অভিমান পর্ব ৩

0
1142

#অভিমান
#পর্বসংখ্যা_০৩
#মৌরিন_আহমেদ

টঙের দোকানে দাড়িয়ে চা খাচ্ছিল আবির। সাথে ওর তিন বন্ধু জিহান, রাজিব আর তন্ময়। রাজিবের হাতে একটা সিগারেট। সে সিগারেটে টান দিচ্ছে আর বন্ধুদের সাথে আলাপ করছে। আবিরের আর বন্ধুদের মধ্যে কেউই সিগারেট খায় না। খায় শুধু ও আর রাজিব। তবে এখন আবিরের হাতেও শুধু চায়ের কাপ। কারণ ও সবসময় স্মোক করে না।

তিনজনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসাহাসি করছে হঠাৎ কি যেন মনে করে পেছনে ফিরলো আবির। আর তাতেই চোখের সামনে ঘটে গেল এক লোমহর্ষক ঘটনা! রাস্তার অপর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল একটা মেয়ে। বাম কাঁধ থেকে ঝুলছিল তার সাইড ব্যাগ। ওড়না আর ব্যাগের হ্যান্ডেল টা যেন পেঁচাপেচি করেই ছিল। মেয়েটা নিজের মতো হাঁটছিল এদিক ওদিকে খেয়াল ছিল না। আর তাতেই হঠাৎ করে পেছন থেকে ছুটে আসে একটা বাইক। ভীষণ গতিবেগে আসতে থাকা কালো বাইকটায় আরোহী ছিল দুজন। একেবারে চোখের পলকে পেছনে বসে থাকা ছেলেটা হ্যাঁচকা টান দিয়ে কেড়ে নেয় মেয়েটার কাঁধের ব্যাগ। ব্যাগ আর ওড়নায় একসাথে টান খেয়ে মেয়েটা যেন তাল সামলাতে পারলো না। বেসামাল হয়ে পড়ে গেল রাস্তায়। আর মুহূর্তেই ধোঁয়া উড়িয়ে আরো স্পিডে চলে গেল বাইকটা!

প্রকাশ্য দিবালোকে এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা দেখে চমকে উঠলো আবির। তবে নিজের চমক পাওয়া ভাবটা দ্রুতই কাটিয়ে উঠলো। বন্ধুদের দিকে একপলক তাকিয়ে দেখে নিলো ওদের মুখের ভাব কেমন। ওরাও এই ঘটনা দেখে বিস্ময়ে থ হয়ে আছে। আর সময় নিলো না আবির। তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

– বাইকের চাবিটা দে তো!..

তন্ময় নিজের প্যান্টের পকেট থেকে চাবিটা বের করে এগিয়ে দেয় ওর দিকে। বিস্ময় কণ্ঠে বলে,

– তুই কি এখন…

কথা শেষ করতে দেয় না আবির। রাগে ক্ষেপে গিয়ে বললো,

– কি করবো এখনো ঠিক করি নি। তবে শা*লা দুটো কে আগে ধরবো!.. ইচ্ছে মতো প্যাঁদানি না দিয়ে ছাড়বো না!.. কতো বড় সাহস!..

বলেই আর দেরি করে না আবির। চট পট বাইকে উঠে হেলমেট পরে নেয়। বাইক স্টার্ট দিতে দিতে ওদের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,

– আমার আসতে ১০/১৫ মিনিট লাগতে পারে.. ততক্ষণে তোরা ওই মেয়েটার কাছে যা। দেখ, কোথায় কী হয়েছে!

এরপর নিজেও বাইক ছুটিয়ে হাওয়া হয়ে গেল আবিরও। ও চলে যেতেই একটা টান মেরে সিগারেটটা হাত থেকে ফেলে দেয় রাজিব। বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলে,

– দাড়িয়ে আছিস, কেন? নে চল.. যাই..

– চল!

