অভিমান পর্ব ২

0
1637

#অভিমান
#পর্বসংখ্যা_০২
#মৌরিন_আহমেদ

আজও ভার্সিটিতে এসে প্রথমেই ওই ছেলেটার সাথে দেখা হয়ে যায় প্রাপ্তির। ছেলেটা ওর কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। হাতে ছিল একটা গিটার। সম্ভবত গান-টান গাইছিল। চোখে মুখে হাসি, কণ্ঠে আহ্লাদী ভাব। ভীষণ আনন্দে আড্ডা দিচ্ছে তারা।

দূর থেকেই ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো প্রাপ্তি। একবার আড়চোখে ওই বজ্জাত ছেলেটার মুখটাও দেখে নিল। বাড়াবাড়ি রকমের সুন্দর একটা ছেলে! নাক-মুখ-চোখ-সবই যেন সৃষ্টিকর্তার নিপুণ হাতে তৈরি! কোথাও এতটুকু পরিমাণে ঘাটতি নেই! কিন্তু তারপরেও ছেলেটাকে দেখে ভালো লাগলো না ওর। ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই। “সৌন্দর্য হলো নারীর ভূষণ, তাদের প্রয়োজনীয়” এই কথাটা যেন ও খুব করে মানে। তাই আবিরের মতো বাড়াবাড়ি রকমের সুন্দর ছেলেকে দেখেও ভালো লাগলো না ওর!

– যত্তসব ঢং!.. গিটার হাতে রোমিও!

আপনমনে বিড়বিড় করতে করতে জায়গাটা ছেড়ে চলে গেল প্রাপ্তি। আজ সকাল সকাল এই লোকটার মুখ দেখেছে তারমানে আজকের দিনটা তার ভালো না যাওয়ার সম্ভবনা ৮০%। কারণ এই ছেলেটার চেহারা তার জন্য শুভকর নয়! প্রথমদিনেই তার সুন্দর নমুনা পেয়েছে!

ক্লাসগুলো ভালোই হলো। টিচার গুলো ভীষণ ভালো। সবচেয়ে বড় কথা খুব সুন্দর বোঝাতে পারেন। সত্যিই এরাই দেশের টপ টিচার্স! দেশের শিক্ষাদানের কান্ডারী! ক্লাস করতে করতেই একটা মেয়ের সাথে খুব খাতির হয়ে গেল ওর। বেশ মিশুক টাইপের একটা মেয়ে, নাম আদ্রিতা।অল্প সময়ের মধ্যেই তার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠলো ওর।

আদ্রিতারা দুই ভাই বোন। ছোট বেলা থেকেই ওরা ঢাকায় থাকে। পুরান ঢাকায় ওদের বাবার বেশ কিছু দোকান আছে। তিনি তার পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে সেগুলো পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি কোনো কাজটাজ করেন না। দোকানের ভাড়া, নিজের বিল্ডিংয়ের ফ্ল্যাটের ভাড়া, পেনশন সবকিছু দিয়েই বেশ আরামে-আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন। সাথে শেয়ার মার্কেটেও কেনা-বেচা করেন। সব মিলিয়ে সোনায় সোহাগা জীবন!

আদ্রিতার বড় ভাইটা এখনো কিছু করে না, স্টুডেন্ট। ঢাবিতেই পড়ে, পলিটিক্যাল সাইন্সে। সাথে নিজের পড়াকে সার্থক করার জন্য পলিটিক্সও করে। ছাত্রনেতা। ভার্সিটিতে নাকি দাপটের সাথেই চলে। তাই সমস্যায় পড়লে ও যেন আদ্রিতা কে জানাতে ভুল না করে, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে সে। যেকোন সমস্যায় মুশকিল আসান হবে আদ্রিতার সেই গুণধর ভাই!
_____________________________

টিএসসি তে বসে আড্ডা দিচ্ছিল আবির। সঙ্গে তার তিন বন্ধু জিহান, রাজিব আর তন্ময়। সিঙ্গারা আর চায়ের সাথে জমে উঠেছে তাদের আসর। আজ ওদের তিনজনের মনই বেশ খুশি খুশি। কারণ আবির এবারের ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচনে তার দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছে। ব্যাপারটা নিয়েই মূল আনন্দ ওদের। ওরা যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলায় ব্যস্ত তখন হঠাৎ টেবিলের উপরে কেউ জোরে একটা বারি মারলো। আচমকা শব্দ শুনে কেঁপে উঠলো সবাই। আবির চমকালো না শুধু ভ্রু কুঁচকে সামনের ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে রইলো। ওদের সামনে দাড়িয়ে আছে সামিন। আবিরের প্রতিপক্ষ দলের একজন সদস্য। এবারের নির্বাচনে সেও মনোনয়ন পেয়েছে ওই দল থেকে।

– কী রে, হঠাৎ টেবিলের উপর ডুগডুগী বাজাচ্ছিস, ঘটনা কী? এতই যখন সাধ তখন একটা কিনে নিলেই তো পারিস!..

