তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_১৩

0
2279

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৩

মাশরাতের মনোযোগ আজ ট্রেইনিং এ নেই। সবাই বেশ অবাক। সে বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। মেহরিনকে এই নিয়ে ৫ বার জিজ্ঞেস করলো আধুনিক্তা কোথায়। মল্লিকাও এখনো আসছে না। দুজন তো একসাথেই আসে সবসময়। রিয়াজ মাশরাতের ছটফটানি দেখে মেহরিনের কাছে এসে কানের সামনে ফিসফিস করে বলল-
“স্যার আধুনিক্তার জন্য এমন করছে কেন?”
“আমি কী করে বলব? আমি নিজেই আজ অবাক হচ্ছি।”
“আধুনিক্তাকে কল দিয়ে আসতে বলো।”
“কিন্তু কেন?”
“আধুনিক্তা আসলে স্যার কি করবে তা দেখতে চাই।”
মেহরিন মাথা নাড়াল। দৌড়ে গিয়ে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করল। সাধারণত কেও প্র্যাকটিস ছেড়ে এমন কিছু করলে মাশরাত খুব বকাঝকা করে। কিন্তু এখন তার মনোযোগ অন্যদিকে তাই খেয়াল করে নি। মেহরিন আধুনিক্তাকে কল করলো। রিসিভ হতেই ঝাপিয়ে পড়লো আধুনিক্তার উপর।
“কোথায় তুই?”
“কোথায় মানে? ক্লাসে আমি।”
“ক্লাস এখনো শেষ হয় নি?”
“হয়েছে তো।”
“তো আসছিস না কেন এখনো। আর মল্লিকা কোথায়?”
“মল্লিকাও আমার পাশে বসে আছে। তুই হঠাৎ আমাকে ডাকছিস কেন?”
“এইভাবেই, তুই তারাতাড়ি আয়।”
“সত্যি করে বল, তোর ওই হাঁদারাম ট্রেইনারের জন্য তুই আমাকে কল দিয়ে আসতে বলছিস তাই না?”
“আরে বাহ বুঝেও গেলি? দোস্ত প্লিজ আমাদের খেলা খুব নিকটে। একদিন প্র্যাকটিস মিস হলেই ব্যান্ড বাজবে।”
“ওকে, আসছি।”
বলেই আধুনিক্তা কল কেটে দিলো। মেহরিন মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাত রিয়াজকে কি যেন বলছে আর দরজার দিকে বার বার দেখছে। মেহরিন লম্বা নিশ্বাস ফেলল। কিছুক্ষণ পর আধুনিক্তা আসলো। মাশরাত তাকে দেখেই নিশ্চিন্তের নিশ্বাস ফেলল। সবাইকে বলল প্র্যাকটিসে মনোযোগ দিতে সে আসছে। মাশরাত হেটে গিয়ে আধুনিক্তার সামনে দাঁড়াল। আধুনিক্তা মাশরাতকে দেখেও না দেখার ভান ধরে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। মাশরাত থতমত খেয়ে গেল। আবার দৌড়ে গিয়ে আধুনিক্তার সামনে দাঁড়াল। আধুনিক্তা আবার পাশ কাটিয়ে চলে গেল। মাশরাত রাগে গজগজ করতে করতে হেটে গিয়ে আধুনিক্তার সামনে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলল-
“কি হয়েছে তোমার?”
আধুনিক্তা চোখ তুলে মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাতকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অনেকক্ষণ ছটফট করছিল। আধুনিক্তা মনে মনে লাফাচ্ছে। আধুনিক্তাকে চুপ থাকতে দেখে মাশরাত দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
“কি হলো?”
“কিছু না”
“তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে?”
“ওইযে ওই ছেলেটা আছে না? নাম যেন কি ভুলে গেলাম। তার সাথে ছিলাম।”
মাশরাতের মাথা বিগড়ে গেল। এক ঝটকায় আধুনিক্তার কাঁধে হাত রেখে চেপে ধরে কাছে নিয়ে আসলো। চোখে চোখ রেখে বলল-
“কোন ছেলে?”
হঠাৎ এমন কিছু হওয়ায় আধুনিক্তা না চমকিয়ে পারলো না৷ মাশরাত চোখ দেখে ঢোক গিলল। মাশরাত আবার জিজ্ঞেস করল-
“কোন ছেলে আধু?”
“ও..ওই ছেলে”
“নাম কি?”
