আরোহী শেষ পর্ব

0
496

#আরোহী
#sharmin_akter_borsha (লেখিকা)
#শেষ_পর্ব

[১৮].

“ আমি তোমাকে ভালোবাসি! আমি বলেছি তো আমি তোমাকে বিয়ে করবো। বিয়ের আগে একটা বার আমি তোমাকে আমার কাছে পেতে চাই ” নির্মূল কন্ঠে বলল রিয়াজ।

” সেটা তো বিয়ের পরেও হতে পারে রিয়াজ। ” বলল সাব্রিনা।

” কিন্তু এখন সমস্যা টা কি? ” ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলল।

” বিয়ের আগে অবৈধ সম্পর্কে আমি জড়াতে চাই না রিয়াজ। ” জড়ানো কন্ঠে বলল সাব্রিনা।

টেবিলের উপর থেকে ল্যাপটপ নিয়ে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলল রিয়াজ। এতটাই জোরে শব্দ হয়েছে যে সাব্রিনা ভয়ে দুই কান, দু-হাত দিয়ে চেপে ধরেছে। রিয়াজ হুংকার দিয়ে বলল, ‘ যদি তুমি সত্যি আমাকে ভালোবাসো তাহলে রাতে আমার পাঠানো ঠিকানা অনুযায়ী চলে এসো। ‘

বলে সে হনহনিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো। সাব্রিনা ও রিয়াজের সম্পর্কের আজ এক মাস পূর্ণ হলো আর আজই রিয়াজ তার সাথে বেডশেয়ার করতে বলছে। ফ্লোরে ধোপ করে বসে পরে সাব্রিনা। কান্নায় তার চিবুক ভেসে যাচ্ছে।
নিজেকে সামলে সেও অফিস থেকে বের হয়।

সারাদিন বাড়িতে পায়চারি করেছে সাব্রিনা আজকের সন্ধ্যা সব পাল্টে দিবে সব। সন্ধ্যা হলেই তাকে যেতে হবে। সর্বনাশের খেলায় মত্ত হতে।
.
.
.
সন্ধ্যার আজান দিবে কিছুক্ষণ পর, মাগরিবের আজানের অপেক্ষায় বসে রয়েছে সাব্রিনা। হাতে এক মগ কফি নিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। সূর্য পশ্চিমের আকাশে ঢলে পরেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে অস্ত যাবে।

দূর দিগন্ত থেকে নামাজের জন্য আহ্বান ধ্বনি সাব্রিনার কানে এসে পৌঁছালো। আজান শুনে ওড়নার আঁচল টেনে মাথায় কাপড় দিলো। মগ হাতে রুমে প্রবেশ করল। খালি কফির মগ টেবিলের উপর রেখে অজু করার জন্য চলে গেলো বাথরুমে।

ওজু করে এসে নামাজে দাঁড়িয়ে পরলো। তিন রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে মোনাজাত ধরলো সাব্রিনা। মোনাজাত ধরার সঙ্গে সঙ্গে দুই চোখে পানির ঢল নামলো। কান্নার জন্য হিচকি উঠে যায়। সে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। আজ সাব্রিনা যা করতে যাচ্ছে তার জন্য কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছে। কিন্তু আল্লাহ কি ক্ষমা করবেন?