আবিরের ব্যঙ্গ উক্তিতে সূক্ষ্ম চোখে তাকায় সামিন। পরক্ষণেই শয়তানি হাসি ফুটায় ঠোঁটের কোণে। ডেভিল স্টাইলে বলে,

– খেলা তো এইবার হবে, মাম্মা!.. মনোনয়ন তো পাইছি.. একবার জিততে দে.. তারপর দেখ তোর কী হাল করি.. ডুগডুগি তো তখন বাজাবো!

– আর আবির বাজাবে গিটার!

ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে ওঠে তন্ময়। আবিরের দিকে তাকাতেই মুচকি হাসলো ও। তারপর ধীরে সুস্থে বললো,

– তোর ভাব-সাব দেখে মনে হচ্ছে খালি মনোনয়ন না নির্বাচনে জিতে গেছিস! শোন, এখনই এতো লাফাস না!.. পড়ে দেখা গেল, নির্বাচনে এক ভোটও পেলি না.. তখন?

কথার সূক্ষ্ম অপমানে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে সামিন। দাঁত কটমট করে বললো,

– আমার ভোটের চিন্তা ছেড়ে নিজের চিন্তা কর। দেখিস, এবার জয় আমিই পাবো!.. আর তুই বসে বসে আঙুল চুষবি!.. হা হা হা!

বলেই হো হো করে হেসে উঠলো সামিন। তবে আর দাড়ালো না। ওদের আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল। চলে গেল মানে এক প্রকার পালিয়েই গেল! কারণ ও খুব ভালো করেই জানে আর কিছুক্ষণ থাকলে আবিররা ওর ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে ছাড়বে!

ওর এমন ইঁদুরপ্রস্থানে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো আবিরেরা। রাজিব হাসতে হাসতেই বললো,

– পাগলের সুখ মনে মনে! বুঝছিস, আবির.. ওই পাগল মনে মনে স্বপ্ন দেখে আর সুখ পায়…

– তা যা বলেছিস!.. পাগল একটা!

তাল মিলায় জিহানও। ওদের কথায় আবারও হেসে ওঠে সবাই। হাসি মজায় মেতে ওঠে আড্ডা!
_____________________________

লাইব্রেরীর দিকে যাচ্ছিল প্রাপ্তি। একটা বইয়ের ওর জরুরী দরকার। আশেপাশে তাকানোর সময় নেই, ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে ও। ছুটতে ছুটতেই হঠাৎ ‘ঠাস’ করে আওয়াজ হলো। কোনো একজনের সাথে ভীষন জোরে যেন ধাক্কা খেল।

আচমকা এমনটা হওয়ায় ভয় পেয়ে চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে ফেললো প্রাপ্তি। কিন্তু পড়বো পড়বো করেও পড়লো না। কে যেন ওর হাতটা ধরে আছে। চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেল সেদিনের সেই ছেলেটা ওর হাত ধরে আছে। সেটা দেখেই বিস্ময়ে হা হয়ে গেল ওর মুখ। স্তম্ভিত চাহনিতে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে।

আবিরও তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টিতেও বিস্ময়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ভাব কেটে গেল। ভ্রু কুঁচকে ওর ধরে রাখা হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

– আজব মেয়ে তো তুমি! নিজেকে কী ফিল্মের হিরোইন ভাবো? হাত ধরে আছি দেখে কী মনে করছ?.. ঠিক করে দাড়াও, বলছি!

হঠাৎ করেই ধমক দিয়ে দেয় ওকে। প্রাপ্তি যেন চমকে ওঠে। আরও বিস্ময়ে ওর মুখের দিকে তাকায়। কিন্তু হাত ছাড়ে না বা ঠিক হয়ে দাড়ানোর কোনো লক্ষণই পাওয়া যায় না। তাতে আরও বেশি বিরক্ত হয় আবির। দাঁতে দাঁত পিষে বলে,

– তুমি কি ঠিক হয়ে দাড়াবে? না আমি হাত ছেড়ে দেব?

