ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ৮

0
1505

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-৮

শাফিনের কথা শুনে মিহি ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।মনে, মনে বলছে, এই হাফ মেন্টাল আবার কি সব ভুলভাল বকছে!মিহি উঠে এসে,দাঁতে দাঁত চেপে বলে, কি শুরু করেছো?

শাফিন মিহির হাত ধরে বলে, বউ তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না। তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো?

সাথী বেগম বললেন তোমার বউ তোমার কাছেই থাকবে বাবা।তোমার বউকে আমরা কোথাও নিয়ে যাচ্ছি না। কথা শেষ করে রুবেল সাহেবকে ইশরা করে গেস্ট রুমে চলে গেলেন।

মিহির বাবা, মা চলে যেতেই শাফিন মিহির হাত ছেড়ে দিয়ে বলে, যা দূরে যেয়ে ম*র বলেই রুমে চলে গেলো। মিহি পিছু পিছু এসে বলে, এই সব আদিখ্যেতা করার মানে কি ছিলো?

– আরেহহহহ বুঝলে না মিসেস এক্স মাহমুদ। আমি ঠান্ডা মাথায় আপনাকে ডান্ডা দিলাম। আই মিন দেশি ভাষায় যেটাকে বলে বাঁশ দেয়া। এবার ভবিষ্যতে কিছু হলে তোমার বাবা, মা ও তোমার দোষ দেবে।বলবে,আমার জামাই বাবজি তোকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। সে কখনো তোকে ছাড়বে না। তুই নিজেই ছেড়েছিস। তাতে সা*পও ম*র*বে না আবার লাঠিও ভাঙ্গবে না।

– আহারে দুধের ধোঁয়া তুলসীপাতা। তা ঘটে এই বুদ্ধি নিয়ে চলেন নাকি মিস্টার মাহমুদ?

– আপনার চেয়ে ঢেররররর বেশি বুদ্ধি আমার মিসেস এক্স মাহমুদ।

– তাতো দেখতেই পাচ্ছি বুদ্বির নমুনা। না মানে আপনার কি মনে হয়! একটা মেয়েকে লুতুপুতু ভালোবাসা দেখালেই তার বাবা,মা আপনার প্রতি মুগ্ধ হয়ে যাবে?

– হবে মানে! আলরেডি হয়ে গেছে।

– রাতে যখন জিজ্ঞেস করবে বাবা কাজ কর্ম কি করো? তখন কি বলবেন মিস্টার মাহমুদ? নিশ্চয়ই বুক ফুলিয়ে এটা বলবেন না আমার বাবা প্রতি মাসে আমাকে হাত খরচ দেয় সেটা দিয়ে আমি আর আপনার মেয়ে চলি? বলেই দাঁত বের করে হেসে ফেললো।

– শাফিন মিহির সামনে এসে বলে, তার মানে? তুমি তোমার বাবা মায়ের কাছে আমাকে খারপ বানানোর জন্য তাদেরকে ইচ্ছে করে আসতে বলেছো? এরজন্যই তো বলি দুই বছরে যাদের চেহারা দেখলাম না। তারা হুট করে আমার বাসায় কি করে?

– একদম বাজে কথা বলবা না দুই বছরে আমার বাবা,মা আরো তিন বার এসেছিলো।

– হুম এসেছিলো কিন্তু সকালের বাসে আসলে বিকেলের বাসেই চলে যেতো।

দরজা বন্ধ করা দরজার সামনে মিনি মিউজিক অন করে রেখেছে মিহি যাতে ওদের কনভার্সন বাহিরে শোনা না যায়।

– দেখো আস্তে ধীরে কথা বলো, তোমার মতো গাধার বাসায় আমার বাবা মাকে আমি জীবনেও আসতে বলতাম না। আমি তো নিজেও জানিনা তারা কেন এসেছেন?

