আরোহী পর্ব ১৪

0
214

#আরোহী
#sharmin_akter_borsha

১৪.

বিষন্নতায় ডুবে যাচ্ছে আরোহী। রিয়াজ আরোহীর কাছ থেকে হাজারও বার জানতে চেয়েছে তার কি হয়েছে কিন্তু আরোহী নিজেকে সব কিছু থেকে গুটিয়ে নিয়েছে। রিয়াজকেও নিজের ভয়ের কারণ বলেনি এড়িয়ে গেছে। আরোহীর হঠাৎ পরিবর্তন থেকে রিয়াজ নিজেও স্তব্ধ হয়ে যায়। বিয়ের এক সপ্তাহ পূরণ হয়েছে কিন্তু তাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো সম্পর্ক গোড়ে উঠেনি। আরোহী নিজের ভয়ে নিজের থেকে রিয়াজকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। আর যখন রিয়াজ আরোহীর ভয় কাটিয়ে সে নিজে কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছে তখন রিয়াজ সেন্সলেস হয়ে গেছে। এমন করেই কাটছে রিয়াজের দিন। বিয়ে করেছে অথচ বউয়ের কাছে যেতে পারছে না। বিষয় টা প্রচুর ইগো তে আঘাত করছে তার। রাগ সামলাতে না পেরে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। ফোনের লক খুলে কল লিস্টে গিয়ে কল দিলো মোনা কে তার গার্ল ফ্রেন্ড। নাম্বার সেভ করা ‘১৭নাম্বার মোনা’

অপর পাশে কল রিসিভ করতেই এপাশ থেকে রিয়াজ বলল, ‘ মাথা প্রচুর গরম আছে কোনো কথা শুনতে চাই না। হোটেলের এড্রেস সেন্ট করছি এক ঘন্টার মধ্যে চলে আসো। ‘

কোনো প্রত্যত্তর না শুনেই কল কেটে দেয় রিয়াজ। মোনা নিজেকে সংযত রেখে মিথ্যে বলে তৈরি হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। তার সুন্দর জীবনে কাল হয়ে আসে রিয়াজ। বেস্ট ফ্রেন্ড বাড়িতে একা থাকতে ভয় পাচ্ছিলো তাই বাবা মার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সে চলে যায় তার প্রিয় বান্ধবী রুমানার বাসায়। দুইদিনের জন্য গ্রামের বাড়ি গিয়েছে রুমানার বাবা ও মা। সামনের মাসে ফাইনাল পরিক্ষা বলে রুমানা কে নিয়ে যায়নি। রুমানা বরাবরই ভীতু স্বভাবের একা থাকতে বড্ড ভয় পায়। তার এই ভয়ের জন্য মোনা রুমানার বাড়িতে এসেছে আজ বিকেল তিনটায়।

সন্ধ্যার পরপর বাড়ির সব লাইট বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পাশের বাসায় ও আশেপাশে সকলের বাসায় কারেন্ট আছে শুধু তাদের বাসায়ই নেই। রুমানা ভয় পেয়ে যায় সে ভাবে হয়তো ভূত করছে এসব। কিন্তু মোনা বলে তেমন কিছুই না ওয়েট কর আমি দেখছি। বলে একপা বাড়ালে হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠে। রুমানা ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে মোনাকে জড়িয়ে ধরে। মোনা রুমানার হাত শক্ত করে ধরে মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে পা বাড়ায় দরজার দিকে। দরজা খুললে দেখতে পায় একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে কাঁধে তার একটা ব্যাগ। তার থেকে পরিচয় জানতে চাইলে সে বলে, ‘ আমাদের এ বাড়ি থেকে কল দিয়েছে কালকে। আমরা ব্যস্ততার জন্য আসতে পারিনি। বাড়ির মেইনবোর্ডে নাকি সমস্যা সেটা দেখতেই আসছি।’

” সত্যিই তো সমস্যা আর নয়তো সকলের বাড়িতে কারেন্ট আছে শুধু আমাদের বাড়িতেই নেই কেনো? ” বলল রুমানা।

লোকটা সরু কন্ঠে বলল, ‘ আমি ঠিক করে দিচ্ছি। ‘

বলে রুমানা ও মোনা তাকে নিয়ে চলে গেলো।

তাদের যাওয়ার পেছন পেছন একজন বাড়িতে প্রবেশ করল। তার পিছু পিছু আরও দশ বারো জন লোক রয়েছে।

লোকটা মেইনবোর্ডে কি না কি করলো কারেন্ট চলে আসলো। সব দিকে আলো দিয়ে ছিটাছিটি। লোকটাকে পাঁচশ টাকা দিতে সে চলে গেলো। ভেতর থেকে দরজা ভালো করে আঁটকিয়ে দু’জনে রুমের দিকে রওনা দিলো। রুমে আসতেই দু’জনে পাহাড় সমান অবাক হলো, রুম ভর্তি লোকজন দাঁড়িয়ে আছে শুধু একজন বিছানার উপর বসে আছে আর সে হচ্ছে রিয়াজ।