বাড়ি থেকে বের হয় সাব্রিনা পরনে কালো রঙের লেডিস গেঞ্জি ও কালো রঙের প্যান্ট। রাস্তায় বের হয়ে একটা সিএনজি তে উঠে বসলো। ঠিকানা বলতে সিএনজি ওয়ালা ভাড়া বেশি দাবি করল। সাব্রিনা ভাড়া বেশি দেওয়ার জন্য ও রাজি হলো।
.
.
.
সাব্রিনা সিএনজি থেকে নেমে আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগে। এটা সেই জায়গা যেখানে আরোহী আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল। মানে হচ্ছে, আরোহীর প্রিয় ফার্ম হাউজের ঠিকানায় রিয়াজ সাব্রিনাকে আসতে বলেছে। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে চলে সাব্রিনা। কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দিলো রিয়াজ। সে মদ্দ পান করে মাতাল হয়ে আছে। সাব্রিনা কে দেখে হেলে পরে তার উপরে সাব্রিনা দুই হাত দিয়ে তাকে ধরে ভেতরে নিয়ে যায়। সাব্রিনা আসবে বলে মালি’কে আজকের জন্য ছুটি দেয় রিয়াজ। বাড়ির ভেতরে ঢুকে রিয়াজ সাব্রিনা কে একটা রুমে নিয়ে যায়। বিছানা পুরো ফুল দিয়ে সাজানো। সোফার সামনে টি টেবিলে মদের বোতল ও গ্লাস রাখা আছে। সাব্রিনা সোফায় রিয়াজ কে বসিয়ে দেয়। রিয়াজ মাতলামো করে বারবার সাব্রিনার গায়ে হাত দিচ্ছে। সাব্রিনা ছলে রিয়াজের হাত নিজের থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। রিয়াজকে বলল, ‘ আমি তোমার জন্য ড্রিংকস বানিয়ে দিচ্ছি। ‘

বলে আরও সাত আট গ্লাস ড্রিংকস বানিয়ে রিয়াজের দিকে বাড়িয়ে দিলো। রিয়াজ সাব্রিনার চোখের দিকে তাকিয়ে এক এক করে সবগুলো গ্লাস ছো করে ফেললো। নেশাগ্রস্ত হয়ে সাব্রিনার উপর হেলে পরলো রিয়াজ। সাব্রিনার খোলা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বলল, ‘ তোমার এই চোখ আমাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে সাব্রিনা। তোমার এই চোখের দিকে তাকালে, তোমাকে কাছে পাওয়ার তীব্র বাসনা আমার মধ্যের পৈশাচিক নরপশুকে জাগিয়ে তুলে। আমার যে তোমাকে চাই সাব্রিনা আমার তোমমাককে চাচচ,চাই ”

বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে সাব্রিনার ওপরে উপচে পরে রিয়াজ।
সে যে জ্ঞান হারিয়েছে বুঝতে পেরে হাফ ছেড়ে বাঁচে সাব্রিনা।

চোখ তুলে দরজার দিকে তাকালো। দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক সুঠাম দেহের পুরুষ। সাব্রিনা তাকে দেখে উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘ হুম হয়ে গেছে। ‘

লোকটা প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে দিয়ে হেঁটে সাব্রিনা ও রিয়াজের সামনে এসে কিছুটা ঝুঁকে দাঁড়ালো। রিয়াজের গাল চেপে ডানে বামে নাড়িয়ে ধীরস্থ কন্ঠে বলল,’ কাজ হয়েছে। চলো বাকি কাজ টা সেরে ফেলি। ‘

সাব্রিনার চোখের কার্নিশ বেয়ে একফোঁটা নোনা জল কার্নিশ বেয়ে গালে পরলো। নিজেকে শক্ত করে সে উঠে দাঁড়ালো। দুজনে মিলে রিয়াজ কে উঠালো। জ্ঞান হারিয়েছে বৈকি তার নিজের মধ্যে কোনো বল নেই। লোকটা একটা চেয়ার টেনে সেথায় রিয়াজকে বসালো। সাব্রিনা একটা মোটা রশি এনে দিলো। লোকটা রশিটা দিয়ে রিয়াজকে কাঠের চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেঁধে দিলো। তারপর দু’জনে আগের ন্যায় সোফায় গিয়ে বসে পরে।

রাত প্রায় তিনটা বাজে, পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো রিয়াজ। নেশার ঘোর কাটেনি এখনও কিন্তু সে বুঝতে পারছে তাকে বেঁধে রাখা হইছে প্রথমত তেমন গুরুত্ব দেয়নি। যেই আস্তে আস্তে হুঁশশ ফিরছে সে অনুভব করছে তাকে সত্যি রশি দ্বারা বাঁধা হইছে। চোখ জোড়া মেলে সামনে তাকালো রিয়াজ। রুমে তখন সবগুলো লাইট জ্বলছিলো বৈকি সে সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পায়। সাব্রিনা একটা ছেলের সাথে সোফায় বসে আছে। আর সে নিজে চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে। দেখে রাগে চোয়াল শক্ত করে রিয়াজ হুংকার দিয়ে বলে, ‘ তোর এত বড় সাহস? আমারই বাড়িতে এসে আমার সামনে, আমারই সোফায় বসে আছিস, তাও অন্য একটা ছেলের সাথে সেটাও আমাকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখে? ‘

