তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_১২

0
2370

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১২

আশে পাশের মানুষরা আধুনিক্তা আর মাশরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। মাশরাত হঠাৎ চোখ তুলে দেখে দুজন লোক তাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। মাশরাত অস্বস্তি বোধ করলো৷ আধুনিক্তাকে ছেড়ে বলল-
“কর্ণার দিয়ে হাঁটো।”
আধুনিক্তা চোখ খুলল মাশরাতের কথায়। নিজেকে মাশরাতের বুকে পেয়ে লজ্জাবোধ করলো। তারাতাড়ি মাশরাতকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। নিজের ব্যবহারে লজ্জিত হলো ভীষণ। মাশরাত আধুনিক্তাকে চুপ থাকতে দেখে বলল-
“আই এম সরি”
“সরি কেন?”
মাশরাত কিছু বলল না৷ আধুনিক্তাকে ইশারায় বলল হাঁটতে। আধুনিক্তা মাথা নাড়িয়ে হাঁটা ধরলো। মাশরাতও তার পাশাপাশি হাটছে৷ কিছুক্ষণ নিবরতা থাকার পর আধুনিক্তা জিজ্ঞেস করলো-
“আজও ভালোবাসো তাকে?”
“হ্যাঁ”
“যদি অন্য কারো সাথে তোমার বিয়ে হয় তখন?”
“তখন না হয় পিছুটান ছাড়ার চেষ্টা করবো।”
“আচ্ছা যদি কেও তোমাকে প্রপোজ করে তখন কী করবে?”
“জানি না, কখনো কেও আমাকে প্রপোজ করে নি।”
“আর ইউ শিওর? মানে তোমাকে কেও প্রপোজ করেনি এটা কী করে সম্ভব?”
“কেন আমি কী কোনো রাজপুত্র যে সবাই প্রপোজ করে বেড়াবে।”
আধুনিক্তা হাসলো মাশরাতের কথায়। সে তো মাশরাতকে একজন রাজপুত্র-ই ভাবে। আধুনিক্তাকে চুপ থাকতে দেখে মাশরাত বলল-
“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি কালো আর হাসতে হবে না। আমি কোনো রাজপুত্র নই।”
“আমি কী কিছু বলেছি তোমাকে?”
“সবকিছু তো মুখে বলতে হয় না। আমি তোমার মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি কী ভাবছো।”
“তাই?”
আধুনিক্তা দাঁড়াল। তাকে দেখে মাশরাতও দাঁড়াল। আধুনিক্তা এক কদম মাশরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল-
“তাহলে এখন বলো আমি ভাবছি। সঠিক উত্তর দিতে হবে।”
“ভেরি ইজি ওয়েট।”
মাশরাত আধুনিক্তার চোখে তাকাল। তাকানোর ১০ সেকেন্ডের মধ্যে সে হারিয়ে গেল। আধুনিক্তা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল-
“কি হলো মিস্টার মাশরাত? বলো এখন আমি কী ভাবছি।”
মাশরাত চোখ সরিয়ে ফেলল। বিরক্ত লাগছে হঠাৎ।
“চলো তারাতাড়ি দেরি হচ্ছে।”
“হঠাৎ তোমার কি হলো?”
“কিছু না।”
বলেই মাশরাত হাঁটা ধরলো। আধুনিক্তা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবার তারাতাড়ি হেটে গেল মাশরাতের দিকে। মাশরাত দ্রুত হাটছে। আধুনিক্তা এক সময় দৌড়াতে লাগলো।
“এই আস্তে হাঁটো আমি পড়ে যাব নাহলে।”
“কেন তুমি হাটতে পারো না?”
“পারি কিন্তু তোমার কারণে এখন দৌড়াতে হচ্ছে।”
মাশরাত দাঁড়িয়ে গেল। মাশরাত হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাওয়ায় আধুনিক্তা ধাক্কা খেলো তার পিঠের সাথে। আধুনিক্তা নাক ধরে রেখে বলল-
“আউচ, তুমি কী পাগল হয়ে গেলে? দেখো তো দেখা পেলাম তোমার জন্য।”
“এক্টিং কম করো নাক ভাঙে নি।”
“তোমার হঠাৎ কী হলো বলো না।”
“কিছু হয় নি।”
“পাগলদের ডাক্তার দেখাও প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মাথা গিয়েছে তোমার।”
মাশরাত রাগী দৃষ্টিতে তাকাল আধুনিক্তার দিকে। আধুনিক্তা জিহ্বায় কামড় দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। মাশরাত আবার হাঁটা ধরলো। আধুনিক্তা তা দেখে মুখ লটকিয়ে দৌড়ে গেল মাশরাতের পেছনে। আধুনিক্তাকে বাসায় পৌঁছে দিলো মাশরাত। আধুনিক্তা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল-
“কেও নেই এখন। আব্বু বা দাদাই আসার আগে চলে যাও।”
“আমি উনাদের ভয় পাই না। সম্মান করি বলে সবকিছু হজম করে নেই।”
“উনারা কী তোমাকে কিছু বলেছে?”