“ম..মনে নে..নেই।”
আধুনিক্তা বলেই পাশ ফিরে তাকাল। এইখানে থাকা প্রত্যেকটা মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আধুনিক্তা লজ্জায় ডুবি ডুবি অবস্থা। মল্লিকা মেহরিনের কাঁধে কনুই ঠেকিয়ে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে। মেহরিন মুখ হা হয়ে আছে। রিয়াজ তাকায় আবার দু-তিনবার পলক ফেলছে আবার তাকায়। আধুনিক্তা মাথা নিচু করে ফিসফিস করে বললো-
“ছাড়ো প্লিজ।”
“ছাড়বো না, আগে বলো কোন ছেলে? একটু আগে তো আমাকে কথা শোনাচ্ছিলে। এখন আমার কি করা উচিত?”
“জানি না”
“মাথায় তুলে মাটিতে ছুঁড়ে মারবো আর একদিন এমন কিছু শুনলে।”
“এই এই কি বললে তুমি? তুমি আমাকে মাটিতে ছুঁড়ে মারবে? এত বড়ো সাহস তোমার?”
মাশরাত বাঁকা হাসি দিয়ে আধুনিক্তার আরো কাছে গিয়ে নিচু গলায় বলল-
“তুমি আমার সাহসের সাথে এখনো পরিচয় হও নি মিস আধুনিক্তা মজুমদার।”
আধুনিক্তার শরীর শিউরে উঠছে বার বার। মাশরাত লজ্জার মাথা চিবিয়ে খেয়েছে সে শিওর। আধুনিক্তা নিচু স্বরে বলল-
“সবাই তাকিয়ে আছে প্লিজ এখন ছাড়ো।”
মাশরাত আধুনিক্তার কথা শুনে পাশে ফিরে তাকাল। সত্যি তো সবাই তাকিয়ে আছে। মাশরাত হা হয়ে গেল। তারাতাড়ি আধুনিক্তাকে ছেড়ে কিছুটা পিছিয়ে পকেটে হাত রাখলো৷ কি করবে বুঝতে পারছে না৷ সবাইকে ধমকের স্বরে বলল-
“কি হচ্ছে এইখানে? যাও প্র্যাকটিস করো।”
সবাই দ্রুত চলে গেল প্র্যাকটিস করার জন্য। আধুনিক্তা হেটে গিয়ে মল্লিকার পাশে দাঁড়াল। সে লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না। মল্লিকা বলল-
“দোস্ত একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
আধুনিক্তা বুঝতে পেরেছে মল্লিকা কি জিজ্ঞেস করতে চায়। মল্লিকার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়াল। মল্লিকা ফিক করে হেসে দিলো। আধুনিক্তা মুখ লটকিয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে।

প্র্যাকটিস শেষে সবাই এক এক করে চলে গেল। আধুনিক্তা মেহরিনের হাত ধরে মিনতিস স্বরে বলল-
“দোস্ত হাঁদারামটার রাগী রূপ এমন আমি জানলে কখনো দুষ্টুমি করতাম না। প্লিজ আমাকে নিয়ে যা।”
“তুই কি ছোটো বাচ্চা যে তোকে কোলে করে নিয়ে যাব?”
“মানে আমি বলতে চাচ্ছি…”
আধুনিক্তা পুরো কথা বলার আগেই মাশরাত ভারী কন্ঠে বলল-
“আধুনিক্তা তোমার সাথে কথা আছে।”
আধুনিক্তা আহত দৃষ্টিতে মেহরিনের দিকে তাকাল৷ মেহরিন তারাতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে নিলো। এক কদম এগিয়ে যেতেই আধুনিক্তা ওকে ধরে বলল-
“দোস্ত আমাকে একা রেখে..”
“একদম এখন ঢং করবি না। তোদের মাঝে কি চলছে আমি জানি না। কিন্তু এইটুকু বলতে পারি স্যারের মনে তোর প্রতি অনুভূতি আছে। এখন এটা কোন অনুভূতি আমি জানি না। অল দ্যা বেস্ট দোস্ত।”
বলেই মাশরাত দৌড়ে পালালো। আধুনিক্তা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। মেহরিন যেতেই মাশরাত আধুনিক্তার দিকে হেটে আসলো। আধুনিক্তা ডান বাম দেখছে। সে তো রেগে ছিলো মাশরাতের উপর এখন ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
“আর ইউ ওকে?”
আধুনিক্তা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। মাশরাত মুচকি হেসে বলল-
“তুমি রাগ করেছ আমার উপর?”
