তুমি হাতটা শুধু ধরো সিজন ২ (পর্ব ১৭)

0
1006

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ১৭
#Jhorna_Islam

হোয়াট আম্মু!
তুমি কি পা/গলে হয়ে গেছো? এসব কি যা’তা বলছো? তুমি ধারণা করতে পারছো তুমি কি বলছো?
কিছু না ভেবেই একটা বলে দিলেই হলো নাকি?
আমি আর সোহা? এটা কখনো পসিবল?

তুমি এটা ভাবলে কি করে আম্মু হাও?

কেনো কি হয়েছে?

— তুমি এখনো বুঝতে পারছো না?

— নাহ্ বল শুনি তোর সমস্যা টা কি সোহাকে নিয়ে? ওকি দেখতে শুনতে খারাপ? নাকি মেয়ে হিসেবে ভালো না,কোনটা বল আমায়?

— এসব কিছু না আম্মু। মেয়ে হিসেবে সোহার কোনো তুলনাই হয় না। ওর মতো কাউকে লাইফে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

— তাহলে তুই সেই ভাগ্য হাতে ঠেলে দূরে কেন সরিয়ে দিচ্ছিস?

আম্মু তুমি সব জেনেও কেনো অবুঝের মতো আচরণ করছো? এসবের ভূত তোমার মাথায় কি করে চাপ’লো?

যেভাবেই চা’পুক না কেনো সেইটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। প্লিজ বাপ আমার রাজি হয়ে যা।সোহাকে বিয়ে করে নে।নিজের জীবন টা আবার সুন্দর করে গুছিয়ে নে।তোকে এভাবে দেখতে আমার আর তোর আব্বুর ভালো লাগে না। তোকে নিয়ে জানিস কতো টেনশনে থাকি? এমন ভাবে কি থাকা যায়? একা একা কেউই থাকতে পারেনা।ভালো ভাবে বাঁচার জন্য কাউকে জীবনে প্রয়োজন। একান্ত প্রয়োজন। বুঝতে পারছিস?

দায়ান অসহায় দৃষ্টিতে একবার মায়ের দিকে তো একবার বাবার দিকে তাকায়। তারপর বলে,,,আব্বু তুমি এ’ট’লি’স্ট আমায় বুঝো।আম্মুকে বোঝাও।তুমি চুপ করে আছো কেনো?

দায়ানের বাবা এবার নড়েচড়ে বসে। এতোসময় মা ছেলের কথা চুপ করে শুনছিলেন তিনি।

দায়ান আশায় আছে এইটা ভেবে তার বাবা তার পক্ষে থাকবে।কিন্তু দায়ানের আশায় এক বালতি পানি ঢেলে তিনি ও বলে উঠেন দেখ দায়ান আমিও তোর মায়ের সাথে একমত। তোর মা যা বলছে মেনে নে।কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না।

দায়ান বাবার কথা শুনে বলে উঠে,,, বাহ্ ভালোইতো।দুইজন এক হয়ে নেমেছো।

আমার এই ছন্ন ছাড়া জীবনে ওকে কেন জড়াতে চাচ্ছো তোমরা? নিজের ইচ্ছেতে মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে চাচ্ছো? আমার অতীত তোমাদের জানা নেই? মেয়ে টা কে কেনো ঠকাতে চাচ্ছো তোমরা? আমার লাইফে কেউ ছিলো আম্মু। এটা নিশ্চই তোমরা ভুলে যাও নি?

ছিলো দায়ান। এখন তো আর নেই।পা’স্ট আর প্রেজেন্ট এর মাঝে বিস্তর ফা’রা’ক সেটা তোমাকে বুঝতে হবে। সে আর তোমার লাইফে এখন নেই।

দায়ান কিছু সময় মায়ের দিকে তাকিয়ে রয়। তারপর কোলে গিয়ে শুয়ে পরে।আমি পা/গল হয়ে যাবো আম্মু। আমি আর পারছি না।এসব নিতে পারছিনা আমি।

দায়ানের মা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,,,সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই আমাদের কথাটা মেনে নে।সব দেখবি কি রকম সুন্দর হয়ে গেছে। ঐ মেয়েটা তোর অন্ধকার জীবনের আলো হয়ে আসবে।

বাবা মায়ের উপর তোর বিশ্বাস আছে তো?

