আরোহী পর্ব ১২

0
188

#আরোহী
#sharmin_Akter_borsha

১২.

পুড়ন্ত বিকেলে একা একা বসে রয়েছে আরোহী। সেদিনের পর থেকে তার জীবন জেনো অনেকটা বদলে গেছে। তার ফুপি ফুপা কেউ-ই এখন তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে না। আরোহীর সারাদিন রুমে বসে বসে-ই কেটে যায়। তারা কেউ আরোহীর সাথে কথা বলে না উল্টো আরোহীকে আশেপাশে দেখলে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখে। আরোহী ও তাদের সাথে সেধে কথা বলতে যায় না৷ সেই আগন্তুক পুরুষের কাছে আরোহীর কৃতজ্ঞতা অশেষ।

তার জন্যই সে স্বস্তিতে এই বাড়িতে শ্বাস নিতে পারছে। সে না থাকলে হয়তো এই পর্যন্ত আরোহী বাঁচতোই না এর আগেই হয়তো অত্যাচারীদের হাতে অত্যাচারিত হতে হতে ম’রে যেতো।

হল রুমে বসে আছে আরোহী। তখনই সেখানে আসলো এ্যানি। আরোহীর দিকে একটা কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘ আপা আপনার চা ‘

আরোহী একনজর এ্যানির দিকে তাকিয়ে কাপটা হাতে নিলো। এ্যানি তখনও সেখানে ঠাই দাঁড়িয়ে রয়। তা দেখে আরোহী জিজ্ঞেস করল, ‘ কি হলো কি বলবে? ‘

এ্যানি উপর নিচ মাথা নাড়লো। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে বলল, ‘ আপা একটা কথা বলতে চাই। ‘

‘ হুম বলো। ‘

চা’য়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বলল।

‘ আপা আমি অনেক খুশি। আপনাকে এখন আর কেউ অত্যাচার করে না দেখে। ‘

এ্যানির কথার পিঠে আরোহী বলল, ‘ এটাই বলতে চাচ্ছিলি? ‘

‘ না ‘

‘ তাহলে কি বলতে চাচ্ছো সেটা বলো। ‘

‘ আমার মনে হয়, ওই, ওইদিন যেটা লোক আসলো আপনাকে রক্ষা করলো সে আপনার জীবনে আরাফ ভাইয়ের স্থান নিতে আসছে। দেখেন নাই সেদিন আরাফ ভাইয়ের মতোই সে আপনাকে রক্ষা করছে। ‘

বলে মৃদু হাসলো এ্যানি। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো আরোহী। এ্যানি চোখজোড়া দেখে শুকনো ঢোক গিলে ফের বলল, ‘ আমি কোনো কিছু ভুল বলছি কি? ‘

আরোহী উপর নিচ মাথা দুলিয়ে বলল,, ‘ হুম, অবশ্যই বলেছো। আজকের পর থেকে আরাফের সঙ্গে অন্য কারো তুলনা ভুলেও করবে না। আরাফ হচ্ছে আরাফ। তার সাথে কারো তুলনা চলে না। সে নিজের পরোয়া না করে সর্বদা আমাকে রক্ষা করেছে। সবার থেকে আগলে রেখেছে। আমি আমার আরাফের সাথে কারো তুলনা শুনতে চাই না। ‘

এ্যানি ট্রে হাতে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। হুট করে কলিংবেল বেজে উঠল কে আসছে দেখার জন্য দরজার দিকে পা বাড়ালো এ্যানি। দরজা খুলেই সেই আগন্তুক কে দেখতে পেয়ে ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে এক চিলতে হাসি। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে লোকটা দেখা করতে যায় আরোহীর সাথে। হুট করে লোকটাকে দেখে চমকে যায় আরোহী। লোকটা খানিক হেসে বলে, ‘ কি হলো দেখে খুশি হওনি বুঝি? ‘

আরোহী জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করল পরক্ষণে বলল, ‘ তেমন কিছু নয় হঠাৎ এসেছেন তো তাই। ‘

” ফোন নাম্বার নেই তো। থাকলে বলে কয়ে আসতাম। তাছাড়া আমার আসায় কি তোমার সমস্যা হচ্ছে? তাহলে বরং চলে যাই। ”

আরোহী ফট করে বলে উঠল, ‘ তেমন কিছু নয়। আপনি প্লিজ বসুন। আমি আপনার জন্য কিছু স্ন্যাকস নিয়ে আসছি। ‘