শাফিন বলে যা ইচ্ছে করো তাতে আমার কি? আমি তো খারাপ খারাপি থাকবো। তাই আমি এখন থেকে আমার মতো। তোমার বাবা মা আসছে সেটা ভুলে যেয়ে নিজের মতো চলবো।

মিহি শান্ত কন্ঠে বললো,দেখো সমস্যা তোমার আর আমার মাঝে, আর যেহেতু আমাদের লাভ ম্যারেজ তাই বাবা, মা, কে আমাদের প্রবলেমের কথা জানানো যাবে না। প্লিজ আমার জন্য না হোক অন্তত আমার বাবা,মা যতটুকু সময় আছে একটু সুস্থ মানুষের মতো বিহেভিয়ার করো।

– বলতে কি চাইছো আমি অসুস্থ? তাহলে একজন অসুস্থ মানুষের কাছ থেকে সুস্থ আচরণ কি ভাবে আশা করো। হাউ ফানি।

মিহি নরম স্বরে বললো, দেখো শাফিন আমি আমার বাবা৷ মায়ের একমাত্র মেয়ে, আমি কষ্টে আছি সেটা তারা দেখতে পেলে সহ্য করতে পারবে না।আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি তারা চলে গেলো আমিও চলে যাবো। তবুও একটু ধৈর্য ধরে তাদের সামনে ভালো থাকার নাটকটা করে যাও।

শাফিন কিছু না বলে, বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। মিহি দরজার সাথে হেলান দিয়ে বসে পরলো। হাঁটুতে মুখ গুজে দিয়ে কাঁদতে লাগলো। কাদঁতে, কাদঁতে মনে পরলো অতীতের কিছু কথা।

ফ্লাসব্যাক………

ভার্সিটির এক সিনিয়র মেয়ের সাথে ক্যান্টিনে কথা কা*টা*কা*টি হয়েছিলো মিহির। এক পর্যায়ে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়ে যায়। সেদিন প্রিন্সিপালের রুমে মিহিকে দিয়ে সেই সিনিয়র মেয়টার কাছে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছিলো। কিন্তু মিহির সেটা ইগোতে লাগে। তাই বাসায় এসে প্রচুর কাঁদে। শাফিনের কানে খবরটা যেতেই শাফিন দ্রুত মিহির বাসায় পৌঁছে যায়। মিহিকে কাঁদতে দেখে জড়িয়ে ধরে বলে,একদম কাঁদবে না তোমার চোখের পানি এতো সস্তা না। নিজের হাতে মিহির চোখের পানি মুছে দিয়ে মিহির কপালে ভালোবাসা পরশ দিয়ে বলে, এবার যাও চোখ মুখ ধুয়ে আসো। মিহিকে বসে থাকতে দেখে শাফিন নিজেই মিহিকে কোলে তুলে নিয়ে বেসিনের সামনে নিয়ে এসে চোখে মুখে পানি দিয়ে দেয়। নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিয়ে বলে, কখনো কাঁদবে না। এই শাফিন যতদিন বেঁচে আছে ততদিন তোমার চোখে যেন পানি না আসে।

আগের কথাগুলো মনে পরতেই মিহির কান্নার গতি আরো বেড়ে গেলো। বেশ কিছু সময় কাঁদার পর ওয়াশরুমে এসে নিজেই চোখে মুখে পানি দিয়ে আয়নায় তাকিয়ে বলে, সময় কত দ্রুত বদলে যায়। প্রেমিক হিসেবে যেই মানুষটা এতো এতো পার্ফেক্ট ছিলো আজ হ্যাসবেন্ড হিসেবে সেই একদম আন- পার্ফেক্ট। যার কোন যোগ্যতাই নেই হ্যাসবেন্ড হওয়ার। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বেডে শুয়ে থেকে কিছু সময় রেস্ট নেয়। শোয়া থেকে উঠে,ফাহিন কে কল করে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে নেয়। তারপর কিচেনে এসে সন্ধ্যার জন্য নাস্তা বানায়। মিহি নিজের কাজে যখন ব্যস্ত তখন সাথী বেগম পেছনে এসে দাঁড়িয়ে মিহির কাঁধে হাত রাখেতেই মিহি চমকে উঠে পেছনে তাকিয়ে সাথী বেগমকে দেখে জড়িয়ে ধরে। আমরা উপর থেকে নিজেকে যতই স্ট্রং দেখাইনা কেন দিন শেষে নিজের কাছের মানুষদের কাছে দূর্বল হয়েই পরি,না চাইতেও। মিহির চোখ থেকে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। মিহি দ্রুত চোখের জল মুছে নিয়ে সাথী বেগমকে ছেড়ে দিলো। কিন্তু সাথী বেগম ছাড়লেন না। মমতা মাখা কন্ঠে বললেন,তুই ঠিক আছিস তো মা? আমাদের কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছিস না তো?

