তুমি হাতটা শুধু ধরো সিজন ২ (পর্ব ১৯)

0
1019

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১৯
#Jhorna_Islam

গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ করেই দায়ান সোহাকে প্রশ্ন করে পড়াশোনা কেমন চলছে তোমার?

“জ্বি ভালো।”

মন দিয়ে পড়াশোনা করো।স্যাররা যা বলে সব মাথায় রাখবে।এডমিশনে কাজে লাগবে বুঝতে পারছো?

আচ্ছা।

তারপর গাড়ির মধ্যে আবার নীরবতা।সোহা বাইরের বেস্ত শহর দেখছে।গাড়ির জানালার কাচ নামানো আছে। সকালের দমকা হাওয়া সুর সুর করে গাড়ির ভিতরে প্রবেশ করছে।এতে করে সোহার চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাও চোখ সরাচ্ছে না।বিষয় টা সে উপভোগ করতে পারছে। বাতাসের তোড়ে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে উড়ে চলেছে।

কিছু চুল গিয়ে দায়ানের মুখেও আছড়ে পরছে।যার ফলে নাকে মুখে সু’রসু’রির সৃষ্টি করছে। তাও কিছু বলছে না দায়ান। চুল থেকে একটা শ্যাম্পুর মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে বারি খাচ্ছে।

কোচিং সেন্টারের সামনে এসে দায়ান গাড়ি থামায়।

সোহা গাড়ি থেকে নামতে নিবে এমন সময় দায়ান হাত ধরে আঁটকায়। সোহা দায়ানের দিকে ফিরে তাকায়।

দায়ান সোহার চাহনি কে পাত্তা না দিয়ে সোহাকে টান দিয়ে কিছু টা নিজের কাছে নিয়ে আসে। সোহা কিছু টা হকচকায়।তো’ত’লা’তে তো’ত’লা’তে বলে,,,,কিকিহয়েছেএএ?

বাতাসে উড়ে সোহার চুল গুলো সব এলোমেলো হয়ে গেছে। দায়ান হাত দিয়ে সব সেট করে দিচ্ছে।

সোহা হা করে সব ভুলে দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়।

দায়ান চুল গুলো ঠিক করে হঠাৎ ই মাথা থেকে কিছু একটা নিয়ে সোহার ডান হাত টা টেনে ধরে হাতের তালুতে গুঁজে দেয়।

সোহা তাকিয়ে দেখে একটা পাতা।হয়তো উড়ে এসে চুলে আঁটকে গেছে। সোহা পাতাটার দিকে একবার তো দায়ানের দিকে একবার চোখ তুলে তাকায়।

তারপর আবার উঠতে নিবে,,,বাট দায়ানের কথায় থেমে যায়।

“-ন’ড়ে না প্লিজ। ”

দায়ান নিজের পকেট থেকে কিছু একটা বের করছে।সোহা তা বোঝার চেষ্টা করছে।

দায়ান তার রুমাল টা পকেট থেকে বের করে সোহার মুখের কাছাকাছি চলে আসে। দায়ানের উষ্ণ নিশ্বাস সোহার মুখে এসে বার বার বারি খাচ্ছে। সেই নিশ্বাসে সোহার ও যেনো নিশ্বাস আটকে আসছে।জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে সে।

দায়ান নিজের রুমাল দিয়ে সোহার চোখের কোণে থাকা লেপ্টে যাওয়া কাজল মুছে দেয়। তারপর মুছা শেষে সোহার মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে একটা ফু দিয়ে সরে আসে।

দায়ান মুখে ফু দেওয়ায় সোহা চোখ পুরোপুরি বন্ধ করে ফেলে। মনে মনে ভাবে লোকটা কি আমায় পা/গল করে দম বন্ধ করে মারতে চাইছে নাকি? উনি কি আদৌ বুঝতে পারছেন আমার মনে ঝড় চলছে। ইশশ সেই ঝড় টা যদি উনি টে’র পেতো।

সোহার ভাবনায় ব্যা’ঘা’ত ঘটিয়ে দায়ান বলে উঠে,,, এমন ভাবে খোলা চুল আর চোখে কাজল দিয়ে বাইরে আসবা না ঠিক আছে?

