ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ৭

0
1503

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-৭

মিহি উমম, উমম করছে,শাফিন বলল,ছাড়তে পারি কিন্তু একদম চেঁচাবেনা।মিহি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। শাফিন হাত সরাতেই মিহি শাফিনের হাতে কামড় বসিয়ে দিয়ে বলে,হুশ একদম আওয়াজ করবেন না।নির্লজ্জ, বেহায়া লোক যেই সুযোগ পেয়েছো ওমনি ছুঁয়ে দেওয়ার বাহানা। শাফিন মিহিকে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে অধরে অধর মিলিয়ে দিলো। মিহি কোনমতো ঠেলেঠুলে শাফিনকে সরিয়ে দিয়ে বলে,নির্লজ্জ, বেহায়া যখন বলেছো তখন তা প্রমাণ তো করতেই হতো। তাইনা?
মিহি কথা ঘুরিয়ে বলল, অসভ্য লোক বেহায়ার মতো এখনো তোয়ালে পরে দাঁড়িয়ে আছে। যান তাড়াতাড়ি শার্ট,প্যান্ট পড়ুন।

আহারে বেবি তুমি তো আমকে প্রথম বার তোয়ালে পড়া ভেজা শরীরে দেখছো?তাই লজ্জা পাচ্ছো।অভিনয় তো ঠিক সেরকম করছো। আগে তো বলতো জান তুমি শাওয়ার নিয়ে বের হলে তোমাকে দেখতে দারুণ লাগে।

– ও হ্যালো আমি এসব আপনার মতো বাঁদরকে কোন দুঃখে বলতে যাবো? এসব আমি আমার হ্যাসবেন্ডকে বলেছিলাম।

– ওমা তাই নাকি! তাহলে তোমার চোখের সামনো জলজ্যান্ত এই মানুষটা কে গো?

– একটা বাঁদর, অসভ্য, টিকটিকি, তেলাপোকা।

– ইশ হাওয়া ফুরিয়ে গেলো আর কোন প্রানীর নাম মনে পরছে না বুঝি।

– মিস্টার মাহমুদ আপনার সাথে ফাও কথা বলে টাইম ওয়েস্ট করার মতো টাইম আর মেজাজ কোনটাই আমার নেই। সো চুপচাপ শার্ট পরে নিন।

– মিসেস এক্স মাহমুদ, আপনার সাথে তো ফাও বকবক করতে আমার টাইমের অভাব নেই। পড়বো না আমি শার্ট দেখি কি করতে পারো?

– শার্ট পরো নয়তো,,,,,

– নয়তো কি করবে?

– তোয়ালে টেনে খুলে ফেলবো। তখন বুঝবে।

– কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা। কোন জন্মে নাকি এই মেয়ে আমার বউ ছিলো। কথায় না পেরে সোজা ইজ্জতে হাত।

– সাংঘাতিকের কি দেখেছেন মিস্টার মাহমুদ। সুইট,কিউট মিহিকে দেখেছেন। কিন্তু এখন থেকে সাংঘাতিক মিহিকে দেখবেন। বলেই কাভার্ড থেকে ড্রেস বের করতে নিলো। তবে কি আশ্চর্য একটা ড্রেসও নেই। দাঁতে দাঁত চেপে বলে আমার ড্রেস কই?

– মিস সাংঘাতিক, এখানে পূর্বে আমার ওয়াইফের ড্রেস থাকতো। পূর্বে মানে অতীতকালে। বর্তমানে বউ নামের প্যারা থেকে মুক্ত। তাই তার ড্রেস সব বারান্দার এক কোনে ফেলে রেখেছি। বিন্দাস লাইফে উটকো ঝামালে দূর করে দিয়েছি। মিহির সামনে এসে বলে, বিন্দাস হয়ে বাঁচো রে, বিন্দাস হয়ে নাচোরে আল নাইট লং।

