তুমি হাতটা শুধু ধরো সিজন ২ শেষ

0
1214

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ৩২(অন্তিম পর্ব)
#Jhorna_Islam
প্রাকৃতিক নিয়মে সময় বয়ে যায়। কেটে যায় দিন।দিন পেরিয়ে মাস,মাসের পর বছর।বছরের পর বছর চোখের পলকেই যেনো শেষ হয়ে যায়। সময় যেনো তার নিজ গতিতে খুব দ্রুত বয়ে যায়।
মানুষের জীবন কেটে যায় কখনো সুখ অথবা কখনো দুঃখে।

আপন মানুষ পর হয়ে যায়। পর মানুষ আপন হয়ে যায়। কাছের মানুষ জীবন থেকে হারিয়ে যায়।কালের বিবর্তনে সব বদলে যায়। হারিয়ে যাওয়া মানুষ গুলো কে চাইলে ও ফিরে পাওয়া যায় না। শুধু তাদের স্মৃতি গুলো মনের এক কোণে সযত্নে পরে থাকে। প্রিয় মানুষ টা হারিয়ে গেলে জীবন থেকে হয়তো শরীর নিয়ে বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু প্রানোচ্ছল ভাবে থাকা যায় না।

দায়ান সকালে আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল দশটা। আজ হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়েছে। একাধারে কাজ করতে করতে একটা তিক্ততা এসে গেছে। একটু রিফ্রেশ হওয়া দরকার।

মন মস্তিষ্ক ঠিক না থাকলে কোনো কাজই ভালো লাগে না। মন বসে না।আর এটা তো ডাক্তারি পেশা।এতে মানসিক ভাবে সব সময় ফিট্ থাকা চাই।

বিছানা থেকে উঠে কাবার্ড থেকে টি-শার্ট বের করতে যায় দায়ান। একেবারে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাবে।ব্যস্ততার জন্য কাউকে সময় দেওয়া হয় না। সম্পর্ক গুলো কেমন যেনো হয়ে আছে।তাই ঠিক করলো আজ সারাটাদিন পরিবার কে দিবে।মানুষের জীবনে পরিবারের চেয়ে আপন কেউ নেই। সুখ দুঃখের সাথী হচ্ছে পরিবার।

দায়ান কাবার্ড খুলে টি-শার্ট নেওয়ার সময় কিছু একটা নিচে পরে যায়। শার্ট রেখে কাগজ টা নেওয়ার জন্য নিচে বসে। হাতে নিয়ে একটা চুমু খায়। চোখ বন্ধ করে ফেলে মুখের সামনে কাগজ টা ধরে।

এটা তার মিষ্টি তোতাপাখির তাকে লিখা প্রেম নিবেদন। খুব যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছে। কাগজ টা থেকে যেনো সোহার গন্ধ পাচ্ছে। এটার মূল্য দায়ানের কাছে অপরিসীম। তার পা’গলিটার পাগলামি ময় ভালোবাসার নিদর্শন।

চিঠিটা পরলে এখনো বুকটা ধক করে উঠে। তার পাখি কতো ভালোবেসে চিঠিটা লিখেছে। ভাগ্যিস ঐদিন বাড়িতে ছিলো। আর ঐসময় সোহার রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল।নয়তো এই চিঠিটা সে পেতো কি করে?

শত উপায় হয়তো আছে প্রেম নিবেদনের।কিন্তু চিঠির মাঝে আলাদা একটা ফিলিংস আছে।চিঠির সাথে অন্য কিছুর তুলনা হয় না।

ঐদিন সোহার লেখা চিঠি টা উড়ে গিয়ে দায়ানের পায়ের কাছেই পরেছে।উঠিয়ে পরতে নিয়েও পরতে পারলো না। কল আসায় কথা বলতে বলতে কাবার্ডের ভিতর রেখে দেয় পরে পরবে বলে।শুধু এটুকুই দেখেছে কাগজ টা তে তার নাম লিখা আছে । আর বুঝতে অসুবিধা হয় নি এটা একটি চিঠি।

সোহার প্রতি যখন দায়ান তার ফিলিংস টা বুঝতে পারলো তখন ও দ্বিধার ছিলো সোহা কে নিয়ে। সোহার মনে কি চলছিলো সে জানতো না।ভিতরে ভিতরে শুধু একটাই উৎকন্ঠা ছিলো সোহা কি তার লাইফটা আমার সাথে কাটাবে? আমায় ভালোবাসবে?

