উত্তরণ পর্ব_১০

0
878

#উত্তরণ
পর্ব_১০

অনেকটা ভোরে ওঠা উজানের অভ্যাস. উঠে মর্নিং ওয়াক করে জিম করে. ওর ফ্ল্যাটেই একটা জিম বানিয়ে নিয়েছে ও. জিম করে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে তারপর খাওয়া দাওয়া করে তৈরী হয়ে অফিসে যায়. কোনো হাউসহোল্ড হেল্পার নেই ওর.

আজ ডিউটি নেই তাই উজানের কোনো তাড়াও নেই. ও ধীরে সুস্থে জিম করে এক গ্লাস ফ্রেশ জুস নিয়ে ব্যালকনিতে বসে.

বসে বসে কালকের কথাই ভাবছিলো উজান. মাস দুয়েক হলো হিয়ার সাথে আলাপ. যদিও দেখা সাক্ষাৎ, কথাবার্তা খুবই কম, তা সত্তেও হিয়ার প্রতি একটা আলাদা আকর্ষন অনুভব করে ও. উজান জানে যেটা হবার নয় তাকে প্রশ্রয় দেওয়া অর্থহীন. উজান ওর এই সম্পূর্ণ নতুন অনুভূতির সাথে লড়াই করতে করতে কারণে অকারণে হঠাৎ হঠাৎই রেগে যায় হিয়ার উপর. তাছাড়া আরো একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় উজানের মনে۔۔۔۔ ক্যাপ্টেন হার্দিক কাশ্যপের সাথে হিয়া আদতে কতটা জড়িয়ে?

এমনসময় ডোরবেল টা বেজে ওঠে. উজানের ভ্রু তে ভাঁজ পড়ে, এতো সকালে কে এলো? ও উঠে গিয়ে দরজাটা খোলে আর খুলেই চমকে ওঠে.

উজান: আপনি?
হিয়া: আসতে পারি?
উজান: ভেতরে আসুন

উজান দরজার সামনে থেকে সরে এসে হিয়াকে ভিতরে আসার রাস্তা করে দেয়. হিয়া ভিতরে এলে উজান একবার উঁকি দিয়ে বাইরেটা দেখে নেয়.

হিয়া ড্রয়িং রুমে এলে উজান হিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়, হাত দুটো বুকের ওপর ভাঁজ করা, চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি.

উজান: বলুন
হিয়া কোনো ভনিতা না করেই বলে: সরি

উজান কোনো কথা না বলে হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে.

হিয়া আরো এক পা এগিয়ে আসে উজানের দিকে.

হিয়া: আমাকে ক্ষমা করবেন. কথাটা আমি কাল অফিসে সবার সামনেই বলতে পারতাম, কিন্তু আমি আর দেরি করতে চাইছিলামনা. সম্ভব হলে গতকাল রাত্রেই আসতাম কিন্তু সেটা ঠিক হতোনা. তাই আজ সকাল সকাল চলে এলাম. কে বলতে পারে কাল সময় পাবো কিনা۔۔۔

উজান: এতো কিসের ব্যস্ততা আপনার? ফ্লাই তো কাল আমার সাথেই করবেন.

হিয়া মলিন হেসে বলে: আপনি সিওর কাল আমি ফ্লাই করবোই?

এবার উজানের একটু অদ্ভুত লাগে. হাত দুটো বুকের ওপর থেকে নেমে আসে.

উজান: মানে? আপনার এরকম মনে হওয়ার কারণ?

হিয়া আবারো হাসে : কালকের ঘটনাটা কী এটাই জাস্টিফাই করেনা?

উজান: ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল. ওটাকে নিয়ে এতো ভাবলে আপনি এক কাজ করুন, কাজকর্ম ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকুন.

হিয়া: আপনার পরামর্শ মানতে না পারার জন্য দুঃখিত. আমার হাতে এতো সময় নেই. সব কথা আপনাকে খুলে বলতে পারছিনা. যে কদিন বেঁচে আছি অনেক কাজ আছে সেগুলো শেষ করতে হবে, যার মধ্যে আপনার কাছে ক্ষমা চাওয়াটাও ছিল. এবার আমি আসি.

উজান বোঝে হিয়া ওর বর্তমান পরিস্থিতির আঁচ পেয়েছে. ও এতো সহজে হিয়াকে ছাড়তে চায়না. হিয়া যখন নিজেই সেই সুযোগটা করে দিয়েছে তখন উজানকে এই সুযোগের সদব্যাবহার করতে হবে.

উজান: দাঁড়ান. এতো সকালে এসেছেন, ব্রেকফাস্ট নিশ্চই হয়নি?

হিয়া ফিরে তাকায় উজানের দিকে. কী বলতে চাইছে উজান?

হিয়া: আমি পরে করে নেবো, এখন একটু ব্যস্ততার মধ্যে আছি.

উজান: রান্নাটা আমি ভালোই পারি, আর আমারও ব্রেকফাস্ট হয়নি. একটু বসে যান, একসাথেই খেয়ে বেরোবো.

হিয়া: আপনি কোথায় যাবেন?

উজান: আপনি যেখানে যাবেন.

হিয়া: মানে?

উজান: আপনাকে দেখে আমার ঠিক লাগছেনা. মনে হচ্ছে রাত্রে ঘুমোননি. এই অবস্থায় আপনাকে একা ছাড়তে পারিনা. তাছাড়া কাল কি যেন বলেছিলেন? আপনাকে বাঁচানো আমার কর্তব্য নাকি?

হিয়া চোখ নামিয়ে বলে: কাল আমার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছিলো. আজ আমি একাই যেতে পারবো ক্যাপ্টেন. ধন্যবাদ.

উজান: আমি আপনার পারমিশন নিচ্ছিনা. চুপ করে বসুন তো.

হিয়া: আমি ডাক্তার এর কাছে যাবো ক্যাপ্টেন. উনি আমায় চেনেন. আপনাকে নিয়ে গেলে প্রশ্ন উঠতে পারে (হিয়া সুচতুর ভাবে এড়িয়ে যায়).

উজান: ঠিক আছে, আমি যাবোনা. তবে আপনি ব্রেকফাস্ট করে তবেই যাবেন.

উজান হিয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে কিচেনে চলে যায়.

উজান ভাবতে থাকে: এতোই সহজ আমাকে ফাঁকি দেওয়া মিস মিত্র? আপনি তো দূর, যমরাজ ও আমাকে ফাঁকি দিয়ে আপনার কাছ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবেনা. আগে তো জানি আপনি কি জেনেছেন, কতটা জেনেছেন. তারপর নাহয় ঠিক করা যাবে আপনি এক্সাক্টলি কি ডিজার্ভ করেন۔۔۔

দেখা যাক হিয়া কি শুধুই সরি বলতে গেল উজানের কাছে..নাকি এর পেছনে আছে অন্যকোনো উদ্দেশ্য–আর কেনই বা হিয়া উজানের প্রশ্ন এড়িয়ে গেল…!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here