আরোহী পর্ব ১৩

0
193

#আরোহী
#sharmin_akter_borsha

১৩.

কথায় আছে, ভেবে চিন্তে কোরো কাজ, করিয়া ভাবিও না। এমনটাই হয়েছে আরোহীর দোসা বর্তমানে। আরোহী বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে তা শুনে রাগে গজগজ করে নিশা বাড়ির ভেতরে চলে যায়।

আরোহী রিয়াজের সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। রিয়াজ মৃদু হেসে আরোহীকে জড়িয়ে ধরলো। দুইগালে হাত রেখে আলতো চাপ দিয়ে বলল, ‘ খুব শীগ্রই বিয়ের ব্যবস্থা করছি আরু ‘

রিয়াজের মুখে ‘আরু’ নামটা শুনতেই আরোহীর বুকের বা পাশটায় ছ্যাত করে উঠে। মনে পরে যায় আরাফের মিষ্টি ডাক আরোহী যখনই রাগ অভিমান করতো তখনই আরাফ আরু বলে ডেকে রাগ ভাঙাতো। তার মুখে মিষ্টি মধুর ডাক শুনে আরোহীর সকল রাগ বরফ হয়ে গলে যেতো আজ কতদিন পর আরু বলে কেউ ডাকলো।

চোখের কোণে অশ্রু কণা জমাট বাঁধলো। রিয়াজ আরোহীকে ভেতরে যেতে বলে নিজে চলে গেলো। আরোহী কথা না বাড়িয়ে বাধ্য মেয়ের মতো হল রুমে চলে আসলো। মনের মধ্যে খাঁ খাঁ করছে খুব করে আরাফের কথা মনে পরছে। হল রুমের দক্ষিণ দিকে চলে গেলো আরোহী। দেয়ালের তিনটা ছবির সামনে দাড়িয়ে রয়েছে। আরাফের হাসি মুখটা দেখে নিঃশব্দে কেঁদে উঠলো আরোহী। আরাফের ছবির ফ্রেমে হাত রেখে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। আরোহীর মনে হলো কেউ ওর কাঁধের উপর হাত রেখেছে। মাথা তুলে পাশে তাকালো কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না। মনের ভুল ভেবে নেয়। দুই হাত দিয়ে গালে ল্যাপ্টে থাকা অশ্রু কণা মুছে নেয়। তারপর হেঁটে সিঁড়ির কাছে যায়। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে যাবে তখন উপর থেকে নামছে আরোহীর ফুপা। সে আরোহীকে দেখে গভীর কন্ঠে বললেন, ‘ শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে করতে যাচ্ছো? ‘

আরোহী প্রত্যত্তরে উপর নিচ মাথা নাড়লো মুখ দিয়ে বলল, ‘ জি ঠিক শুনেছেন। ‘

বলে আরোহী তার সামনে থেকে সিঁড়ি দিয়ে উঠে চলে গেলো। আরোহীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো মোস্তফা কামাল আরোহীর ফুপা।
————————
রুমের মধ্যে এসে বিছানার উপর খানিক বসে রয়। অস্থির লাগছে বলে গোসল করার কথা ভাবে। আলমারির কাভার্ড থেকে একটা গোলজামা বের করে। ওড়না বের করতে যাবে তখন ওড়নার সাথে একটা টপ বের হয়ে ফ্লোরে পরে যায়। আরোহী বিরক্তির সাথে ফ্লোরে হাঁটু ভাজ করে বসে জামা টা উঠায়। এক হাতের মধ্যে জামা টা নিয়ে উঠতে যাবে তখন ও লক্ষ্য করল এটা সেই জামা যেটা সেদিন বৃষ্টির রাতে আরাফ পরে ছিলো। সেদিনের কথা মনে পরতেই জামাটাকে নিজের বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল।
মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল, ‘ আরাফ! কেনো চলে গেলে তুমি? খুব মিস করি তোমায়। ‘ (কান্না ভেজা কন্ঠে)

কিছুক্ষণ সেভাবেই বসে রয়। কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসা থেকে শুয়ে পরে আর সে অবস্থা তেই ঘুমিয়ে পরে।

ঘন্টাখানিক পর চোখ মেলে তাকায়। দেখে সে ফ্লোরে শুয়ে আছে। আশেপাশে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো জামা ও টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে রুমে চলে আসে।

বারান্দায় গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টি ওই দূর আকাশে স্থির। পেছন থেকে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে ঘুরে তাকালো। এ্যানি এসেছে, আরোহীর জন্য কফি নিয়ে।

