তুমি হাতটা শুধু ধরো সিজন ২ (পর্ব ১৮)

0
1069

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১৮(বোনাস)
#Jhorna_Islam

প্রতিটা ভোর মানে নতুন দিনের আর নতুন কিছুর আগমন।
সোহা আজও ঘুম থেকে দেরি করে উঠতো।প্রতিদিন ই এমন হচ্ছিলো এলার্ম দিয়ে রাখলেও দেরি হয়ে যায়। আর দৌড়াদৌড়ি লেগে যায় কোচিং এ যাওয়ার সময়।

আজ দায়ানের মা নিজে এসে সোহা কে ঘুম থেকে ডেকে তুলে গেছেন।কাল অবশ্য রাতে খাবার টেবিলে সোহা নোহা কে বলেছিলো সকালে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য।

দায়ানের মা সোহার কথা শুনে নিজে দায়িত্ব নেয়।যে তিনি উঠিয়ে দিবেন সোহাকে সকালে।নোহাকে উঠাতে হবে না । সোহা প্রথমে অমত করলেও পরে রাজি হয়।

তাই আজ দায়ানের মা সোহাকে ডেকে গেছেন।বলেছে ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে।সোহা ও মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।

দায়ানের মা বেরিয়ে গেলে সোহা ও ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

ফ্রেশ হয়ে কোচিং এ যাওয়ার জন্য একেবারে তৈরি হয়ে সোহা নিচে নামে।

নিচে নেমে দেখে বাড়ির পুরুষ গণ খাবার টেবিলে বসে সকালের নাস্তা করছেন।কারণ সকলেই তাদের নিজ নিজ কর্মস্তলে চলে যাবে।

সোহা খাবার টেবিলের সামনে যেতেই দেখতে পেলো ওর বোন ওর দিকে তাকিয়ে হাসতেছে। সোহা ব্রু কোচকে বোনের দিকে তাকিয়ে রয়।

খাবার টেবিলে ডান পাশে দায়ানের বাবার পাশে একটা চেয়ার।আরেকটা বাম পাশে অর্থাৎ দায়ানের পাশে একটা চেয়ার। অন্য চেয়ার গুলো তে যেতে হলে ঘুরে যেতে হবে। তাই এই দুটোর যেকোনো একটাতেই বসতে হবে।

সোহা প্রথমে দায়ানের পাশের চেয়ারটা তে বসতে চাইলেও পরে মত পাল্টে ফেলে।সবাই কি ভাববে এটা ভেবে দায়ানের বাবার পাশের চেয়ারটা তে বসতে যেই না এগিয়ে যাবে।অমনি দায়ানের মা এসে দায়ানের পাশের চেয়ারটায় ধরে তারাতাড়ি বসিয়ে দেয়।

বিষয় টা খুবই দ্রুততার সঙ্গে করেন তিনি।দায়ান আর সোহা দুজনেই হকচকিয়ে দায়ানের মায়ের দিকে তাকায়।

বাকিরা দায়ানের মায়ের কান্ডে মিটমিটিয়ে হাসে।

দায়ানের মা এসব কে পাত্তা না দিয়ে সোহার সামনে খাবার দিতে থাকে। সোহার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। সে বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। হঠাৎ করে রুশের দিকে চোখ পরে।রুশ দাঁত কে’লি’য়ে হাসে সোহার দিকে তাকিয়ে। তারপর চোখ টিপ মারে। এরা জামাই বউ সোহার দিকে তাকিয়ে এমন হাসাহাসি কেনো করছে সোহার বোধগম্য হলো না।তাই আর এসব নিয়ে চিন্তার সাগরে ডুব ও দিলো না।নিজের খাওয়ায় মন দিলো।

খাবার খেয়ে রুশ আর দায়ানের বাবা এক সাথেই উঠে দাঁড়ায়। ওরা একটু আগে বসেছে খাবার খেতে তাই আগেই খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। দুজনে এক সাথেই অফিসে যাবে।সকলের কাছে ওরা বলে অফিসের জন্য বেরিয়ে পরে।

এবার নোহা আর রুশের মা কেও দায়ানের মা খাবার খেতে বসিয়ে দেয়।

সোহা খাবার খাচ্ছে কম এদিক ওদিক তাকাচ্ছে বেশি।দুয়েকটা করে মুখে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে গুণে গুণে মুখে দিচ্ছে।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,,, এমন ভাবে খাচ্ছো কেনো?

না মানে আসলে,,,,,,

না মানে আসলে না করে চুপচাপ ভালো করে খাও।এমন ভাবে কেউ খাবার খায়?

সোহা দায়ানের দিকে তাকায়।

দায়ান সোহাকে চোখের ইশারায় ভালো করে খেতে বলে।

সোহা আবার খাবারের দিকে তাকিয়ে আগের মতোই খেতে থাকে। এবার বিষয় টা দায়ানের মায়ের চোখেও পরে।

সোহা মা কি হয়েছে? খাচ্ছো না কেনো মা, খাবার কি পছন্দ হয় নি?.