“না, ভেতরে যাও এখন।”
আধুনিক্তা আর কথা বাড়াল না। মাশরাত মেজাজ এখন বিগড়ে আছে। এখন কিছু না বলাই শ্রেয়। আধুনিক্তা তারাতাড়ি দরজা ঠেলে ভেতরে চলে গেল। মাশরাত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হাঁটা ধরলো। নিজের অনুভূতিকে আজ প্রথমবারের মতো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে নি মাশরাত৷

মাশরাত কিছুক্ষণ রাস্তায় হাটাহাটি করলো। হাটতে হাটতে রমনা পার্ক চলে গেল। একটা বেঞ্চে বসে কিছুক্ষণ সামনের দিকে তাকিয়ে রইল। তাবাসসুমের প্রিয় জায়গা এই রমনা পার্ক। তারা বেশীরভাগ এইখানেই এসে সময় কাটাতো। পকেট থেকে মোবাইল বের করে গ্যালারিতে ঢুকলো। প্রাইভেট ফোল্ডারে ঢুকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে। তাবাসসুমের একটাই ছবি নিজের কাছে রেখেছে সে। কাওকে মনে করার জন্য হাজার হাজার ছবির প্রয়োজন হয় না। মাশরাতের বুকে হাজারো স্মৃতি জমে আছে। ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে অতীতে হারিয়ে গেল।

অতীতের কিছু অংশ…..
মাশরাত বার বার সময় দেখছে। এই মেয়েটা সবসময় লেইট করে আসে কেন? কেন বার বার মাশরাতের ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়? মাশরাত মুখ ফুলিয়ে বেঞ্চে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর কেও তার চোখে হাত রাখলো। মাশরাত বিরক্ত হয়ে বলল-
“লেইট করে এসে এখন ঢং করছো।”
তাবাসসুম হাত সরিয়ে অবাক হয়ে বলল-
“তুমি আমাকে বলেছিলে রাগ করা ছেড়ে দিবে।”
“আমি রাগ করছি না।”
“হ্যাঁ জনাব আপনার দেখেই বোঝা যাচ্ছে।”
“লেইট হলে কেন সেটা বলো।”
“ট্রাফিক ট্রাফিক ট্রাফিক।”
“তুমি এত অলস কেন বলো তো।”
“আমি অলস?”
“তো কী? তোমার কলেজ থেকে রমনা এত কাছে তবুও রিকশা দিয়ে আসতে হয়?”
“আমার রোদে হাটতে অসহ্য লাগে।”
“ইশশ রূপচর্চা।”
তাবাসসুম বাকা হাসি দিয়ে মাশরাতের পাশাপাশি বসে বলল-
“জি হ্যাঁ, এই রূপের চর্চা না করলে আপনি আমাকে দাম দেওয়া ভুলে যাবেন।”
মাশরাত তাবাসসুমের দিকে ঘুরে ভ্রু কুঁচকালো। তাবাসসুম মুখে দুষ্টুমি হাসি ভেসে বেড়াচ্ছে। মাশরাত বলল-
“তোমার কী মনে হয় আমি তোমার রূপকে ভালোবাসি?”
“ইশশ এখন ফিল্মের হিরোদের মতো বলবে আপনি তোমার রূপকে নয় তোমাকে ভালোবাসি।”
“ফিল্মি ডায়লগ হলেও এটাই সত্যি।”
“ওও প্লিজ আর বলতে হবে না।”
মাশরাত তাবাসসুমের হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো৷ তাবাসসুম হা হয়ে তাকিয়ে আছে মাশরাতের দিকে। মাশরাত আলতো করে তাবাসসুমের গালে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিলো৷ গালে বুড়ো আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল-
“বিশ্বাস করো না আমাকে?”
