আরোহী পর্ব ১১

0
182

#আরোহী [১১]
#sharmin_akter_borsha
_____________
হন্তদন্ত হয়ে রান্নাঘরে ছুটে আসল নিশা। আরোহীকে ঘিরে এ্যানিকে বসে থাকতে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে সে। এ্যানির কাছে এসে তার চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরে রাগে গজগজ করতে করতে বলল, ‘ তোর সাহস তো দেখি কম নয়। আমার বাড়িতে থেকে আমার অগোচরে ওরে তুই যত্নআত্তি করছিস। ’

বলে এ্যানির গালে কষে এক থাপ্পড় মারল। এ্যানি কিছুটা দূরে গিয়ে ছিটকে পরল। কিচেনের আশেপাশে তাকিয়ে একটা পানি ভোরা জগ হাতে তুলে নিলো। আরোহী ফ্লোরে শুয়ে কাঁপছে দেখেও ঠান্ডা পানির ভর্তি জগ আরোহীর উপরে ঢেলে দেয়। আঁতকে উঠে আরোহী। ক্ষীণচক্ষে নিশার দিকে তাকালো। নিশা তেজিকন্ঠে বলে উঠল, ‘ পরে পরে ঘুমানো বের করছি তোর দাঁড়া। ‘

হাতের উপর ভোর দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা চালানো আরোহী। ধারালো ছুড়ি হাতে নিয়ে তেড়ে আসল নিশা আরোহীর দিকে খোপ করে আরোহীর এক হাত ধরে নেয়। বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে আরোহী শরীর দূর্বল থাকায় পেরে উঠতে পারছে না। নিশা তার অন্য হাত থাকা ছুড়িটা আরোহীর হাতের উপর রেখে টান দিতে নিলো পাশ থেকে কেউ একজন নিশার হাত ছোবল ধাবার মতো ধরে ফেলল। নিশা মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকালে দেখে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। পরণে তার ঢিল ঢিলা শার্ট-প্যান্ট। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা কিন্তু দেখতে ভালো। হাফ সিলভের হাতা ওয়ালা শার্ট পরেছে। মাথার চুলগুলো বেশ ভালোই লম্বা তবে কুঁকড়ানো। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ভ্রযুগল কুঞ্চিত করে প্রশ্ন করল নিশা, ‘ কে তুমি? আমার হাত ধরার সাহস কোথায় পেলে? ‘

ছেলেটা নিশার হাত আরও শক্ত করে ধরে বলল, ‘ আমি কে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাড়ির মধ্যে রান্নাঘরে একটা কাজের মেয়ের গায়ে তুলে তাকে মারধোর করা হয় অবশেষে ছুড়ি দিয়ে তার শরীরে ক্ষত হানার চেষ্টা করা হয়। ভাবতে পারছেন প্রমাণ শরুফ আমি যদি পুলিশ স্টেশনে যাই এবং আপনাদের নামে কমপ্লেন করি৷ তাহলে কি হবে ভাবতে পারছেন? পুলিশ আপনাদের সবাইকে কোমড়ে ধরি বেঁধে থানায় নিয়ে যাবে। ‘

নিশা ধমকের স্বরে বলল, ‘ এই ছেলে আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকেই ভয় দেখাচ্ছো? ‘

ছেলেটা হেয়ালি করে বলল, ‘ আপনি ভয় পাচ্ছেন? ‘

নিশা দাঁত কটমট করছে রাগে ও জেদে। পাশ থেকে এ্যানি বলল, ‘ আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে উনি এ বাড়ির কাজের মেয়ে নয়। উনার পরিচয় উনি হচ্ছেন হুমাইরা বিনতে আরোহী এ বাড়ির লিগাল মালিক৷

ছেলেটা এ্যানির কথায় বেশ চমকালো। নিশার দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল, ‘ দাষী হয়ে রানীর গায়ে আঘাত করছেন ম্যাম? ‘

ঠোঁট জোড়া বাঁকা করে হেসে মোবাইলের স্কিনে একটা ভিডিও প্লে করল ছেলেটা। তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নিশা এ্যানির গায়ে হাত তুলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আরোহীর সাথে অসভ্যের মতো আচরন করেন ছুড়ি দিয়ে হাত কাটার সাহস দেখায়। ভিডিওটা আড়ালে লুকিয়ে করেছে সে। নিশা থতমত খেয়ে যায় আমতা আমতা করে বলে, ‘ মোবাইল টা আমাকে দিয়ে দাও। ফলে তুমি যা চাইবে আমি তোমাকে তাই দিবো। বলো কি চাই তোমার? ‘

তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে লোকটা বলতে শুরু করল, ‘ তেমন কিছুই নয়। আজকের পর থেকে এই ম্যাডামের উপর অত্যাচার করতে পারবেন না। আর যদি করেন তাহলে ভিডিও টা পুলিশের কাছে পৌঁছে যাবে। ‘

