উত্তরণ পর্ব_৪৯

0
800

#উত্তরণ
পর্ব_৪৯

সমরেশের গলার আওয়াজে বাসবী চমকে ঘুরে দাঁড়ায়. সমরেশকে দেখে চমকে ওঠে, কি চেহারা হয়েছে সমরেশের. যদিও ও জেনে গেছে ওকে প্ল্যান করেই কলকাতায় আনা হয়েছে কিন্তু সবটা জেনে কোই রাগ হয়নি তো ওর? অথচ সেটাই স্বাভাবিক ছিল. কিন্তু তার পরিবর্তে হিয়ার প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে যায় বাসবীর, মনে মনে হিয়াকে প্রান ভোরে আশীর্বাদ করে. আজ হিয়া না থাকলে বাসবী ওর এই ভিত্তিহীন অহং এর আগল ভেঙে কোনোদিন বেড়োতে পারতোনা. আজ পঁচিশ বছর পর আবার ও আর সমরেশ মুখোমুখি. বাসবীই নীরবতা ভাঙে۔۔

বাসবী: কি অবস্থা করেছো নিজের?

সমরেশ হাসে: আমাকে বলছো? নিজেকে শেষ কবে আয়নায় দেখেছো?

বাসবী: নিজের খেয়াল নিজে রাখতে এখনো শেখোনি?

সমরেশ: ওই অভ্যেসটা তো তুমিই বদলে দিয়েছিলে. তুমি তো জানতে আমি ছন্নছাড়া প্রকৃতির. এই অগোছালো জীবনটা তো তুমিই গুছিয়ে রেখেছিলে বাসবী. তুমি চলে গেলে আবার সব কিছু অগোছালো হয়ে গেলো۔۔

বাসবী: অন্য কেউ কি পারতো না তোমাকে আবার গুছিয়ে ফেলতে?

সমরেশ: সেটাতো কোনোদিন ভাবিনি۔۔

বাসবী: কেন? পঁচিশ বছর সেপারেট থাকলে আইনত কোনো বাধা থাকার তো কথা না۔۔

সমরেশ আবার হাসে: সেপারেশন? দুটো শরীর আলাদা থাকলেই কি আলাদা হওয়া যায় বাসবী? তুমি পেরেছো? রাজার দোহাই দেবে তো? কিন্তু সত্যি কি সেটাই একমাত্র কারন? কারোর আসার জন্য একটা শূন্যস্থান দরকার, সেটা তো আমার জীবনে কোনোদিনও ছিলোনা. তুমি আর রাজা আমার সবটা জুড়ে ছিলে, নতুন কাউকে রাখতাম কোথায়? জানোইতো আমি মনের দিক থেকে বড্ডো কৃপণ, মন আমি কাউকে দিতে পারিনা. একবার তোমাকেই যা দিয়েছিলাম۔۔

গলার মধ্যে দলা পাকানো কান্নাটা এবার বেড়িয়ে আসে বাসবীর, অভিমানের বরফ গলতে থাকে ধীরে ধীরে۔۔۔

ইকবাল একটা দল নিয়ে পৌঁছে যায় হোটেল কৈলাসের সেই বিশেষ রুমে. সেখানে চিরুনি তল্লাশির শেষে যেটা উদ্ধার হয় সেটাকে দেখে চমকে ওঠে ইকবালের টিমের বোম্ব স্কোয়ার্ডের মেম্বারটি. এই নাইট্রোগ্লিসারিন কম্পোজিশনের বম্বটা ফাটলে পুরো লখনৌ শহরটাই হয়তো ভারতের ম্যাপ থেকে মুছে যেত۔۔

এদিকে উজান একটা দল নিয়ে যায় গোমতীনগরের কাছে কৈলাস নামক বাড়ির উদ্দেশ্যে. ওখানে পৌঁছতেই ওখানে পাহারায় থাকা তিন জন চলে আসে. গোমতীর তীরে এই দোতলা বাড়িটা পরিত্যক্ত, ভগ্ন প্রাচীরের ভগ্ন ফলকে ইংলিশে “কৈলাশ” নামটা এখনো প্রায় অক্ষত. বর্তমানে ভিতরে তিন জন টেরোরিস্ট আছে. খুব সাবধানে পুরো বাড়িটা ঘিরে ফেলে ওরা. জানলা দরজাগুলোর অবস্থা তথৈবচ. কিছু কিছু তো ভেঙেই পড়েছে. সেই সমস্ত ভাঙা জানলা গুলো দিয়ে উজানরা ভিতরে ঢোকে. দরজা দিয়ে ঢোকার কথা ভাবেনি কারণ টেরোরিস্ট রা এতটা বোকা না যে ভাঙা বাড়ির দরজায় কোন সুরক্ষা কবচ রাখবেনা. উজান নিশ্চিত গ্রেনেড অথবা ল্যান্ড মাইন অবশ্যই রাখা আছে অনাহুত অতিথিদের আপ্যায়ন হেতু۔۔

প্রথম যে ঘরটাই উজানরা পৌঁছোয় সেটা ফাঁকা তবে বেশ কিছু খাবারের টুকরো ছড়িয়ে আছে. পরের দুটো ঘর ও ফাঁকা. এরপর যে ঘরে ঢোকে সেখানে দুটো কাঠের পেটি. দুজন অফিসার সাবধানে ঢাকনা সরিয়ে পেটি থেকে যেটা বের করে আনে সেটা দেখে উজান বোঝে ওর চিন্তা ভাবনা একদম সঠিক পথে এগোচ্ছে. অত্যন্ত শক্তিশালী M67 গ্রেনেডের পেটির জিম্মায় সেই দুজন অফিসারকে রেখে বাকিদের নিয়ে উজানরা একটু একটু করে এগিয়ে চলে۔۔