তাবাসসুম ঢোক গিলল। তার হৃদয়ের স্পন্দন বুলেট ট্রেনের গতিতে দৌড়াচ্ছে। কোনো মতো হ্যা বোধক মাথা নাড়াল। মাশরাত হেসে বলল-
“যদি তোমার রূপকে ভালোবাসতাম তাহলে কী আজ পর্যন্ত তোমাকে চুমু না থাকতাম?”
“ল..লজ..লজ্জার মাথা খে..খেয়েছো তাই না?”
“তোমার লজ্জার কারণে আমি আজ পর্যন্ত তোমাকে চুমু দিতে পারলাম।”
“চুমু না দিয়ে কী রিলেশন করা যায় না?”
“অবশ্যই যায়। তাই তো আই লাভ ইউ।”
তাবাসসুম লজ্জা মাখা হাসি দিলো। মাশরাত ধীরে ধীরে টেনে তাবাসসুমকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। মাশরাত বলল-
“এত ভালোবাসো কেন আমায়?”
“তুমি আছো হৃদয়ে তাই।”

বর্তমানে….
মাশরাত মোবাইল পকেটে রেখে উঠে দাঁড়াল। মাগরিবের আযান দিচ্ছে। তারাতাড়ি পার্ক থেকে বের হয়ে মসজিদে চলে গেল। নামাজ আদায় করে বাসার জন্য রওয়ানা দিলো। আজ মায়ের সাথে এমন ব্যবহার করা ঠিক হয় নি। সব মা বাবা-ই তো চায় সন্তান সুখে থাকুক। মাশরাত মা আর মালিহার জন্য দুটো ডেইরি মিল্ক কিনে নিলো। মা চকলেট খেতে খুব ভালোবাসে৷ মা যখন রাগ করেন মাশরাত উনার জন্য চকলেট কিনে নিয়ে যায়। কলিংবেল বাজিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। মালিহা এসে দরজা খুলল-
“কোথায় ছিলে তুমি?”
“ছিলাম আশে পাশেই। মা কোথায়?”
“নামাজ পড়ছে। ভেতরে আসো।”
মাশরাত ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। রান্নাঘরে গিয়ে মায়ের জন্য চা বানিয়ে নিল। কিভাবে মাকে খুশী করা যায় মাশরাত বুঝতে পারছে না। মালিহা রান্নাঘরে এসে দেখে মাশরাত দাঁড়িয়ে ভাবনার জগতে হারিয়ে আছে। মালিহা হেটে গিয়ে মাশরাতকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল-
“কী ভাবছো?”
“চা বানিয়েছি আম্মুর জন্য। শুধু চা নিয়ে যাব কী না ভাবছি।”
“দাঁড়াও আমি বিস্কুট বের করে দেই।”
মাশরাত মাথা নাড়াল। মালিহা বিস্কুট বের করে প্লেটে সাজিয়ে দিলো। চায়ের কাপ আর বিস্কুটের প্লেট ট্রে-তে রেখে বলল-
“এখন নিয়ে যাও।”
মাশরাত মুচকি হেসে মালিহার কপালে চুমু দিলো। পকেট থেকে ডেইরি একটা মিল্ক বের করে মালিহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-
“আমার ওয়াল্ড বেস্ট বোনের জন্য ছোট্ট একটা উপহার।”
মালিহা খুশীতে লাফ দিয়ে উঠলো। খোপ করে মাশরাতের হাত থেকে চকলেট নিয়ে নিল। মাশরাত হেসে মালিহার মাথায় হাত বুলিয়ে ট্রে নিয়ে চলে গেল। মায়ের ঘরের দরজার সামনে গিয়ে লম্বা নিশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। উকি মেরে দেখে মা খাটে বসে আছে। উনার দৃষ্টি দেয়ালে টাঙানো মাশরাতের বাবার আর্মি ইউনিফর্মের দিকে। মাশরাতের মন খারাপ হলো। নিশ্চয়ই মায়েরও মন খারাপ ভীষণ। এখন মাকে একটু হাসাতে পারলেই মাশরাত ধন্য হবে। দরজার টোকা দিলো। মা আর্মি ইউনিফর্মের দিকে চোখ রেখেই বলল-
“ভেতরে আয়।”
মাশরাত হেটে গিয়ে মায়ের সামনে ট্রে রেখে বলল-
“আম্মু আই এম সরি।”
“সরি কেন?”