তারপর চিঠিটা সামনে আসে।খুব মনোযোগ দিয়ে পরে।পর পর কয়েকবার পরে।ভিতরে ভিতরে কি যে আনন্দ হচ্ছিল সেটা শুধু দায়ানই জানে।আমরা যাকে ভালোবাসি যখন জানতে পারি অপরপক্ষের মানুষ টা ও ঠিক একইভাবে কিংবা তার থেকেও বেশি ভালোবাসে তখন কার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। ঐদিন দায়ান খুশি হয়ে মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। তারপর বলে যতো দ্রুত সম্ভব বিয়ের ব্যবস্থা করতে তার পা’গলি কে আর দূরে রাখবেনা।দায়ানের তারাহুরো তে পরিবারের সকলে পরের দিন ই আ’ক’দ এর আয়োজন করে। সোহা জানতেও পারে নি তার থেকে লুকিয়ে কতো কিছু হয়ে গেছে।

কিছু স্মৃতি মনের মাঝে তাজা হয়ে থাকে। রোজ নিয়ম করে সেই স্মৃতি গুলো ভাবতে ভালো লাগে।

দায়ান তার স্মৃতি গুলো ভাবতে ভাবতেই নিজের অজান্তেই চোখের কোন ভিজে উঠে। একটু পানি বুঝি চোখের কোণ থেকে গালেও এসে ঠাই নিয়েছে।

ঠিক তখনই নিজের গালে ছোট ছোট নরম আদুরে স্পর্শ পায়।হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিচ্ছে।

দায়ান সামনে তাকিয়ে দেখে তার সামনে একটা ছোট্ট পরি দাঁড়িয়ে আছে।

বড় পাপা তুমি কাঁদছো? কেনো কাঁদছো? তোমাকেও কি কেউ মেরেছে আমার মতো?

দায়ান চিঠিটা কাবার্ডে রেখে ছোট্ট পরি টা কে কোলে তুলে নেয়। তারপর বিছানায় কোলে নিয়ে বসে।

কই কাঁদছি না তো মা।

তুমি না বলো মিথ্যা কথা বলা ব্যাড ম্যানার? তাহলে তুমি বলছো কেনো? আমি যে তোমার চোখের পানি মুছে দিলাম?..

ওহ ঐটা কি যেনো চোখে পরেছে মা তাই চোখ দিয়ে একটু পানি বের হয়েছে।

ওহ আচ্ছা বলেই দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়।

কি হয়েছে আমার রশনি মায়ের? সে কি কান্না করেছে? তার চোখের কোণ কেনো ভিজা?

রশনি দায়ানের কথা শুনে ঠোঁট উল্টায়। তারপর কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,, বড় পাপা!

হুম মা বলো বড় পাপা কে কি হয়েছে?

বড় পাপা আমাকে ভাই আবার মেরেছে। বড়দের মারাতো ভালো না তাই না? আমিতো ওর বড়।

আবার ও মেরেছে আমার মা টা কে আজতো ওর খবরই আছে।কি নিয়ে মেরেছে আমার মা কে?

আমাকে নাম ধরে ডেকেছে তাই আমি বারণ করেছি বলেছি আপু ডাকতে তাই আমার চুল ধরে টেনে দিয়েছে। আর বলে আমাকে নাকি কখনো আপু ডাকবে না।আমি নাকি তার বোন না।সে আমাকে বোন হিসেবে মানে না।তুমি বলো বড় পাপা এটা কি ঠিক?