“না তো”
“কিছুক্ষণ আগে তো রাগে আগুন হয়ে ছিলে হঠাৎ চুপসে গেলে যে?”
আধুনিক্তা কিছু একটা ভেবে রাগী দৃষ্টি বানিয়ে বলল-
“আমার কোনো দরকার নেই তোমার উপর রাগ করে থাকার৷ যাও তুমি ওই মেয়েদের কাছে।”
মাশরাত হাসলো। সে ইচ্ছে করে আধুনিক্তার মাথায় ওর রাগের কথা ঢুকিয়ে দিয়েছে। কারণ সে একটু আগে আধুনিক্তার উপর রাগ করেছিল। মাশরাত নিজেই অবাক সে অন্য ছেলের কথা শুনে কেন রাগ করলো। আধুনিক্তা যাতে এই বিষয়ে কথা না বলে তাই টপিক চেঞ্জ করাই মাশরাতের কাছে উত্তম মনে হলো। মাশরাত দুষ্টুমির ভঙ্গিতে বলল-
“কেন তোমার কি জেলাস ফিল হয়?”
“এমন কেন তোমার মাইন্ড? আমার মধ্যে জেলাস অনুভূতি নেই।”
মাশরাত হাসলো আধুনিক্তার কথা শুনে। আধুনিক্তা ভেংচি কেটে বলল-
“এত হাসতে হবে না। একটা কথা বলার আছে তোমাকে।”
“বলো”
“আমি যতবারই বাস্কেটবল খেলেছি আমাকে কি দেখে মনে হয়েছে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি বা আমার কষ্ট হচ্ছে।”
“যদি সত্যি বলি একদম না। আমার মনে হয় এই খেলা তোমার মন আরো ভালো করে দেয়।”
“হ্যাঁ সেটাই সো স্যার আমি এইবার ন্যাশনাল খেলায় অংশগ্রহণ করতে চাই।”
“সম্ভব না আধুনিক্তা। তোমার পরিবারের কথা ভুলে গেলে?”
“শুনো, খেলার দিন দাদাই ছাড়া আর কেও থাকবে না। আর দাদাইকে হ্যান্ডেল করা আমার বাম হাতের কাজ। বাবা যেহেতু দেখবে না রাগ করবে কিভাবে?”
“খেলার পর তো জেনেই যাবে।”
“তখন জানলে সমস্যা নেই।”
“তুমি কি শিওর?”
“একদম”
“ঠিক আছে মিস ন্যাশনাল এওয়ার্ড উইনার আধুনিক্তা। আগামীকাল দেখা হবে।”
আধুনিক্তা আর মাশরাত দুজনই হাসলো।

পরেরদিন….
সবার মনে ভয় কাজ করছে। কারণ মাশরাত এইমাত্র এনাউন্স করলো আধুনিক্তা এইবার ন্যাশনাল কম্পিটিশনে খেলছে। আধুনিক্তা সবার চেহারা দেখে মন খারাপ করে বলল-
“আমি খেলছি বলে কেও খুশী না।”
মেহরিন আধুনিক্তার হাত ধরে বলল-
“ধ্যাত পাগল এমন কিছুই না। আমরা অন্য কিছু ভাবছি।”
“কী?”
“চেয়ারম্যান সাহেব আগেই বলেছে তোকে কখনো খেলতে দিবে না। উনি জানলে কি হবে সেটাই ভাবছি।”
“শুন, উনি সবার জন্য চেয়ারম্যান সাহেব কিন্তু আমার জন্য তো আমার দাদাই। দাদাইকে মানানো আমার বাম হাতের কাজ।”
রিয়াজ বলল-
“তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু তুমি শিওর তো খেলতে পারবে।”
“একদম শিওর।”
“কিন্তু আধুনিক্তা ক্যামেরা?”
রিয়াজের কথায় আধুনিক্তা বাঁকা হাসি দিলো। সবাই হেসে দিলো আধুনিক্তার হাসি দেখে। আধুনিক্তার হাসি-ই বলে দিচ্ছে সে নিশ্চয়ই ক্যামেরার সাথে কোনো গন্ডগোল করেছে।
শুরু হলো প্র্যাকটিস। মল্লিকা বেঞ্চে বসে সবার খেলা দেখছে। কিছুক্ষণ পর কবির আসলো। মল্লিকা কবিরকে দেখে অপ্রস্তুত হলো। কবির এসে চারপাশে চোখ বুলালো। রিয়াজ প্র্যাকটিসে ব্যস্ত। হঠাৎ তার চোখ গেল বেঞ্চের দিকে। মল্লিকাকে দেখে তার ঠোটের কোনায় মুচকি হাসি ফুটে উঠল। দ্রুত হাঁটা ধরলো। মল্লিকা কবিরকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সে অন্যদিকে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরলো। কিন্তু কবির দ্রুত এসে মল্লিকার সামনে দাঁড়িয়ে গেল। মল্লিকা কবিরকে দেখে বার বার ঢোক গিলছে। সে ডিস্টার্ব করা ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন মল্লিকার ভূত কবিরের উপর ভর করেছে। কবির বলল-
“পালাচ্ছিলে কেন?”
