ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ৩৩

0
1172

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৩৩

আজকের গরম খবর, নিজের মৃত্যুর ভুয়া খবর প্রচার করেছেন এসপি শাফিন মাহমুদ। তাকে সাহায্য করেছেন ওপার বাংলার গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা ঈশান মুখার্জি। আজ বিকেল সারে, তিনটে নাগাদ তাদেরকে মধুপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। টিভিতে নিউজটা দেখে অট্র হাসিতে ফেটে পরে মোর্শেদ চৌধুরী। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিজে বলে,এম,কে দ্যা মাফিয়া কিং। আমাকে কাবু করা এত সহজ।তাও আবার হাঁটুর বয়সের দু’টো ছোকরা। এর মধ্যে একজন লোক বলল, স্যার আজ রাতের ফ্লাইট।

– রাতের মধ্যেই আমাদের বাকি কাজ সেরে ফেলতে হবে। ওই চাবি সংগ্রহ করে কার্ডটা খুঁজে বের করতে হবে। আর তুমি কিছু লোক পাঠিয়ে আমার ভবিষ্যত বংশধরকে নিয়ে আসো। যদি ওই মেয়ে বাঁধা দেয় তাহলে তাকে শেষ করে দেবে।অনেক বেঁচে ছিল আর বাঁচতে হবে না।

ঈশান আর শাফিনকে নিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করছে। ঈশান প্রমাণ আর কিছু তথ্য পেশ করলো উর্ধতন কর্মকর্তাদের সামনে। তাদের মধ্যে ইফতেখার বলে একজন কর্মকর্তা ছিলো। ঈশান আরো কিছু বলতে যেয়েও বলল, না। কারণ হতে পারে এদের মধ্যে কেউ শত্রু পক্ষের হয়ে কাজ করছে। সবাই উঠে চলে যেতে নিলে তদন্ত কমিটির প্রধান কর্মকর্তা মুহাম্মদ মঈনুল হোসেন কে শাফিন বলল,স্যার আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে?

ইফেখার বললো,যা বলার সবার সামনে বলতে হবে।

শাফিন হলে,ইফেখার আপনার কথা শুনে একটা প্রবাদ বাক্য মনে পরলো”হাতি যখন খাদে পরে,ব্যাঙও তখন লাথি মারে “কিন্তু কথা হচ্ছে এই শাফিন মাহমুদ এখনও খাদে পরেনি।

মুহাম্মদ মঈনুল হোসেন সবাইকে চলে যেতে বলে বসে পরলেন চেয়ারে। পুর রুমে এখন তিনজান মানুষ আছে। ঈশান,শাফিন আর মঈনুল হোসেন। শাফিন বললো,স্যার আপনি নিজেই জানেন আমি কতটা সততার সাথে কাজ করেছি। আর ঈশানের বিষয়ে আপনি খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন। তারপরেও কি আমরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার একটা সুযোগ পাবো না? আমি বেশি চাইছি না। অলমোস্ট সব প্রমান সংগ্রহ করা শেষ। শুধু শেষ টোপটা ফেলতে চাইছি। আশা করছি তাতেই শিকার আটকে পরবে।

মঈনুল হোসেন কিছু না বলে, উঠে দাঁড়ালেন। ঈশান মঈনুল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে বলল,আজ যদি আমরা হেরে যাই তাহলে হেরে যাবে গোটা পুলিশ জাতি। হেরে যাবে বিশ্বাস, সততা নিষ্ঠা।

– কি করতে চাইছো তোমরা। এ দেশে ক্ষমতার জোড়ে অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে বাঁচে।টাকার কাছে সব এখানে তুচ্ছ।

শেষ সুযোগ স্যার। শাফিনের কথাটা শুনে মঈনুল হোসেন বলল,ওকে দিলাম শেষ সুযোগ। তাহলে ছোট্ট একটা কাজ করুন। আপনার লোকদের এই তথ্য দিন যে আমাদের সংগ্রহীত তথ্য প্রমাণ আর উদ্ধার করা অবৈধ টাকা আমরা আমাদের বাসার সিক্রেট রুমে রেখেছি।

– তোমার কি মনে হয় তাতে কাজ হবে?

