লিকা জানে?”
“না, ওকে জানাবো কী না আমি বুঝতে পারছি না। রিয়াজ বললো সুইসাইড করেছে হসপিটাল নিয়ে গিয়েছে। মৃত্যু ঘটেছে কী না জানি না।”
“এখন মল্লিকাকে কিছু বলা দরকার নেই। তুই এখন কোথায়?”
“আমি তৈরী হচ্ছি হসপিটাল যাওয়ার জন্য।”
“বাসার সামনে দাঁড়া আমি গাড়ি নিয়ে আসছি। মাশরাতকে বলবো?”
“আমার মনে হয় স্যারকে জানালে ভালো হয়।”
“ঠিক আছে আমি বলছি”
“আচ্ছা”
আধুনিক্তা কল কেটে মাশরাতকে কল করলো। দু’বার রিং বাজতেই মাশরাত কল রিসিভ করলো-
“বলেন ম্যাম”
“মা..মাশরাত কবির নাকি সুইসাইড করেছে।”
“হোয়াট? কী বলো এসব?”
“সত্যি বলছি মেহরিন কল দিয়ে বলল। আমি হসপিটাল যাচ্ছি। যাবে তুমি?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আসছি হসপিটালের নাম কী?”
“আমি তোমাকে মেসেজ দিচ্ছি। এত তারাহুরোয় আমিও জিজ্ঞেস করি নি।”
“ঠিক আছে”
আধুনিক্তা কল কেটে তারাতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। রাত বাজে ১১ টা বাবা যেতে দিবে কী না সন্দেহ হচ্ছে তার।তবুও তৈরী হয়ে বাবার ঘরে গেল। বাবা আরমানের সাথে গেম খেলছে। মা আধুনিক্তাকে হিজাব বোরকা পড়া দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল-
“তুমি এত রাতে বোরকা পড়েছো কেন?”
“আম্মু আসলে.. আমার এক বন্ধু সুইসাইড করেছে। যদিও এখনো কনফার্ম হয় নি সে বেঁচে আছে কী না৷ আমার হসপিটাল যেতে হবে। আব্বু আমি কী যেতে পারি?”
বাবা আধুনিক্তার দিকে তাকিয়ে বলল-
“কোন বন্ধু?”
“ওর নাম কবির সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করে।”
“একা যাবে তুমি?”
“না আমি আগে মেহরিনের বাসায় যাব। তারপর তাকে নিয়ে হসপিটাল যাব।”
“ঠিক আছে সাবধানে যেও। আমার মাথা ব্যাথা করছে নাহলে আমিও গেতাম। আমাকে কল দিয়ে জানিও কেমন আছে তোমার বন্ধু।”
“ঠিক আছে আব্বু”
আধুনিক্তা অবাক হলো বাবা যেতে দিচ্ছে তাকে৷ হতে পারে তার বাবা ওভার প্রটেক্টিভ কিন্তু অন্যের বিপদে কখনো পিছিয়ে যান না। আধুনিক্তা তারাতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। ড্রাইভার মামা তাদের বাগানের ঘরের থাকে। উনাকে ডেকে তারাতাড়ি মেহরিনের বাসার উদ্দেশ্যে চলে গেল। মেহরিনকে তাদের বাসা থেকে পিক করে হসপিটালের জন্য রওয়ানা দিলো। মাশরাতকেও মেসেজ দিয়ে বলে দিলো হসপিটালের নাম।
“দোস্ত মল্লিকা জানলে কী হবে বুঝতে পারছি না।”
“এখন বলা প্রয়োজন নেই বললাম তো। আর রিয়াজ বলেছে কেন সুইসাইড করলো?”
“না রিয়াজও কান্না করছে। হঠাৎ কেন ছেলেটা সুইসাইড করার চেষ্টা করলো কেও বুঝতে পারছে না। যদি কবিরের কিছু হয়ে যায় মল্লিকাকে সামলানো কষ্ট হয়ে যাবে রে। মেয়েটা অনেক ভালোবাসে কবিরকে।”
আধুনিক্তা জবাব দিলো না। তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে যদি তার জীবনেও এমন পরিস্থিতি আসে তখন? বাবাকে মানাতে খুব কষ্ট হবে।

মাশরাত হসপিটাল পৌঁছে দেখে রিয়াজ ও কবিরের বাবা মা আর ছোটো ভাই বসে কান্না করছে। রিয়াজ মাশরাতকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরলো। মাশরাত কিভাবে তাদের শান্তনা দিবে বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর মেহরিন আর আধুনিক্তা আসলো। মেহরিন রিয়াজের কান্না দেখে দৌড়ে তার কাছে গেল৷ আলতো করে রিয়াজের গালে হাত রেখে বলল-
“তুমি এইভাবে কাঁদছো কেন?”
