তুমি হাতটা শুধু ধরো সিজন ২ (পর্ব ২০)

0
1010

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২০
#Jhorna_IslamIslam

দিন দিন দায়ানের কেয়ারের পরিমাণ সোহার প্রতি বেড়েই চলেছে।

সোহা খুব উপভোগ করে বিষয় গুলো।এই যে ছোটো ছোটো যত্ন গুলো ও মন কেড়ে নেয়। মনের ভিতর শত ডানার প্রজাপতি পাখনা ঝাপটে উড়ে বেড়ায়। বাতাসে প্রেমের গন্ধ। আহ্ নিজের ভালোবাসার মানুষ টা যখন নিজ থেকে এমন করে খেয়াল রাখে কার না ভালো লাগে?

দায়ানের দৃষ্টিতে সোহা এখন অন্য কিছু দেখতে পায়। কিন্তু লোকটা মুখে প্রকাশ করে না।এই যে দায়ানের সব কাজে সোহা ভালোবাসা খুঁজে পায়।আর কাউকে ভালো না বাসলে এমন ভাবে যত্ন করা যায় বুঝি?

কিন্তু মুখ ফোটিয়ে কেনো বলে না এইটাই সোহার কষ্ট। এসবের মানে হয়? বলে দিলে কি হয় যে সোহা আমি তোমাকে ভালোবাসি।

উনি চাইছে টা কি? যে আমি গিয়ে আগে ওনাকে ভালোবাসার কথা বলি? তাহলে উনার সেই ভাবনায় গুড়ে বালি। আমি কখনো উনার আগে আমার ভালোবাসার কথা বলবো না। উনাকেই বলতে হবে।

আমিও দেখি উনি কতোদিন আমায় ভালোবাসার কথা না জানিয়ে থাকতে পারে হুহ।

————

সেই দিনের পর থেকে সোহার প্রতি বেলা টাইম টু টাইম খাবার খাওয়ার অত্যাচার বেড়ে গেছে। পারলে সোহাকে এরা সারাদিন ই খাবার টেবিলে বসিয়ে রাখে।

আর দায়ান সেও প্রতি বেলা নিয়ম করে সোহা কে ফোন করে জিজ্ঞেস করবে খেয়েছে কিনা।সোহার থেকে জেনে নিয়ে বাড়িতে আবার ফোন করে জেনে নেয় সোহা সত্যি বলছে কি না।কি এক জ্বালা।

প্রথম দিন যখন খাওয়ার কথা দায়ান জিজ্ঞেস করেছিলো খেয়েছে কি না।সোহা তখন না খেয়েই বলেছিলো খেয়েছে।ভেবেছে মিথ্যা বললে দায়ান তো আর তা জানতে পারবে না।কিন্তু তার ভাবনা কে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে বাড়িতে কল দিয়ে সত্যি টা জেনে ফেলে।তারপর রাতে এসে দুই বারের খাবার সোহার সামনে রেখে পাশে বসে থেকে পাহাড়া দিয়ে নিজ দায়িত্বে শেষ করিয়েছে। অনেক বাহানা দিতে চেয়েছিলো।একটাও কাজে লাগেনি।মিথ্যা কেনো বললো না খেয়ে।তাই দুপুরের আর রাতের খাবার এক সাথেই খেতে হবে।ঐ দিনের পর থেকে খাবার নিয়ে দায়ানকে আর মিথ্যা কথা বলেনি।নিয়ম করে খেয়েছে।নয়তো জানেই দুই বারের খাবার এক বারে খাওয়াবে।

———————–
সোহার এডমিশন টেষ্ট যতো ঘনিয়ে আসছে পড়ালেখার চা’প ততো বাড়ছে।আর ভালো লাগে না এই পড়াশোনা।

রুশ দুই দিন হলো প্রাইভেট টিউটর রেখে দিয়েছে বাড়িতে এসে পরিয়ে দিয়ে যাওয়ার জন্য।

সোহার সেই কোচিং এর স্যারই এসে পরিয়ে দিয়ে যায়। উনি নাকি রুশের বন্ধু।এক সাথেই পড়াশোনা করেছেন।তবে ততোটা কাছের ও না।এই যে বাড়ির কেউই চিনে না।শুধু রুশ ছাড়া।

সোহার অবশ্য ভালো হয়েছে এই স্যার পড়ায় বলে,,স্যার অনেক সুন্দর করে বোঝায়।সোহা স্যারের পড়া খুব সহজে ভালো করে বুঝতে পারে।

দায়ান দুই দিন ধরে খুব ব্যস্ত সময় পার করছে৷ হাসপাতালে । দায়ান ই বলেছিলো সোহাকে এক জন শিক্ষক বাড়িতে রেখে দিতে।যেনো সুবিধা হয়।দায়ান অবশ্য জানে না কাকে রেখেছে।

——————–
আজ দায়ান সকাল থেকেই বাড়িতে। আজ তার ছুটি।

তবুও রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়েছে সোহাকে কোচিং এ পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

সোহা মাত্রই বসেছে খাবার খাওয়ার জন্য। দায়ান এসে তার কাছ ঘেঁষে ধপাস করে পাশের চেয়ারে বসে পরে।

হঠাৎ করে এমন হওয়ায় সোহা কিছুটা আৎকে উঠে। তারপর দায়ানের দিকে তাকায়।

দায়ান এক ব্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করে কি?

