তুমি নামক প্রশান্তি দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৬

0
261

#তুমি_নামক_প্রশান্তি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#দ্বিতীয়_খন্ড
#পর্ব_ছয়

পাত্রপক্ষের সামনেই থা°প্পড় খেয়ে বেলী গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আগের মতো চোখে পানি নেই। মুখে রয়েছে অদ্ভুত হাসি। পাত্রসহ পাত্রপক্ষের সবাই রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বেলীর দিকে। রিতা বেলীর কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে রাগী কন্ঠে বলে উঠল,
“তুই কি আমাকে ভালো থাকতে দিবি না? নাকি আমি ভালো থাকি সেটা তোর সহ্য হয়না?”
বেলী সাথে সাথে জবাব দিলো,
“তোমার ভালো থাকা আমি ধরে রাখিনি, মা।”
রিতা এবার আগের ন্যায় বলল,
“ভালো থাকতে দিলি কই? এই এক বছরে কতবার তোর জন্য পাত্র দেখেছি, বল তো? আর প্রত্যেকবার তুই নিজের হাতে সব ভেঙে দিস। কেন? তোর কি নিজের জীবন নিয়ে কোনো চিন্তা নেই? তোর কি ভবিষ্যৎ নেই? তুই কি সারাজীবন এভাবেই থাকবি?”
বেলী খোলা চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে উত্তর দিলো,
“আমার জীবন। আমাকে বুঝে নিতে দাও, মা। তোমার বয়স হয়েছে। এবার একটু নিজেকে নিয়ে ভাবো।”
কথাটুকু বলেই পাত্রের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কড়া স্বরে বলল,
“এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বেরিয়ে যাওয়ার জন্য কী নিমন্ত্রণ কার্ড দিতে হবে।”
সামনে থাকা ছেলেটা এবার চোখ গরম করে তাকাল। দাঁতে দাঁত চে°পে বলল,
“আমি আপনার বাড়িতে ইচ্ছে করে আসিনাই। আপনার মায়ের কথায় এসেছি। তাই নিজের লিমিটে থেকে কথা বলুন। ভদ্র মেয়ে ভেবেছিলাম আপনাকে। এখন তো দেখছি আপনি অভদ্রের থেকেও বড় কিছু।”
বেলী এসব কথায় পাত্তা দিলো না। বিরক্তির স্বরে বলে উঠল,
“এবার আসতে পারেন। ওই যে দরজা খোলা আছে। ”
রিতা সাথে সাথে ধমকের স্বরে বলে উঠল,
“বেলী”
বেলী সেদিকে কর্ণপাত করল না। পাত্রপক্ষের সবাই বেশ কিছু কড়া কথা শুনিয়ে গেলো বেলীকে। কিন্তু বেলীর কোনো ধ্যান খেয়াল নেই। মনে হলো এক কান দিয়ে কথাগুলো ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিলো। পাত্রপক্ষ চলে যেতেই রিতা এবার সম্পূর্ণ রেগে গেলো। রাগান্বিত স্বরে বলতে লাগল,
“মানুষ এখন ঠিকি বলে। তুই আসলেই বে°য়াদব হয়ে গেছিস। আদব-কায়দা, ব্যবহার সব বদলে গেছে তোর। তোর জন্য মানুষের কাছে এখন আমার মাথা নিঁচু হয়ে যায়।”
বলে থামল। পরক্ষণেই শান্ত হয়ে গেলো। বেলীর দুই কাঁধে হাত রেখে বলতে লাগল,
“কার জন্য বসে আছিস তুই? যার জন্য অপেক্ষা করছিস। সে ফিরে আসবে না, মা। তবুও কেন এভাবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস? কেন নিজেকে এভাবে তিলে তিলে শেষ করছিস? সব ভুলে নতুন করে সব শুরু কর। আমি তোকে একটু সুখী দেখতে চাই, মা।”
বেলী খালি মলিন হাসল। রিতার চোখের পানি গুলো মুছিয়ে দিতে দিতে বলল,
“এভাবে অকারণে চোখের জল ফেলবে না, মা। আমি একটুও কষ্ট পাচ্ছি। ভালো আছি আমি। অনেক ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। তুমি আমার জন্য এভাবে কষ্ট পেও না, প্লিজ।”