উজানরা এবার একটা ছোট্ট ঘরে আসে, টুকরো টুকরো চিহ্ন দেখে মনে হয় কোনো একসময় এটা রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার হতো. এখানে একজনকে পাওয়া যায়, উল্টো দিকে মুখ কিরে কিছু একটা করছে. খুব সন্তর্পনে ভেতরে ঢুকলেও লোকটিকে ফাঁকি দিতে পারেনা. লোকটি মুহূর্তে পেছনে ফিরেই রাইফেল তোলে কিন্তু ততক্ষনে উজানের আস্সালট রাইফেল তাকে ধরাশায়ী করে. উজানদের রাইফেলে সাইলেন্সার লাগানো থাকায় আওয়াজ হয়না কিন্তু লোকটি মাটিতে পরার আগে এক রাউন্ড গুলি চালিয়ে দেয়. কারোর গায়ে লাগেনা ঠিকই কিন্তু ততক্ষনে যা হবার হয়ে গেছে কারণ পরক্ষনেই এক ঝাঁক গুলি ছুটে আসে ওদের লক্ষ্য করে. গুলি বিনিময় শুরু হয় দুদলের মধ্যে. যুদ্ধের গতি প্রকৃতি দেখে উজান বোঝে ওদের গুলি আর গ্রেনেডের স্টক বেশ ভালোই۔۔

প্রায় আধঘন্টা ধরে গুলির আদান প্রদান ঘটে. NIA এর কেউ জখম হয়নি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট থাকায়. ওদের গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় এবার হ্যান্ড গ্রেনেডের ব্যবহার শুরু করে. NIA কে এবার বেশ বেগ পেতে হয়. এরই মধ্যে একজন টেরোরিস্ট গ্রেনেড ছুড়তে গিয়ে এক অফিসারের গুলির নিশানা হয়ে যায়. বাকি রইলো আরো একজন. অভিজ্ঞতা থেকে উজান জানে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ওরা নিজেরাই এক একটা মারণাস্ত্র হয়ে উঠবে, আর হলোও তাই. উজান ততক্ষনে ওর টিমের লোকজনদের বাড়িটা থেকে বার করে দিয়েছে. সবসুদ্ধ উজান সহ চারজন থেকে যায় বাড়ির ভেতর۔۔ লোকটা এবার হিংস্র হয়ে ওঠে. গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে ঘরের কোনায় এসে দাঁড়ায় যেখানে উপরের ঘরের মতো আরো দুটো পেটি রাখা. উজান সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশ সময়ে বুঝে যায় লোকটির পরবর্তী পদক্ষেপ. সে চিৎকার করে ওঠে “রান”۔۔۔ উজানের চিৎকার শুনে NIA টিম উল্টো দিকে ছুটতে শুরু করে. অন্যদিকে লোকটা অট্টহাস্য করে উঠে গ্রেনেডের পিন খুলে দেয়.

উজানের টিমের সবাই বেরিয়ে আসে কিন্তু উজানের দেখা নেই. বেরিয়ে আসার সময় উজানের চোখে পরে একটা ঘরে টেবিলের উপর বেশ কিছু পেপারস. উজান আর দ্বিতীয়বার ভাবেনা, টেবিলের উপর যা ছিল সব জড়ো করে জামার ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়. হঠাৎই বাড়িটা কেঁপে ওঠে সাথে সাথে উজান ঝাঁপ দেয় গোমতীর জলে. উজানের ঝাঁপ দেওয়ার পরমুহূর্তেই ওর দুজন টিম মেম্বারও ঝাঁপ দেয় উজানকে সাহায্য করার জন্য. জলে পরার সাথে সাথেই উজান জ্ঞান হারায়. জ্ঞান হারানোর আগের মুহুর্তে উজানের চোখে একে একে ভেসে ওঠে বাসবী, সমরেশ, ঠাম্মি আর হিয়া. উদ্ধার করার পর দেখা যায় উজান বেশ গুরুতর আহত. আরোহী দ্রুত ফোন করে ইকবালকে۔۔

বাসবীর সাথে কথা বলতে বলতেই সমরেশের ফোন রিং হয়. বাসবীর থেকে একটু সরে এসে ফোন রিসিভ করে সমরেশ আর তারপরই সমরেশ ওর ভারসাম্য হারায়, ফোনটা হাত থেকে পড়ে যায়. সমরেশ পড়ে যাবার আগেই বাসবী ধরে ফেলে সমরেশকে. সমরেশ কাঁপা কাঁপা হাতে বাসবীর হাত ধরে বলে: তোমাকে অনেক কথা বলার আছে বাসবী۔۔۔۔۔۔۔۔রাজা۔۔۔۔۔۔আমাদের যেতে হবে۔۔۔۔

তবে কি মৃত্যুই হতে চলেছে উজানের জীবনের শেষ পরিণতি–!!

(কপিবাজ মহান ব্যাক্তিগন আজকাল দেখছি আপনারা কপি করার মতো মহৎ কাজটাও ঠিকভাবে করতে পারেন না–যদি হেল্প লাগে কপি করতে অবশ্যই বলবেন–আমি মুক্ত হস্তে আপনাদের কপি করতে সাহায্য করবো??)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here