সোহা মাথা নাড়িয়ে বোঝায় কিছু না।

“ভিতুর ডিম একটা।” কথাটা যদিও দায়ান আস্তে করে বলে। তবুও কাছাকাছি বসায় সোহার কানে গিয়ে পৌঁছায়।

সোহা চোখ গরম করে দায়ানের দিকে তাকায়।ভাবটা এমন যেনো ছোটো বাচ্চাকে সে চোখ রাঙিয়ে ভ’য় দেখাচ্ছে।

দায়ানের খুব হাসি পেলো।তাও মুখ টিপে আস্তে করে হেসে খাওয়ায় মন দেয়।

তারপর দুইজনই বেরিয়ে পরে। সোহাকে কোচিং এর সামনে নামিয়ে বলে যায় ছুটির সময় আবার এসে নিয়ে যাবে।পা”ক’নামো করে একা একা যেনো যেতে না ধরে।

ওকে বলে সোহা চলে যায়।

——————-
কোচিং শেষ হওয়ার বিশ মিনিট পর দায়ান আসে। ঠিক সময়ে বের হলেও জ্যামের কারণে ঠিক সময়ে এসে পৌঁছাতে পারে নি।

গাড়ি থেকে নেমে এসে দেখে কোচিং সেন্টার পুরাই ফাঁকা। কোনো ছাত্র ছাত্রীর চিহ্ন মাত্র নেই। দায়ান গেটের দারোয়ানকে গেটের সামনে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে,,, চাচা সবাই চলে গেছে?

হ বাপ হগলে চইলা গেছে।

একটু দেখেন না ভিতরে কেউ আছে কিনা।না মানে একটা মেয়ে।

কেউ নাই।আমি সব দেইখাই তালা লাগাইছি।

দায়ানের কপালে ভা’জ পরে।মেয়েটা কে বলে যাওয়ার পরও চলে গেলো? একটু অপেক্ষা করতে পারলো না? চলে গেছে এটা দায়ান কে ফোন করে অন্তত জানাবে তো।এই দুপুর বেলা দৌড়ে এসে কি লাভ হলো তার?

তারপর নিজের ফোন বের করে সোহাকে কল লাগায়।বারবার একই কথা ভেসে আসছে। ” আপনি যেই নাম্বারে এখন কল দিয়েছেন সেটি এখন বন্ধ আছে।

ফোন বন্ধ বলায় রা’গ উঠে যায় দায়ানের।গাড়িতে একটা লাথি দিয়ে। ভিতরে ঢুকতে নিবে তখনই কারো হাসির শব্দে থেমে যায়।

রাস্তার অপর পাশ থেকে আসছে হাসির শব্দে টা।দায়ানের খুব চেনা চেনা লাগলো। সে ঘার ঘুড়িয়ে তাকায়।তাকিয়ে মেজাজ টা খারাপ হয়ে যায়। সোহা ঐখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে আর কথা বলে বলে জোরে জোরে হাসছে।পাশে দাড়িয়ে আছে একটা ছেলে। দেখে মনে হচ্ছে সোহার পরিচিত কেউ। অন্য পাশে একটি মেয়েও আছে।কিন্তু সোহা দুই জনের মাঝখানে।

দায়ান রাস্তা পার হয়ে সোহার দিকে এগিয়ে যায়।

সোহা তার কোচিং এর রিপন স্যার যে তাকে বাড়িতে পরায়।আর বান্ধবী শিলার সাথে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে আর তাদের গ্রামে থাকতে কি কি করেছে সেসব নিয়েই আলাপ করছে।

কোচিং অনেক আগেই ছুটি হয়ে গেছে। সোহা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দায়ানের জন্য অপেক্ষা করছিলো।সোহা কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে শিলাও তার সাথে দাঁড়ায়। সোহা বলে ছিলো চলে যেতে কিন্তু সে যায়নি। যেহেতু শিলার বাড়ি কাছেই তাই সোহাকে এখানে একা দাড়িয়ে থাকতে দেয় নি।সেও পাশে দাড়িয়ে রয়।

রিপন স্যার ও কোচিং শেষ হয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলো এমন সময় সোহা আর শিলা কে দেখে দাড়িয়ে যায়।তারপর তাদের থেকে জানতে চায় তারা এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেনো। সোহা বলে,,সব শুনে সেও দাঁড়িয়ে থাকে।সোহা বারণ করলেও শুনেনা।ওরা কোচিং এর ছাত্রী ওদের খেয়াল রাখা তাদের একটা দায়িত্ব।