“কে পালাচ্ছে?”
“আমার সামনে একটাই মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। আর সে মানুষটা তুমি। সো স্বাভাবিক আমি তোমাকেই জিজ্ঞেস করছি। পালাচ্ছিলে কেন?”
“আমি পালাচ্ছি না।”
“হ্যাঁ তা তো দেখেই বুঝতে পেরেছি।”
হঠাৎ কবিরের চোখ গেল মল্লিকার বাম হাতে অনামিকা আঙুলের দিকে। মল্লিকার বাম হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল আংটির দিকে। মল্লিকা বুঝতে পারলো কবির তার আংটির দিকে তাকিয়ে আছে। কবির বলল-
“এই আঙুলে আংটি পড়েছো কেন? বিয়ের আগে এসব ভালো না।”
বলেই কবির মল্লিকার আংটি ধরে টান দিতে নিলো। তার আগেই মল্লিকা এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। কবির অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা আমতা আমতা করে বলল-
“এটা..এটা আমার বাগদানের আংটি।”
কবিরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। তার পা হাত কাঁপছে। মল্লিকা আবার বলল-
“গত সপ্তাহে আমার এনগেজমেন্ট হয়েছে।”
“কিন্তু তুমি বলেছিলে অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাও না।”
“হয় তো আবেগের কারণে বলেছিলাম।”
কবির ক্ষেপে গেল ধমকের স্বরে বলল-
“এতদিন আমার পেছনে ঘুরঘুর করে এখন বলছো আবেগ?”
মল্লিকা চোখ বন্ধ করে ফেলল ভয়ে। কবির দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
“বিয়ের জন্য রাজি হয়েছো কেন?”
মল্লিকা চোখ খুলে কবিরের দিকে মাথা তুলে তাকাল। কবিরের চেহারা রাগে লাল হয়ে গিয়েছে। মল্লিকা বলল-
“প্রথমবারের মতো কেও আমার পরিবারের কথা বিশ্বাস করেছে যে আমি চরিত্রহীন না। সেই মানুষটা বিশ্বাস করে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে আমি না করতে পারি নি।”
কবির ফাঁকা ঢোক গিলল। সেও তো মল্লিকাকে অনেক বাজে ভেবেছিলো। সময় যেতে যেতে সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু যখন বুঝতে পারলো এত দেরি হয়ে গিয়েছে যে পাওয়ার আগেই মল্লিকাকে হারিয়ে ফেলল। কবির মাথা নিচু করে ফেলল। রাগ হচ্ছে নিজের উপর। মল্লিকা বলল-
“আপনি কিছু বলতে চেয়েছিলেন?”
কবির মাথা তুলে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়িয়ে হাঁটা ধরলো। মল্লিকা তাকিয়ে রইলো কবিরের যাওয়ার পথে। কবির যেতেই বেঞ্চে বসে তার আংটির দিকে তাকিয়ে আঙুল বুলালো। হঠাৎ তার চোখ বেয়ে পানি পরলো আংটির উপর। আলতো করে চোখের পানি মুছে সামনের দিকে তাকালো। মেহরিন আর রিয়াজ একটা বল নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। এক প্রকার ঝগড়ায় জড়িয়ে গেছে দুজন। আধুনিক্তা দৌড়ে এসে তাদের মাঝ থেকে বল নিয়ে চলে গেল। এর জন্য মেহরিন রিয়াজের ও রিয়াজ মেহরিনের দোষ দিচ্ছে। তাদের খুনসুটি ঝগড়া দেখে মল্লিকা হাসলো।

আজ প্র্যাকটিস করে সবাই বেশ মজা পেয়েছে। আধুনিক্তা শুধু মেয়েদের না কিছু কিছু ছেলেদের পর্যন্ত হারিয়েছে খেলায়। আধুনিক্তা আর মেহরিন এসে মল্লিকার পাশে বসলো। সবাই ব্যাগ গুছাচ্ছে যার যার। মল্লিকা আধুনিক্তাকে জিজ্ঞেস করলো-
“দোস্ত তুই ঠিক আছিস?”