কথাগুলো দায়ান গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ রাখা অবস্থাতেই বলে।

সোহা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে দায়ানের দিকে তাকায়।

দায়ান সোহার সারা শব্দ না পেয়ে চোখ খোলে দেখে সোহা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।

না মানে দেখো না সব এলোমেলো হয়ে যায়। বাইরের মানুষ তো তোমায় পা/গল বলবে।তাই বললাম।এবার যাও। সাবধানে থাকবে,আর বাড়িতে ও সাবধানে যাবে।

দায়ানের কথা মতো সোহা গাড়ি থেকে নেমে আসে।

দায়ান তারাতাড়ি গাড়ি চালিয়ে চোখের সীমানা পেরিয়ে চলে গেছে। সেই দিকে সোহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।

মনটা কেন যানি বার বার পুলকিত হচ্ছে।

—————————————-
সোহা আর দায়ানের বিষয় টা দায়ানের বাবা আর রুশের মা জানায় সোহার বাবা মা কে।

সব শুনে ওরা চুপ করে থাকে।কি বলবে হয়তো ভেবে পাচ্ছে না। হঠাৎ করে এসব শুনলে তো কিছু বলার ও থাকে না।ওনারা ও বলতে পারছেন না। ওনারা রাজি নাকি রাজি না এটা ও বোঝার উপায় নেই। ওনারা তেমন কিছুই বলেন নি যে বোঝা যাবে ওনাদের উত্তর।

উনারা চুপ থাকায় দায়ানের বাবা বলে উঠে,,, দেখেন ভাইজান।আপনারা আমাদের সব কিছু জানেন।এমনকি দায়ানের অতীত ও আপনাদের অজানা নয়। কিন্তু এতে তো ছেলেটার কোনো দোষ নেই তাই না?

আপনাদের কি আমাদের ছেলের অতীত নিয়ে সমস্যা?

” না না ভাইজান তেমন কিছু না। আসলে কি বলবো বুঝতে পারছি না।’ মাত্র বড় মেয়েটার বিয়ে হলো।এতো তারাতাড়ি ছোটো মেয়েকে নিয়ে ভাবি নি তো তাই।

তাছাড়া দায়ান কি আমাদের সোহাকে মেনে নিবে?

দায়ানের কোনো আপত্তি নেই ভাইজান। ও নিজে মত দিয়েছে।

আপনারা না করবেন না ভাইজান আমার অনুরোধ। বড় মেয়ে টা কে যেমন আমাদের দিয়েছেন।তেমন ছোটো মেয়েটাকেও চাইছি।আমি নিজে কথা দিচ্ছি কোনো কষ্ট পেতে দিবো না।নিজের মেয়ের মতোই রাখবো।

তারপর সোহার বাবা জানায় ভেবে চিন্তা করে জানাবে।ওনাদের যেনো এক দিন সময় দেয়।

তারপর সোহার বাবা বুদ্ধি করে সোহাকে কল দেয়।এটা সেটা নানান কথা জিজ্ঞেস করে। কথার ছলে দায়ানদের পরিবারের সকলে কেমন তা জিজ্ঞেস করে। সোহা তো তার মনের আনন্দে সকলের প্রশংসা করতে করতে মুখে প্রায় ফে”না তুলে ফেলেছে।সব থেকে বেশি দায়ানের কথাই বলেছে।এটা করে ওটা করে,ঘুরতে নিয়ে যায়। কোচিং এ প্রতিদিন নিজে দিয়ে আসে। কথার ছলে ভুলেই গেছে কার সাথে কথা বলছে।দায়ানের কি প্রশংসা।

সোহার বাবা যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন। কথা শেষ করে একটা কথা দিয়েই।

” বাবার উপর ভরসা রাখো আম্মু তোমার মনের চাওয়াটা হয়তো কিছুটা আ’ন্দাজ করে ফেলেছি।”

