কঠিন প্রেমের গল্প পর্ব 6

0
981

কঠিন প্রেমের গল্প (ষষ্ঠ পর্ব)
ফারাহ তুবা

নীতুর ম্যাসেঞ্জার ভর্তি খুব রেগুলার চ্যাট দেখা যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ম্যাসেজ আসা যাওয়ার মধ্যে পড়ে আছে। চার/পাঁচটা গ্রুপে সে একটিভ। সবগুলো গ্রুপের নামের আগে পরে ফটোগ্রাফি লেখা আছে। আমি সবার আগে কণার সাথে চ্যাট পড়ে দেখলাম। সাধামাটা গল্প করছে দুই বান্ধবী। কণা অবশ্য আপনি করে বলছে নীতুকে। হয়তো সিনিয়র জুনিয়র ফ্রেন্ড। কয়েকটি উদাহরণ দেই। নীতু লিখেছে,

“সকালে কি আজকে রুটি বানিয়েছো?

“না। ইচ্ছা করছিলো না। আজকে ফ্রোজেন পরোটা রোল করেছি। মাঝখানে ঢুকিয়েছি কিছু চিকেন কিমা। সেই রোল আর আটকে থাকে না। কত কায়দা করে যে আটকালাম।”

“দুপুরে আমি ছোট মাছ রান্না করবো। তোমার কি রান্নার ইচ্ছা?”

“আপু আমার তো দুপুরে কিছু করা লাগে না। আপনার মতো সংসার নেই। আমি শুধু একটা পাউরুটি বা কিছু খেয়ে নিবো।”

“এইটা তোমার আরাম। কিন্তু রাতে আবার দশ পদ করা লাগে তোমার।”

একটু পিছিয়ে আরও কিছু চ্যাট দেখলাম।

“রুদ্রর বন্ধুরা গিয়েছে?”

“মজার ঘটনা শুনো। রুদ্রদের খেলাধুলা শেষ। এদিকে আমাদের গল্প আর শেষ হচ্ছে না। আজকে অবশ্য অনেক ছবি তুলেছি। ক্যাপশন ফাইনাল হলে গ্রুপে দিবো। তুমি দেখো।”

এইরকম নিত্যদিনের কথা বার্তা কণার সাথে চলছে। কণাকে এখন আমি চিনতে পেরেছি। কণা আর নীতু কোন একটা কোর্স একসাথে করতো। প্রায় আট/নয় বছর আগের ঘটনা। এখনো এত যোগাযোগ আছে দেখে ভালো লাগলো। বেচারি নীতু একা একা জীবন পার করছে। তার কিছু সঙ্গী সাথী হলে ভালো হয়।

আমি আরাম করে ম্যাসেজ পড়তে পারছি না। কারণ রুদ্র আর ধ্রুব চিৎকার করেই যাচ্ছে। তাদের চিৎকার চেচামেচিতে মন শুধু অন্যদিকে চলে যাচ্ছে।

অবশ্য তেমন কিছু নেই ম্যাসেজে। উপরের দিকের পাঁচটা গ্রুপের ম্যাসেজ পড়ে কিছুটা অবাক হলাম। সবই ফটোগ্রাফির গ্রুপ। বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে গ্রুপে আছে নীতু। এর মধ্যে দুইটা গ্রুপ একেবারেই প্রফেশনাল গ্রুপ। একটা স্বনামধন্য পত্রিকার গ্রুপ আর আরেকটাতে দেখি পল্লব হায়দার, জগন্ময় ভানতে, রতন সরকার এদের সাথে গ্রুপ। প্রায়ই সেখানে ছবি দেওয়া নেওয়া আলোচনা এসব হচ্ছে। আমি বেশ অবাক হলাম। মনও কিছুটা খারাপ হলো। নীতুর ছবি তোলার শখের বিষয়টা আমি জানতাম না। জানলে অবশ্যই তাকে সাহায্য করতাম। এইসব ভাবতে গিয়ে বিদ্যুৎ চমকের মতো বড় একটা ঘটনা মনে পড়লো। নীতু বিয়ের আগে ফটোগ্রাফার ছিলো। মাথায় ওড়না পেচিয়ে গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে ছোটাছুটি করতো। মডেল ফটোগ্রাফি, রিপোর্টার হিসাবে, শখের ফটোগ্রাফি কোন কিছুই বাদ যায়নি। বিয়ের পর আর্থিক টানাটানিতে স্কুলের চাকরিটা নিতে হয় নীতুকে। আবার একসময় স্বচ্ছলতায় সেই চাকরিও ছেড়ে দেয়। কিন্তু ক্যামেরাকে যে নীতু ছাড়েনি তা আমার জানা ছিলো না।

আমি আবারও গ্রুপের লেখাগুলো পড়লাম। পল্লব, জগন্ময় এরা এতটাই বিখ্যাত ব্যক্তি বাংলাদেশে যে বলার মতো না। রতন সরকার আবার দেশে থাকে না। ইতালিতে থাকে। উনি গ্রুপে একটু পর পর সবাইকে ইতালিতে ডাকছে। নীতুকে বলছে আমাকে নিয়ে যেতে। আমার যে কি অবাক লাগছে বলার মতো না!

কয়েকদিন আগে আমার অফিসের বসের মেয়ের বিয়ে হলো। উনারা রতন সরকারের কোম্পানিকে হায়ার করেছিলো তিন লাখ টাকা দিয়ে। এরপর আবার রতন সরকার নিজে পাঁচটা ছবি তোলার জন্য আলাদা চল্লিশ হাজার নিয়েছিলো। সেই ব্যক্তি কিনা আমার স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু!!!

এতদিন আমার মনে নীতুর জন্য ভালোবাসা বেড়েই চলছিলো। আজকে আমার মনে কেমন জানি অন্য একটা অনুভূতি বাসা নিলো। নিজেকে কেমন ছোট লাগছে! আমি যখন হাফসার সাথে রাত জেগে গল্প করছি সেই সময় হয়তো নীতু রাত জেগে ছবির প্লট চিন্তা করছে। যেই পল্লব পৃথিবীর বড় বড় মডেলদের ছবি তুলে সে কিনা আমার স্ত্রীকে পার্লারে নিয়ে যাওয়া আসা করছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে। আর আমি এসব কিছুই জানি না। এর কোন মানে হয়!

নীতু কি সবসময় অধরাই ছিলো? আমি অকারণ ওকে ধরার জন্য ঘুরছি??

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here