দায়ান মাথা নাড়িয়ে জানায় আছে।

তাহলে আমাদের কথাটা মেনে নে। আমরা কখনো তোর খারাপ চাইবো না।কোনো ভুল কিছু করবোও না।যেটাতে করে আমাদের ছেলে খারাপ থাকে।বাবা মা সব সময় বেস্ট ডিসিশনটাই বেছে নেয় তাদের সন্তানের জন্য।

আম্মু আমার আর সোহার বয়সের পার্থক্য জানো? ওতো একটা পিচ্চি মেয়ে।আমার সাথে তো ওর যাবে না আম্মু।

এসব বয়সের পার্থক্য কোনো ব্যপার না দায়ান। যদি লাইফ পার্টনার টা সঠিক হয়।আমার আর তোর আব্বুর বয়সের পার্থক্য তেরো বছরের।আমাদের মধ্যে এই নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হয়েছে? হয়নি তো।তোর ও হবে না।

আমার লাইফের এতোকিছু জেনেও কেনো ওরা আমাকে সোহার জীবনে মানবে আম্মু? ওর বাবা মা কখনো মেনে নিবেন না। আর সোহা ও মেনে নিবে না আমায়।কেউই তার জীবন সঙ্গী অন্য জনকে ভালোবাসছে সেটা সহজে মেনে নিবে না।

দায়ানের মা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,, এতোসব নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। সব আমার আর তোর বাবার উপর ছেড়ে দে।আমরা দুইজন সব সামলে নিবো।তুই শুধু রা’জি হয়ে যা। সোহার বাবা মায়ের সাথে আমি আর তোর বাবা কথা বলবো।আর সোহার ব্যাপারটা আরো আগে ছেড়ে দে।

তারপর দায়ানের মা মনে মনে বলে,, তুই তো জানিস না। সোহা নামের মেয়ে টা তোকে কতো ভালোবাসে।আমার আর তোর আব্বুর তো সেই প্রথম দিন থেকেই সোহাকে তোর জন্য পছন্দ। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম তুই একটু স্বাভাবিক হলেই তোর আর সোহার চার হাত এক করে দিবো সকলের সম্মতি তে।

————————————-
সোহার বালিশের নিচে রাখা দায়ানকে নিয়ে লিখা চিঠি টা আর কেউ নয় দায়ানের মা পেয়েছে। সোহা যখন কোচিং সেন্টার এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গিয়েছে তখন তিনি উপরে উঠে আসেন।জামেলা খালা তখন ঝুঁড়ি নিয়ে চলে গেছে।

দায়ানের মা বিছানার চাদর নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।

অনেকদিন হয়ে গেছে সোহার রুমের বিছানার চাদর বদলানো হয়নি। কিছু টা ময়লা ময়লা হয়ে আছে।তাই আরেকটা বিছিয়ে সেটা ধোয়ার জন্য নিয়ে যাবেন।

রুমে ঢুকে বিছানায় গিয়ে বসে। তারপর বালিশ টা কোলে তুলে নিয়ে কা’ভা’র খুলতে যাবে,এমন সময় চোখ যায় বালিশ যেখানে রেখেছিলো ঐখানে একটা কাগজের দিকে।

এইখানে এটা রেখে দিয়েছে মেয়েটা? আর জায়গা পায়নি নাকি।পরেতো হাড়িয়েও যেতে পারে।দরকারি কাগজ হলে।তারপর সেটা হাতে উঠিয়ে নেয়।

কৌতূহল বসত দেখে নেয় ওটা কিসের কাগজ।তারপর চিঠিটা পরে দায়ানের মায়ের চোখে খুশির পানি চিকচিক করতে থাকে।কয়েক দিন ধরে দায়ানের মা সোহা আর দায়ান কে নিয়ে যে স্বপ্নটা মনের মধ্যে গেঁথে রেখেছেন।সেটা আরেক ধাপ বেড়ে গেলো।সোহা দায়ান কে ভালোবাসে।তার মানে দায়ানের মা এতোদিন ধরে যেটা ভেবে রেখেছিলো সেটা সম্ভব।

তারাতারি করে উনি চিঠিটা নিয়ে বালিশ টা যথা স্থানে রেখে সোহার রুম থেকে বের হয়ে যায়।

তারপর নিজের রুমে ঢুকে যত্ন সহকারে চিঠিটা রেখে দেয়। দায়ানের বাবা বাড়ি আসলে সব জানায়।কারণ দুইজনেই দায়ানের জন্য সোহাকে পছন্দ করে ছিলো কিন্তু বলার সাহস হয়নি। এখন যেহেতু সোহা ও দায়ানকে চায়।তাহলে তারা যে করেই হোক এই দুইজন কে এক করবে।

তারপর ভেবে চিন্তে দায়ান হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলে উনাদের রুমে ডেকে নিয়ে আসে।তারপর বলে যে,,উনারা চায় দায়ান সুখে থাকুক ভালো থাকুক এটা দেখে শান্তিতে মরতে চান।এজন্য দায়ান কে বিয়ে করতে হবে। তাও আবার সোহাকে। সোহাকে উনারা দায়ানের জন্য পছন্দ করেছে।