না বড় ফুপি আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না।

আচ্ছা দাঁড়াও। বলেই দায়ানের মা সোহার প্লেট টা হাতে তুলে নেয়। তারপর সোহা কিছু বলার আগেই মু্খে খাবার দিতে থাকে। সোহার বারণ শুনলেতো সোহার প্লেটে যতটুকু খাবার ছিলো তা শেষ করে আবার নিয়ে।আরো কয়েক লোকমা খাইয়ে দেয়।

সোহা এবার কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,,, আর দিও না প্লিজ।আমি আর খেতে পারবো না।তুমি আমায় দুই দিনের খাবার মনে হয় এক বারেই খাইয়ে ফেলেছো।আমি এবার নড়তেই পারবো না।

দায়ানের ও সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া হলো।তাই তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,আম্মু তুমি এই খাবারের অ’ত্যা’চার সোহার উপর প্রয়োগ করা শুরু করলে? এখন দিও না আর।দেখতে পাচ্ছো না বেচারি খেতে পারছে না।পরে আবার সব ব’মি করে ফেলে দিবে।এক জায়গায় যাবে এখন।ক্লাস করতে পারবে না অস্বস্তি তে পরবে।এখনের মতো ছেড়ে দাও বাসায় আসলে আবার শুরু করে দিও। বলেই মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে নিজের খাওয়ায় মন দেয়।

দায়ানের মা কে এবার নোহা ও বলে হ্যা বড় ফুপি ছেড়ে দাও নয়তো সত্যি সত্যি ব’মি করে দিবে।

আমার ইচ্ছে মতো খাওয়াতেই পারলাম না।মেয়েটা কতো শুকনো।এমন শুকনো হলে চলে নাকি?

নোহা হাসতে হাসতে বলে,,,সুযোগ তো পাচ্ছোই বড় ফুপি।সোহা কে মোটা করার।এখন না হয় ছেড়ে দাও।

সোহা এদের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না।যে কথা বলে সে সময় শুধু তার দিকে তাকিয়ে রয়।

আচ্ছা ঠিক আছে বলেই উনি হাত ধুয়ে ফেললেন।দায়ান খাবার খেয়ে উঠে গেছে। উপর থেকে ফাইল আনতে হবে।সেই উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

পিছন থেকে দায়ানের মা দায়ানকে ডাক দেয়। দায়ান ঘুরে দাঁড়াতেই বলে উঠে,,, সোহা কে তুই তোর সাথে নিয়ে যাবি।নিজে পৌঁছে দিবি।শুধু আজ না আজ থেকে প্রতিদিন ওকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তোর।

সোহা দায়ানের মায়ের কথায় বলতে নিবে এসবের দরকার নেই বড় ফুপি। আমি যেতে পারবো।বেশি দূরে না তো।কিন্তু বলতে পারলো না।

সোহা কিছু বলার আগেই দায়ানের কথা শুনতে পায়।

“ঠিক আছে আম্মু নিয়ে যাবো।” সোহা তুমি পাঁচ মিনিট ওয়েট করো আমি ফাইল টা নিয়ে তৈরি হয়ে আসছি।

সোহা অবাক হয়ে দায়ানকে দেখে।এক কথায় সোহাকে প্রতিদিন নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলো? এসব ভাবা যায়? আজকি সোহার অবাক হতে হতে কাটবে নাকি।

নোহার ও ততক্ষণে খাওয়া শেষ। সোহা দৌড়ে বোনের কাছে যায়।

— এই আপু ব্যাপার কিরে?

— কিসের ব্যাপার?

— তুই আমার দিকে তাকিয়ে ঐসময় এমন করে হাসতে ছিলি কেনো? বল আমাকে কাহিনি কি?

— কাহিনি কি থাকবে কিছুই না।আমি কি হাসতে পারবো না? হাসতে কি আমার মানা নাকি?

— তা হবে কেন? কিন্তু আমাকে দেখেইতো তুই হাসছিলি।

— তাহলে শোন কেনো হাসছিলাম।খুশিতে।আমার যে কি খুশি লাগছে তোকে বোঝাতে পারবো না।রীতিমতো লুঙ্গি ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে। বুঝতে পারছিস তুই কি পরিমাণ খুশি আমি?

— কি নিয়ে এতো খুশি তুই? সুখবর আছে নাকি কোনো।খালা মনি হতে যাচ্ছি?

— নোহা সোহার মাথায় আস্তে করে থা”প্প”ড় মেরে বলে,, তুই আবারো প্রমাণ করলি তুই কোন লেভেলের গা”ধী।বিয়ে হয়েছে কয়দিন রে তুই যে এখনই খালামনি হওয়ার স্বপ্ন দেখিস।বাচ্চা হওয়া কি এতোই সহজ? নাকি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা যায় কোনটা?

–তাহলে তুই আমায় বলছিস না কেনো? বলনা আমায় কি নিয়ে তুই এতো খুশি।রুশ ভাইয়া ও তোর মতো করে আমার দিকে তাকিয়ে তখন হেসেছে।সাথে আবার চোখ ও মেরেছে। বল প্লিজ আপু আমিও শুনে একটু খুশি হই।

— না বোন বলা যাবে না। এটা তোর জন্য একটা বড় সারপ্রাইজ বুঝলি?

