ক্যামেলিয়ান ৬+৭

0
1317

#ক্যামেলিয়া
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৬ +৭

(১৬)

বাবা মারা যাওয়ার চার দিনের মাথায় সেসব আত্নীয় মানুষ মেয়েটার বিয়ে নিয়ে তাদের বাড়িতে এসেছে, যারা বলেছিল

“বাবা মারা গেল।এখন তো এক বছর বিয়ে শাদী দেওয়া যাবে না।গুরু দশার বছর চলবে।”

জাফরিনের মায়ের কাছে কথাটা বলার সাথে সাথেই ভদ্রমহিলা কিছুটা নড়েচড়ে বসলেন।তার ভাব ভঙ্গিতে মনে হচ্ছিলো তিনি মনে হয় রাজী হয়ে যাবেন।কারণ তাকে বুঝানো হচ্ছে তার মেয়েও তার কাছে থাকবে।এখন তার জীবনে আর আছেই কী?যার স্বামী নেই, তার কিছুই নেই।মেয়ে বিয়ে দিলেই সে পরের বাড়ি চলে যাবে অথচ বাড়ির মেয়ে বাড়িতে রাখতে আপত্তি কিসের?

জাফরিন কিংবা তার দুই বোন চুপচাপ বসে কথাগুলো শুনছিল।তাদের মাঝে এখন আর এতটা শক্তি নেই যে তারা সবার সাথে লড়াই করবে।
জাফরিনের মা স্তম্ভিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে। তার বার বার মনে পড়ে যাচ্ছে যেবার জাফরিন হলো সেরাতের কথা।চারিদিকে কামিনী ফুলের সৌরভে খা খা করছিল।এত শান্ত রাত যেন সে জীবনে কখনো পায়নি।বাইরে মৃদুমন্দ সমীরণ বইছে। পুরো উঠানে খেলা করছিল জোৎস্না। সেই রাতের মধ্য ভাগে হুট করেই প্রসব বেদনা উঠে তার। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি।বাড়িতেই সাধারণ ভাবে জন্ম হয় তার। মেয়েটা যেন তার মাকে আর কষ্ট দিতে চাচ্ছিলো না।তাই এত শান্ত ভাবে জন্ম নিয়েছিল।তার গায়ের রঙ এবং রাতের পরিবেশ মিলিয়ে মনে হচ্ছিলো সবচেয়ে দামী ফুল যেন ফুটেছে। জাফরান রঙের সাথে মিল রেখে নাম রাখা হলো জাফরিন।অত্যন্ত দামী সেই বস্তু এবং পৃথিবীর সব কিছুর উর্ধে হচ্ছে তার এই তিন সন্তান।অথচ এই মানুষ গুলো কী না তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে?
তাকে নিয়ে তামাশা করতে চাইছে?

নিজের মাঝেই নিজেকে হাতড়ে বেড়াচ্ছে জাফরিনের মা। স্বামীর রেখে যাওয়া তিন সন্তান এখন তার সব কিছু।যে মারা গেছেন তার জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া চাইতে পারে কিন্তু তার জন্য অন্য কিছু বির্সজন দিবে কেন?

“আমার জাফরিনের বিয়ে?”

“হুম।ফয়সালের সাথে। তোমাদের হাতে গড়া ছেলে ও। জাফরিনের থেকে বছর পাঁচের বড় হবে। ও কীসে কম আছে?”

“জানেন? আমার মেয়েটা কানাডা লেখাপড়া করতে যাবে?”

“ওটা তো ওর বাপে থাকতে, এখন কী আর তা সম্ভব?”

“কেন সম্ভব না?আমার মেয়ে কোনো খেলনা না।যখন মনে হলো বরযাত্রী এসে ফিরে যাবে আবার পরদিন অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে এসে আবার বিয়ে করতে চাইবে। তার পরদিন আপনারা হাই স্কুলের গন্ডি পার হয়নি এমন ছেলের কাছে আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইবেন আর আমার মেনে নিতে হবে?”