———————————-

তোর চোখে ও আমি সোহার জন্য বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু দেখেছি।তুই হয়তো এখন বুঝতে পারছিস না।সময় হলে ঠিক বুঝতে পারবি।কথা গুলো দায়ানের মা মনে মনেই বলেন।

আমি নিজের লাইফের সাথে কারো লাইফ জড়াতে চাচ্ছিলাম না আম্মু। আবারো বলছি ভালো করে ভেবে দেখে নেও।

আমারা অনেক ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত টা নিয়েছি দায়ান।বয়স তো আর কম হলো না।ভালো মন্দ সবই বুঝি।বাবা মায়ের উপর ভরসা রেখে আশা করি ঠকবে না।বাবা মা কখনো তাদের সন্তানের সাথে বে’ঈ’মানী করে না।কোটিতে হাতে গুনা দুয়েকজন পাবে যারা এমন করে।

তুমি আমাদের একমাত্র ছেলে আমাদের সব চাওয়া পাওয়া, আশা ভরসা সব কিছু তোমায় নিয়ে।আশা করি তুমি আমাদের নি’রাশ করবেনা।

ঠিক আছে আম্মু তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো।আমি আর বাঁধা দিবো না। জীবনে একটা বড় সিদ্ধান্ত তো আমি নিয়েছিলাম।এবার না হয় তোমরা নিলে।

দায়ানের বাবা মায়ের মুখে দায়ানের কথা শুনে হাসির রেখা ফোটে উঠে। দায়ান সেই হাসি মুগ্ধ চোখে দেখে।

সে লাইফ টা আবার সাজাবে।স্বপ্ন দেখবে নতুন করে। ভেবে নেয়।

———————————————————-
সোহা অনেক ভেবেও যখন চিঠি টা কোথায় আছে বুঝতে পারলো না।তখন ভাবনাই ছেড়ে দিলো।

ধূর আর ভাববেই না।হয়তো ঐ ঝুড়িতে ভুল করে ফেলে দিয়েছিলো।আর জমেলা খালা তা নিয়ে ফেলে দিয়ে এসেছে।

নয়তো এতক্ষনে তো কিছু একটা ঘটতই যদি কারো হাতে চিঠি টা পরতো। নিশ্চয়ই চিঠি টা যার হাতেই পরতো সে যেই হোক চুপ করে থাকতো না।

অনেক ভেবে চিন্তা করতে করতে মাথা ধরিয়ে ফেলেছে।তাই আর এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করবে না।এতো ভাবনা চিন্তায় শরীরে ক্লান্তি ভ’র করেছে। চোখ ঘুমে বু’জে আসছে।
এখন একটা লম্বা ঘুম দরকার।

তাই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো।কিছু সময়ের মধ্যেই দুই চোখের পাতায় ঘুম নেমে এলো।আর ঘুমিয়ে ও গেলো।

দায়ান তার বাবা মায়ের রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সোহার রুমের দরজায় চোখ যায়।দরজা টা খোলাই আছে।দায়ান দরজার কাছে এগিয়ে আসতেই বিছানার উপর ঘুমন্ত সোহাকে দেখতে পায়।

কিছু সময় দরজার বাইরেই দাড়িয়ে সোহার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রয় দায়ান।মেয়ে টা কো’ক’ড়ে শুয়ে আছে। হয়তো শীত লাগছে।তার উপর দরজা এমন হা করে খোলা রেখে কেউ ঘুমায়? দায়ান সোহার রুমের ভিতর ঢুকে।

এগিয়ে গিয়ে সোহার পাশে দাঁড়ায়। কোনো কিছু না ভেবেই পায়ের নিচ থেকে কা’থা’টা নিয়ে সোহার শরীরে মেলে দেয়।তারপর সোহার মাথায় হাত দিতে গিয়ে ও থেমে যায়। কিছু একটা ভেবে সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে দরজাটা চাপিয়ে দেয়।

আবার বাবা মায়ের রুমের দিকে এগিয়ে ন’ক করে।

দায়ানের বাবা মা দরজার দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে,, তার আগেই দায়ান বলে,,,

“আম্মু আমি সোহাকে বিয়ে করতে রাজি আছি।” তবে আমার একটু সময়ের প্রয়োজন। ওর মনে কি চলছে সেটা আমি জানতে চাই।আর ওর সাথে ভালোবাসাহীন ভাবে কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাই না।নিজের মন থেকে ওকে গ্রহন করতে চাই।৷

আশা করি বুঝতে পেরেছো।বলেই দায়ান নিজের রুমে চলে যায়।

#চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here