ঈশান এগিয়ে এসে বলে, হবে স্যার। কারণ শত্রু যখন নিজেকে জয়ী ভাবতে শুরু করে তখন ছোট ছোট ভুল করে বসে।

– তাহলে তাই হোক। তবে মনে রাখবে এটাই শেষ সুযোগ এরপর এই কেসের দ্বায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে সিবিআইয়ের কাছে।

শাফিন বললো,স্যার লড়াইয়ে ময়দানে শেষ অব্দি লড়ে যেতে হয়। হয়তো শহীদ নয়ত গাজী এটাই আমাদের শপদ করানো হয়। আপনি আর একটা ছোট কাজ করুন। উদয় আমার ফ্রেন্ড ওকে একটু আমার কাছে আসার সুযোগ করে দিন।

– আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করছি।

– স্যার আপনার বিশস্ত কর্মীদের নিয়ে একটা বড় ফোর্স রেডি করে রাখবেন।

মঈনুল হোসেন বেড় হয়ে গেলে, ঈশান বলে,তোর কি মঈনুল হোসেনের প্রতি বিশ্বাস আছে?

– এমন একটা মূহুর্তে দাঁড়িয়ে আছি যেখানে নিজেকে বিশ্বাস করাও দুষ্কর আর তো অন্য কেউ। তবে এতোটুকু জানি ওই টাকা নিতে হলে কাগজের প্রয়োজন পরবেই ওই কাগজের মাধ্যমে টাকা-টা পাচার হতো আর আমি সেটা আটকে রেখেছি। তাই ওদের টার্গেট সেটা উদ্ধার করা। দেখি কি হয়?

লিরা আর উদয় এসে হাজির হয়েছে। ঈশান আর শাফিনের সাথে দেখা করতে। শাফিন উদয়কে বললো,তোকে একা আসতে বলেছিলাম।

ঈশান বলল,সমস্যা নেই লিরা আমার এসিস্ট্যান্ট। বিশস্ত এবং বিচক্ষণ।

ঊদয় শাফিনকে জড়িয়ে ধরলো,শাফিন উদয়কে বললো,এখন সময় এসেছে দায়িত্ব পূর্ণ করার।তোর কাছে যেই চাবিটা আছে লকাড়ের সেটাই হল আসল। আমি জানি রিস্ক আছে তবুও আমি জানি তুই পারবি।

ঊদয় বলল,পারব নাকি জানিনা তবে চেষ্টা করব।

______________________________________________
মোর্শেদ চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে রমিজ রাজের সামনে। রমিজ রাজ আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোর্শেদ চৌধুরীর দিকে।

মোর্শেদ চৌধুরী বিশ্রী হাসি দিয়ে বলেন৷,তোর না খুব সখ ছিলো এম,কে কে দেখার নে দেখ নিজের সখ পূর্ণ কর কারন এরপর না থাকবে তোর চোখ আর না থাকবে তোর শখ।

রমিজ রাজ মোর্শেদ চৌধুরীর পা ধরে বলে প্লিজ স্যার আমাকে ক্ষমা করেদিন আমার ভুল হয়ে গেছে। মোর্শেদ চৌধুরী অট্র হাসি দিয়ে বলে,ক্ষমা বলে কোন শব্দ আমার ডিকশিনারিতে নেই। রমিজ রাজের দু’হাত আর দু’পা মোর্শেদ চৌধুরীর লোকেরা আটকে রেখেছে। একটা ধা*রা*লো ছু*ড়ি দিয়ে রমিজ রাজের চোখ উপড়ে ফেলল।জিহ্বা কে*টে দেয়া হয়েছে। ডান হাতও কে*টে নিলো। মোর্শেদ চৌধুরী একটা রুমাল নিয়ে নিজের হাতে লেগে থাকা র*ক্তে*র দাগ মুছে নিলো। যাওয়ার আগে রমিজ রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,চোরের উপর বাটপারি করার শখ। এবার কর বাটপারি।

মোর্শেদ চৌধুরী সোজা চলে আসে শাফিনের বাসায়। সিক্রেট রুমে যেয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজে বের করে লকার।তবে সেখানে কাঙ্ক্ষিত জিনিস নেই। চট করে নিজের পকেটে থেকে পি*স্ত*ল বের করে নিজের মাথায় ধরে টিগারে চাপ দেবে এমন সময় কেউ একটা লাঠি তার হাতে মারতেই পি*স্ত*ল হাত থেকে নিজে পরে যায়। চারপাশ থেকে মোর্শেদ চৌধুরীকে পুলিশ ঘিরে রেখেছে।শাফিন আর ঈশান মোর্শেদ চৌধুরী সামনে এসে বলে মিস্টার এম,কে আপনার খেল খতম।

মোর্শেদ চৌধুরী হেসে বলে,শেষে কিনা আমার প্লান কাজে আসলো। নিজের অন্যায়ের দায় বুড়ো বাবার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছ?