সুফিয়া বেগমের শান্ত স্বরে বলা কথাগুলো শুনে সবাই নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল।এরপর ওর বড় চাচা বলল,

“মেয়েরে কোন জজ ব্যারিস্টার বানাবা?সারা জীবন তো আমার ভাইয়ের রক্ত চুইষা খাইছো।এখন কী লাশটারেও শান্তি দিবা না?”

” স্ত্রী-সন্তানদের দায়িত্ব পালন করা কে রক্ত চুষে খাওয়া বলে? যদি এটাই বলে তবে এটাই।আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনাদের এত ভাবতে হবে না।”

“এই বাড়িতে তাহলে থাকতে পারবে না বলে দিলাম।এটা আমার ভাইয়ের বাড়ি।”

“আর আমার স্বামীর।”

“আইনী নিয়ম অনুসারে আমরাও এখন এই বাড়ির অংশীদার।কারণ আজমলের কোনো ছেলে নেই।”

“ততক্ষণ অবধি যতক্ষণ অবধি বাড়ি আপনার ভাইয়ের নামে ছিল।কিন্তু এই বাড়ি তো এখন আম্মার নামে।”

মায়ের উপর প্রতিটা মানুষের ক্ষিপ্ত আচরণ দেখে এগিয়ে এসে জাফরিন কথাটা বলল।সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“মানে?কবে চুরি করে লিখে নিছে তোর মায়ে?”

“চুরি করে লিখে নেওয়ার কী আছে?বাবার সারা জীবনের উপার্জন, তার স্থাবর সম্পত্তি সব মায়ের নামে করে দিয়েছেন।এটা পাঁচ বছর আগেই হয়েছে।”

“আর শহরের বাড়িগুলা?”

“আমাদের তিন বোনের নামে।”

“ধানের জমি?”

“বাবা যেগুলো রেখেছিলেন, সেগুলো মায়ের অবর্তমানে এক অংশ চলে যাবে এতিম খানায়।আর বাকীটা আপনাদের নামে।”

“এই চুটকি মুটকি নিয়ে আমরা কী করবো?তোর বাপে মরে গেছে কিন্তু যে কাজটা করে গেল জীবনেও কব্বরে শান্তি পাবো না।”

“চিন্তাভাবনা করে কথা খরচ করবেন।কারণ আপনি এখনো আমার বাড়িতেই আছেন।আর কথা বলছেন আমার বাবার সম্পর্কে।সে নিজের যা ছিল তা আমাদের নামে দিয়ে গেছেন আর দাদার যে জমিগুলো আব্বা পেয়েছিলেন সেসব তো আমাদের দেয়নি।সেসব আপনাদের কেই দিয়ে গেছেন।সে কীভাবে বেঈমানী করলো?”

“সেরা সেরা গুলা তোদের দিয়ে গেছে তাই তো বলি।এত হেডাম দেখাও কার পাওয়ারে।”

বাজার করার উদ্দেশ্যে ইউভান এবং তার বাবা বাহিরে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরে এসব শুনতে পেরে তিনি বললেন,

“আপনারা মানুষ হিসেবে নিম্নবর্গের। আপনাদের থেকে তো এরা নিরাপদ নয়।”

জাফরিনের বড় চাচা ঘর থেকে বের হতে হতে বলল,

“বিয়ে তো ফয়সালের সাথেই হবে। রাজী না হলে গ্রাম বাসী সেই ব্যবস্থা করবে।”

(১৭)