কিছু সময় দাড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ করে রিপন স্যার বলে উঠে এখানে শুধু শুধু দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই। ঐ যে ঐপাশে চলো ফুচকা খেয়ে আসি। সোহা আর শিলা অবাক হয়ে স্যারের দিকে তাকায়।

এমন অবাক হয়ে তাকানোর কিছু নেই।আমিও ফুচকা অনেক লাইক করি।চলো খেয়ে আসি।

দুই বান্ধবী আর দ্বিমত পোষণ করে নি।এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার চেয়ে ফুচকা খাওয়া ভালো।

হঠাৎ করেই কারো রুক্ষ ,কন্ঠের ডাকে সোহার কথা ও হাসি দুটোই থেমে যায়। বুঝতে আর বাকি নেই দায়ান।সোহা পিছনে তাকিয়ে বলে,,,ওও আপনি এসেছেন? আমি আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

কেমন অপেক্ষা যে করছিলে তা তো দেখতেই পাচ্ছি। সকলের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে কথাটা বলে দায়ান।

হেহে আসলে ইনি হলেন আমার স্যার।রিপন স্যার কে দেখিয়ে বলে সোহা।

হ্যালো আমি রিপন মাহমুদ। এই কোচিং এরই একজন শিক্ষক বলেই দায়ানের উদ্দেশ্যে হাত বারায়।

দায়ান হাতের দিকে তাকিয়ে হাত না মিলিয়েই বলে,,হ্যালো আমি দায়ান শেখ। ডক্টর দায়ান শেখ।
বলেই কাউকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সোহার হাতের ক’ব্জি ধরে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। তারপর নিজেই ঠেলে গাড়িতে বসায়। এক মিনিটের মাঝে গাড়িতে উঠে গাড়ি চালাতে শুরু করে।

এমন করে কেউ।আমার বান্ধবীর সাথে পরিচয় ই করাতে পারলাম না।

ফোন কোথায়?

মানে ফোন আবার কোথায় হবে ব্যাগে।

বের করে হাতে নাও।

সোহা ব্যাগ থেকে ফোন হাতে নেয়।তারপর দেখে অফ হয়ে আছে। ইয়ে মানে চার্জ শেষ মনে হয়।

দায়ান কিছু না বলে,,সোহাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আবার বেরিয়ে যায়।

—————–

এখন প্রায় সন্ধা। রিপন স্যার ড্রয়িং রুমে এতো সময় সোহা কে পরিয়েছে। টাইম শেষ হওয়ায় উঠে দাঁড়ায় চলে যাবে।এমন সময় কল আসে তাই রিসিভ করে কথা বলতে বলতেই দরজার কাছে এসেই দায়ান কে দেখতে পায়। কথা বলতে বলতে দায়ানের দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিয়ে চলে যায়।

দায়ান তো সেখানেই দাড়িয়ে আছে। এই ছেলে এই বাড়িতে কি করছে? সোজা বাড়িতে চলে এসেছে। দায়ানের মা কে দেখে দায়ান বলে,,,,আম্মু এই লোকটা এখানে কি করছিলো?

ওওও রিপন? ওতো সোহাকে পড়াতে এসেছে। ছেলেটা অনেক ভালো পড়ায় বুঝলি? সোহা ওর কাছেই পরে।

আর পরবে না।কাল থেকে না করে দিবে আসতে।সোহা আর এর কাছে পরবে না।

সোহা বলে উঠে মানে? পড়বো না কেনো? উনি অনেক ভালো পরায়।আমি সব বুঝি ওনার কাছে।

আমি যখন বলেছি না। তার মানে না।

আরে এখন কি বলছিস কয়দিন পর মেয়েটার পরিক্ষা। রুশের বন্ধু।তাছাড়া এখন স্যার কোথায় পাবো।কে পড়াতে রাজি হবে?

দরকার পরলে আমি পড়াবো।

হহ বুঝছি।উনি আমায় পড়াবেন।সাইন্সের ছাত্র হয়ে আমায় কমার্সের হিসাববিজ্ঞানের হিসাব মিলাবে।

রুশ তখন পিছনে থেকে সবই শুনেছে।দায়ানের কাছে এগিয়ে এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে।,,,,জেলাসি টা একটু কমা ভাই আমার বন্ধু অলরেডি মেরিড।

দায়ানের মা ছেলেকে বলে যান।এই স্যারই পড়াবে সোহাকে।

রুশ ও হাসতে হাসতে চলে যায়।

দায়ান আ’হা’ম্ম’কের মতো দাড়িয়ে রয়। শেষে কিনা এই পিচ্চির জন্য জেলাস ফিল করছে।এই দিন ও বাকি ছিলো জীবনে?

সোহা ও দায়ানের দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসে। তারপর দায়ানের পাশ দিয়ে যায় আর গান গায়,,,,,,,

“ভালোবাসি বলে দাও আমায়।”
বলে দাও হ্যা সব কবুল।”

#চলবে,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here