প্রাপ্তি যেন হ্যাং হয়ে গেছে। দৃষ্টি ওর দিকে কিন্তু ওকে দেখছে না। আবার ওর কোনো কথাও মস্তিষ্কে ঢুকছে না। এবার একটু বেশিই বিরক্ত হয়ে যায় আবির। রাগ হয়ে হাতটা তো ছেড়ে দেয়ই সাথে একটা ধাক্কাও মেরে বসে। আচমকা তাল সামলাতে না পেরে ‘ধপাস’ করে উল্টে পড়লো প্রাপ্তি! কোমড়ে হাত রেখে ‘ওমা গো, ওমা গো’ করতে করতে আবিরের দিকে তাকালো। ওর চোখ মুখ কুঁচকানো। বিরক্তিতে বললো,

– ঠিক হয়েছে না, ফেলে দিয়েছি? ভালো বুঝে ধরেছিলাম.. তাই সুযোগ নিচ্ছিলে!.. ভাবছিলে, হিরোইন হয়ে গেছ। কোমড়টা ভাঙলো না এখন?.. জীবনটা বাস্তব, রিল লাইফের ন্যাকামো না। সময় থাকতে ভালো হয়ে যাও!..

প্রতি উত্তরে প্রাপ্তি কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই অন্য দিক থেকে কে যেন বলে ওঠে,

– আবির ভাই, শুনে যান!

ডাক শুনে সেদিকে তাকায় আবির। পরিচিত কাউকে দেখে চোখে চোখে ঈশারা করে- ‘আসছি’। তারপর প্রাপ্তির দিকে একপলক তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে,

– যত্তসব ফাউল মেয়ের দল!

বলতে বলতেই চলে যায় সেখান থেকে। পুরো ব্যাপারটা যেন মাথার ওপর দিয়ে যায় ওর। এই ছেলেটা এমন কেন? নিজেই পরে যাওয়া থেকে বাঁচালো আবার নিজেই ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো? তাহলে ধরার কী মানে ছিল? আর ওকে কী ভাবে এই ছেলে? ও কোনো সস্তা মেয়ে? সেদিন না হয় র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিল বলে না জেনেই ওকে প্রপোজ করেছিল, তাই বলে এরপর আর কিছু না করেই এমন অপমান? এ তো ঠিক না, অন্যায়। ঘোরতর অন্যায়!

ছেলেটার প্রতি এক অজানা, অহেতুক অভিমান এসে ভর করে ওর মনে। মেয়েটা অভিমানী, তাই একটুতেই অভিমান করে। কিন্তু ও তো জানে না, যে অভিমান বোঝে না, তার সাথে অভিমান করা যায় না!

মুড অফ করে ক্লাসে চলে আসে প্রাপ্তি। দেখে আদ্রিতা আগেই এসে বসে আছে। ওকে দেখে মিষ্টি হেসে হাই জানালো। ওও প্রতি উত্তরে হাত নাড়লো। কিন্তু মুড অফ আর ভালো হলো না। চুপচাপ এসে ওর পাশের সিটে বসে পড়লো।

– আচ্ছা, তোর মুড অফ কেন রে? কী হইছে?

আদ্রিতার কনুইয়ের খোঁচা খেয়ে সোজা হয়ে বসলো প্রাপ্তি। ওর দিকে একপলক তাকিয়েই অন্যদিকে চোখ ফেরাল। আনমনা কণ্ঠে বললো,

– কিছু না। এমনই..

– এমনিতে তো এমন হয় না। কী হইছে আমারে বল্…

জোরাজুরি শুরু করে আদ্রিতা। প্রাপ্তি শুরুতে বলতে চায় না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি যেন ভেবে বলেই ফেলে। সবটা শুনে কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে থাকে ও। তারপর একসময় বলে,

– না জেনে প্রপোজ করে কাজটা তুই ঠিক করিস নি, প্রাপ্তি। ছেলেটা খারাপ না ভালো সেটা তোর জেনে নেওয়া উচিত ছিল!

– আরে আমি কি ইচ্ছে করে করেছি না কী? ওই সিনিয়র আপুরাই তো বললো, সাদা শার্ট পরা ছেলেটাকে গিয়ে প্রপোজ করো। আমি তো ভয়েই না বলে দিলাম। কিন্তু ওরা শুনলো না… ব্ল্যাকমেইল করা..