তারপর আর কি সোহার বাবা খুশিতে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু এখনই সোহাকে বিয়ে দিতে চান না।আরো দুয়েক বছর পরে দিতে চান।

প্রথমে সকলে অমত করলেও পরে রাজি হয়। কিন্তু শর্ত হলো দুইজনের আ’ক’দ করিয়ে রাখবেন।

সোহার বাবা রাজি হয়। এখন না আর দুয়েক মাস পরে করতে বলে।সোহার পড়াশোনা নয়তো হবে না।সকলেই সম্মতি জানায়। তাই দায়ান আর সোহা কাউকেই এই বিষয়ে কিছু জানায় নি।ওরা মন থেকে কাছে।আসুক একে অপরের বুঝোক।

সোহার পরিবারের সকলেই খুশি হয়।তাদের দুই মেয়ে এক সাথেই রাজ রানী হয়ে থাকবে।

——————————–

এমনি দিন যেতে থাকে প্রতিদিন দায়ানই নিয়ে যায় সোহাকে। আজ দায়ানের একটা সা’র্জারি থাকায় সকাল সকাল চলে যেতে হয়েছে। সোহা তখন ও ঘুমে।

যাওয়ার আগে দায়ানের মা কে অবশ্য বলে গেছে ড্রাইভার কে বলে রাখতে সোহা কে দিয়ে আসার জন্য।

আজ দায়ানের মা ও কাজের কারণে সোহাকে ডাকার কথা বেমালুম ভুলে যায়। তাই ঘুম ভেঙে উঠে দেখে কোচিং এর সময় প্রায় হয়ে গেছে। তারাতাড়ি করে তৈরি হয়ে ছোট লাগায়।

কারো কোনো কথা শুনার সময় নাই।একটা এক্সাম আছে।বাইরে খেয়ে নিবে বলেই দৌড়।

কোচিং এ এসে দেখে খাতা দিয়ে দিয়েছে। সোহা দৌড়ে গিয়ে নিজের সিটে বসে।

স্যার সোহার কাছে এসে খাতা দিতে দিতে বলে,,,কি ব্যাপার সোহা আজ এতো লেট? পরিক্ষার কথা ভুলে গিয়েছিলে নাকি?

না স্যার।আসলে জ্যাম ছিলো তো তাই আরকি।

তাই নাকি আমারতো অন্য কিছু মনে হচ্ছে। চোখে কিন্তু এখনো ঘুম লেগে আছে তোমার। বলেই চমৎকার করে হাসলো স্যার। খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে সকলের সাথে এই স্যার। বয়স ও বেশি না।অনেক মিশুক স্যার। সোহার অনেক ভালো লাগে বিষয় টা।

সোহা বিনিময়ে কিছু বলে না।খাতা নিয়ে লিখতে থাকে।
সকালে খাওয়া হয়নি।কাল থেকেই শরীরটা ভালো লাগছে না।তার উপর সেই অসহ্য কর চিনচিনে ব্যথা বুকে।রীতিমতো কপালে ছোট ছোট ঘামের উৎপত্তি হচ্ছে। সোহা লিখছে আর চিন্তা করছে।বাড়ি যাবে কি করে।আবার না শ্বাস কষ্ট শুরু হয়।

অর্ধেক লিখে আর লিখতে ইচ্ছে করতেছে না।যা লিখেছে তাতে পাশ নাম্বার উঠলেই হলো। বুক ব্যাথায় লিখতে ইচ্ছে করছে না।

বাড়ি গিয়ে খেতে হবে।তারাহুরো তে টাকা ও আনতে ভুলে গেছে নয়তো কিছু খেয়ে নিতো।

ভাবতে ভাবতেই গিয়ে খাতা জমা দেয়।

স্যার অবাক হয়ে বলে,,কি হয়েছে? খাতা জমা দিয়ে দিচ্ছো কেন? কমন পরে নি, নাকি অন্য কোনো সমস্যা?

না স্যার তেমন কিছু না। আসলে শরীরটা একটু খারাপ লাগছে বাসায় চলে যাবো।

অনেক অসুস্থ? যেতে পারবা নাকি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবো?