একদম ই না দাঁড়াও ওর মজা বোঝাচ্ছি আমি।পাঁজি টা অনেক দুষ্টু হয়ে গেছে কতো সাহস আমার মায়ের গায়ে হাত তুলে। আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।

বড় পাপা বেশি বকোনা কেমন? ছোট মানুষতো একটু বকো।

দায়ান রশনির দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,,ভাই তাকে মারলো আবার সেই ভাইয়ের জন্যই সে মায়া করছে।বকতে নিষেধ করছে। রুশ আর দায়ানের খুনসুটিময় ছোটোবেলার কথা মনে পরে গেলো।রশনির মাথায় চুমু খেয়ে জোরে ডাকতে থাকে আয়ান কে।

এক ডাক দেওয়া মাত্র আয়ান গুটিগুটি পায়ে রুমে ঢুকে। দায়ানের আর বুঝতে বাকি নেই আয়ান যে এতো সময় দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো।

তুমি তোমার আপুকে মেরেছো?

আয়ান উত্তর না দিয়ে চুপ থাকে।

এতে দায়ান ধমক দিয়ে বলে কি হলো বলছো না কেনো? ও তোমার আপু হয় না?

নাহ্ আমি ওকে আপু ডাকবো না।

আমার মুখে মুখে কথা বলছো তুমি?

স’রি পাপা বলেই কেঁদে দেয়। আর কাঁদতে কাঁদতে বলে,,আমাকে কেউ ভালোবাসে না সবাই শুধু ওকেই ভালোবাসে।আরো জোরে জোরে কাঁদে।

আয়ানের কান্না শুনে বাড়ির সকলে ছুটে আসে। সোহা তারাতাড়ি এসে ছেলেকে কোলে তুলে নেয়।

এই আপনি আমার ছেলেকে মেরেছেন?
কি করেছে জিজ্ঞেস করো।
যাই করুক না কেনো তাই বলে আপনি ওকে মারবেন?
মারিনি শুধু ধমক দিয়েছি।রশনির চুল ধরে টেনেছে তোমার ছেলে শুধু তাই নয় ওর নাম ধরে ডাকে।আমি বলায় জানো কি বলে? বেশ করেছে নাকি মেরেছে।

কিহ্? আয়ান তুই রশনি কে মেরেছিস? এখনই স’রি বল।স’রি বল বলছি।নয়তো পিঠের ছাল তুলে নিবো।

তখনই নোহা বলে উঠে কি শুরু করলি বলতো? ছোটো মানুষ ও।আর রশনি তুমি বড় পাপার কাছে এসে নালিশ করছো? তোমার ছোট ভাই হয় না আয়ান।যাও গিয়ে পরতে বসো।
রশনি তারাতাড়ি চলে যায়।
সোহা নিজের ছেলের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। আয়ান সোহার কোল থেকে নেমে রুম থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বলে তোমাদের সবার সাথে আ’ড়ি। আমি দাদির কাছে থাকবো কেউ আর তোমরা আমায় ভালোবাসো না শুধু বকো।

তারপর রুশের মা,, নোহা আর রুশ রুম থেকে বের হয়ে যায়।
সোহা ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দায়ানের দিকে তাকায়। তারপর রুম থেকে বের হয়ে যেতে নিবে এমন সময় দায়ান সোহাকে টেনে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।
আমাদের ছেলেটা এতো দুষ্টু হলো কি করে বলোতো পাখি? ঠিক তোমার মতো হয়েছে।।।

হ্যা ভালো কিছু করলে আপনার মতো আর দুষ্টুমি করলেই আমার মতো তাই না?
।দায়ান মুচকি হেসে সোহার মুখের দিকে মুখ টা এগিয়ে নিয়ে যেতেই সোহা বাঁধা দেয় একদম না গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন খাবার দিচ্ছি। বলেই দায়ান কে ছাড়িয়ে বের হয়ে যায়।

এখন পালাচ্ছো না,রাতে বোঝাবো মজা বলে দায়ান ও ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে যায়।

—————.
সময়ের গতিতে পেরিয়ে গেছে ছয়টা বসন্ত। পাল্টে গেছে সব কিছু। নোহা আর রুশের একটা মিষ্টি মেয়ে আছে পাঁচ বছরের। সোহা আর দায়ানের দুষ্টু একটা ছেলে আয়ান চার বছরের।