মিহি বারান্দা থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড় হলো।

মিহি বেড় হতেই শাফিন মিহিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। মিহি কিছু বলবে তার আগেই শাফিন বলে,জান তোমার ফ্রেশ হতে এতো সময় লাগলো কেন।সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। থাক আর কিছু বলতে হবে না চলো। মিহি সামনের দিকে ঘুরতেই সাাথী বেগম বলল, বাব তুমি যাও আমি আর মিহি আসছি। শাফিন চলে যেতেই সাথী বেগম নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলে, মা-রে তোর সুখ দেখে মনটা ভরে গেলো। তুই ঠিকি বলেছিলি এমন ছেলে আমরা পাবো না। জামাইকে যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি।

মিহি মনে মনে বলে, ইশ তখন যে কেন এর এতো প্রশংসা করেছিলাম কে জানতো ব্যাটা একটা হিটলার।
সাথী বেগম বললেন, কিরে কি ভাবছিস।

– ভাবছি কপাল করে এমন একটা জামাই পেয়েছি।

-সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি তুই ভিষণ ভাগ্যবতী।

মিহি মনে মনে বলছে,ভাগ্যবতী ছাই।

সাথী বেগম বললেন, এবার চল আমি নিজের হাতে আজ রান্না করেছি। গরুর মাংস ভুনা,সরষে ইলিশ,ঘন ডাল আর তোর জন্য একটু আলু ভাজাও করেছি। সবজি ছিলো না তাই আর কিছু করতে পারিনি।

খাবার টেবিলের এক পাশে শাফিনের অর্ডার করা খাবারের প্যাকেটগুলো পরে আছে।সেদিকে কেউ মুখ তুলেও দেখছে না। সবাই মিলে খাওয়া শেষ করে গল্প করছে। এমন সময় শাফিন উঠে রুমে চলে যায়। রুবেল সাহেব বললেন, কিরে মা জামাই কি রাগ করে চলে গেলো? রুবেল সাহেব হলেন বেশি বোঝার লোক। মানে সব কিছু নিজের মতো ভেবে নেয়।

– না বাবা, ও তোমার সাথে রাগ করবে কেন?

– তুই সত্যি করে বল, আমরা আসাতে জামাইয়ের কি অসুবিধা হচ্ছে?

– আরে বাবা কিসের অসুবিধা।পাঁচ রুমের বিশাল ফ্লাট আমাদের। এতো রুম কি আমাদের লাগে নাকি?সব তো খালি পরে থাকে। তাহলে অসুবিধা কেন হবে।

– আমার মনে হচ্ছে তাই বললাম।

সাথী বেগম বললেন এই বেডার বেশী বোঝার অভ্যাস আর গেলো না। দুপুরে খাবার খেয়ে একটু রেস্ট করবে এইটা তো স্বাভাবিক। আর কি আবাল তাবল বোকছে।

– তুমি সব সময় আমারে অপমান করে কথা বলবা না। ভুলে যেওনা এই বেডা তোমার স্বামী তাই সম্মান দিয়ে কথা বলো।

– এহহহহ আসছে আমার স্বামী। তুমি যে স্বামী নামে আসামী সেইটা কি ভুলে গেছো।

– এরজন্য তোমার সাথে আমি কোথাও আসতে চাইনা। আমারে আসামী বলা। তুমি কি? দুনিয়ার সবচেয়ে ঝগড়ুটে মহিলা। আমার মতো আলা ভোলা মানুষ দেইখা সংসার কইরা গেলা। অন্য মানুষ হইলে এক দরজা দিয়ে ঢুকাতো অন্য দরজা দিয়ে বেড় করে দিতো।

-কি কইলা তুমি? আমি ঝগড়ুটে, এই ছিলো কপালে পঁচিশটা বছর ধইরা এই বেডার সংসার করি। কত কষ্ট সহ্য করছি। কি করি নাই তোমার সংসারের জন্য শেষ পর্যন্ত এই ছিলো কপালে। তোমার মতো বেডার কি যোগ্যতা আছে আমার মত মেয়েরে বিয়ে করার।আমার মতো মেয়ে পাইছো এইটাই তোমার সাত কপালের ভাগ্য।