রিতা মেয়েকে বুকে আঁকড়ে ধরল। নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলতে লাগল। আর বেলীর চোখ শুকনো। পানি পড়ছে না। কষ্টে বুক ফে°টে যাচ্ছে। মাকে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদতে চাইছে। তবুও চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে না। এই অনুভূতিটা পৃথিবীর সব থেকে বাজে অনুভূতি।
“মায়ের থেকে ছেলেকে কেড়ে নিয়ে তোর মতো মেয়েদের তো ভালোই থাকার কথা।”
হঠাৎ করে এমন তীক্ষ্ণ কথা কানে আসতেই বেলী আঁতকে উঠল। কণ্ঠটা চিনতে পেরে নিজেকে চট করে সামলে নিলো। পেছন ফিরে সীমাকে দেখতে পেয়ে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বলে উঠল,
“আপনার গায়ের চামড়াটা কি গন্ডারের বড়মামি? না মানে, এই যে আমি এত কথা শুনাই, তবুও আপনি সেই আমাদের বাড়িতেই আসেন। এইসব কি আপনার গায়ে লাগে না? আপনি নিজেই ইচ্ছাকৃত ভাবে অপমানিত হতে চলে আসেন। আবার পরে আমাকেই বলেন, আমি নাকি বে°য়াদব। এটা কিন্তু একদমই ঠিক নয়, বড় মামি।”
বেলীর কথা শেষ হতে না হতেই সীমা বিস্ফোরিত চোখে তাকাল। দরজায় দাঁড়িয়েই চ্যাঁচিয়ে বলল,
“বেলী, মুখ সামলে কথা বলিস। ভুলে যাস না
আমি কে?”
বেলী আবার হাসল। রিতা বেলীর হাত ধরে আছে। চোখ দিয়ে ইশারা করছে ‘যেন চুপ হয়ে যায়’। কিন্তু বেলী তো এখন নাছোড়বান্দা। কারোর কথা শুনবে না। নিজের যা ভালো মনে হবে, তাই করবে। সীমার দিকে এগিয়ে গিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
“আপনি আমার বড় মামি। সব থেকে বড় কথা ‘আপনি আমার ভালোবাসার মানুষটার মা’। আমার গুরুজন। এইসব আমি একটুও ভুলে যাইনি। তাইতো এখনো আপনার এইসব লো ক্লাস কথা শুনে যাই। নয়ত কবেই ঠিকঠাক জবাব দিয়ে দিতে পারতাম।”
বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কেমন একটু হাসল। এই হাসিটার ঠিকঠাক ডেফিনিশন দিতে পারবে না কেউ। সীমা কিছু বলতে যাবে, তখনি বেলী পুনরায় শান্ত, শীতল কণ্ঠে বলতে লাগল,
“আমাকে ক্ষমা করবেন, বড়মামি। আপনাকে আমি এইসব বলতে চাইনি। কিন্তু কি করব বলুন? আমিও তো একটা মানুষ। আমারও ধৈর্যশক্তি বলে কিছু একটা আছে। এত বছর ধরে আপনি আমাকে শুধু কথা শুনিয়ে গেলেন। আমার দোষ, ত্রুটি ব্যস্ত থাকেন সবসময়। এইসব বাদ দিয়ে। একদিন আমাকে একটু ভালোবাসতে পারতেব। আমাকে একটু বুকে জড়িয়ে স্বান্তনা দিতে পারতেন৷ আমিও যে আপনার ছেলেকে হারিয়ে ভালো নেই, বড়মামি। আমার বিয়ের আসরে সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি ভালোবাসার মানুষটার জন্য বউ সেজে বসে ছিলাম। লাল টুকটুকে বউ। অথচ সে আসেনি। এর চাইতে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে, বলুন মামি? তবুও আপনি আমার কষ্টটা দেখতে পান না। এখনো সেই আমাকেই দোষারপ করেন। কথা শুনান। কথার আ°ঘাতে আমাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেন। আমাকে ভে°ঙে দেন। কেন মামি? আমাকে একটু ভালোবাসলে, বুকে আগলে নিলে। খুব ক্ষতি হয়ে যেত কী বড় মামি?”