সেই দিন অপারেশন টা সাকসেসফুলি হয়।দায়ান বাইরে বসে শুধু ছটফট করেছে। ডাক্তার খান যখন এসে বলে সাকসেসফুল তখন দায়ানের কলিজায় পানি আসে।দৌড়ে ক্যাবিনে ঢুকে এক পাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় দায়ান।তার পাখিটা সুস্থ হয়ে আবার তার কাছে ফিরে এসেছে।
এর মধ্যে আবার তিশার সাথে দেখা হয়েছিল পরিবার মিলে ঘুরতে গিয়ে। তখন তিশা সকলের কাছে মাফ চায়। সবাই দায়ানের দিকে তাকিয়ে ছিলো কি করে সে আশায়।

অথচ দায়ান খুব সহজেই মাফ করে দিয়েছে।আর ধন্যবাদ ও জানিয়েছে তার জীবন থেকে চলে যাওয়ার জন্য। তিশার জন্যই সে সোহাকে পেয়েছে। তারপর সকলেই তিশাকে মাফ করে দেয়। এখন তিশা দেশের বাইরে আছে।একবারের জন্য ওমির সাথে চলে গেছে।

সকলের জীবনই আপন গতিতে চলছে।হাসি খুশি,সুখ দুঃখ সব মিলিয়ে।

———-
রাতে পরিবারের সকলে মিলে এক সাথে খাবার খেয়েছে গল্প করতে করতে। আয়ান দাদির পাশ থেকে একটুও সরে নি।

সোহা রুমে গিয়ে বিছানা ঠিক করছিল এমন সময় দায়ান রুমে ঢুকে সোহাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
কি করছেন? আয়ান এসে পরবে।

আসবেনা মায়ের সাথে ঘুমোচ্ছে। তোমার মতোই ছেলের অভিমান।আমি গেলাম আনার জন্য আসবে দূরে থাক আমার সাথে কথাই বললো না সে।

তারপর সোহাকে ঘুরিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। সোহার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়।

কি করছেন হাত ছাড়ুন।

উহু ছাড়ার জন্য ধরিনি পাখি। এই হাত ছাড়বোনা। কিন্তু,,, সোহাকে আর কথা বলার সুযোগ ই দিলো না দায়ান,,,,,,

মাঝ রাতে দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভেঙে যায় দায়ানের। শুনতে পায় তার বিচ্ছু ছেলে।পাপা মাম্মা বলে ডাকছে।এমনই হয় রা’গ করে দাদির কাছে ঘুমোতে যায়।কিন্তু মাঝরাতে ঠিক চলে আসে। দায়ান উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আয়ান পাপা কে জড়িয়ে ধরে বলে পাপা দাদির রুমে কি যেনো আছে তাই চলে এসেছি।

হয়েছে আর মিথ্যা বলতে হবে না।যাও গিয়ে শুয়ে পরো মাম্মার সাথে।

আয়ান দৌড়ে গিয়ে সোহাকে জড়িয়ে ধরে কিছু সময়েয় মধ্যে ঘুমিয়ে যায়।
দায়ান বিছানায় এসে মা ছেলের মুখের দিকে তাকায়। তারপর দুইজনের কপালে চুমু একে দেয়।

নিজের এক হাত আয়ানে ছোট্ট হাতটা আকড়ে ধরে আরেক হাত সোহার হাতটা।তারপর বলে এরাই তো আমার সুখ আমার ভালোবাসা। এই হাত ধরে আমরা বাকিটা জীবন টা পাড় করে দিবো। ভালোবাসা ময় জীবন আমাদের।

#সমাপ্তি।

অবশেষে শেষ করে দিলাম গল্প টা।সকলে দুই লাইন হলেও মন্তব্য করে জানাবেন কেমন হলো।আশা করি সাইলেন্ট পাঠক পাঠিকারা ও এবার একটু সারা দিবেন।নতুন গল্প নিয়ে ফিরবো আবার।আপনারা এতোদিন আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। পরবর্তীতেও আশাকরি সাথে পাবো আপনাদের। প্লিজ জানাবেন পুরো৷ গল্প টা কেমন লাগলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here