রিয়াজ কাঁদতে কাঁদতে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরলো। তাদের সবার কান্না দেখে আধুনিক্তা না কেঁদে পারলো। সেও মুখ টিপে কেঁদে উঠল। মাশরাত কবিরের বাবাকে সামলাচ্ছিলো। এখন দেখো আধুনিক্তাও কান্না করছে। তখনই নাজমুল আসলো৷ রিয়াজ নাজমুলকে দেখে মেহরিনকে ছেড়ে নাজমুলের দিকে হেটে গেল।
“ভাই দেখ শালায় কী করেছে। আমাদের সাথে কথা শেয়ার করা সে জরুরি মনে করলো না।”
“তুই ভেঙে পরিস না। ডাক্তার কিছু বলেনি?”
“অপারেশন চলছে। হাতের রগ নাকি কনুই পর্যন্ত উঠে গিয়েছে।”
নাজমুল রিয়াজকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিচ্ছে। মাশরাত মেহরিনের দিকে এগিয়ে এসে বলল-
“মল্লিকাকে কিছু বলেছো?”
“না স্যার”
আধুনিক্তা বলল-
“আমার মনে হয় এখন না জানানোই ভালো।”
“হুম, দোয়া করো বেশী বেশী কিছু হবে না কবিরের।”

সময় ঘনিয়ে দেড় ঘন্টা পাড় হলো। অপারেশন শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। ভীষণ রক্ত ঝরেছে কবিরের। ডাক্তার বলেছে হাত প্যারালাইজড হওয়ার সম্ভাবনা আছে যেহেতু রগ কনুই অব্দি উঠে গিয়েছিল। কবির এখন পুরোপুরি সুস্থ না হলেও তাকে ১৫ দিন হসপিটাল থাকতে হবে। মেহরিন আধুনিক্তাকে বলল বাসায় চলে যেতে সে রিয়াজের সাথে থাকবে। আধুনিক্তা তার বাবাকে কল দিয়ে বলল আসতে আরো কিছুক্ষণ দেরি হবে।
“আমার মনে হয় তোমার এখন বাসায় চলে যাওয়া দরকার।”
মাশরাতের কথার উত্তর দিলো না আধুনিক্তা৷ মাশরাত বলেছে আজ রাত হসপিটাল থাকবে। আধুনিক্তা এই গোল্ডেন চান্স কিছুতেই মিস করতে চায় না। আধুনিক্তার কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে মাশরাত হেটে এসে আধুনিক্তার সামনে দাঁড়াল-
“কী হলো ম্যাম বাসায় যাবেন না?”
“বাসায়..বাসায় গেলে আমি ঘুমাতে পারবো না। টেনশন মাথায় চেপে বসবে। আমি সকাল হলেই চলে যাব।”
“তোমার কী মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? তুমি সকালে যাবে মানে? সারারাত কী হসপিটালে থাকার প্ল্যান করছো?”
মাশরাত ধমকের স্বরে বলল কথাগুলো। আধুনিক্তা মন খারাপ করলো। মাশরাত তাকে বাসায় পাঠিয়ে-ই ছাড়বে। মাশরাত ভাবলো হয় তো বেশী বকে দিলো। আধুনিক্তা গালে আলতো করে হাত রেখে বলল-
“তোমার পরিবার তোমাকে অনেক যত্নে লালন পালন করেছে। তোমার কী হসপিটালে থাকার অভ্যেস আছে বলো?”
“আছে, আমি ৬ মাস সিঙ্গাপুরের হসপিটালে এডমিট ছিলাম।”
মাশরাত মাথায় হাত দিয়ে দিলো। আধুনিক্তা ভাবছে সে কী ভুল কিছু বলল। মাশরাত একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল-
“আধু ওটা সিঙ্গাপুরের হসপিটাল ছিলো। আর তুমি তখন এডমিট ছিলে। সারাদিন শুয়ে ছিলে বেডে তাই না? এখানে পার্সোনাল কেবিনের ব্যবস্থা করার সম্ভাবনা খুব কম।”
“তুমি থাকবে কিভাবে?”
“আমি করিডরে থাকবো সমস্যা নেই।”
“আমিও এইখানেই থাকব।”
“তুমি রাত জাগতে পারবে না।”
“পারবো, তুমি আমাকে নিয়ে টেনশন করো না তো।”
মাশরাত হার মানলো। এই মেয়েকে মানানো সহজ না সে বুঝতে পেরেছে। আধুনিক্তাকে দাঁড়াতে বলে মাশরাত চলে গেল। আধুনিক্তা করিডরের পিলারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর মাশরাত আসলো। তার হাতে দু’টো কাপ। এগিয়ে এসে আধুনিক্তার দিকে একটা কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল-
“কফি পান করো ভালো লাগবে।”
“উইথ সুগার অর উইথআউট সুগার?”
