কঠিন প্রেমের গল্প পর্ব 10

0
959

কঠিন প্রেমের গল্প (দশম পর্ব)
ফারাহ তুবা

নীতুর সাথে আমার সম্পর্কটা খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে আমরা গল্প করছি। একসাথে হাসি কথায় ডুবে যাচ্ছি। একরাতে আমরা চারজন একসাথে একটা এনিমেশন মুভি দেখলাম। হোটেল কি জানি নাম। অনেকগুলো দানবের হাসির ঘটনা। দেখে আমরা চারজনই হাসতে হাসতে শেষ। মাঝে দুইবার আমাকে উঠতে হলো নীতুর জন্য গ্রীণ টি আনতে। এক ফাঁকে নিজের জন্য দুধ চা বানিয়ে নিলাম কিন্তু ঘরে আসতেই দুই ছেলে হামলে পড়ে খেয়ে নিলো। বেশ ভালো সময় কাটছে আমার।

লিটা ম্যাম অবশ্য আমাকে ডেকেই যাচ্ছে। উনি সম্ভবত আমাকে ছাড়াছাড়ির মধ্যে নেই। আমি পনেরো দিনের ছুটি নিয়ে ঘাপটি মেরে আছি। দুইদিন নীতুর সাথে ফটোগ্রাফির অনুষ্ঠানে গেলাম। একদিন খুব ফরমাল একটা অনুষ্ঠান। নীতু কিছু একটা এওয়ার্ড পেলো সেখানে। কি যে এওয়ার্ড বুঝলাম না কিন্তু খুব হাততালি দিলাম। আরেকদিন খুব সাধারণ একটা ডিনারে গেলাম। কোন এক ফটোগ্রাফারের বাসায় দাওয়াত। বড় খোলা বারান্দায় বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম সবাই। আমার মনেই হলো না যে আমি তাদের একজন নই। এরমধ্যে কি কারণে জানি ইতালি যাওয়ার কথা উঠলো। আমি তাদের সাথে বসে একটা খসড়া করে ফেললাম যে কবে কখন যাওয়া যায়, কয়টা বাচ্চা যাবে, থাকার তো চিন্তা নেই কিন্তু খাবারের কি বন্দোবস্ত এসব করে ফেললাম। নিজেকে অত্যন্ত সুখী মনে হতে শুরু করেছে।

এরমধ্যে বাসার ছোট ছোট জিনিস আবিস্কার করে ফেলেছি। দুই ছেলে এখন আমাকে বিজ্ঞানী বলে ডাকছে। যেমন-

বকুল ফুল রহস্য- আমার মা ছারপোকার ভয়ে ভীত ব্যক্তি। উনার ধারণা কুমিল্লা থেকে উনি সাথে করে ছারপোকা এনেছেন যাদের বয়স এখন প্রায় কুড়ি বছর হওয়া উচিত। তারা যে কোন দিন হামলে পড়বে। বকুল ফুলের মালা বিছানার চারিদিকে দিলে ছারপোকা পালায় এই কারণে আপাতত ফুল ট্রিটমেন্ট চলছে।

গোলাপি বল রহস্য- প্রতিটি বাথরুমে অত্যন্ত সুদৃশ্য নেটের সোনালী ব্যাগে গোলাপি বল রাখা আছে। এতদিন ভাবতাম এটা সুগন্ধি। এখন জেনেছি এটা মূলত ন্যাপথলিন।

আমার দুই ছেলে আমাকে নিয়ে খুবই গর্বিত। তারা নিজেরাই আমাকে এই সমস্ত তথ্য দিয়ে নিজেরাই আমাকে নিয়ে গর্ব করে সবাইকে গল্প করছে। নয়/দশ বছরেও ওরা একেবারে শিশু থেকে গিয়েছে!

