কঠিন প্রেমের গল্প পর্ব 7

0
899

কঠিন প্রেমের গল্প (সপ্তম পর্ব)
ফারাহ তুবা

আমি ঠিক করেছি নীতুকে কিছু পুরানো স্মৃতি মনে করাবো। আমার যে ওকে মনে আছে তা ওর জানা দরকার।

একদিন সকালে উঠে নীতুকে বললাম,

“তোমার ছবি তোলার শখের কথা কিন্তু আমার মনে আছে। তুমি মাথায় ওড়না পেচিয়ে টি এস সি তে ঘুরে বেড়াতা। সব কিন্তু মনে আছে। আমি এটাও জানি যে এই শখ তুমি ছাড়োনি এখনো।”

নীতু অবাক হয়ে তাকালো। খাবার টেবিলে দেখি সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব অবাক হয়ে বললো,

“বাবা, কর্ণারের রুমটা তো মায়ের স্টুডিও। এই শখ মনে রাখার কি আছে!”

নীতু কিছুটা চিন্তিত স্বরে বললো, “তুমি ক্রেডিট কার্ডের বিল চেক করো না? প্রতি মাসে যে তোমার কার্ড দিয়ে ছবি তোলার জিনিস কিনি।”

আমার মা বললো, “নীতু বলে যে তুই ভালো স্বামী। উদার ধরনের। আসলে যে তুই গাধা এটা আমি জানি। তোর বাপের মতো উদার আর কেউ হবে না স্বামী হিসাবে।”

বলে মা-বাবা দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে খুবই লজ্জায় ভরা প্রেমময় হাসি দিলো।

এই ক্রেডিট কার্ডের বিলটা নীতুই দেখাশোনা করে। কিন্তু সে যে আশা করে আমিও সব ম্যাসেজ বিল চেক করবো এইটা ভাবিনি।

আরেকদিন আমি সবাইকে নিয়ে বাইরে গেলাম। ঠিক করলাম সবাই একসাথে খাবো। খাওয়া শেষে মা-বাবার সাথে বাচ্চাদের পাঠিয়ে আমি নীতুকে নিয়ে রবীন্দ্রসরোবরে বসবো। খুবই সুন্দরমতো সব হয়ে গেলো। বিকালের মিষ্টি রোদে আমি আর নীতু বসে আছি। নীতুকে খুবই সুন্দর লাগছে। আমার খুব ইচ্ছা করছে ওর হাত ধরতে। কিন্তু খুবই সংকোচ হচ্ছে। আমি জোর করে কিছু পুরানো কথা তুললাম। এর ফলে নিশ্চয়ই ওর পুরানো প্রেম জেগে উঠবে ধীরে ধীরে।

“নীতু তোমার মনে আছে যে বিয়ের পর পর একবার তোমার খুব জ্বর উঠলো। আমি সারারাত জেগে ছিলাম।”

“না মনে নেই।”

“সত্যিই মনে নেই?”

“না। এত আগের কথা কিভাবে মনে থাকবে।”

“কি আশ্চর্য! তুমি বলেছিলে যে সারাজীবন এই রাত তোমার মনে থাকবে।”

“কি থেকে যে আমি কি বলি! ধ্রুব আমাকে বলছে আমি নাকি রুদ্রকে কম্পিউটার কিনে দিবো বলেছি। বড় ভাই তাই সে আগে কম্পিউটার চায়। আমি যে কখন বললাম মনেই করতে পারছি না।”

আমি হতাশ হয়ে আরেকদিকে তাকালাম। কিসের মধ্যে নীতু কি বলছে! নীতু কি মনে মনে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে! আমি আবার নীতুর দিকে তাকিয়ে বললাম,

“বাচ্চা হওয়ার পর পর যে তুমি অনেক অসুস্থ ছিলা তা মনে আছে? আমি খুবই ব্যস্ত ছিলাম। তোমাকে সময় দিতে পারতাম না। অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে থাকতে হতো। তোমার কি জানি অপারেশন হলো এর মধ্যে আর আমি একদিনও হাসপাতালে আসতে পারিনি। পরে তোমার ইনফেকশন না কি যেন হলো। দুই মাস তোমার বাবার বাসায় থাকতে হয়েছিলো। এসব মনে আছে?”

“অপারেশন তো দুইবার হয়েছিলো। তুমি কোনটা বলছো? যখন তুমি অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলা সেইবার নাকি যখন হাফসার সাথে ঘুরতে যেতা আর আমাকে মিথ্যা বলতে সেইবার?”

আমি জানি না এর কি উত্তর দিবো! আমার মুখ কেমন ঝুলে গেলো। আয়না ছাড়াই পরিষ্কার বুঝতে পারছি আমার মুখ ঝুলে কেমন অদ্ভুত হয়ে আছে। নীতু খুব আগ্রহের সাথে তাকিয়ে আছে। আমার মুখ দিয়ে কেন যেন কোন উত্তর বের হচ্ছে না।

সেদিনের মতো আর কথা এগুলো না। নীতু ভাগ্যিস আর কোন প্রশ্ন করেনি। কিন্তু আমার মন খুবই খারাপ লাগছে। নীতু নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পেয়েছিলো। কিন্তু বেচারি কিছুই বলতে পারেনি আমাকে। হয়তো আর্থিকভাবে নির্ভরশীলতা বা অন্য কোন বিষয় ছিলো যা তাকে আটকে রেখেছে!

আমি রাতে মটকা মেরে শুয়ে থাকলাম। নীতু অনেক রাত পর্যন্ত বই পড়লো আরও কি কি যেন করলো। এরপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। নীতু ঘুমানোর পর আমি ওর ফোনটা নিয়ে স্টুডিওতে গেলাম। এটা মূলত আমাদের গেস্টরুম। নীতু খুব কায়দা করে সাজিয়েছে। একই সাথে দুই কাজ হয়ে যাচ্ছে। অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস আছে এই ঘরে ছবি তোলার জন্য। কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখলাম। এরপর আমি একটা নরম কার্পেটের উপর শুয়ে পড়লাম। শুয়ে শুয়ে ফোনের এলবাম খুলে ছবি দেখতে লাগলাম। নীতু অসম্ভব সুন্দর ছবি তুলে। একটা ছবির নাম “ব্যস্ততা”। আমার মোজা পরা পায়ের ছবি সেখানে। পাশেই আমার ল্যাপটপের ব্যাগটা রাখা। জানালা দিয়ে কড়া রোদ পড়ে ধুলোবালিগুলো উড়তে দেখা যাচ্ছে। কখন যে তুলেছে টেরই পায়নি। আরেকটা ছবি দেখলাম নাম হলো “দায়িত্বের ঢিপি”। এই ছবিটা সবজি আর মাছ কাটার পরের সব অবজর্নাগুলো উচু করে রেখে তোলা হয়েছে। আমি খুবই মুগ্ধ হলাম। এত ছোট ছোট বস্তু যে আলাদাভাবে দেখা যেতে পারে আমার ধারণাই ছিলো না। ছবি দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই পেলাম না।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here