কথাগুলো বলতে বেলীর গলা আটকে আসছে। চোখের কোনে জল জমে আছে৷ যে কোনো মুহূর্তে আছড়ে পড়বে। সবার থেকে নিজেকে আড়াল করতে বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে গেলো বাইরে। আর সীমা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। রিতা মুখে আঁচল গুঁজে রুমের দিকে পা বাড়াল।


চারদিকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। শুনশান করে গাড়ি চলেছে রাস্তায়। আর বেলী বাড়ি থেকে বের হয়ে কাঁদতে শুরু করল। কি হলো কে জানে? কাঁদতে কাঁদতে ফুটপাত ধরে দৌঁড়াতে লাগল। এলোমেলোহীন ভাবে দৌঁড়াচ্ছে। ভীড়ের মাঝে ধাক্কাও লাগছে৷ তবুও থামছে না। অনেকক্ষণ যাবৎ দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে হঠাৎ কিছু একটার সাথে পা লেগে উপুড় হয়ে পড়ে যায় রাস্তায়। হাটুর মধ্যে ব্যাথা পেলেও টুঁ’শব্দ করল না। নিজে নিজেই উঠে বসল। চারদিকে তাঁকিয়ে দেখল পাশে একটা বড় হাসপাতাল। কিছুক্ষণের জন্য একটু অবাক হলো। আবার নিজের এমন আচরণের জন্য নিজের উপর রাগ হলো। মনে মনে বলল,
“তুই কেন বার বার ভুলে যাস, বেলী। মানুষের জন্মই শুধু অন্যকে আ°ঘাত করার জন্য। তুই না, শক্ত হয়ে গেছিস। তবুও কেন মাঝে মাঝে দূর্বল হয়ে যাস?”
তারপর নিজে নিজেই উঠে দাঁড়াল। পায়ে খুব ব্যাথা পেয়েছে। তবুও উঠে দাঁড়াল। তারপর একটু ভাবল হাসপাতালে ঘুরে আসা যাক। মাথায় ওড়নাটা ভালো করে প্যাঁচিয়ে নিলো। হাসপাতালে ঢুকতেই চোখে পড়ল কড়িডোরে অসহায় আপনজনদের বিষন্ন চেহারা। এই এক বছরে বেলীর নতুন অভ্যাস হয়েছে এটা। মন খারাপ হলে কাছের কোনো হাসপাতাল বা ক°বরস্থানে ঘুরে আসে। প্রত্যেকটা কেবিনে উঁকি মে°রে দেখছে। হাসপাতালে আসলে বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। কতশত মানুষ কত খারাপ অবস্থায় পড়ে আছে। আর আমরা সুস্থ থেকেও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করিনা। ভেবেই বেলী একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। দ্বিতীয় তলায় সিড়ি বেয়ে উপরে উঠল। প্রথম কেবিনে উঁকি দিতেই দেখল একটা ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চার মুখে অক্সিজেন দেওয়া। বাচ্চাটার মাথার পাশে বসে অসহায় মা কাঁদছে। খুব বেশি মায়া হলো বেলীর। তবুও কিছু করার নেই। শুধু মনে মনে বাচ্চাটার জন্য দোয়া করল। পাশের কেবিনটায় উঁকি দেওয়ার সময়েই কেউ একজন এসে পেছন থেকে বলে উঠল,
“কে আপনি? কি চাই এখানে?”