“উইথ সুগার।”
“খাবো না আমি।”
“কিন্তু কেন?”
“চিনি খেলে ওজন বাড়ে।”
মাশরাত ফিক করে হেসে দিলো। আধুনিক্তা ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মাশরাত বলল-
“একদিন খেলে ওজন বাড়বে না।”
“তবুও আমার ভয় করে। মোটা হয়ে গেলে বাস্কেটবল খেলতে আমার অসুবিধে হবে।”
মাশরাত শব্দ করে হেসে উঠলো। আধুনিক্তা বিরক্ত হলো। অকারণে শুধু হাসে ছেলেটা। মাশরাত হাসি থামিয়ে বলল-
“তুমি একদম নিশ্চিন্তে থাকো। এক কাপ কফি খেলে কিছু হবে না। এই দেখো আমার জন্যও নিয়ে এসেছি।”
আধুনিক্তা কিছুক্ষণ ভেবে মাশরাতের হাত থেকে কাপ নিলো। মাশরাত মনে মনে না হেসে পারছে না। কফি খাওয়ার জন্যও ভাবতে হয়? আধুনিক্তা কফির কাপে চুমুক দিয়ে মুগ্ধ হলো।
“কফিটা বেশ মজা হয়েছে। কোন ক্যাফে থেকে এসেছ?”
“পাশেই একটা টং দোকান আছে। চা এবং কফি বিক্রি করা হয়।”
আধুনিক্তা থমকে গেল। টং দোকানের নাম শুনে তার পেট গুড়গুড় করছে। মাশরাত কাপে চুমুক দিয়ে আধুনিক্তার দিকে তাকাল। আধুনিক্তা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
“কি হয়েছে?”
মাশরাতের প্রশ্নে আধুনিক্তা না সূচক মাথা নাড়িয়ে মুচকি হাসলো।
“টেনশন করছো কবিরকে?”
“হুম”
“ঠিক হয়ে যাবে”
“তাই যেন হয়। আচ্ছা তুমি কোনোদিন সুইসাইড করার চেষ্টা করো নি? বা কোনোদিন ভাবো নি এই জীবন রেখে কী লাভ মরে যাওয়াই ভালো।”
“সত্যি বলতে প্রতিদিন ভাবি মরে গেলেই ভালো হবে।”
আধুনিক্তা মন খারাপ করলো। মাশরাতের দৃষ্টি অন্যদিকে। কাপে আর একটা চুমুক দিয়ে বলল-
“কিন্তু আমার বাঁচতে হবে। আমার মা বোনের জন্য আমার বাঁচতে হবে।”
আধুনিক্তা মুচকি হাসলো।

রাত আরো গভীর হয়ে গেল। চারপাশে বাতাস হইছে। মাশরাত আধুনিক্তাকে নিয়ে জোর করে হসপিটাল থেকে বের করলো। ঘুমের কারণে আধুনিক্তা বসে থাকতে পর্যন্ত পারছে না। তাই তাকে বাসায় পাঠানোই শ্রেয়। আধুনিক্তাকে জোর করে গাড়িতে বসালো মাশরাত। মাশরাত ড্রাইবার মামার দিকে তাকাল। যদিও আধুনিক্তা বলেছে মামা প্রায় ১৫ বছর ধরে তাদের ড্রাইভার আর মেয়ের মতোই আধুনিক্তাকে। আজকাল কাছের মানুষদের উপরও বিশ্বাস করতে ভয় করে উনাকে তো মাশরাত একদমই চিনে না। মাশরাতের মন চাচ্ছে না আধুনিক্তাকে একা পাঠাতে। এমনিতেও মেয়েটা ঘুমের কারণে তাকাতে পারছে না। মাশরাত কিছু একটা ভেবে গাড়িতে উঠে বসলো আধুনিক্তার পাশে। তাকে বাসায় দিয়ে সে আবার হসপিটাল চলে আসবে। আধুনিক্তা অবাক হয়ে বলল-
“তুমি আমার বাসায় যাবে?”
“তোমাকে বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে চলে আসবো।”
“আবার আসবে তুমি?”
“হ্যাঁ”
আধুনিক্তা আর কিছু বলল না। মাশরাত অন্যের কত খেয়াল রাখে। আধুনিক্তা তার বউ হলে তার কত খেয়াল রাখবে ভাবতেই আধুনিক্তার লজ্জা লাগছে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করলো। মাশরাত আর আধুনিক্তা পাশাপাশি বসে আছে। মাশরাত জানালার খুলে চেহারা অর্ধেক বের করে রেখেছে। আধুনিক্তা বলল-
“কষ্ট হচ্ছে না তো?”