“আমার কোনো প্রেমিক নেই,
আছে শুধু অন্ধকার।
নেই কোনো বন্ধু
আছে এক রাশ মেঘ।

কই? আমার তো আসে না বসন্ত!
না আসে শরৎের মেঘপুঞ্জ।

আমার আছে শুধুই আমিই
যার রয়েছে নিজের সাথেই নিজের যুদ্ধ।

জাফরিনের সোশ্যাল একাউন্ট স্টক করার সময় স্ট্যাটাস চোখে পড়লো মাশহুদের। মেয়েটার কয়েকটা ছবি দেখছিল সে। যে কেউ বলতে পারে আজমল সাহেব এর মেয়ে সে। চেহারায় বেশ মিল রয়েছে। বিশেষ করে হাসিতে। আপাতত তার আগ্রহ জাফরিনের মুখশ্রী নিয়ে নয়। তার আগ্রহ জাফরিন কে নিয়ে। আজ তাদের বাড়িতে যা যা হয়েছে সব শুনতে পেরেছে সে। ছদ্মবেশে একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ আশ্রয় নিয়েছে তাদের মাঝেই।জাফরিনের উপর চব্বিশ ঘন্টা নজর রাখছে।
তার বিষয়ে তিনটে ব্যাপার খুব করে সামনে এসেছে। জাফরিন মূলত দু হাতেই লিখতে পারে। রাতের অধিকাংশ সময় সে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাটায় এবং তাকে কঠিন ভাষায় না বলে নরম সুরে বললে সে বিনাবাক্য ব্যয়ে সব মেনে নেয়।
যদিও এসব কাজ তার নিজের নয় তবে ইচ্ছাকৃত ভাবেই জাফরিনদের সাথে যোগাযোগ করার দায়িত্ব নিয়েছে সে।
এখন বাংলাদেশে সময় কত হবে?রাত দশটা?তবুও সে ডায়াল করলো জাফরিনের মায়ের নাম্বারে। অফিশিয়াল ফোন থেকে নয়, নিজের ফোন থেকে।
কয়েকবার রিং হওয়ার পরেই ভেসে এলো জাফরিনের কণ্ঠস্বর।

(১৮)

ইশান বসেছিল বারান্দায়।এখান থেকে জাফরিনদের বাড়ির উঠান স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। জাফরিন কফির মগ হাতে নিয়ে ইউভানের পাশে এসে বসলো।রাত তখন গভীর হচ্ছে। ইউভান কারোর সাথে ফোনে কথা বলছিল।জাফরিন এগিয়ে আসায় তার দিকে ফোন এগিয়ে দিলে জাফরিন কথা বলা শুরু করলো।কথা বলার
সময় এক পর্যায়ে জাফরিনকে কিছুটা দুঃখী লাগছিল।সে সময় ইউভান পুনরায় তার মাথায় হাত রাখে।ঈশান মনে মনে তাকে জঘন্য গালি দিয়ে বসে। ঠিক যেন দুশ্চরিত্র লোক ইউভান। যে বাহানা খুঁজে শুধু নারী শরীর স্পর্শ করার।কথা শেষ করে তারা ল্যাপটপে ব্যস্ত হয়ে গেল।
ঈশানের পিছনে কখন আশার বাবা এসে দাঁড়িয়েছে সে খেয়াল করেনি।রাতের অন্ধকারে আশার বাবা এক জঘন্য পরিকল্পনা করছিল।
তাদের ধারণা ইউভানের সাথেই জাফরিনের বিয়ে হবে।আগে ধারণা করতো আজ তারা একদম নিশ্চিত হয়েছে। তবুও তারা এক পরিকল্পনা করে চলেছে।

রাতের সবাই যখন ঘুমে তখন জাফরিনের বাবার সব ভাই-বোনেরা বসলেন এক ঘরে। তারা জাফরিনের ভালোর জন্যই এই কাজটা করতে চলেছে। যেহেতু আগামীকাল জাফরিনের দুই বোন এবং তার মামারা সবাই ফিরে যাবে এবং তাদের সাথে জাফরিন কিংবা তার মা কে যেতে দিবে না তারা। কারণ স্বামী মারা গেলে চল্লিশ দিন বাড়ি ছাড়ার নিয়ম অনেক দিন আগে থেকেই তারা মেনে আসছে। জাফরিনের মা কেও সেই নিয়ম পালন করতে হবে।না চাইলে স্বামীর দোহাই দিয়ে হলেও রাখতে হবে। সবাই যখন চলেই যাবে তখন দুই মা মেয়ে থাকবে এক ঘরে। ফয়সালের কোনো কাজ নেই।তার কাজ শুধু ভোর সকাল বেলা জাফরিনদের বাড়ি থেকে এলোমেলো ভাবে বের হবে।পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই একজন মানুষ তাকে দেখবে, কিছুটা ঝামেলা হবে এবং এরপর যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে যে সে কোথায় ছিল?
সে শুধু বলবে রাতে জাফরিনের সাথে ছিল।ব্যস বাকীটা তাদের বিয়ের ব্যবস্থা গ্রামের মানুষ করে দিবে।