আরোহীর কফির কাপ হাতে দিয়ে আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার ক্ষণে ক্ষণে মনে হচ্ছে কেউ তাকে দেখছে। কেউ আছে তার আশেপাশে কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছে আরোহী কিন্তু তাকে দেখতে পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে তার ঠিক বা পাশে কেউ একজন অবস্থান করছে। গভীর দৃষ্টিতে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু আরোহী চোখ বুলিয়ে কোথাও কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমে চলে যায়।
.
.
.
সাত দিনের মধ্যে বিয়ের সব কিছু তর্জাব করে ফেলে রিয়াজ। শহরের নামি-দামি সকলকে বিয়েতে ইনবঅইট করেছে। সকলে এসে আরোহীকে একনজর দেখে চলে গেছে। বিয়েতে উপহার আরোহী অনেক পেয়েছে সেদিকে তার কোনো আগ্রহ নেই। সকলের মধ্যে থেকে আরোহীকে নিয়ে ওর রুমে ফুলসজ্জার খাটের উপর বসিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে সকলে বাহিরে চলে যায়।

দরজা বাহির থেকে লক করে সকলে দরজা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। রিয়াজ আসতেই সকলে বলে উঠে, টাকা না দিলে দরজা খুলবে না।

টাকা দেওয়া নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হচ্ছে।

এদিকে রুমের মধ্যে আরোহীর শ্বাস আঁটকে যাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে হচ্ছে আরাফ তার পাশে বসে আছে। আরাফের উপস্থিতি টের পাচ্ছে আরোহী। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে। শুকনো ঢোক গিলে বলে উঠল, ‘ আরাফ ‘

আসতে আসতে হার্টবিট তীব্র গতিতে বিট হতে লাগল। মনে হলো কেউ আরোহীর হাতের উপর হাত রাখলো। আরোহী সামনে দৃষ্টি স্থির রেখে কাঁপতে লাগল। কানের কাছে কারো ফিসফিসে আওয়াজ শুনতে পেলো সে বলল, ‘ বিয়ে করে ঠিক করো নি। ‘

আরোহী দুইহাত দিয়ে দুইকান ঢেকে জোরে চিৎকার করল। আরোহীর চিৎকার শুনে বাহিরের সকলে হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খোলার পরপর বাহির আলো রুমে প্রবেশ করল। আরোহী খাট থেকে নেমে দরজার দিকে দৌঁড় দিলো। রিয়াজ সবার আগে দাঁড়িয়ে আছে আরোহী ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। রিয়াজ আরোহীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘ আরু কি হয়েছে চিৎকার করলে কেনো? ‘

কয়েক বার বলার পর ও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ো আরোহী কে বুকের থেকে সরিয়ে নিজের সামনে দাঁড় করাতে যাবে তখন রিয়াজ বুঝতে পারল। আরোহী তার শরীর ছেড়ে দিয়েছে। মানে হচ্ছে আরোহীর শরীরের সম্পূর্ণ ভাড় এখন রিয়াজের উপরে আরোহী রিয়াজ বুঝতে পারলো আরোহী জ্ঞান হারিয়েছে। বাড়িতে তখন আরোহীর ডাক্তার আঙ্কেল উপস্থিত ছিল। সে চলেই যাচ্ছিল আরোহীর চিৎকার শুনে সেও রুমে আসে। রিয়াজ আরোহীকে পাঁজা কোলে তুলে বিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। ডাক্তার আরোহীকে চেক করে রিয়াজের উদ্দেশ্য বলে, ‘ আরোহী মামনি কোনো কারণে খুব বেশি ভয় পেয়েছে তাই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ভয়ের কিছু নেই রাতে জ্ঞান না ফিরলেও সকালের মধ্যে ফিরে আসবে। ‘

রিয়াজ ডাক্তারকে ধন্যবাদ জানায় বাড়ির বাহির অব্ধি এগিয়ে দিয়ে আসে। পুরো রাত রিয়াজ আরোহীর মাথার কাছে বসে রয়। রাতে আর আরোহীর জ্ঞান ফিরে না।

মাঝ রাতে ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে বার কয়েক, ‘ আরাফ আরাফ ‘ বলেছে।

বিড়বিড় করে বলেছে বৈকি রিয়াজ শুনতে পায়নি।

সকালে ঘুম ভাঙতেই ‘ আরাফফফ ‘ বলে এক চিৎকার দিয়ে বিছানার উপর বসে।

রুমে তখন আরোহী একাই ছিলো। ওয়াশরুম থেকে আরোহীর আওয়াজ শুনে তারাহুরো করে বের হয়ে আসল রিয়াজ। বিছানার উপর বসে কাঁপছে দেখে দৌঁড়ে এসে আরোহীকে জড়িয়ে ধরে। আরোহী দুই হাতে রিয়াজকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। সে যে রাতে স্পষ্ট শুনেছে আরাফের কন্ঠস্বর।

চলবে?

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here