‘ নেশাগ্রস্ত হওয়ায় শরীরে তেমন শক্তি নেই কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে চোপর চোপর। ’ বলল পাশে বসা লোক।

রিয়াজ তার কথায় আরও রেগে গেলো। সাব্রিনা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, ‘ ভুল বলছো মিস্টার রিয়াজ তারপর জেনো কি? যাইহোক তোমার নামের মধ্যে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তুমি ভুল বুলছো সে ভুলটা আমি ধরিয়ে দিচ্ছি। ‘

কপাল ভাজ করে সাব্রিনার দিকে তাকালো রিয়াজ। সাব্রিনা উঠে দাঁড়ালো তৎপর বলতে শুরু করল, ‘ এই বাড়িটার আসল মালকিন হচ্ছে আরোহী মানে হচ্ছে হুমাইরা বিনতে আরোহী। যাকে তুমি তারই বাড়িতে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলে। কিন্তু আফসোস সে বেঁচে গেছে। আর সে যখন বেঁচে আছে তার সম্পত্তির মালিক তুমি নও। জালিয়াতি করে তার সম্পত্তি ভোগ করছো। ‘

চোখ জোড়া বড়সড় করে সাব্রিনার দিকে তাকিয়ে রিয়াজ ধাতস্থ হয়ে বলল, ‘ কে তুই আর এত কিছু কিভাবে জানলি? ‘

সাব্রিনা সশব্দে হাসতে লাগল তার হাসির শব্দ রুমের দেয়ালের সাথে বারি লেগে আবারও রিয়াজের কানের পর্দায় লাগল। রিয়াজ হা পা নাড়াচাড়া করতে লাগল রাগে অষ্টরম্ভা হয়ে বলল, ‘ কে তুই বলতে বলছি, না হলে? ‘

ভ্রু কুঁচকে সাব্রিনা বলল, ‘ না হলে কি? আমাকেও মেরে ফেলবি আরোহীর মতো? ‘

রিয়াজ হুংকার ছেড়ে বলল, ‘ দরকার হলে তাই করবো। এখন তোকে মেরে পরে ওই আরোহীকে খুঁজে দ্বিতীয় বার মারবো। ‘

সাব্রিনা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে লাগলে।

মেয়েলী কন্ঠে কেউ একজন বলল,’ মানুষ মারা কি এতই সহজ? ‘

রিয়াজের হার্টবিট ধুকপুক করতে লাগলো। সে সরু চোখে দরজার দিকে তাকালো। দেখতে পেলো গোলগাল চেহারা মিষ্টি একটা মেয়ে দরজার সামনে সাদা রঙের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে মোনা। মোনাকে দেখে রিয়াজের রাগ মাত্রারিতিক্ত বেড়ে যায়। মোনা রুমে প্রবেশ করে রিয়াজের উদ্দেশ্য বলল, ‘ অনেক জ্বালিয়েছিস আমাকে প্রতিদিন আল্লাহ’র কাছে নামাজে বসে কেঁদেছি। মোনাজাতে তোর মৃত্যু কামনা করেছি। আজ আমার দোয়া কবুল হয়েছে। ‘