চলবে(

#ক্যামেলিয়া
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৭

(১৯)

একটা নতুন ভোর।এই ভোরের অপেক্ষায় জাফরিনের তথাকথিত আত্মীয়রা। কারণ আজ রাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে জাফরিনের ভবিষ্যৎ এবং তার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির।
সকাল বেলার নাস্তার পর পর একে একে বেরিয়ে যাচ্ছে সবাই।দুই দুলাভাই কোনো ভাবেই জাফরিন এবং সুফিয়া বেগমকে রেখে যেতে চাইছে না।কিন্তু এখন তাদের পক্ষে থেকে যাওয়াটাও সম্ভব নয়। মা ভক্ত মায়ানের পরীক্ষা আর মেঝ আপার স্কুলে গিয়ে ছুটি বাড়াতে হবে। শোকের মাঝেও জীবন কে আপন ছন্দে চলতে হয়। এটাই জীবনের নিয়ম।জাফরিনেএ
মামারা চলে যাওয়ার পূর্বে সুফিয়া বেগমকে তার ছোটো ভাই বললেন,

“আপা বুঝে থাকছিস তো এইখানে?আমি কিন্তু এই বাড়ির মানুষ বিশ্বাস করি না।”

“আরে চিন্তা করিস না।ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলে কেউ কি করবে?”

“তুই একটা যুবতি মেয়ে নিয়ে থাকবি।এটা ভুলে যাচ্ছিস কেন? শহরে চল যাই। আমাদের বাসায় দিন কয়েক থাকলে সমস্যা কী?তাছাড়া দু দিন পর তোদের এমনিতেও যেতে হবে। মন্ত্রণালয়ে তোদের প্রয়োজন হবে। তাছাড়া এখানে থাকা কি খুব দরকার?”

” আমি যে প্রতি দিন এতিম খানায় খাবার পাঠাতে চেয়েছি নিজ হাতে রান্না করে।”

“আপারে, তুই মেয়ে নিয়ে থাকবি।এই দুই দিনে তো দেখেছিস তোর মেয়ের ভালো কত মানুষ চায়। কেমন ভালো তারা চায়। তোদের মেয়েটা রাগী স্বভাবের, যদি রিয়্যাক্ট করে বসে?”

” এটা আমিও ভাবতেছি।মেয়ে মানুষ তো, বদনাম বের করতে সময় লাগবে না।”

“একবার, মাত্র একবার ভেবে দেখ।তোদের বাড়ির আশেপাশে থেকেও যদি কোনো ছেলেকে রাতের বেলা যেতে দেখে তাহলে তোর মেয়ের চরিত্রে দাগ লাগাতে ভাববে না তার চাচা ফুপুরা।”

কথাটা শুনে চমকে উঠেছে সুফিয়া বেগম।তিনি এবার ছোটো ভাইয়ের কথায় বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন।এমনটা এই এলাকায় প্রথম হচ্ছে যে তা নয়। এর পূর্বেও অরিত্রী নামের এক মেয়েকে এই ভাবেই সমাজের মানুষের সামনে হেনস্থা করেছিল সবাই।
দুটো ফাকা ঢোক গিলে সে মেয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,

“জাফরিন তুমি তোমার বড় আপার সাথে যাবে? না মামার সাথে?”

“আম্মা, আপনাকে রেখে আমি কই যাবো?আপনি কী একা থাকবেন?”

“সমস্যা নেই, তোমার ফুপুরা আছে। তাদের সাথে রাত থাকতে পারবো।”

“আপনার শরীর ভালো না আম্মা।আর ইনসুলিন কেমন করবেন?”