ধূর,,,,,,,,,

তখনই দায়ান ফাইল হাতে নিচে নেমে এসে সোহা কে বলে,,, সোহা চলে এসো।

নোহা সোহাকে ঠেলে বলে,,যা যা তারাতাড়ি যা।

তারপর ওদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে নোহা মুচকি হাসে।

————

দায়ান আর সোহার বিয়ের ব্যাপারটা সকালেই পরিবারের সকলের কাছে জানায় দায়ানের মা। সকলেই শুনে বেশ অবাক হয়।

রুশ বলে উঠে দায়ান জানে এসব?

হ্যা দায়ানের থেকে অনুমতি পেয়েই আমরা এগিয়েছি।দায়ান রাজি সোহাকে বিয়ে করতে। শুধু কয়েকদিনের সময় চেয়েছে।নোহা ওদের কথা নিশ্চুপ হয়ে শুনছে।

রুশ তো সেই খুশি হয়েছে। সেও মনে মনে সোহাকে দায়ানের জন্য ভেবে রেখেছিলো।কিন্তু কাউকে জানানোর সাহস হয়নি।এমনকি নোহা কে ও না।

রুশের মা বলে উঠে কিন্তু বড় ভাবি।আমার ভাই আর সোহা কি রাজি হবে?

সোহার ব্যাপারটা ছেড়ে দে ছোটো।তারপর সোহার দায়ানের প্রতি ভালোবাসার কথা ও চিঠির কথা সকলকেই বলে,,এটা ও বলে সোহা কে যেনো চিঠির ব্যাপারে কেউ কিছু না বলে।আর ওদের বিয়ের কথা উঠেছে এটাও।

সোহা দায়ানকে ভালোবাসে শুনে কেউ কিছু আর বললনা।সকলেই চায় দায়ান ঘুরে দাড়িয়ে নিজের জীবন টা আবার নতুন করে শুরু করুক।আর সকলেরই এটা ভরসা আছে যে দায়ান সোহাকে খুব সুখে রাখবে।কষ্ট পেতে দিবে না।সবাই মিলেই সোহার পরিবার কে রাজি করাবে বলে ঠিক করে নেয়।।

নোহা ও এতে সায় দেয়। তারতো খুশি ধরছেই না।সোহা সারাজীবনের জন্য তাহলে তার কাছেই থাকবে।আহ্ কি আনন্দ। খবর টা জানার পর থেকে নোহা হাসি খুশি দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। ঠিক করেছে বাবা মা রাজি না হলে নিজে বোঝাবে।

—————–

দায়ান সোহাকে বলে তারাতাড়ি করে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সোহা দায়ানের সাথে হাটায় না পেরে দৌড়াতে থাকে। দৌড়ে দায়ানের পাশে যায়।গিয়ে আরেক বিপত্তি ঘটে।ভুলবশত পা বে’কা’য়দা’য় পরে চিৎ হয়ে পরতে নেয়।

ভয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে বলে,,গেলো গেলো।আমার নাক মুখ সব গেলো।

তারপর অনেক সময় হয়ে যাওয়ার পরও যখন ব্যথার কোনো চিহ্ন পাওয়া গেলোনা শরীরে তখন চোখ তুলে তাকায়।

তাকিয়ে দেখে দায়ান তার খুব কাছে।আর মিটমিটিয়ে হাসছে।বুঝতে আর বাকি নেই দায়ান পরতে যাওয়ার আগেই ধরে ফেলেছে।

সোহা এক দৃষ্টিতে দায়ানের হাসির দিকে তাকিয়ে রয়।

কি ম্যাডাম এভাবে থাকার ইচ্ছে নাকি? কোচিং এ যাবেন না?

সোহা তারাতাড়ি করে উঠে ঠিক হয়ে দাড়ায়।

দায়ান সোহার জন্য গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বলে,,সাবধানে হাটবানা যদি এখন পরে যেতে তাহলে কি হতো?

তারপর ইশারায় উঠে বসতে বলে।

সোহা চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে। দায়ান ঘুরে এসে নিজেও উঠে বসে। তারপর কিছু না ভেবে সোহার অনেকটা কাছাকাছি চলে আসে।

দায়ান এতো কাছে আসায় সোহা ঘাবড়ে যায়।দায়ানের কড়া পার্ফিউমের সুবাস এসে নাকে বারি খাচ্ছে।

সোহা চোখ ছোটো ছোটো করে দায়ানের দিকে তাকায়।দায়ান তার সিট বেল্ট বেধে দিয়ে সরে গেছে। সোহা লম্বা করে একটা দ’ম নেয়।

দায়ান গাড়ি চালাতে শুরু করে সোহার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আবারো মিটমিটিয়ে হাসে। যা সোহার চোখ এড়ায় না।সোহা ভাবতে থাকে কি হয়েছে এদের। সকলে আজ এমন ভাবে হাসছে কেনো?

“আজকি হাসার দিন মানে হাসি দিবস নাকি?”

#চলবে,,,,,,,

নতুন বছরের ছোট্ট একটা সারপ্রাইজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here