উত্তরণ পর্ব_৪৮

0
833

#উত্তরণ
পর্ব_৪৮

আজ বাসবীর অন্তরাত্মা দুই ভাগে বিভক্ত. একদিকে প্রথম সত্তা যে ছুটে পালাতে চায় যাতে অতীতের সম্মুখীন না হতে হয়, অপরদিকে দ্বিতীয় সত্তা নির্লজ্জের মতো অতীতের সাথে নির্দ্বিধায় মিশে যেতে চায়. দ্বিতীয় সত্তা প্রশ্ন করে বাসবী কে, ওর ওই সিদ্ধান্ত কাকে ভালো রেখেছে? সমরেশ আর গায়েত্রী দেবীর কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, উজান ভালো আছে? আচ্ছা বাসবী নিজে কি ভালো আছে? গত পঁচিশ বছরে উজানের সামনে সমরেশের নাম নেয়নি ঠিকই কিন্তু ও নিজে দিনে কতবার নিয়েছে নিজের মনে তার হিসেবে রেখেছে কি? প্রতি মুহূর্তে সমরেশের অভাব ওকে দগ্ধ করেছে. অভিমানও তো হয়েছে প্রচুর সমরেশের উপর, কেন সমরেশ প্রতিশ্রুতি ভেঙে বাসবীর সামনে এসে উপস্থিত হয়নি? কেন জোর করেনি ওর সাথে ফিরে আসার জন্য?

পায়ে পায়ে বাসবী পৌঁছোয় সমরেশের ঘরে. ঘরে ঢুকেই চমকে ওঠে. বেডের পেছনে প্রায় পুরো দেওয়াল জুড়ে সমরেশ আর বাসবীর প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে তোলা একটা ফটোগ্রাফ বড় করে বাঁধানো. এই ছবিটা বাসবীর খুব পছন্দের ছিলো. আর সামনের দেওয়াল জুড়ে ছোট্ট রাজার স্কুলে প্রথম কাপ জেতার একটা ফটোগ্রাফ. বাসবী অবাক হয়ে ভাবে মানুষটা আজও ওর ভেঙে যাওয়া সংসারটা আঁকড়েই বেঁচে আছে. বাসবী একবার হাত বোলায় ছোট্ট রাজার ছবিতে, অজান্তেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরে. লক্ষ্য করেনা কখন সমরেশ এসে দাঁড়িয়েছে ওর পেছনে.

লখনৌ পৌঁছে শহীদপথ ধরে উজান আর ওর টিম এগিয়ে চলে. একসময় এসে পৌঁছোয় হাজরাতগঞ্জে. এই অঞ্চলে লোক সমাগম এতো বেশি যে চলতে গেলে মানুষের সাথে ধাক্কা লেগেই যায়. বড় বড় মল, শপিং কমপ্লেক্স, নামজাদা ব্র্যান্ডের শোরুম۔۔۔۔۔কি নেই এখানে? পথে ক্যাফে কফি ডে দেখে আরোহী ওর এক টিম মেম্বারকে সেটা দেখিয়ে বলে এখানে 2014 এর বাদশাহী আংটির শুটিং হয়েছিল. বিভিন্ন কথোপকথনের মাঝেই ওরা পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেটা হোটেল কৈলাশ এর ঠিক বিপরীতে. এখান থেকে হোটেলের একটা বিশেষ রুম স্পষ্ট দেখা যায়, যেটা আসলে ওদের লক্ষকেন্দ্র. বাকি টিমগুলোও এসে যোগ দেয় কিছুক্ষনের মধ্যেই. প্ল্যান অনুযায়ী গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ে NIA টিম۔۔

উজান তখন ইকবাল আর কিছু অফিসারদের সাথে বিশেষ কিছু আলোচনায় ব্যস্ত. হঠাৎ আরোহী আর একজন অফিসার ভেতরে আসে. ওদের মুখ দেখে কারোরই বুঝতে অসুবিধা হয়না যে কিছু একটা গুরুতর ঘটেছে۔۔

অফিসার: স্যার আমাদের ধারণা ভুল. ওদের বেস অন্য জায়গায়۔۔

ইকবাল: মানে? ওরা হোটেল কৈলাসে নেই?