– বুঝেছি। আর বলতে হবে না। কিন্তু ছেলেটারও দোষ আছে। ওভাবে না বললেও পারতো। আর তুইই বা কেমন? ছেলেটা যখন জিজ্ঞেস করলো কে পাঠিয়েছে সেটা বলিস নি কেন? তা বললে তো আর.., তোর সম্পর্কে ওর খারাপ ধারণা জন্মাতো না!

অচেনা একটা ছেলের সাইড নিচ্ছে দেখে মনে মনে বেশ ক্ষুন্ন হলো প্রাপ্তি। বানিয়ে বানিয়ে আবির সম্পর্কে অনেক কিছু বললো। যেন আবির সম্পর্কে ওর খারাপ ধারণা হয়, আর ওর সাপোর্ট করে। এতে অবশ্য কাজ হলো। আদ্রিতা বললো,

– ঠিক আছে। টেনসন নিস না। ছেলেটাকে আগে খুঁজে নেই.. তারপর দেখাবো মজা!..

– তুই আবার কী করবি?

অবাক হয় প্রাপ্তি। সেটা দেখে আদ্রিতা মুখে ডেভিল হাসি ফুটায়। বলে,

– আমি কেন করবো? আমার ভাইয়া আছে না?.. আগে আগে দেখো, হোতাহে কেয়া!..

______________________

ভার্সিটি থেকে ফ্ল্যাটে ফিরেই মায়ের নাম্বারে কল করে প্রাপ্তি। দু’ বার বাজতেই রিসিভ করেন মমতা। টিটকারি করে বললেন,

– কী রে কাল না বললি.. আর কল দিবা না, আজই যে কল করেছিস?… এতো তাড়াতাড়িই আমার দরকার পড়লো?.. বাবা গো! ফিলিং সেলিব্রেটি!..

মায়ের এমন কথা শুনে মনে মনে আবারও অভিমান করে প্রাপ্তি। তার মা’টা যে এমন কেন! সব সময় শুধু ইয়ার্কি করেন! অভিমানী গলায় বললো,

– তুমি সব সময় শুধু এমন করো কেন? আমি কি তোমার মেয়ে নাকি বান্ধুবি, হ্যাঁ? সব সময় খালি ইয়ার্কি!..

– তাহলে ইয়ার্কি করবো না বলছিস? ঠিক আছে…

বলেই নিজের কণ্ঠটাকে একটু মোটা করে রাশভারী স্টাইলে বললেন,

– বেয়াদব মেয়ে! আমাকে কল দিয়েছিস কেন, তুই? হ্যাঁ? তোর কতবড় সাহস, আমার সাথে বেয়াদবি করিস!.. আমাকে বলিস কল করবা না?.. ঢাকায় গিয়ে কী পাখা গজাইছে তোর? এবার আয় খালি, তোর পাখা আমি কেটে ফেলবো! কেঁচি দিয়ে ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে… আমাকে তো চিনিস নি!..

– মা!.. কী শুরু করলে তুমি? থামবে কি?

মেয়ের কাঁদো কাঁদো স্বরে বাঁধা পেয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠেন মমতা। হাসি থামিয়ে বললেন,

– আচ্ছা, যা। থামলাম। বল্ কী বলবি?

এতক্ষণে তাকে মা মা লাগছে। প্রাপ্তি খুশি হয়ে তার সাথে কথা বলতে থাকে। ওদিকের খোঁজ খবর নেয়। তারপর একসময় ভার্সিটির প্রথমদিন প্রসঙ্গে এসে আবিরের ঘটনাটাও বলে। সবটা শুনে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে থাকেন মমতা। তার হঠাৎ নিরবতা দেখে চুপসে যায় ও। মনে মনে চিন্তায় পড়ে যায় হঠাৎ কি হলো মমতার? উনি হঠাৎ চুপ মেরে গেলেন কেন? ও কী তবে ঘটনাটা বলে ভুল করলো? মা কী এখন ওকে বকবে? যদি রাগ করে বলে বসেন, “তোর আর একা থাকার দরকার নেই”, তখন? ওকে কি চলে যেতে হবে এখান থেকে?

ভাবতে ভাবতেই মমতাকে বলতে শোনা গেল,

– হুম, বুঝলাম।

– কী বুঝলে?

ওর প্রশ্ন শুনে বেশ দুষ্টুমি গলায় বললেন,

– বুঝলাম,.. মেয়ের আমার বিয়ের বয়স হয়ে গেছে!.. মেয়ে পাত্রও খুঁজে ফেলেছে.. এখন তো বিয়ে দিতেই হয়!

বলেই আবারও হেসে ওঠেন। প্রাপ্তি মৃদু চিৎকার দিয়ে ওঠে,

– মা!