“কী মনে হয় আমাকে দেখে?”
“দেখে তো ঠিক মনে হচ্ছে কিন্তু ভয় করছে আমার।”
“দেখ ভালো মতো আমাকে। আলহামদুলিল্লাহ আই এম ফিট এন্ড ফাইন।”
মল্লিকা মুচকি হেসে আধুনিক্তাকে জড়িয়ে ধরলো। রিয়াজ আর মাশরাত এগিয়ে আসলো।
“ওয়েল ডান বয়’স এন্ড গার্লস। আগামীকালও এইভাবেই মন দিয়ে প্র্যাকটিস করবে সবাই ওকে?”
সবাই একসাথে ঠিক আছে বলল। রিয়াজ অবাকের ভঙ্গিতে বলল-
“আধুনিক্তা তুমি দেখছি সেই খেলোয়াড়। তুমি নাজমুলকে হারিয়ে দিলে? সে আমাকে টিমের সবচেয়ে ভালো প্লেয়ার।”
আধুনিক্তা জবাবে হাসলো। মেহরিন বলল-
“আমিও তো তোমাকে হারিয়েছি আমার প্রশংসা করবে না?”
“হ্যাঁ আমাকে ধাক্কা দিয়ে বল নিয়ে পালিয়েছ। চিটার প্লেয়ার।”
“শাট ইওর মাউথ ব্লাডি ফুল। এভরিথিং ইজ ফেয়ার লাভ এন্ড ওয়ার।”
“বাট ম্যাম দিস ইজ গেম।”
“সো হোয়াট? দেয়ার আর নো ডিফারেন্স বিটুইন ওয়ার এন্ড গেম।”
“ওকে বাট হোয়াট এবাউট লাভ?”
মেহরিন থতমত খেয়ে গেল। সবাই হাসছে তাদের কথা শুনে। আধুনিক্তা ব্যাগ থেকে জামা বের করে দাঁড়িয়ে বলল-
“আমি চেঞ্জ করে আসি তোমরা দাঁড়াও।”
আধুনিক্তা চলে গেল। মেহরিন আর রিয়াজ ঝগড়া করছে। মাশরাত খেয়াল করলো মল্লিকার মন খারাপ। মাশরাত জিজ্ঞেস করলো-
“কি ব্যাপার তোমার মন খারাপ?”
“না..না স্যার”
বলেই মল্লিকা জোরপূর্বক হাসি দিলো। মাশরাত বলল-
“আমি কবিরকে দেখেছিলাম আসতে৷ তুমি ওকে বলেছো তোমার এনগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে?”
“হুমম”
“কি বলেছিলো?”
“কিছুই বলে নি চলে গিয়েছে। সত্যি করে বলো তো তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হচ্ছে?”
মল্লিকা থতমত খেয়ে গেল। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল-
“জি”
মাশরাত আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। কিছু কিছু ব্যাপারে জোর না করাই শ্রেয়। তখনই আধুনিক্তা আসলো। মাশরাত মুচকি হাসলো আধুনিক্তাকে দেখে। চুলগুলো ছেড়ে বুলাতে এগিয়ে আসছে। চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো। আধুনিক্তার চোখ গেল মাশরাতের দিকে। মাশরাতের চাহনি দেখে সে লজ্জায় পরলো। তখনই দরজার পাশ থেকে একটা ভারী কন্ঠ ভেসে আসলো-
“আধুনিক্তা”
আধুনিক্তা পাশ ফিরে দাদাইকে দেখে চমকে উঠলো। সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছে উনাকে দেখে। মাশরাতের হাত পা কাপছে। আধুনিক্তার দাদাই কি জেনে গিয়েছে আধুনিক্তা আজ প্র্যাকটিস করেছে। তাহলে তো ওর দাদাই মাশরাতকেই ধরবে। দাদাইর চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট। দাদাই দ্রুত হেটে এগিয়ে আসলো। মাশরাতের মনে হচ্ছে কোনো দাদাই তাকে খুন করতে আসছে। আধুনিক্তার দাদাই মাশরাতের বরাবর দাঁড়াল। আধুনিক্তা কিছু বলার আগেই দাদাই মাশরাতের গালে সজোরে থাপ্পড় দিয়ে বসলো। যেমন ভাবছেন আপনারা ঠিক তেমনই শব্দ। ঠাসসসসসসসস??

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here