“আজ তোমার মন খারাপের দায়ী আমি, তাই।”
“আমার মন খারাপ তোকে কে বলল?”
“তুমি আমার মা অবশ্যই আমি তোমার চেহারা দেখে বুঝতে পারি।”
মা তালিচ্ছ্যের হাসি হেসে বলল-
“তুই আমাকে বুঝতে পারিস? হাসালি আমাকে।”
মাশরাত মায়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল। মা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাশরাতের দিকে। তারপর ট্রে এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“চা তুই বানিয়েছিস?”
“হ্যাঁ”
“কী দরকার ছিলো?”
“তুমি সন্ধ্যার সময় এক কাপ গরম চা খাও আমি জানি।”
“হুমম”
মা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দিলো। ছেলে মাঝে মধ্যে রান্না করে৷ আর যখন রান্না করে খাবার বেশ মজা হয় কিন্তু রান্নাঘরের ১২ টা বাজিয়ে দেয়। মা বলল-
“মেয়েটা কে ছিলো?”
“আমি যে ভার্সিটির বাস্কেটবল ট্রেইনার আধুনিক্তা সে ভার্সিটির স্টুডেন্ট। আর আমাকে এলাকার চেয়ারম্যানের নাতনি।”
“প্রেম করার জন্য তোর ভাগ্যে উঁচু পরিবারই কেন আসে?”
“আম্মু আমাদের মধ্যে এমন কোনো সম্পর্ক নেই।”
“সত্যি বলছিস?”
“হ্যাঁ, ও আমাকে একজন সিনিয়রের মতো সম্মান করে।”
“কিন্তু আজ সে যেভাবে কথা বলল শুনে মনে হলো সে তোর অনেক কাছের মানুষ।”
মাশরাত কিছুটা লজ্জাবোধ করলো। মা চা শেষ করে ট্রে তে রাখলো।
“দেখ বাবা, আমি ভেবেছি তোকে আর জোর করবো না কোনো কাজ নিয়ে। তুই যা খুশী করতে পারিস৷ এখন নাহয় মালিহার জন্য পাত্র খুঁজি আমি।”
“আম্মু তুমি আমাদের বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছো কেন?”
“আমার বয়স হচ্ছে। মৃত্যুর আগে তোদের সুখ দেখতে চাই। যদি এমন কেও তোদের জীবনে আসে যে তোদের খেয়াল রাখবে আমি নিশ্চিন্তে মরতে পারবো।”
“বার বার মৃত্যুর কথা বলা কী জরুরি?”
“তুই বুঝবি না।”
“মাফ করেছ আমাকে?”
“হুম করেছি৷ আচ্ছা সেই মেয়েটাকে নাহয় আসতে বলিস।”
মাশরাত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল-
“কেন?”
“এইভাবেই, মেয়েটা আসলো কিন্তু আমি তার সাথে বাজে ব্যবহার করেছি। মেয়েটার হয় তো মন খারাপ হয়েছে।”
“মন খারাপ? তাও আধুনিক্তার? আম্মু ও কোনো সাধারণ মানুষ না। ওর মস্তিষ্কে সমস্যা আছে। জানো সবসময় উল্টা পাল্টা কথা বলে। কিন্তু মেয়েটা মানুষ হিসাবে খুব ভালো। একটা সময় ছিলো যখন আধুনিক্তা একজন খুব ভালো বাস্কেটবল প্লেয়ার ছিলো। কিন্তু একটা সমস্যার কারণে তার হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। এখন আর সে বাস্কেটবল খেলে না। কিন্তু আমি আর ও একবার বাস্কেটবল খেলেছিলাম। অসাধারণ খেলেছিলো সেদিন। অনেক বছর খেলতে পারে নি তাই আমি ইচ্ছে করে সেদিন হেরেছিলাম। খারাপ লাগে মেয়েটার জন্য। ভালো মানুষদের সাথে কেন খারাপ হয় জানি না।”
বলেই মাশরাত মায়ের দিকে তাকাল। মা ভ্রু দু’টো উচু করে তাকিয়ে আছে মাশরাতের দিকে। মাশরাত থতমত খেয়ে বলল-
“কী হয়েছে আম্মু?”