‘ নিশা ঘাবড়ে যায় ভয় মিশ্রিত কন্ঠে আমতা আমতা করে বলল, ঠিকক আছে আমি আর ওর উপর কোনো টর্চার করবো না। তুমি ভিডিওটা ডিলিট করে দাও। ‘

ছেলেটা হেসে বলল, ‘ নাহহ। কখনো না এটা আমার কাছে থাকা মানে আপনি আমার হাতের মুঠোয়। আর এটা ডিলিট করে দেওয়া মানে আপনাকে আবারও আগের মতোন অত্যাচার করার লাইসেন্স দেওয়া। এ ভুল আমি করবো না। তাছাড়া আমি মাঝেমধ্যে আসবো ম্যাডামের খোঁজ নিতে যদি আপনার বিরুদ্ধে কোনো কথা শুনি তাহলে, ‘

‘ তোমার কিছু করতে হবে না। আমি এখন থেকে ওর গায়ে ছোঁয়া ও দিবো না। ‘

বলেই নিশা সেখান থেকে ছুটে চলে যায়। আরোহী মাথা ঘুরে পরে যেতে যাবে তখন ছেলেটা ওকে ধরে নেয়। এ্যানিকে আরোহীর রুমের দিকে যাওয়ার জন্য বলে পেছন পেছন যেতে লাগল।

বিছানার উপর শুয়ে দেয় জ্ঞান না ফিরা পর্যন্ত আরোহীর পাশেই বসে রয় ছেলেটা সিদ্ধান্ত জানায়।

জ্ঞান ফিরে ছেলেটাকে পাশে বসে থাকতে দেখে ঘাবড়ে যায় আরোহী। শোয়া অবস্থা থেকে লাফিয়ে উঠে বসে জড়ানো কন্ঠে বলল, ‘ আপনি এখানে? ‘

ছেলেটা নিজের হয়ে কিছ বলতে যাবে তখন রুমে আসলো এ্যানি হাতে তার স্যুপের বাটি ট্রে তে করে নিয়ে আসছে। গরম যে বোঝাই যাচ্ছে বাটি থেকে ধোঁয়া উড়ছে।
আরোহীকে উদ্দেশ্য করে এ্যানি সব কিছু বলল। জ্ঞান হারানোর পর তাকে রুমে সেই নিয়ে আসছে এতক্ষণ ধরে পাশে বসে রয়েছে।

এ্যানির বাক্যকথা শুনে আরোহী ধন্যবাদ জানালো ছেলেটা। প্রত্যত্তরে ছেলেটা বলল, ‘ আমি এমন কিছুই করিনি যার জন্য আপনাকে আমায় ধন্যবাদ জানাতে হবে। তাছাড়া এটা আমার দ্বায়িত্ব কারণ অন্যায় যে করে এবং অন্যায় কে যে সহ্য করে তারা দুজনেই সমান অপরাধী। সে আপনার সাথে অন্যায় করছিলো। আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও হয়তো আমি এটাই করতাম। ‘

এ্যানি ছেলেটার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। বুঝতেই পারছেন মুগ্ধ হয়েছে সে ছেলেটার কথাবার্তায়। দেখতে বেশ লম্বা, কুঁকড়ানো চুল, গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা তার দেখতে বেশ ভালোই লাগছে।

আরোহী ছেলেটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ আপনি কে আর বাড়িতে কেন আসছেন? ‘

ছেলেটা মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকালো পরক্ষণে আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ আমি আপনার বাবার বিজনেস পার্টনার মাসুদের ছেলে। এই মাসেক আগে আমাদের কোম্পানির একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের ডিল হয়েছিল। ডিল কনফার্ম করতেই আপনার বাবা আরমান স্যার কক্সবাজার প্রস্থান করেছিলেন। আর মাঝ পথেই দূর্ঘটনা ঘটে। ”

হঠাৎ আরোহীর বাবার কথা বলায় ও ইমোশনাল হয়ে পরে। ছেলেটা আরও বলে, ‘ আমি শুনেছিলাম স্যার বলেছিলো উনার মেয়ের কথা। তখন তো আসতে পারিনি ইমার্জেন্সি কিছু মিটিং ছিল। পরে আসবো বলে আর সময় পাইনি। গত কাল ফ্রি হলেই ভাবি তোমাকে এসে একবার দেখে যাই। সেজন্যই আসা আমার গাজীপুর। আর এসেই যে এমন পরিস্থিতি ফেস করে হবে ভাবতে পারেনি। আমি কিছুদিন গাজীপুরে থাকবো মাঝেমধ্যে এসে তোমাকে দেখে যাবো। আর তোমার জেনো কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যবস্থা করে যাবো। এখন আমি আসছি পরে কোনো দিন আল্লাহ চাইলে আবারও দেখা হবে। নিজের যত্ন নিও আঙ্কেলের মেয়ে।’

বলে সে উঠে চলে গেলো। আরোহী লোকটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল কিয়ৎক্ষণ পর হুট করে বলে উঠল, ‘ আমি তো উনার নাম-ই জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি। ‘

চলবে?

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here