বিস্মিত কন্ঠে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে রিয়াজ বলে, ‘ পরিচয় দিয়ে তুমি কি করবে মোনা ডার্লিং? ‘

মোনা তেজিকন্ঠে বলল, ‘ মুখ সামলে কথা বলুন ‘

রিয়াজ বাঁকা হেসে বলল, ‘ কি করে সামলাই বলো সামনে যদি এত সুন্দর নারী দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে মুখ তো দূরে থাক অন্য কোনো কিছুই সামলানো যায় না। ‘

মোনা রেগে বলে উঠল, ‘ বের হন আমাদের বাড়ি থেকে আর নয়তো আমরা পুলিশ ডাকবো? ‘

রিয়াজ চোখ দিয়ে ইশারা করতেই চারজন লোক এসে রুমানাকে খোপ করে ধরে ফেললো। মোনা কিছু বোঝার আগেই রুমানা চিৎকার দিলো। সেদিকে তাকিয়ে দেখলো দুইজন লোক দুইপাশ থেকে রুমানার জামার হাতার ওখান থেকে কাপড় টেনে ছিড়ে ফেলছে। মোনা ঘাবড়ে যায় রিয়াজের দিকে অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকায়। মোনা দেখতে সুন্দরী অপরূপ সুন্দরী না হলেও একজন পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো সুন্দরের অধিকারীনী।
রুমানা দেখতে শ্যামলা কিন্তু ফেস কাটিং সুন্দর।

রিয়াজ বাঁকা হেসে বলল, ‘ আমার এখানে আসার কারণ তুমি। তোমাকে দেখেছি মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে তখন দেখেই পছন্দ হয়েছিল। তারপর থেকে আমার কয়েকজন লোক তোমাকে ফলো করতো। সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম, আর আজ সে সুযোগ পেয়ে গেলাম। তোমাকে কাছে পাওয়ার ভাসনা আমাকে উন্মাদ করে তুলেছে। এখন কথা হচ্ছে আমি তোমাকে চাই আজকের রাতের জন্য তুমি যদি টাকা ডিমান্ড করো আমি তাও দিতে রাজি আর যদি রাজি না হও তাহলে আমার এতগুলো লোক মিলে তোমার প্রাণ প্রিয় বান্ধবী কে ধর্ষণ করে মেরে ফেলবে। তাই তোমার জন্য ভালো হবে বাধ্য মেয়ের মতো রাজি হয়ে যাও নয়তো বুঝতেই পারছো। ‘

বলেই পৈশাচিক হাসি দিলো রিয়াজ। রুমানার কথা চিন্তা করে রাজি হয় মোনা। রিয়াজ ইশারা করতেই সকলে রুমানা কে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। রুমানা যাওয়ার সময় চিৎকার করে কান্না করছিলো। রুমানা তারা অন্য রুমে নিয়ে ধর্ষন করে। এদিকে নিজের সব কিছু বিসর্জ্জন দিতে চলেছে মোনা।

রুমের মধ্যে আগে থেকে ফোনের ক্যামেরা ভিডিও রেকর্ড অন করে লুকিয়ে রেখেছিলো রিয়াজ। রাতের সব কিছু মোবাইলে রেকর্ড হয়ে গেলো।

সকালের আগেই সকলে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যায়। মোনা ব্যাথায় দাঁড়াতে পারছে না তবুও কষ্ট সহ্য করে এ রুম থেকে অন্য রুমে গেলো। রুমে যেতেই মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পরলো। দুই চোখ দিয়ে পানির ঢল নেমেছে। রুমানা উলঙ্গ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছ তার কোনো হুঁশশ নেই। জামা কাপড় ফ্লোরে এদিক সেদিক পরে আছে কান্না করতে করতে দৌঁড়ে গিয়ে বিছানায় উঠে বসে। বিছানায় উঠে বসে চাদর দিয়ে রুমানা কে ঢেকে ফেলে বিছানায় উপুড় হয়ে কাঁদতে থাকে। সকালে জ্ঞান ফিরে রুমানার দু’জনে রাতের কথা মনে পরলেই গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগে। রাতের কথা ভুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আর কাউকে বলবে না এটাও ভাবে।

মোনা ভেবেছিল তার সাথে রিয়াজের আর কোনো দিন সাক্ষাৎ হবে না। কিন্তু তিন দিনের মাথায় রিয়াজ মোনাকে কল দেয়। আর একটা হোটেলে যেতে বলে কিন্তু মোনা সাফ বলে দেয় সে যাবে না।

রিয়াজ একটা ভিডিও মোনার মোবাইলে পাঠিয়ে বলে তাকে দেখতে। ভিডিও টা দেখে মোনার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। সঙ্গে সঙ্গে আবারও ফোনে কল আসে কল রিসিভ করলে অপরপাশ থেকে রিয়াজ বলে, ‘ যদি ন আসিস তোর এই ভিডিও আমি ভাইরাল করে দিবো। ‘