রিয়াজ মোনার কথা শুনে রাগে পা দিয়ে ফ্লোরে শব্দ করে। গোলগাল চেহারার মিষ্টি তরুণী রিয়াজের দিকে এগিয়ে গেলো। রিয়াজের থেকে দুইহাত দূরে দাঁড়িয়ে সে মিষ্টি কন্ঠে বলল, ‘ মেয়েদের’কে কি তুমি খেলার পুতুল পেয়েছো যে যখন ইচ্ছে তাদের সাথে যা মন চাইবে তাই করবে? তোমার খেলা শেষ রিয়াজ। কি ভেবে ছিলে সব কিছু তোমার প্লান অনুযায়ী হচ্ছে? নাহহহ, কোনো কিছুই তোমার প্লান অনুযায়ী হয়নি সব কিছু হয়েছে আমাদের প্লান অনুযায়ী। তুমি হয়েছো বলির পাঠা আজকে তোমাকে বলি দেওয়া হবে। তুমি আজ থেকে ছয় মাস আগে হুমাইরা বিনতে আরোহী’র সাথে যা করেছিলে ইতিহাস সেই রচনা দ্বিতীয় বার ঘটাবে। আর এই ইতিহাস ঘটানোর পেছনে থাকবো আমরা চারজন। ‘

রিয়াজ শুকনো ঢোক গিলে তাদের সকলের পরিচয় জানতে চায়। সাব্রিনা সকলকে চুপ থাকতে বলে। চারজনের মধ্যে তিন জন ব্যতিত শুধু একজন রিয়াজের সব প্রশ্নের উত্তর দেয়। রিয়াজ তার চোখে নিজের মৃত্যু দেখতে পায়। নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চায় কিন্তু কেউই তার প্রতি দয়া দেখায় না। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা সুঠাম দেহের পুরুষ আর কেহ নয় ডাক্তার নিভ। সে পকেট থেকে ফোন বের করল। কাউকে কল দিয়ে বলল, ‘ তোমরা তোমাদের কাজ শুরু করে দাও। আমরা বাহিরে আসছি। ‘

কেরাসিনের ড্রাম নিজের হাতে তুলে নিলো সে। রিয়াজের চারপাশে ও রিয়াজের উপরে ছুড়ে ফেলল। রিয়াজ ‘আরোহী’ বলে চিৎকার করতে লাগল। বারবার বলতে লাগে, ‘ আমার ভুল হয়েগেছে আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও। ‘

কিন্তু উপস্থিত কারোর কান অব্ধি রিয়াজের আর্তনাত পৌঁছালো না। সকলে ফার্ম হাউজ থেকে বেরিয়ে বাহিরে চলে আসলো। নিভ গ্যাসম্যাচ আরোহীর হাতে তুলে দিলো। ম্যাচ টিপ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ছুঁড়ে ফেললো হাউজের দিকে। নিমিষেই দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে লাগলো। কেরাসিন আগে থেকেই দেওয়া ছিল বলে আগুন জ্বলে উঠে। কিয়ৎক্ষণ পর আগুন পৌঁছে যায় রিয়াজের রুমে যেখানে সে বাঁধা আছে। রিয়াজের পায়ে আগুন লাগতেই সে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে। সে চিৎকার কান অব্ধি আসতেই মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে বসে পরে আরোহী। ঘাস গুলো হাতের মুঠোয় পুরে ‘ আব্বু, আম্মু, আরাফ ‘ বলে চিৎকার দেয়। পরক্ষণে বলে, ‘ দেখো তোমরা তোমাদের খুনিকে আমি নিজের হাতে শাস্তি দিয়েছি। ‘

আরোহীর হার্ট বিট করতে শুরু করে। সে অনুভব করে আরাফকে। মোহিত কন্ঠে ‘ আরাফ ‘ বলে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। আরোহী বুঝতে পারে কেউ একজন তার গালে স্পর্শ করেছে। কিন্তু চোখ মেলে কাউকে দেখতো পায়না। শুকনো ঢোক গিলে ক্ষীণকণ্ঠে বিড়বিড় করে বলল, ‘ আরাফ আমি ভালোবাসি তোমাকে! একটা বারের জন্য কি আমার সামনে আসবে? ‘