“কিছু না, মেয়েটার মানে আধুনিক্তার সম্পর্কে জেনে ভালো লাগলো। ওকে আসতে বলিস।”
“আচ্ছা বলবো নি।”
মাশরাত পকেট থেকে চকলেট বের করে মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-
“এইটা আমার বিউটিফুলের জন্য।”
মা মুচকি হেসে বলল-
“এইটা তুই রাখ।”
“তুমি না নিলে আমি ভাববো তুমি আমাকে মাফ করো নি।”
মা হেসে চকলেট নিয়ে প্যাকেট ছিঁড়ল। দুটো টুকরো নিজে নিয়ে বাকিগুলো মাশরাতের হাতে দিয়ে বলল-
“মাফ করেছি তোকে। এইটুকু তোর।”
মাশরাত হেসে মাকে জড়িয়ে ধরলো। মা মাশরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর মাশরাত মাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। মাকে বলে তার ঘরে চলে গেল। মা মাশরাতের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে মনে মনে ভাবলো-
“তোকে বলেছিলাম হয়তো মেয়েটার মন খারাপ। কিন্তু তুই ওর পুরো বায়োডাটা আমাকে শুনিয়ে দিলি৷ আমার মাশরাত এত কথা বলতে আমি আগে জানতাম না। তাবাসসুমের সাথে যখন রিলেশন ছিলো তখনও তো বেশ চুপচাপ ছিলি। আমার ছেলেটা কী পরিবর্তন হচ্ছে ধীরে ধীরে?”
ভেবেই মা মুচকি হাসলো।

পরেরদিন…..
আধুনিক্তা একটা ডিসিশন নিয়েছে। কিন্তু কাওকে বলে নি। তারাতাড়ি তৈরী হয়ে নিলো। আজ আরমান জেদ ধরেছে আধুনিক্তার সাথে ভার্সিটি যাবে। দাদাই আজ নিয়ে যাচ্ছে তাদের ভার্সিটি। আধুনিক্তাকে ভার্সিটি ড্রপ করে আরমানকে নিয়ে বাসায় এসে পড়বে। আরমান আধুনিক্তার হাত ধরে লাফাতে লাফাতে বাহিরে গেল। গাড়িতে বসে পা দুলাচ্ছে। আধুনিক্তা জানালায় কনুই ঠেকিয়ে গালে হাত দিয়ে রেখেছে।
“মাম্মাম”
আরমানের ডাকে আধুনিক্তা ফিরে তাকাল।
“ইয়েস বেবি”
“কী ভাবছো?”
“তেমন কিছু না। তুমি আজ দুধ খাও নি কেন। দুধ না খেলে তো তুমি বড়ো হবে না।”
“আমার পেট ভরে গিয়েছিল তাই।”
“ব্যাড মেনার্স, কাল থেকে প্রতিদিন দুধ খাবে ওকে?”
আরমান দাঁত বের করে হেসে মাথা নাড়ালো। বাচ্চাটার হাসি দেখলে আধুনিক্তার মন ভালো হয়ে যায়। আরমানকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো।
“আই লাভ ইউ মাম্মাম”
“আই লাভ ইউ টু মাই ছোটু।”

তারা ভার্সিটি পৌঁছে দেখে মাশরাত মাত্র এসেছে। দুটো মেয়ে তার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আধুনিক্তা ভ্রু কুচকালো। তারাতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে মাশরাতের পেছনে দাঁড়াল। আধুনিক্তার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মেয়ে দুটো আধুনিক্তাকে দেখে ভয় পেয়ে গেল। মাশরাতকে বিদায় জানিয়ে তারাতাড়ি চলে গেল। মাশরাত অবাক হয়ে গেল মেয়ে দুটোর ব্যবহার দেখে। মাশরাত পেছনে ফিরতেই চমকে উঠলো। দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বলল-
“তুমি কী পাগল?”
“পাগল হলে তো এখন মেন্টাল হসপিটালে থাকতাম।”
“তোমার উত্তর গুলো এমন জিলাপির মতো পেঁচানো কেন? সোজাসুজি উত্তর দিতে পারো না?”
“না, এখন বলো মেয়েগুলো কারা?”
“আমি চিনি না, তারা জিজ্ঞেস করলো আগামী বছরও কী আমি ট্রেইনার হিসেবে এই ভার্সিটিতে থাকবো কি না।”
“তুমি কী বলে?”