শাফিন হেসে বলে,মানতেই হয় আপনার বুদ্ধি আছে। তবে আপনি চলেন পাতায় পাতায় আমি চলি শিরায় শিরায়।আপনার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ এক সাথে করে তবেই আপনাকে গ্রেফতার করতে এসেছি।

– সর্বোচ্চ এক ঘন্টা আমাকে আটকে রাখতে পারবে। এর বেশি না। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার ধারণা নেই।

আপনার সব ধারণা পাল্টে ফেলুন আপনার সাথে যুক্ত থাকা দু’জন এমপি একজন মন্ত্রী আর ডিপার্টমেন্টের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট আঠারো জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মোর্শেদ চৌধুরী আশ্চর্য হয়ে বলে এতো তথ্য কি ভাবে সংগ্রহ করলে?

– বাকি কথা আপনাকে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে বলি। চলুন।

আজকের ব্রেকিং নিউজ অবশেষে গ্রেফতার হলো মাফিয়া কিং এম,কে। যার নাম মোর্শেদ চৌধুরী। শুধু তিনি নন গ্রেফতার হয়েছেন আরো আটারোজন। যাদের প্রত্যেকেই সমাজের উচ্চপদস্থ শ্রেণির।আর প্রত্যেকেই যুক্ত ছিলো এম,কের সাথে।

মোর্শেদ চৌধুরীর হাত বাঁধা, চোখ বাঁধা। তাকে কোথায় নিয়ে আসা হয়েছে সেটা তার জানা নেই।

শাফিন মোর্শেদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,আপনি যাদের জন্য মানুষের র*ক্ত চুষে খেয়েছেন অবশেষে তারাই আপনাকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে।

– লিনা এটা করতেই পারে না।

সব পারে মানুষ নিজের স্বার্থে সব কিছুই পারে। আপনি যেমন নিজের স্বার্থে আমার মা,কে হ*ত্যা করতে পেরেছেন। ঠিক সে ভাবেই লীনা চৌধুরী আপনাকে ধরিয়ে দিয়েছে নিজের স্বার্থে।

– তুমি এখানেও হেরে গেলে।তোমার মা,কে হ*ত্যা আমি করিনি তবে লা*শ গু*ম করতে সাহায্য করেছিলাম আমি। হ*ত্যা তো করেছিল তার নিজের বোন। মানে লিনা।

– মানে!
– মানে খুব সোজা লিনা হল তোমার মায়ের আপন ছোট বোন। আর আমার লিডার। সেই বানিয়েছে আমাকে এম,কে।

– এসব কথা বলে আমাকে বিব্রত করতে পারবেন না।

– আমার মোবাইল নাও আর রেকর্ড গুলো শুনো।শাফিন দ্রুত মোবাইল নিলো।তার মানে সত্যি সত্যি লিনা চৌধুরী আসল দোষী!

ঈশান বললে তুই চিন্তা করিস না। আমাদের৷ ওই খানে যারা যারা এম,কের সাথে যুক্ত ছিলো তাদেরকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। আর রইলো লিনা চৌধুরীর কথা। এয়ারপোর্টে কল করে জানিয়ে দে তাকে আটকে দিতে।

হঠাৎ শাফিনের দিকে তাকিয়ে ঈশান চিৎকার দিয়ে বলে তোর কি হয়েছে?

ততক্ষণে শাফিন মাঠিতে লুটিয়ে পরে কা*টা মুরগীর মত ছটফট করতে লাগলো। তার মুখ দিয়ে তাজা র*ক্তে বের হয়ে ফ্লোর ছড়িয়ে পরতে লাগলো।

– মোর্শেদ চৌধুরী হাসতে হাসতে বলে খেল খতম।

ঈশান শাফিনকে নিয়ে দ্রুত হসপিটালের উদ্দেশ্য বের হয়ে যায়। শাফিন কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু তার মুখ দিয়ে কথা বেড় হচ্ছে না। চেষ্টা করছে চোখ খুলে রাখার কিন্তু সেটা হয়তো আর সম্ভব হবে না। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বললো, শেহরোজ।

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম,গল্পের একদম শেষ প্রান্তে। কারো কোন কনফিউশন থাকলে বলবেন ।আমি ক্লিয়ার করে দেয়ার চেষ্টা করবো।এই পর্যন্ত কেমন লাগলো জানাতে ভুলবে না।

“ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন”।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here