লোকটা বলল, ‘ তার কোনো প্রয়োজন নেই আপনি বসুন। ‘

এ্যানি মাঝখান থেকে বলে উঠল, ‘ আপা আপনি বসেন, আমি নিয়ে আসছি। ‘

আরোহী স্তব্ধ বসে আছে দুজনের মধ্যে নিরবতা বিরাজ করছে কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছে না। এ্যানি সামান্য কিছু স্ন্যাকস নিয়ে এসে দুজনের সামনে রেখে আবারও কিচেনে চলে যায়। বাড়ির মধ্যে অস্বস্তি হচ্ছে বলে দু’জনে বাড়ির বাহিরে বাগানের দিকটায় চলে যায়।

লোকটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আরোহীর ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে আরোহী ও বলে যাচ্ছে। হুট করে আরোহীর একটা কথা মনে পরল, সে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ‘ আমি আপনার নামটাই জানি না। কি নাম আপনার? ‘

মৃদু হেসে লোকটা বলল, ‘ আমার নাম হচ্ছে রিয়াজ ‘

‘ আহ, ওওও, সুন্দর নাম। ‘ বলল আরোহী।

কিছুক্ষণ রিয়াজ আরোহীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠল, ‘ একটা কথা বলবো? ‘

আরোহী সম্মতি জানিয়ে বলল, ‘ জি বলুন। ‘

রিয়াজ আরোহীর দুইহাতের নিজের দুইহাতের মধ্যে নিয়ে বলতে শুরু করল, ‘ আমার গাজীপুর আসার মূল কারণ হচ্ছো তুমি আরোহী। তুমি হয়তো জানো না, তোমার বাবা আমার বাবাকে কথা দিয়েছিলেন। তোমার আর আমার বিয়ে দিবেন। কক্সবাজার থেকে ফিরে আসার পরই বিয়ের কথা বলতেন তোমাকে কিন্তু তা আর নয়নি। আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি আরোহী। তুমি রাজি হলে আমি এই সপ্তাহে তোমাকে বিয়ে করতে চাই। ‘

আরোহী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিয়াজের দিকে। চোখে মুখে হাজারও প্রশ্ন স্পষ্ট। সে মুখ ফুটে রিয়াজের উদ্দেশ্য কোনো প্রশ্ন ছুড়তে পারছে না। আরোহী রিয়াজের হাতের মুঠোর মধ্য থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। পরক্ষণে হুট করে বলে উঠল, ‘ এই বিষয়ে বাবা আমাকে কিছুই বলেনি। আর হুট করে বিয়ের ডিসিশন নেওয়া যায় না৷ আমার বাবার হয়তো এটাই শেষ ইচ্ছা ছিল। আমাকে প্লিজ ভাববার জন্য কিছু দিন সময় দেন। ‘

রিয়াজের মাথা দুলালো। কোনো কিছু না বলেই আরোহীর সামনে থেকে চলে গেলো। হঠাৎ কেউ একজন পেছন থেকে আরোহীর চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে নেয়। আরোহী অস্ফুটস্বরে চেচিয়ে বলে উঠে, ‘ মা গো ‘

নিশা আড়ালে লুকিয়ে ওদের কথোপকথন সবটা শুনেছে। রিয়াজ যেতেই সে বের হয়ে আসে আর আরোহীর চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরে রাগে গজগজ করে বলতে লাগে, ‘ এমনিতেই মাছের কাটার মতো গলায় বিঁধে আছে। আর তুই তাকে বিয়ে করে আমাদের গলায় ঝুলাবি ভাবছিস। তার আগে আমি তোকে মে’রেই ফেলবো। ‘

বলে নিশা আরোহীর গালে চড় মা’রার জন্য হাত উপরে তুললো। পেছন থেকে কেউ একজন নিশার হাত শক্ত করে ধরে নেয়। পেছনে ঘুরে নিশা দেখতে পেলো রিয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে রাগ তার স্পষ্ট এই বুঝি জ্বালামুখীর মতো ফুটে যাবে। নিশা অগোচরে শুকনো ঢোক গিললো। রিয়াজের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিশা মলিন কন্ঠে বলল, ‘ আমি কিছু করিনি। আমাকে প্লিজ ছেড়ে দাও। ‘

আরোহী রিয়াজের মুখের দিকে তাকালো। কোনো কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই কিয়ৎক্ষণ পর বলে উঠল, ‘ আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি। ‘

{রিচেইক করা হয়নি ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।}

চলবে?

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here