আমি ঠিক করেছি প্রেম ভালোবাসা পরে। আগে আমি নীতুর কাছে ক্ষমা চাইবো ওকে ফটোগ্রাফি থেকে দূরে সরানোর জন্য। পরে ভালোবাসার কথা বলে সারাজীবনের মতো আটকে দিবো।

মাফ চাওয়ার কাজটা সহজ হলো। একদিন আমি দীর্ঘক্ষণ রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে থাকায় আমাকে পেঁয়াজ ভাজার কাজ দিয়ে নীতু রূপচাঁদা মাছের ছবি তোলার চেষ্টা করছে। আমি পেঁয়াজ ভাজতে ভাজতে নীতুকে বললাম,

“আমাকে ক্ষমা করে দিও।”

“সম্ভব না।”

“কেন?”

“ক্ষমা কেন চেয়েছো আমি জানি না তাই ক্ষমা করতেও পারছি না। দুঃখিত।”

পুরো সময় নীতু নানাভাবে ছবি তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সে একবারের জন্যও আমার মুখের দিকে তাকায়নি।

“আমার কারণে তোমার ছবি তোলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তুমি বড় ফটোগ্রাফার হতে পারোনি। আমার খুবই খারাপ লাগছে।”

নীতু স্বাভাবিক ভাবে মাছের উপর হলুদের গুড়ো ছড়াতে ছড়াতে বললো,

“আমি ছবি তোলা ছাড়িনি আর তোমার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। ধর্মীয়ভাবে প্রাণীর ছবি তোলা খারাপ আর আমি খারাপ মানুষ হতে চাই না। আমি বিয়ের পর থেকে স্টিল ফটোগ্রাফি করি।”

এ পর্যন্ত বলে নীতু হাত মোছার জন্য এদিক ওদিক কিছু একটা খুঁজলো। এই সুযোগে আমি আমার গেঞ্জির এককোণা এগিয়ে দিলাম এবং সে হাতটা ঝেড়ে নিলো। আবারও ছবি তুলতে তুলতে বললো,

“আমি আগে এর খারাপ ভাবটা বুঝিনি। পল্লব যখন ন্যুড ফটোগ্রাফি শুরু করলো তখন খুব একটা ভালো লাগেনি। এরপর স্পেনে আমার যে বান্ধবী আছে ত্রয়ী ও যখন টপলেস আরও কি কি সব শুরু করলো তখন খুবই ঘিন্না লাগলো। মাঝে মাঝে সে নিজেও কাপড় ছাড়া ছবি তুলে। ফেসবুকে গ্রুপ আছে একটা। সেখানে দেয়।”

নীতু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে হাত বাড়িয়ে পেঁয়াজের চুলাটা বন্ধ করে দিলো। এরপর বললো,

“আমি ধার্মিক মেয়ে মনে মনে। আমার এসব পছন্দ না। আমি জানি না তুমি কি ভাবো। কিন্তু আমার মনে হয় ন্যুডিটি এত সস্তা করা উচিত না। এসব ছবি যেমন সুরমা গ্রুপের মালিক দেখে তেমনি রিকশাওয়ালাও দেখে। রিকশাওয়ালাদের মনে খারাপ চিন্তা আসলে আমি কিন্তু অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছি। তুমি কি বুঝতে পারছো আমি কি বলছি?”

আমার মাথায় আসলে তেমন কিছু ঢুকলো না। তবুও কয়েকবার হুমম হুমম করলাম। নীতুর চিন্তা আদর্শের কাছে আমার তেমন স্থান মনে হয় কখনোই ছিলো না। আমি ঠিক করে ফেললাম আর দেরি করা ঠিক হবে না। আমি আজ রাতে বা আগামীকাল রাতেই নীতুকে ভালোবাসার কথা বলে ফেলবো।

রান্নাঘর থেকে বের হওয়ার আগে নীতু বললো,

“আজকে বুয়া আসেনি। তুমি কি আমাকে আরেকটু সাহায্য করতে পারবে? কিছুটা বেরেস্তা পাটায় বেটে তরকারিতে দিবো। ব্লেন্ডারটা আবার নষ্ট।”

আমি আবারও রান্নাঘরে ঢুকে গেলাম। ভালোবাসার জন্য কত কিছু করে মানুষ। শিলপাঠায় মশলা বাটা আর এমন কি!!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here