বেলী ভয় পেয়ে ঘাবড়ে উঠল। পেছন ফিরে একজন নার্সকে দেখে মুখে হাসি টানল। শান্ত স্বরে জবাব দিলো,
“আসলে আমার বাসা হসপিটালের পাশেই। মন খারাপ হলে একটু ঘুরতে আসি। তাই একটু ঘুরে দেখছিলাম। আমি কাউকে ডিস্টার্ব করছি না। চিন্তা করবেন না।”
প্রতি উত্তরে নার্সটা কিছু না বলে গম্ভীর মুখ করে কেবিনের ভেতর ঢুকে গেলো। বেলী কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ সেদিকে চেয়ে রইল। পরক্ষণেই নিজে নিজেই কিছু একটা বলতে লাগল। কেবিনের ভেতরে একবার উঁকি দিয়ে অন্য কেবিনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই, পা জোড়া থেমে গেলো। বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। পা থেকে শরীর ঠান্ডা হয়ে আসা শুরু করল। তবু চোখের ভুল ভেবে নিজেকে একবার বুঝাল,
“ধুর বেলী! তোর মাথাটাই খারাপ হয়ে গেছে। এখানে নীলাভ্র ভাই, কোথা থেকে আসবে? তুই ভুল দেখেছিস। আর একবার দেখে নে।”
বলে জোরে একটা শ্বাস নিলো। তারপর আস্তে আস্তে ধীর পায়ে দরজায় দাঁড়াল। চোখ তুলে বেডের দিকে ভালো ভাবে তাকাতেই বেলীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। পা দুটো এবার পুরো জমে গেলো। দুমড়ে-মুচড়ে উঠল ভেতরটা। বেগতিক হারে শরীরটা কাঁপতে শুরু করল। জড় বস্তুর মতো বেলী এগিয়ে গেলো বেডের সামনে। বেডে থাকা মানুষটার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। সুস্বাস্থ্যের মানুষটা শুকিয়ে রোগা হয়ে গেছে। মুখ ভর্তি দাঁড়ি। চুল গুলো বেশ বড় হয়ে গেছে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক চলছে। স্যালাইন চলছে। নাহ! এই দৃশ্যটা সহ্য করতে পারল না বেলী।
সহ্য করার মতো না। পৃথিবীর কোনো প্রেমিকা এই দৃশ্যটা সহ্য করতে পারবে না। বেলী গলা ফা°টিয়ে ‘নীলাভ্র ভাই’ বলে চিৎকার করে উঠল। ঝাপিয়ে পড়ল নীলাভ্র সামনে। নীলাভ্রর হাতটা আকঁড়ে ধরার জন্য হাত বাড়াতেই নার্সটা ধরে ফেলল। ধমকের স্বরে বলতে লাগল,
“কি করছেন আপনি? পা°গল হয়ে গেছেন না_কি? উনাকে আপনি ছুঁতে পারবেন না।”
বলে বেলীকে দূরে সরিয়ে আনল। আর বেলী অসহায়ের মতো চেয়ে রইল। কিছু বলার চেষ্টা করল। কী আশ্চর্য! শব্দ বের হচ্ছে না কেন? বেলী খুব করে বলতে চাইছে,
“আমাকে একবার উনার কাছে যেতে দিন। উনি আমার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা।”
কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। শুধু কান্নারা ভেতর থেকে দল বেঁধে আসছে। নার্স বেলীকে টেনে আনতেই বেলী আবার দৌড়ে গেলো। ছুটে গিয়ে নীলাভ্রর হাতটা শক্ত করে ধরল। চিৎকার করে বলতে লাগল,