পাশ থেকে দুজন মেয়ে আরোহীর দুই বাহু চেপে ধরল। চার জনে মিলে বাড়ি থেকে কিছটা দূরে সরে যায়। যাতে আগুনে পুড়ে যাওয়া কোনো কিছু ছিটকে তাদের উপরে এসে না পরে। ফার্মহাউজ সম্পূর্ণ জ্বলে পুড়ে ছাই না পর্যন্ত এখান থেকে ওরা কেউই কোথাও যাবে না। নিভ কানে ফোন লাগিয়ে অন্য দিকে যারা বাড়িতে কেরাসিন তেল ঢেলেছে তাদের টাকা দিতে গেছে। এক ঘন্টার মধ্যে পুরো হাউজ আবারও আরেকবার পুড়ে জ্বলসে যায়। আরোহী সেখানেই ঠাই দাঁড়িয়ে রয়। হঠাৎ করে আকাশে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ হতে লাগলো। বৃষ্টি আসবে বলে আরোহীকে গাড়িতে উঠে বসতে বলল বাকি তিনজন। কিন্তু আরোহী এক পা ও নড়লো না। হঠাৎ করেই মাথার উপর বৃষ্টি নেমে পরলো। মুসুল দ্বারায় বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি তে আগুনে পুড়ে যাওয়া ছাই ও ইট গুলো ঠান্ডা হয়ে যায়। আরোহী বৃষ্টিতে ভিজে সেথায় যায়। মাটির দিকে কিছুটা ঝুঁকে হাতে ভেজা ছাই তুলে নেয়। সে ছাই কপালের সাথে গষে অট্টহাসি তে মেতে উঠে। নিভ এগিয়ে এসে আরোহীকে টেনে সাথে নিয়ে যায়। বাকি দু’জন মেয়ে ও তার সাথে রয়েছে। তিনজন গাড়িতে উঠে বসলে নিভ গাড়ি স্টার্ট দেয়।
____________
সকাল সকাল টিভি অন করতেই সব খবর চ্যানেলে একটাই নিউজ। বিজনেস ম্যান রিয়াজ চৌধুরী’র মৃত্যুর খবর। সকলে এটা দূর্ঘটনায় মৃত্যু বললেও শুধু নিশা ও মোস্তফা কামাল সকলকে বলছেন এটা সাধারণ মৃত্যু নয় এটা মার্ডার। তখন সাব্রিনা সকল জার্নালিস্টের ক্যামেরার সামনে এসে সকলকে স্তব্ধ করে দিয়ে বলল, ‘ আমার মনে হয়, এটা সুইসাইড। রিয়াজ স্যার বড়ই ভালো মানুষ ছিলেন। এবং তিনি উনার স্ত্রী কে খুব ভালোবাসতেন। আমার সাথে প্রতিদিনই ম্যাডামের কথা বলতেন। তিনি ম্যাডাম কে ছাড়া ভালো ছিলেন না। রোজ রোজ তিলে তিলে একটু একটু করে মরছিলেন বিরহের জ্বালায়।
আমাকে সে বলতো তিনি ম্যাডাম আরোহীর কাছে যেতে চান কিন্তু স্যার সুইসাইড করে ম্যাডামের কাছে যাবেন আমি ভাবতে পারিনি। বড্ড ভালোবাসতেন স্যার ম্যাডামকে এই যুগে এমন ভালোবাসা দেখতে পাওয়া যায় না। ‘

বলে ওড়না টেনে মুখের উপর দিয়ে কাঁদতে শুরু করল। এমন ভাবে এর আগেও আরোহী মারা গেছে বলে এবারও সবাই মৃত্যু টাকে স্বাভাবিক মনে করায় বিষয় টা ধামাচাপায় পরে যায়। আরোহীর সম্পত্তি সব জালিয়াতি করে নকল সইয়ের সাহায্যে রিয়াজ সব কিছু নিজের নামে করে নিয়েছিল। রিয়াজ মারা যাওয়ায় ব্যাংকের লোক সব সম্পত্তি অনাথ আশ্রমে দান করে দেয়। যার ফলে নিশা ও মোস্তফা রাস্তায় নেমে পরে। দুই কাল গিয়ে এক কালে এসে পরেছে। তাদের কোথাও জব ও কেউ দিতে রাজি হয়নি। বাধ্য হয়ে দু’জনে ভিক্ষা করতে নেমেছে মানুষের বাড়ির ধোয়ারে।