অফিসার : নো স্যার۔۔

উজান: ইনফরমেশন ভুল? পরে প্ল্যান চেঞ্জ করেছে? কিন্তু ওদের জন্য তো রুম বুক আছে হোটেলে۔۔

অফিসার: হ্যাঁ স্যার, এই হোটেলেই রুম বুক আছে কিন্তু ওরা অন্যত্র উঠেছে۔۔۔۔আর সেটাও কৈলাস স্যার۔۔

ইকবাল বিস্মিত: আরো একটা কৈলাস?

আরোহী: হ্যাঁ স্যার۔۔۔তবে এটা কোনো হোটেল নয়, একটা পরিত্যক্ত বাড়ি তাও এখান থেকে বেশ কিছুটা দূরে গোমতীনগর এর দিকে, একেবারে গোমতী নদীর পাশেই.

ইকবাল: বাড়ি? সিওর?

অফিসার: 100% অথেন্টিক খবর স্যার. আমি নিজে গিয়ে ভেরিফাই করে এসেছি. আমার তিনজন টিম মেম্বার্স ওখানে পোস্ট করে এসেছি. যদি আমাদের পৌঁছতে দেরি হয় তাহলে ফোনে ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী ওরা স্টেপ নেবে.

ইকবাল: গুড. কিন্তু এই ভাবে দুম করে প্ল্যান চেঞ্জ করে দিলো? ওরা মনে হয় বাকি প্ল্যান নষ্ট হয়ে যাবার খবর পেয়ে গেছে۔۔

উজান একটু চিন্তিত গলায় বলে: উঁহু۔۔۔۔এরা কেউ একে অপরকে চেনেনা. এরা শুধু একজনকেই চেনে۔۔۔۔۔যে মেন কোঅর্ডিনেটর তাকে. কোনো প্ল্যান চেঞ্জ হয়নি. এটা প্ল্যানের মধ্যেই আছে. আমাদের যা করার আজকের মধ্যেই করতে হবে, নাহলে সমূহ বিপদ۔۔

আরোহী: এক্সাক্টলি স্যার. তাছাড়া প্ল্যান চেঞ্জ হলে ওরা কৈলাস নামের বাড়িই বা কেন বেছে নেবে? অন্য কিছু ভাবতো۔۔۔

উজান: একদম তাই. হাজরাতগঞ্জ এতো ক্রাউডি যে এখানে ওদের পক্ষে লোকচক্ষু এড়িয়ে কাজ করা মুশকিল. অন্য জায়গার সাথে এই জায়গার পার্থক্য হলো এই জায়গা সবসময় লোকে লোকারণ্য, কখনো একটুও ফাঁকা হয়না. রাত্রি এগারোটার পর থেকে একটু একটু করে ফাঁকা হতে শুরু করে আবার ভোর চারটে থেকে লোক চলাচল শুরু হয়. রাত্রে বেলায় কাজ করতে গেলে হোটেলে কারোর না কারোর চোখে পরবেই. তাই ওরা অন্য জায়গা বেস হিসেবে চুজ করেছে۔۔۔

আরোহী: আর একটা ব্যাপারও লক্ষ্য করেছি স্যার. অন্য জায়গায় লোকেরা কে কি করছে অত লক্ষ্য করেনা, কিন্তু এখানে ব্যস্ততার মধ্যেও লোক অন্যকে লক্ষ্য করে. আমরা আজ অনেকবার এটার সম্মুখীন হয়েছি. এটা কিন্তু বেশ ভালো, মানুষজন উদাসীন নয়. এখানে কারো চোখ এড়িয়ে কাজ করা খুব ডিফিকাল্ট۔۔

ইকবাল (উজানকে উদ্দেশ্য করে): তাহলে কিভাবে এগোবো স্যার?

উজান হেসে: এটাতো আরো ভালো হলো অফিসার. ওরা ওদের সুবিধা দেখতে গিয়ে আমাদের সুবিধা করে দিলো۔۔ তবে খটকা একটাই۔۔۔۔۔۔۔দুই জায়গায় বুকিং কেন? তবে কি۔۔۔۔?

উজান টিম মেম্বারদের সাথে আলোচনায় বসে পরবর্তী কর্মক্রম সাজিয়ে নিতে.

দেখা যাক কিভাবে সফল হয় উজানের মিশন—!!

(পাঠকগণ অবশ্যই জানাবেন–ACP ইকবাল কে আপনাদের কেমন লাগছে!!!কপিবাজরা তাড়াতাড়ি চলে আসুন তো কপি করতে নয়তো দেরি হয়ে যাবে???)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here