– কি লুকাবো বলো তো? কতদিন পর তোমাকে দেখলাম তাই একটু জড়িয়ে ধরলাম এই আর কি।

– তুই সত্যি বলছিস তো? আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা লুকাচ্ছিস।

– সত্যি, সত্যি, সত্যি মিথ্যে কেন বলবো।

– আচ্ছা তুই বোস আমি নাস্তা বানাচ্ছি।
– তুমি একা কেন বানাবে! আজ দুই মা, মেয়ে মিলে বানাবো।

সাথী বেগমের মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেলো। যদিও সেটা তিনি মিহিকে বুঝতে দিতে চাইছেন না। তার মন বলছে, মিহি কিছু লুকাচ্ছে।

শাফিন বাহিরে এসে ইচ্ছে মতো বাজার করলো। সাথে মিহির বাবা, মায়ের জন্য কিছু কেনাকাটাও করলো। শাফিন বাসায় ফিরছিলো তখন দেখা হলো উদয়ের সাথে। উদয় হয়তো অফিস থেকে ফিরছে। শাফিনকে রিক্সায় দেখে বেশ অবাক হয় উদয় নিজের রিকশা থামিয়ে শাফিনের রিক্সায় উঠে বসে বলে, কিরে এতো এতো বাজার করার কারণ?

– বাসায় মেহমান এসেছে তাদের জন্যই বাজার করা।

– মেহমান মানে!
– মানে আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি।

– মানে তুই বলতে চাইছিস, ভাবির বাবা,মা এসেছে!

– হুম তারা ছাড়া কি আমার আরো দু’তিন জোড়া শ্বশুর, শ্বাশুড়ি আছে নাকি।

– ভাইরে বুঝলাম। কিন্তু ভাবি যে বাসায় নেই।

– বাসায় চল তোকে ড্রামাটিক একটা ভাবির সাথে দেখা করাবো।

বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই মিহি দরজা খুলে দিয়ে সুন্দর করে সালাম দিলো।
শাফিন আর উদয় ভিতরে আসলো। শাফিন বাজারের ব্যাগগুলো কিচেনে রেখে এসে বসতেই মিহি দু’গ্লাস সরবত এনে দু’জনের হাতে দিয়ে, শাফিনের উদ্দেশ্যে বললো, তুমি বাজারে যাবে আমাকে বলবে না। তাহলে লিস্ট করে দিতাম কি, কি আনতে হবে।

– তুমি আবার কষ্ট করে লিস্ট করবে?তাই নিজেই সব কিছু নিয়ে এসেছি। দু’একটা বাকি থাকলে বলে দিও পরে নিয়ে আসবো।

উদয় পুরোই বোকা বনে গেলো। কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছে না। শুধু আবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মিহি আর শাফিনের দিকে।

শাফিন আস্তে করে উদয়ের কানের কাছে মুখ এনে বলে,মুখ বন্ধ কর নয়তো মশা ঢুকে যাবে।জানিস তো ঢাকা শহরের মশারা কত চতুর।

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here