ডাক্তার আব্রাহিম মানুষ লাগিয়ে এসিপি তামিম খন্দকারের পেছনে লোক লাগিয়ে রেখেছিলেন। পর্যাপ্ত প্রমান হাতে নিয়ে আব্রাহিম ডি আইজির কাছে যান। ডিআইজি এসিপিকে সাসপেন্ড করে ও সাথে সাথে জেলে ভরে দেয়। এমন এক মুখোস খেকো হা’রামী কে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আব্রাহিম কে ধন্যবাদ জানায়।
.
.
.
পৃথিবীর বুকে আরোহী জীবিত হয়েও মৃত।

মাইন্ড ফ্রেশ করার জন্য আব্রাহিমের বাগান বাড়িতে এসেছে সবাই। ডাক্তার আব্রাহিম বললেন, ‘ ফাবিহা কোথায়? ‘

সাব্রিনা বলল, ‘ ম্যামকে তো আমি রুমে দেখেছি। ‘

মোনা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল, ‘ ভাগ্য ভালো ছিলো বলে ওইদিন হাসপাতালে আপনাদের সাথে আমার দেখা হয়ে গিয়েছিল। ‘

পেছন থেকে ফাবিহা অর্থাৎ আরোহী বলল, আল্লাহ সহায় ছিলেন আমাদের তাই সেদিন দেখা হয়ে গিয়েছিল আমাদের। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরবার সময় তোমাকে রিসেশনে দেখে আমার একটু চেনা চেনা লাগে। তারপর খেয়াল করলে মনে পরে তোমার একটা ছবি আমি রিয়াজের ফোনে দেখেছিলাম। কল আসলে তোমার ছবি ফুটে উঠে স্কিনে। তারপর সময় করে তোমার পিছু নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি রিয়াজ তোমাকে ব্লাকমেইল করছে। তোমার সাথে কথা বললাম। সব কিছু নিভ ও আব্রাম আঙ্কেলকে জানালাম। তখন উনারা বলল, আমার শুধু চেহারা পাল্টেছে কিন্তু কন্ঠস্বর আগের টাই রয়েছে। আমি রিয়াজের সামনে গেলে সে রূপ দেখে মোহিত নিশ্চয়ই হবে কিন্তু কন্ঠস্বর শুনে আন্দাজ করে নিবে। কেননা সে প্রচুর চঁতুর। তাই রিয়াজের সামনে কাউকে পাঠানোর জন্য আমাদের প্রয়োজন ছিল একজন সুন্দরী মেয়ে যাকে দেখে রিয়াজ তাকে পেতে চাইবে। তেমন কাউকেই খুঁজে পাচ্ছিলাম। সেই সময় রুমানার বোন সাব্রিনা আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। সে নিজেও চায় তার বোনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিশোধ নিতে। রুমানা তার জীবনের সব চেয়ে বড় দূর্ঘনা সবার থেকে আড়াল করে। কিন্তু বিয়ের রাতে বাসর ঘরে তার স্বামী একজন ডাক্তার হওয়ায় সে বুঝতে পারে রুমানা ভার্জিন নয়। সে জন্য তাকে বাড়ি ভর্তি লোকজনের সাথে অপমান অপদস্ত করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। সে অপমান সহ্য করতে না পেরে গাড়ির নিচে চাপা পরে জীবন ত্যাগ করে রুমানা। সাব্রিনা বিশ্বাস করেনি তার বোন চরিত্র হীন মোনা রুমানার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই সাব্রিনা মোনার সাথেই আগে কথা বলে। সাব্রিনা ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করেছে বোনের মৃত্যুর খবর শুনে গাজীপুর আসে। মোনা রুমানার মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি। সেদিন রাতে দর্শনের কথা সাব্রিনা কে জানায় মোনা। নিজের অতি আদরের ছোট বোন দোষ না থাকায় মারা গেছে ভেবেই চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে সাব্রিনার।