মাকে চুপ করার জন্য প্রতিবাদ করে। কিন্তু লাভ হয় না। মিসেস. মমতা তার মতো করে হেসেই যান। একসময় ও রাগ হয়ে বলে,

– তোমার সাথে কথা বলাই বেকার! রাখছি আমি..

– এই প্রাপ্তি, শোন। শোন… কল কাটিস না.. ছেলেটার একটা ছবি তুলে পাঠিয়ে দিস তো! হবু জামাইকে দেখে রাখি…

– ধ্যাত!

আর কিছু বলার সুযোগ দেয় না ওনাকে। রাগ করে কলটা কেটে দেয়। তারপর ফোনটা বেডের উপর চটকা মেরেই চলে যায় ওয়াসরুমে। ফ্রেশ হতে হবে! মায়ের কথা শুনে হ্যাং হয়ে গেছে মস্তিষ্ক! মাথায় এখন পানি ঢালতে হবে। মা যে কী সব বলেন না!
________________________

আজ বেশ তাড়াতাড়িই বাড়িতে ফিরেছে আবির। ড্রইং রুমে ঢুকতেই দেখতে পেল তার মা আর বাড়ির কাজের মেয়ে হাসুমতি বসে আছে সেখানে। সোফার উপরে বসেছেন আসিয়া আর তার পায়ের কাছে হাসু। সামনেই টিভিতে একটা হিন্দি সিরিয়াল চলছে। দুজনের দৃষ্টিই টিভি স্ক্রীনে নিবদ্ধ। গভীর মনোযোগের সাথে সেখানকার নাটক দেখছেন। কিছুক্ষণ পর পর উত্তেজনায় চিল্লিয়েও উঠছেন।

তাদের গভীর মনোযোগে ছেদ ঘটালো না আবির। চুপচাপ সোফার পেছন দিয়ে সিঁড়ির দিকে হেঁটে চলে গেল। কিন্তু দু ধাপ উঠতে না উঠতেই পেছন থেকে ডাক দেন আসিয়া বেগম। গম্ভীর গলায় বলেন,

– আবির!

“এই রে ধরা খেয়ে গেলাম! মা যে এই শকুনি দৃষ্টি পেল কোথায়, কে জানে!” ভেবেই আস্তে করে একটা ঢোক গিলে ধীরে ধীরে ফিরে তাকালো। ঠোঁটের কোণায় কোনমতে হাসি ফুটিয়ে বললো,

– জ্বি, মা।

– যাচ্ছ কোথায়?

টিভির দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন ছুড়লেন আসিয়া। আবির এদিক ওদিক তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলার চেষ্টা করলো,

– ঘ…ঘরে।

– তোতলাচ্ছো কেন বাবা?

এইবার ওর দিকে তাকালেন উনি। তার চাহনিতেই কেমন একটা ভয় পেয়ে গেল আবির। ও ঠিক ওর মাকে বুঝে উঠতে পারে না। কখনো রাগী, কখনো ভালো। কিন্তু ও কিছু বলার আগেই কথা বলে উঠলো হাসুমতি। বললো,

– ভাইজান। আপনে এখন ঘরে যান তো!.. আপনার সাথে আম্মার জরুরি মিটিং আছে। আপনে দেরি করে বাড়ি আসেন, সেই বিচার হইবো আজ। তয় একটু পরে… এই নাটকটা শেষ হইলেই আমি আপনেরে ডাকমু নি। এখন যান, নাটক দেখি.. জ্বালাইয়েন না!..

হাসুর কথা শুনে চোখ পাকিয়ে তাকান আসিয়া। ও ভয় পাওয়া গলায় বললো,

– আম্মা, অমনে তাকান ক্যান? আমি তো ভালোর জন্যেই কইলাম। আপনে এখন নাটক দেখতেছেন না? ভাইজা নের লগে যদি ঝগড়া-ঝাটি করেন তাইলে নাটক শেষ হয়া যাইবো না?

সে কথা শুনি আর কিছু বলেন না আসিয়া। টিভির দিকে মনোযোগ ফেরান। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবারও সেটার ভেতর ডুবে গেল ওরা। তাই দেখে আবিরও আর কোনো দিরুক্ত না করে পালিয়ে যায়। ও ঠিক জানে, একটু সময় পার হলেই মার মেজাজ ভালো হয়ে যাবে। তখন আর এসব বিচার-টিচার কিচ্ছু করবেন না! বরং আদর করে কথা বলবেন!

#চলবে——–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here