– কি যে ভাগ্য। এইটা হলো দূরভাগ্য।

– এহন তো দূর ভাগ্য হইবোই এহহহ পুরান হইয়া গেছি তাই আর ভালো লাগেনা। এই ছিলো কপালে এই বয়সে এসে এহন এই কথাও শুনতে হবে। করমু না এই বেডার সংসার। কত ছেলেরা বয়স কালে আমার জন্য পাগল ছিলো। আর এই বেডায় আমারে পাইয়া কদর করলা না।

মিহি বিরক্ত হয়ে বলে, কি শুরু করলা তোমরা। আর মা। তুমি তিল থেকে তাল কেন করছো।

– কিহহহহহ! আমি তিলরে তাল করছি। এইদিনও দেখতে হচ্ছে আমাকে। শেষে কিনা নিজের পেটের মেয়েও আমার বিরুদ্ধে। হায় আল্লাহ। ভাবছি মেয়েটা আমার মতো হইছে। কিন্তু এহন তো দেখতাছি একদম গুষ্টির মতো হইছে। অন্যের মেয়েরা নিজের মায়ের পক্ষ করে আর এই মেয়ে আমার পক্ষ রেখে বাপের পক্ষ করে। মানুষ ঠিকি বলে, রক্ত রক্তের কথাই বলে, নারীর টান কিছুই না।

– মা তোমরা আসছো তোমার মেয়ের বাসায় সেখানে এসে নিজেরা ঝামালে করো?তাহলে তোমাদের জামাই কি শিখবে।

– সব দোষ তো আমার। আমি ঝামেলা করি, তোর বাপ যে আমার ঝগড়ুটে বললো, সে বেলায় কিছু না।

– মা, হইছে তো এবার থামো।

রুবেল সাহেব বললেন,এই অবুঝ মহিলাকে নিয়ে জীবনের পঁচিশটা বছর কাটিয়ে দিয়েছি বোঝ আমার কত ধৈর্য।

মিহি রেগে বলল,তোমরা থামবে না তাইতো! থামতে হবে না। আরো করো দু’জন মিলে তর্কবিতর্ক। জামাইকে দেখাবেনা। তোমরা কত ভালো।

– সব দোষ তোমার। না তুমি বেশি বুঝতে আর না এই ঝগড়া হতো। আচ্ছা এখন এসব বাদ। তুই রাগ করিস না,মা।সাথী বেগমের কথা শুনে মিহি বলে,এতোক্ষণ তোমার এই কথা মনে ছিলোনা।আর বাবা মা-কে সরি বলে নাও।আমি রুমে গেলে নয়তো আবার দু’জনে এটা নিয়ে কথা কা*টা*কা*টি করবে।

– সরি আমাকেই বলতে হবে?

– হুম তোমাকেই বলতে হবে। আচ্ছা বলছি তবে শুধু তোর জন্য নয়তো সরি বলার প্রশ্নই ওঠে না।

– লাগবে না তোমার সরি। তোমার সরি ধুয়ে তুমি পানি খাও।

– দরকার পরলে তাই করবো তাও সরি বলবো না।

মিহি মাথায় হাত দিয়ে বলে, চলো আমি তোমাদের সাথে চলে যাবো।

রুবেল সাহেব বললেন চলে যাবি মানে? কেন যাবি বেড়াতে নাকি?

– না একেবারে চলে যাবো।

শাফিন শুয়েছিলো হঠাৎ শোয়া থেকে উঠে এসেছিলো। এসেই মিহির শেষের কথাটুকু শুনে বলে, বউ, ও বউ তুমি রাগ করেছো কেন। তুমি না থাকলে আমি একা কিভাবে থাকবো। তোমাকে আমি কোথাও যেতে দেবো না। প্রিয় বউ আমার। তুমি গেলে আমিও যাবো। তুমি যেখানে আমি সেখানে।

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো সবাই?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here