মোনা খেয়াল করে সাব্রিনা বেশ সুন্দরী ওদের যেমন টা চাই। সাব্রিনা কে বলল আরোহীর সাথে দেখা করার জন্য,,, তারপর একদিন সময় করে, আরোহী, নিভ, মোনা ও সাব্রিনা দেখা করলো। সেদিন থেকেই চারজনে প্লান করতে থাকে কিভাবে রিয়াজের সামনে গেলে রিয়াজ সন্দেহ করবে না। এমন ভাবেই পার হয়ে যায় তিন মাস। তারপরই দেখতে পায়। খবরের কাগজের নিউজ, সেদিন সকালে ঠিক ওই টাইমে রিয়াজের গাড়ি বাসস্ট্যান্ড ক্রোস করবে জেনেই সাব্রিনা কে আরোহী সেখানে দাঁড়াতে বলে। ইচ্ছে করেই ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে যাতে রিয়াজের নজর কাড়ে। ওদের প্লান অনুযায়ী সব ঠিক মতোই চলতে লাগে। কিন্তু রিয়াজ যখন রাত কাটানোর কথা বলল, তখনই আরোহী ওর প্লান চেঞ্জ করলো। চারজনে সব কিছু বিকেলের আগেই তর্জাব করে নেয়। রিয়াজকে মা’রার প্লান আরোহী তৈরি করে। জ্বালিয়ে মারবে যেভাবে ওকে মারতে চেয়েছিলো। আরোহী নিজের হাতে ফার্ম হাউজে আগুন লাগাবে বলেছিল। আর সে সেটাই করলো।

সর্বশেষে আরোহী, তার আব্রাম আঙ্কেল, নিভ, মোনা ও সাব্রিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানালো। তাদের সাহায্যের জন্যই সে তার প্রতিশোধ নিতে পেরেছে। এবং আরোহী নিজের সত্যি কারের ভালোবাসা কেও খুঁজে পেয়েছে। হ্যঁ এটা সত্য যে সে বেঁচে নেই কিন্তু তার অনুভূতি তো আছে।

আরোহী সবার সামনে থেকে উঠে যেতে নিলে, নিভ প্রশ্ন ছুড়ে, ‘ কোথায় যাচ্ছো? ‘

আরোহী মলিন কন্ঠে বলল, ‘ হারানো ভালোবাসা খুঁজতে। ‘

বলে সে ফুলের বাগানের দিকে যেতে লাগল। এখানে হাতে গোনা ত্রিশ টা গোলাপের চাড়া গাছ রয়েছে। এবং সবগুলো কাছে ফুল ফুটে আছে। প্রতিটা গাছের ফুল ভিন্ন রঙের। চারপাশ গোলাপ ফুলের সুঘ্রাণ মো মো করছে। চোখ জোড়া বন্ধ করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো আরোহী।

দুই হাত সোজা করে ভারী নিঃশ্বাস ফেলে স্নিগ্ধ কন্ঠে বলল, ‘ আরাফ আমি জানি তুমি আমার আশেপাশেই আছো। আমি অনুভব করতে পারছি তোমাকে। ভালোবাসি তোমাকে খুব করে ইচ্ছে করছে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে আমার যে বুকের বা পাশটায় বড্ড যন্ত্রণা করছে। তুমি কি আমাকে তোমার বুকে একটু ঠাঁই দিবে? ‘

পরক্ষণে আরোহী অনুভব করলো এক শীতল করা ঠান্ডা বাতাস আরোহীর গা ঠান্ডা করে তুললো। আরোহী বুঝলো এ তার আরাফ দুই হাতে আরোহীকে শক্ত করে ধরলো আরাফ। আরোহী ও চোখ বন্ধ করে আরাফকে অনুভব করে জড়িয়ে ধরলো। আরাফ স্নেহময় কন্ঠে বলল, ‘ ভালো থেকো প্রিয় নিজের যত্ন নিও সব সময়। আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে যেতে হবে আমাকে। ‘

আরোহী চটজলদি চোখ মেলে তাকালো। কিন্তু এখন আর সে আরাফকে অনুভব করতে পারছে না। আরাফ সে তো চলে গেছে না ফিরার দেশে। আরোহী বিপদে ছিলো সে তার কথা রাখতে এসে উদ্ধার করে দিয়ে গেছে। আরোহী মলিন হেসে বলল, ‘ অপেক্ষা কোরো প্রিয় আমার সময় ফুরালেই আমি ছুটে আসবো তোমার কাছে। ‘

_______________?সমাপ্ত?__________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here