পারবো স্যার আসি।বলেই সোহা বেরিয়ে আসে।

স্যার তার চিন্তিত ভঙ্গিতে সোহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।

সোহা বাইরে এসে আরেক বিপত্তি তে পরে।ড্রাইভার কে বলেও নি।উনিতো কোচিং টাইম শেষ হলে নিতে আসবে। টাকা ও নেই যে সে নিজে চলে যাবে।

——-

দায়ান তার সার্জারী শেষ করে আজ বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। সাকসেসফুল হয়েছে সে।লোকটা তার নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। পরিবারের মুখে যখন সাকসেফুল হয়েছে শুনে হাসি ফোটে উঠে দায়ান সেটা খুব করে ইনজয় করে।ডাক্তারদের তো এটাতেই স্বার্থক।

আজ আর তেমন রুগি নেই।কয়েকজন ছিলো সেগুলো অন্য ডাক্তার কে দিয়ে দায়ান এসে পরেছে।

গাড়ি চালাতে চালাতেই অভ্যাস ব”শত সোহার কোচিং সেন্টারের দিকে চোখ যায়। গেটের দিকে তাকিয়ে ব্রু কোচকে ফেলে।সোহা এই সময় গেটের সামনে দাড়িয়ে কি করছে।তারপর ঘড়ির দিকে তাকায়। আরো অনেক সময় বাকি সোহার কোচিং টাইম শেষ হতে।

ভাবতে ভাবতেই গাড়িটা দাড় করায়। সোহা এদিক ওদিক তাকিয়ে রয়েছে বিরক্ত কর দৃষ্টিতে। হঠাৎ সামনে এসে গাড়ি থামায়।কিছু টা পিছিয়ে যায়। তারপর ভালো করে তাকিয়ে দেখে দায়ান।

মনে মনে সোহা আল্লাহ কে ধন্যবাদ জানায়।দায়ান না আসলে সোহা কি করতো নিজেও জানে না।
দায়ান চোখের ইশারায় সোহাকে গাড়িতে উঠে আসতে বলে,নিজে ডোর খুলে দেয়।

সোহা কোনো কিছু না বলে তারাতাড়ি গিয়ে বসে পরে। তারপর চোখ বন্ধ করে রাখে।বাম হাত দিয়ে বুকে কিছু সময় পর পর ড’লছে।

দায়ান চুপচাপ সোহার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রয়। সোহা কে দেখে মনে হচ্ছে কিছুটা অসুস্থ।

— ” কি হয়েছে ঠিক আছো?”

— না তেমন কোনো না।

— কেমন কিছু?

সোহা চুপ থাকে।

— শরীর ঠিক আছে?

–“হু”

মিথ্যা বলতে বলিনি।কথাটা তে এতোটাই জোর ছিলো যে সোহা কিছু টা কেঁপে ওঠে। আমতা আমতা করে বলে,,, আসলে একটু একটু খারাপ লাগছে।

— বুক ব্যাথা করছে?

হুু।

সকালে নিশ্চই খাবার খাওনি!

আসলে দেরি হয়ে গিয়েছিলো তো তাই।

দায়ান সোহার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে। তারপর একটা রেস্টুরেন্টে এনে গাড়ি থামিয়ে নিজে নেমে আসে।

সোহাকে আর কিছু বলার সুযোগ দেয়নি।সোহার হাত ধরে আস্তে করে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাঁটা দেয় ভিতরে।তারপর কর্ণার টেবিলে গিয়ে সোহাকে বসিয়ে দেয়। ওয়েটার কে ডেকে এক গাদা খাবার অর্ডার করে।

বেচারি সোহা হা করে দায়ানের কান্ড দেখছে। এতো খাবার কে খাবে?

বলছি যে আমি এতো,,,,,,,,,,,

নো মোর ওয়ার্ড যা যা অর্ডার করেছি চুপচাপ পেটে চা”লান করবে। বাড়তি কোনো কথা শুনতে চাই না।

#চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here