“না এখন বাতাস অনেক ভালোই লাগছে।”
“আমার সাথে যদি প্রতিদিন গাড়িতে যাতায়াত করো আর কষ্ট হবে না তোমার।”
“নো থ্যাঙ্কস আমি এইভাবেই ঠিক আছি।”
“যদি ভবিষ্যতে তোমাকে তোমার শ্বশুর বাড়ির মানুষ গাড়ি দেয় যৌতুক হিসেবে তখন?”
মাশরাত ছোটো ছোটো চোখ করে আধুনিক্তার দিকে তাকাল। আধুনিক্তা ভেংচি কেটে বলল-
“এইভাবে তাকানোর কি আছে মিস্টার মাশরাত।”
“দেখছি তোমাকে”
আধুনিক্তা লজ্জা পেল। মাশরাত আবার বলল-
“তোমার পাগল দুনিয়াতে আর একটাও নেই আমি বাজি ধরে বলতে পারবো।”
আধুনিক্তা লজ্জা মুহূর্তেই মাটিতে মিশে গেল। রাগী কন্ঠে বলল-
“হ্যাঁ আমি পাগল তোমার কি?”
“আমার কিছু না।”
আধুনিক্তা পারছে না মাশরাতের গলা চেপে ধরে। তার ঘুম উড়ে গিয়েছে মাশরাতের কথা শুনে। চুপচাপ নাক ফুলিয়ে বসে রইল। মাশরাত আধুনিক্তাকে মুখ টিপে হাসলো। তখনই ঝুমঝুম করে বৃষ্টি পরতে লাগলো। মাশরাত কিছুক্ষণ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থেকে আধুনিক্তার দিকে তাকিয়ে বলল-
“কখনো বৃষ্টিতে ভিজেছো?”
“হুম”
“কেমন লাগে?”
“ফালতু, কেমন কাদা মাখা হয়ে যায় শরীর।”
“বলো কি? আমার তো বেশ ভালো লাগে। ভাবছি তোমাকে বাসায় ড্রপ করে আমিও বাসায় চলে যাব বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে।”
“তোমার বৃষ্টি পছন্দ?”
“ভীষণ”
আধুনিক্তা সাথে সাথে ড্রাইভার মামাকে বলল গাড়ি থামাতে। মাশরাত অবাক হলো। আধুনিক্তা তারাতাড়ি দরজা খুলে বের হলো৷ মাশরাত কিছু বুঝতে পারছে না। আধুনিক্তা ঘুরে এসে মাশরাতের পাশের দরজা খুলে ইশারায় বলল বের হতে।
“আধুনিক্তা ফিরে আসো তোমার আব্বু আম্মু বকবে।”
আধুনিক্তা কোনো কথা শুনলো না। মাশরাতের হাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে বের করলো। মাশরাত অবাক হলো ভীষণ।
“আধুনিক্তা চলো এখনই ঠান্ডা লেগে যাবে তোমার।”
আধুনিক্তা পিছিয়ে যেতে যেতে বলল-
“আমি ভুল ছিলাম মাশরাত। আই এম ইন লাভ উইথ রেইন।”
মাশরাত কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আধুনিক্তা হাতের ইশারায় বলল আসতে। কিন্তু মাশরাত যাবে না। আধুনিক্তা তার দু-হাত পাখির ডানার মতো মেলে দিয়ে বলল-
“মাশরাত একবার এই বৃষ্টি অনুভব করে দেখো। আজ তোমার অনুভব করা শ্রেষ্ঠ অনুভূতি হবে এটা। বিকজ রেইন ইজ দ্যা মোস্ট বিউটিফুল পার্ট অফ নেইচার। আই এম ইন লাভ এগেইন এন্ড এগেইন এন্ড এগেইন।”
বলেই আধুনিক্তা দু’বার গোল গোল ঘুরলো। মাশরাত থমকে দাঁড়িয়ে আছে। হাত পা কাঁপছে তার। আধুনিক্তা তাবাসসুমের বলা কথাগুলো বলল। তাবাসসুমও ঠিক এমনই কিছু একটা বলেছিলো। মাশরাতের কানে তাবাসসুমের কথাগুলো ভেসে উঠলো-
“মাশরাত আজ এই বৃষ্টি একসাথে অনুভব করে দেখি। হয় তো আমাদের অনুভব করা শ্রেষ্ঠ অনুভূতি হবে এটা। বিকজ রেইন ইজ দ্যা মোস্ট বিউটিফুল পার্ট অফ নেইচার। আই এম ইন লাভ এগেইন এন্ড এগেইন অলটাইম। এন্ড আই লাভ ইউ সো মাচ।”

চলবে…..

আগের পর্বের লিংক ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here