“নীলাভ্র ভাই! এই, এই আপনি এভাবে সুয়ে আছেন কেন? আপনি এখানে কি করছেন? চোখ খুলেন বলছি। একদম নাটক করবেন না। অনেক হয়েছে। এবার সব নাটক শেষ করার সময় এসে গেছে। আপনার এইসব অভিনয় আমি আর সহ্য করব না। আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। চোখ খুলুন। চোখ খুলুন বলছি। আর এইসব কি লাগিয়েছেন মুখে, হাতে। সব খুলে ফেলুন। খুলে ফেলুন এইসব। একদম সুন্দর লাগছে না আপনাকে। আচ্ছা আপনি খুলবেন না। তাই তো? দাঁড়ান! আমি এক্ষুনি খুলে দিচ্ছি।”
বলেই নীলাভ্রর মুখ থেকে মাস্কটা খুলে নিলো বেলী। সাথে সাথে নীলাভ্রর শ্বাসকষ্ট হওয়া শুরু করল। নার্সটা এবার থা°বা মে°রে বেলীর হাত থেকে অক্সিজেন মাস্কটা নিয়ে তাড়াতাড়ি নীলাভ্রর মুখে লাগিয়ে দিলো। আর বেলী শুধু অবাক নয়নে দেখছে। নীলাভ্র একটু শান্ত হতেই নার্সটা বেলীর দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকাল। বেলীর দিকে তেড়ে গিয়ে বলতে লাগল,
“এই মেয়ে! কে তুমি? মাথা খারাপ নাকি তোমার? কি করতে যাচ্ছিলে? এক্ষুনি যদি একটা ভালো-মন্দ কিছু হয়ে যেত। তখন এর দায়ভার কে নিতো? মন চাচ্ছে এক থা°প্পড়ে তোমার গা°লটা লাল করে দিতে। মাথায় কি কোনো বুদ্ধি নেই। কোথায় কোন আচরণ করতে হয়। তুমি জানো না?”
বেলীর কানে এইসব কোনো কথাই ঢুকছে না। বেলীর চোখে শুধু নীলাভ্রর ছটফট করার দৃশ্যটুকু ভাসছে। অন্য কোনো দিকে খেয়াল নেই। নার্সটা এবার আগের ন্যায় ধমক দিয়ে আদেশ দিলো,
“এই মেয়ে, এখনো দাঁড়িয়ে আছো তুমি? এক্ষুনি বেরিয়ে যাও। নয়ত সিকিউরিটি ডেকে বের করে দিব।”
বেলীর মাথা ঘুরছে। দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও নিজেকে শক্ত করল। নার্সটার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে প্রশ্ন করল,
“আচ্ছা উনার কি হয়েছে? উনি এখানে কেন?”
নার্সটা বেলীর প্রশ্নে বিরক্ত হলো। বিরক্তির স্বরে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। শান্ত হয়ে গেলো।মুখে ভীড় করল মায়া। শান্ত, শীতল, আফসোসের স্বরে উত্তর দিলো,
“উনার দুইটা কিডনিই ড্যামেজ। এক বছর সে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করিয়েছস। কিন্তু লাভ হয়নি। তাই এখন ইর্মাজেন্সী কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট না করলে তাকে বাঁচানো সম্ভব না। সেই জন্য তাকে বাহিরে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এই যে সে ১৫দিন যাবৎ এখানে এই অবস্থা পড়ে আছে। তার মধ্যে একদিনও তার খোঁজে কেউ আসেনি। তার বাড়ির কোথায়? কি পরিচয়? কিছুই জানা যায়নি। তাই আমরাও কিছু করতে পারছি না। চোখের সামনে ছেলেটাকে অল্প অল্প করে মৃ°ত্যুর দিকে ঢলে পড়তে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারছি না”
সব কথাগুলো বেলীর কানে গেলো না। শুধু একটা কথাই কানে বাজছে,
‘উনার দুটো কিডনি ড্যামেজ’…

#চলবে

[ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা করবেন, প্লিজ। নিন সবার অপেক্ষার অবসান ঘটল। এখন থেকে অন্তিম পাতা গুনতে থাকুন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here