নিজের ও পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে মোনা হোটেলে চলে যায়। তার পর থেকেই কয়েকদিন পরপর ধর্ষণ হতে থাকে রিয়াজ নামক নরপশুর কাছে। দেড়মাসের মাথায় মোনা জানতে পারলো রুমানা মা হতে চলেছে। দুই জনেই প্রচুর ঘাবড়ে যায়। মাঝেমধ্যে ভমি হয় দেখে রুমানা লুকিয়ে টেস্ট করেছে। পজিটিভ দেখে সে মরা কান্না জুড়ে দেয়। মোনাকে বলতেই মোনা ও কান্না জুড়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর ভাবনা চিন্তা করে রিয়াজ কে কল দেয়। রিয়াজ মোনার কথা শুনে বলে, ‘ তোমরা আগামীকাল কলেজ শেষে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ো আমি এসে পিক করবো। ‘

পরদিন রিয়াজ গাড়ি নিয়ে এসে দু’জনকে সাথে নিয়ে একটা হাসপাতালে চলে আসে। ডাক্তার কে বলে abortion করার কথা।

চার ঘন্টা পর তাদেরকে রাস্তায় নামিয়ে দেয় রিয়াজ। পেছন থেকে মোনার হাত ধরে বলে উঠল, ‘ তৈরি থেকো আজ রাতে ‘

ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছা করে মোনার এই যন্ত্রণা সহ্য করার মতো না। গলার নিচ থেকে গায়ে তার কামড়ের দাগ স্পষ্ট। সারাদিন হিজাব পরে থাকে যাতে কেউ দেখে না নেয়। প্রতিটাদিন ভয়ে ভয়ে আতঙ্কে ঘাটে তার।
______________
দীর্ঘ একমাস যাবৎ সে ভালোই আছে, আজ এক মাস ওর আবারও কল আসলো রিয়াজের। নিজেকে সামলে বাড়ি থেকে বের হলো। সেদিনের অপেক্ষায় রয়েছে মোনা যেদিন হবে রিয়াজ নামক জা’নোয়ারের পাপের শাস্তি।
.
.
.
.
আরোহীর ভয় দিন দিন বাড়তেই থাকলো তার মনে হতো আরাফ তার আশেপাশে রয়েছে। তার মনে হওয়া আজ বিশ্বাসে পরিনত হলো। বাথরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আয়নার সামনে আসতেই আয়নাতে প্রতিবিম্ব ফুটে উঠলো আরাফের। যা দেখে ভয় পেয়ে যায় আরোহী। হাত থেকে টাওয়াল মাটিতে পরে গেলো। চোখ জোড়া বড়বড় করে তাকালো। সাথপ ভারী ভারী নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো। আয়নার ভেতর থেকে বলল, ‘ কখনো কোনো পরিস্থিতিতে ভয় পাবে না। আমি আছি তোমার সাথে সর্বদা রক্ষা করবো তোমাকে আরু! ‘

চোখের পলকে আয়নার মধ্য থেকে আরাফের প্রতিবিম্ব গায়েব হয়ে গেলো। এক চিৎকার দিয়ে সেখানেই জ্ঞান হারালো আরোহী!

হঠাৎ ফোন বেজে উঠে, কল রিসিভ করতেই এ্যানি রিয়াজকে আরোহীর কথায় জানায়। সে হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। আরোহীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাকে ডাক্তার দেখে কিছু টেস্ট পরিক্ষা দেন। কিন্তু রিপোর্টে কোনো কিছুই আসেনি।

আরোহী কাঁদবে নাকি খুশি হবে সে দ্বিধাবোধ করছে। যে চলে গিয়েছে বলে কান্না করতো সে ফিরে এসেছে কিন্তু অদৃশ্য ছায়া হয়ে। আরোহী আরাফের ঘটনা সবার থেকে লুকায়িত রাখলো।

ভয় কাটিয়ে উঠলো সে রিয়াজ নিজেকে আরোহীর কাছে যাওয়ার থেকে আর আঁটকে রাখতে পারছে না। তাই আজ রাতে আরোহীর কাছে যাবে বলে ঠিক করে।

রাত হতে রিয়াজ বিছানায় বসতেই ঘুমিয়ে পরে। যার কারণ রিয়াজ কোনো ভাবেই বুঝতে পারে না। সে যখনই আরোহীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে বা তাকে স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়ায় তখন সে সেন্সলেস হয়ে যায়, নয়তো ঘুমিয়ে পরে, আর নয়তো কেউ না কেউ ডাকতে চলে আসে বা ফোন কল চলে আসে। বিরক্তির শেষ নেই রিয়াজের এই নিয়ে। হাজারও চেষ্টা করে সে আরোহীকে স্পর্শ করতে পারেনি,

বিয়ের এক মাস পূর্ণ হয়েছে এখন পর্যন্ত।

চলবে?

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here