“বললাম আমি জানি না। যদি প্রিন্সিপাল আমাকে রাখতে চান তাহলে থাকব।”
“ওওও”
তখনই আরমান মাম্মাম বলে দৌড়ে আসলো। মাশরাত যেন আকাশ থেকে বলল আরমানের মুখে মাম্মাম শুনে। আধুনিক্তা আরমানের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুমি আসলে কেন? দাদাই কোথায়?”
“দাদাই বললো অফিস-রুমে যাচ্ছে ৫ মিনিটের মধ্যে এসে পরবে। আর আমাকে বলল তোমার সাথে থাকতে। মাম্মাম এই আঙ্কেলটা কে?”
মাশরাত বুকের বা পাশে হাত রাখলো। ভাইয়ার বদলে আঙ্কেল? সে কী এত-ই বুড়ো দেখতে? আধুনিক্তা হেসে বলল-
“আঙ্কেল না, ভাইয়া বলো। উনি বাস্কেটবল ট্রেইনার।”
“ওওও, কিন্তু উনি হাম্মার মতো বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে কেন?”
আধুনিক্তা ফিক করে হেসে দিলো। মাশরাত অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। ছোটো ছোটো বাচ্চারা তার মজা উড়িয়ে দিয়ে যায় আর সে কিছু বলতেও পারে না। তখনই দাদাই আসলো। মাশরাত চুপসে গেল আধুনিক্তার দাদাইকে দেখে। দাদাই মাশরাতকে কিছু বললো না। আধুনিক্তাকে ক্লাসে যেতে আরমানকে নিয়ে চলে গেল। আধুনিক্তা মাশরাতের চেহারা দেখে বলল-
“রাগ করলে না তো ওর কথা শুনে?”
“কী যে বলো। ও তো বাচ্চা।”
“বাচ্চা হলেও সত্য কথা বলতে এক্সপার্ট।”
মাশরাত চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালো। আধুনিক্তা হেসে বলল-
“সরি মজা করছিলাম।”
“ইটস ওকে, ও তোমার কী হয়?”
“ছোটো ভাই”
“তোমাকে মাম্মাম ডাকছিলো কেন?”
“ওর অভ্যেস, ছোটো বেলা থেকেই ডাকে।”
“বলো কী, কেমন যেন দেখায় ব্যাপারটা।”
আধুনিক্তার মাথা বিগড়ে গেল। ধমকের স্বরে বলল-
“আমার ভাই আমাকে মাম্মাম ডাকে তোমার কী সমস্যা?”
“আরে আমার কেন সমস্যা হবে? আমি এইভাবেই বললাম।”
“গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড একে অপরকে জান, বাবু, ময়না, টিয়া, ময়ূর, কলিজা, ফেপরা সব ডাকতে পারে অথচ তাদের কোনো রক্তের সম্পর্কও থাকে না। আবার গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ডকে নিজের সন্তানের মতো ট্রিট করে৷ বয়ফ্রেন্ড কোনো জায়গা গেলে শাসন করতে করতে ব্রেকআর করে ফেলে। গার্লফ্রেন্ড কোথাও যাওয়ার আগে বয়ফ্রেন্ড থেকে পারমিশন নেয়। তার উচিত তার মা বাবার থেকে পারমিশন নেওয়া। কিন্তু না তারা একে অপরকে নিজের সব ভাবে। তাদের বেলায় ১৬ আর আমার বেলায় ৪ আনা কেন?”
“গ্রেট লজিক, কিন্তু তুমি মাথা ঠান্ডা রাখো।”
“রাখবো না, আমার ভাই আমার ছেলের মতো। ও আমার থেকে ১৭ বছরের ছোটো। ও আমাকে যা খুশী ডাকবে তোমার কী?”
“কই কিছু না তো।”
“ধ্যাত আই হেইট ইউ। তুমি..তুমি আর কখনো আমার সাথে কথা বলবা না। ওইযে একটু আগে দু’টো মেয়ে ছিল না। তাদের কাছে যাও।”
“আরে আধু…”
বলেই আধুনিক্তা হনহন করে চলে গেল। মাশরাত কেমন রিয়্যাকশন দিবে নিজেও বুঝতে পারছে না। সামান্য একটা কথা তার জীবনে ভূমিকম্প এনে দিবে কে জানতো? মাশরাত কী পারবে আধুনিক্তার রাগ ভাঙতে? জানতে হলে চোখ রাখুন #তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই গল্পে??

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here