“তুমি এখানে থাকা নিরাপদ না।”

কথার মাঝে ইউভান এগিয়ে এসে বলল,

“ফুপু এত চিন্তার কিছুই নেই। ছোটো চাচা যা বলেছে আর আপনি যা ভাবছেন এমন কখনোই হবে না। দেশে আইন কানুন বলেও কিছু আছে। আর তাছাড়া আল্লাহ্ আছেন। এতিমের উপর অন্যায় তিনি হতে দিবেন না।আপনি নিশ্চিত থাকুন।যা হবে ভালোই হবে।”

সবাই চলে যাওয়ার পর ও বাড়িতে যেন উৎসব শুরু করেছে। তারা মোটামুটি তৈরী তাদের প্ল্যান নিয়ে। এমনকি ফয়সাল কে বলা হলো আজ রাতে ফিরে আসার সময় যেন সে চুল দাঁড়ি কেটে আসে। আর জাফরিনের জন্য লাল শাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। কারণ তার বিয়ের শাড়ি তো গত দুদিন আগে আশাকেই দেওয়া হয়েছে। এবার তার জন্য হাজার খানেক টাকা দিয়ে একটা শাড়ি কিনে আনলেই হবে।
ঈশান এসব কিছু নিজের চোখের সামনে ঘটতে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।সে এবার দুই মন দুই দশায় ভুগছে।
চাইলে সে জাফরিনের চূড়ান্ত ক্ষতি হতে দেখতে পারে আবার এই বিপদ থেকেও উদ্ধার করতে পারে।

(২০)

বাস্তব জীবনে কোনো শেহজাদা থাকে না। যারা গোড়ায় চড়ে শাহজাদীকে বাঁচাতে আসবে কোনো এক দুষ্ট রাক্ষস থেকে।তরবারি হাতে যুদ্ধে নেমে যাবে এবং যুদ্ধে জয়ী হয়ে, শ্বেত রঙা ঘোড়ায় করে শাহজাদী কে নিয়ে পাড়ি দিবে অচিন পুরে।
কিংবা কোনো এই যাদু বলে কাটিয়ে দিবে সকল বিপদ।
বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। আমাদের চিন্তাভাবনার থেকেও ভয়াবহ রকমের কঠিন হয় বাস্তবতা।
ট্রেড মিলে দৌড়াতে থাকা অবস্থায় মাশুহুদ জানতে পারলো জাফরিন দের বিরুদ্ধে এমন জঘন্য পরিকল্পনা। সবটা শুনে তার কাজ কিংবা অভিব্যক্তির কোনো পরিবর্তন হলো বলে বুঝা গেল না। নির্দিষ্ট সময় পর সে ট্রেড মিল থেকে নেমে দীর্ঘ সময় নিয়ে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো।এবার তার দেখার পালা এই মেয়েটা কতটা কঠিন মনের অধিকারী। যে মেয়ে এত কিছু সহ্য করেছে, সেই মেয়ে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে।
জাফরিনের আগামীকাল শুধু তার নিজের নয়, অপেক্ষা করছে মাশহুদের ভবিষ্যৎ।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে সে জানিয়ে দিলো সকল প্রকার আপডেট যেন তাকে নিয়মিত দেওয়া হয়।

নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে রাতের আধার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল মাশহুদ। আকাশে মেঘেদের আনাগোনা লেগেই আছে। সেই মেঘ গুলো একত্র হয়ে যেন একটা মুখচ্ছবির আল্পনা আঁকছে। হুট করেই মনে হলো তার চার পাশে ক্যামেলিয়া ফুলের গন্ধে ভরে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে তার অস্বস্তি হতে লাগলো।সে দু হাতে মাথা চেপে ধরে বসে রইল ব্যালকনিতে। তার চোখের সামনে হুট করেই দৃশ্য পরিবর্তন হতে লাগলো।সে নিজেকে আবিষ্কার করতে লাগলো এক মরুভূমিতে। যে খানে সে ব্যতীত কেউ নেই।তবে এটাই কী মৃত্যু? এটাই কী তার জীবনের শেষ সময়?

