কঠিন প্রেমের গল্প পর্ব 8

0
849

কঠিন প্রেমের গল্প (অষ্টম পর্ব)
ফারাহ তুবা

প্রচন্ড মাথা আর ঘাড় ব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম। নীতু পাশেই বসে আছে। স্বাভাবিক চেহারায় দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। কয়টা বাজে এখন? একবার ভাবলাম নীতুকে জিজ্ঞেস করি। পরে আবার কেমন একটা সংকোচ হলো। কোন রকমে বসে গা হাত পা মুচড়াতে লাগলাম। বেশ ব্যথা করছে ঘাড়ে।

নীতু ফোনের দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন করলো,

“অফিস বন্ধ আজকে?”

“না। অফিস আছে। বসবো ল্যাপটপ নিয়ে।”

“তুমি অন্যদিকে তাকিয়ে কথা কেন বলছো? হাফসার নাম শোনার পর থেকে অস্বস্তিতে আছো মনে হচ্ছে। সাত বছর আগের প্রেম নিয়ে এখন লজ্জা পেলে হবে?”

আমি ব্যথিত চোখে তাকিয়ে বললাম,

“তুমি কিভাবে জানতে যে হাফসা আর আমার সম্পর্ক আছে?”

নীতু খুব নির্লিপ্ত স্বরে বললো, “মনে নাই। একটা ঘটনা থেকে আরেকটা এভাবে জানলাম।”

“কখনো কিছু বলোনি কেন?”

নীতু হাসতে হাসতে বললো, “কি বলবো? বলবো যে অন্য কাউকে ভালোবেসো না। প্লিজ প্লিজ আমাকে ভালোবাসো। এরকম?”

নীতুর হাসিটা একদম স্বাভাবিক। এখানে কোন রাগ, দুঃখ, বেদনা কিছু নেই। কেন নেই? সে কি আর আমাকে ভালোবাসে না? আমার খুবই ইচ্ছা করছে নীতুর হাতটা ধরতে। খপ করে যদি ধরে ফেলি ও কিছু বলতে পারবে! আটকাবে বা বিরক্ত হবে!! শারীরিক দূরত্ব আমাদের তেমন ছিলো না কিন্তু হাত ধরার সম্পর্ক যে নাই তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি।
………………..

আজকে সারাদিন আমি অফিসের কাজে বসলাম না। মন বসছে না কিছুতেই। কিছুক্ষণ গাছের যত্ন করবো ভাবলাম। কিন্তু বাসাতে একটাই গাছ আছে। বাচ্চাদের অনলাইন ক্লাসে বসিয়ে আমি পাশে বসে থাকলাম। দুই ভাইকে দুই ঘরে দেখাশোনাও একটা ঝামেলা। দুই ঘর থেকে দুইজন একটু পর পর ডাকছে। লিংক ওপেন হয়না, ফাইল ওপেন হয়না, এই সেই লেগেই আছে।

মায়ের সাথে গল্প করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু উনি আজকে খুবই উত্তেজনার মধ্যে আছে। উনাদের স্কুলের রিউনিয়ন আজকে। যে কয়জন বেঁচে আছে সবাই আসবে। নীতু উনাকে রেখে। পরে ড্রাইভার গিয়ে নিয়ে আসবে। উনি শাড়ি কোনটা রেখে কোনটা পরবে সেই উত্তেজনায় অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। আমাকে বসিয়ে উনি তিনটা শাড়ি আমার গায়ের উপর ফেললো। আমি যেহেতু দেখতে আমার মায়ের মতো তাই আমি পরলেই নাকি বোঝা যাবে কোনটা উনাকে মানাবে। বাবা ভোট দিলো কমলা রঙের শাড়িতে। আমাকে নাকি কমলা রঙের শাড়িতে বেশ মানিয়েছে। নীতু আবার চাচ্ছে মা সাদা নীল একটা জামদানী শাড়ি পড়ুক। এই শাড়িটা হাফসা নীতুকে দিয়েছিলো। সাত বছর আগেই শাড়ির দাম নাকি তেরো হাজার ছিলো। নীতু খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে বারবার দাম বলছে আর উল্লেখ করছে যে এখন না জানি কত দাম হবে শাড়িটার। মা আবার সাদা শাড়ি পরবে না। এদিকে বাবা পুরো সময় কথা বলছে আর ডাম্বেল উঠা নামা করছে। অত্যন্ত আনন্দঘন পারিবারিক দৃশ্য বলা যায়। মাঝে একবার রুদ্র এসে বলে গেলো,

“বাবা, তুমি শাড়িটা ভালো করে পরে আসো আমার অনলাইন ক্লাসে। আমার বন্ধুরা তোমাকে দেখতে চায়।”

ধ্রুব এসে রুদ্রকে বকতে বকতে নিয়ে গেলো। যদিও আমাকে দেখে মুখ টিপে হাসলো কিছুক্ষণ।

বাকিদিন আমি করার কিছু পেলাম না। কয়েকবার চা খেতে ইচ্ছা করছিলো কিন্তু নীতুকে বলতে সাহস হলো না। দুপুরের দিকে নীতু বাইরে গেলো। অনেকদিন পর যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেলো। করোনার জন্য নাকি পার্লার বন্ধ। তাই জানি কার বাসায় বসে সব সার্ভিস নেয় ওরা। তার বাসায় যাচ্ছে বলে গেলো। আমি বাচ্চাদের সাথে একটা মুভি দেখে সময় পার করলাম।

সন্ধ্যায় আমার কলিগ আতিক ফোন করলো। বললো যে,

“তোর ডার্লিং যে দেশে জানিস এটা?”

“ডার্লিং কে?”

“ন্যাকা!!! লিটা ম্যাম মানে হাসফা দেশে এসেছে। শেয়ার বিক্রি করতে। ও আর ওর স্বামী কোম্পানির সব শেয়ার মালিকের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে।”

“আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। হাফসা কেন আমাদের কোম্পানির শেয়ার কিনেছে আর ওর স্বামীই বা এসবে ইনভেস্ট করলো কেন?”

শাহেদ হড়বড় করে একটা বিরাট গল্প বললো। আমার বিস্মিত হওয়া উচিত কিন্তু বিস্মিত হলাম না কেন জানি। এখন আসলে নীতু ছাড়া কিছুই চিন্তা করতে ভালো লাগছে না।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here