দীর্ঘ সময় পর তার ঘোর কাটলো ফোনের শব্দে।নিজেকে ধাতস্থ করলো ফ্লোরে৷ ঘামে তার পুরো শরীর জবজব করছে। তার আবারো এট্যাক হয়েছিল তবে? সে এবার তার হাতের কাজ দ্রুত শেষ করতে চায়। আগামীকালের ভোর যে অনেক কিছুই বদলে দিবে।ঠিক সে সময় তার মেইলে আসা জাফরিন এবং তার কম্পিউটারের স্ক্রীনের ছবি দেখে স্মিত হাসি ফুটে উঠলো তার চোখে মুখে।

(২১)

নিজেকে কঠিন, আবেগহীন এবং নির্ভয় প্রমাণ করা জাফরিন একাকী ঘরে একবারে নির্জীব হয়ে পড়ে আছে। বিছানায় এপাশ ওপাশ করছিল সে। কোনো একটা কারণে সে নিজের ফোন ব্যবহার করছে না।কারণ হচ্ছে তার অতীত। হলুদের ছবি, বিয়ের বেনারসি পরা ছবি তাছাড়াও রয়েছে ঈশানের সাথে থাকা ছবিগুলো।ছবিগুলো ডিলিট করলেই হয়ে যাবে কিন্তু জাফরিনের বার বার মনে হচ্ছে ছবিগুলো দেখলেই তার ভিতরে বইতে থাকা ঝড়ে সব এলোমেলো না হয়ে যায়!

ল্যাপটপ অন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লগিন করতেই দেখতে পেল তার বাবার মৃত্যুর ঠিক পনেরো মিনিট পূর্বে তার বাবা কিছু ডকুমেন্টস তাকে পাঠিয়েছে। কিছু পাসওয়ার্ড দেওয়া আছে ফাইলের। তাছাড়া তার বাবা নিজের সোশ্যাল একাউন্ট এর তথ্য দিয়েছে সে।

এসব কিছু দেখে তার বেশ কৌতুহল জাগলো।তার বাবা হুট করেই তাকে এসব কেন পাঠিয়েছে? বিছানা ছেড়ে উঠে জাফরিন প্রথমে এক মগ কফি নিয়ে বসলো।ধীরে ধীরে রাতের আধার নেমে আসছে। সেদিকে তার খেয়াল নেই।সে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তার বাবার রেখে যাওয়া এক ধাঁধার সমাধানে। তার বাবা আর্কিটেকচার ছিলেন, কিন্তু তার শখ ছিল কম্পিউটার এর কোডিং নিয়ে৷ সে সহজ ভাষা কোডিং গুলোর মাধ্যমে লিখতেন যেটা অন্যের পক্ষে বুঝা সম্ভব নয়। জাফরিন এসব বুঝে না তবুও চেষ্টা করছিল।না পেরে বিরক্ত হয়ে তার বাবার আইডির ম্যাসেজ গুলো দেখার সময় ঈশানের সাথে কথোপকথন দেখে অবাক হয়ে গেল।

তাদের অগোচরে যে তার বাবা ঈশানকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছে, মাত্র জাফরিনকে বিয়ে করার জন্য এটা তার বিশ্বাস হচ্ছিলো না। বিষয়টা ইউভানকে জানিয়েছে সে।

বিরক্ত হয়ে মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছিল নিজের ঘরের জানালা খুলে। পর দিন সকাল বেলা সেই ঘরের জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল ফয়সাল কে। তার শরীরের কয়েক জায়গায় কারো নখ লেগেছে। ব্যক্তিগত মুহুর্তেই চিহ্ন হিসেবে প্রমাণ দিচ্ছে সেসব।
বাইরে থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে জাফরিন এবং তার মা বেরিয়ে এলেন।
ফয়সাল কে দেখে নিজ ওড়নায় মুখ ডাকলেন তিনি।তবে কী তার অবচেতন মনের সেই ভয় সত্যি হয়ে গেল?

চলবে (যারা গল্প পড়ছেন, তারা অনুগ্রহ করে রেসপন্স করবেন।কেনো না আপনারা রেসপন্স করলেই অনেকের টাইমলাইনে পৌঁছে যাবে এবং সবাই পড়তে পারবে। তাই অনুগ্রহ করে রেসপন্স করবেন। কারণ অসুস্থতা নিয়ে লিখছিই আপনাদের জন্য।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here