বলেই এগিয়ে যায় ওরা। মেয়েটাকে এতক্ষণে অনেকে মিলে ঘিরে ধরেছে। ওরা ভীড় ঠেলে ভিতরে ঢুকে যায়। মেয়েটাকে সাহায্যের জন্য!

ক্লাস শেষে ফ্ল্যাটে ফিরছিল প্রাপ্তি। অনেক্ষণ যাবৎ রিকশার জন্য দাড়িয়ে থেকেও যখন কোনো লাভ হলো না তখন বাধ্য হয়েই হাঁটা শুরু করে দিল। একা একা হাঁটছিল। হঠাৎ কি হলো কে জানে পেছন থেকে ছুটে আসা একটা বাইক ওর ব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে গেল। টান খেয়ে চিৎকার করবে না পিছু পিছু দৌড়াবে সেটা ভাবার সময় না পেয়েই বেসামাল হয়ে ছিটকে পড়ে গেল রাস্তার অপর প্রান্তে।

ব্যস! ছিনতাইয়ের সময় কেউ এগোলো না। কেউ বাঁচাতেও ছুটলো না। শুধু ওকে পড়ে যেতে দেখে এগিয়ে এলো অনেক লোক। ওকে ঘিরে। ধরে একেক জনে একেক কথার পসরা সাজালো। তারা কি কেউ ওকে হেল্প করার জন্য এগিয়ে এসেছে? ভাব দেখে তা মনে হয় না। মনে হচ্ছে ওরা এখানে এসেছে ও কীভাবে পড়লো, আর কীভাবে কি করলে পড়তো না সেটা নিয়ে ডিবেট করতে! হাহ্! কী যে একটা অবস্থা, এই দেশের!

ভীড়ের মাঝে নিজেকে খুব অসহায় বোধ করে প্রাপ্তি। আশে পাশে ওর পরিচিত কেউ নেই। এতগুলো সমালোচক আর ঘটনা পরিদর্শনকারী ব্যক্তিদের মাঝে ও একা। সাথে আদ্রিতাও নেই। ও থাকলে ভালো হতো! মেয়েটা চট জলদি কাজ করতে জানে। খুব দ্রুতই কিছু একটা করে হেল্প করতে পারতো নিশ্চয়!

এমন সময়ে ভীড় ঠেলে ঢুকতে দেখা যায় কয়েকটা ছেলেকে। অচেনা কিছু ছেলে, হয় তো ওর সিনিয়র ব্যাচের। ওরা এসেই ভীড় ভেঙে জড়ো হওয়া মানুষ গুলোকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। একজন এসে প্রাপ্তির কাছে দাড়িয়ে বলে,

– ভয় পেয় না, আপু। আমাদের সাথে চলো। ফার্মেসিতে দেখাই.. তোমার হাত ছিলে গেছে..

প্রাপ্তি কী করবে ভেবে পায় না। এমন বিশ্রী পরিস্থিতে ও এর আগে কখনো পড়ে নি! চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই এসব তাদের ওই ছোট্ট মফস্বলে হতো না। সেখানে তারা থাকতো শান্তিতে, নির্বিঘ্নে!

ছেলে গুলো আর কিছু বলে না। ওকে সাথে যাওয়ার জন্য পথ দেখিয়ে এগিয়ে চলে। আর কিছু ভেবে না পেয়ে নিজেও ওদের পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করে প্রাপ্তি।

প্রায় আধঘন্টা পর ফার্মেসিতে ঢুকতে দেখা যায় আবিরকে। ঘামে ভেজা শার্ট, চেহারায় ক্লান্ত ভাব, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে ওর। শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে ভিতরে ঢুকে বললো,

– কী রে, সব ঠিক আছে তো?

– হ্যাঁ, হাতটা শুধু ছিলে গেছে..

জিহানের কথা শুনে সামনে তাকায় আবির। তাকাতেই চমকে ওঠে! সামনে বসে আছে সেদিনের সেই মেয়েটা। ওকে দেখেই ভ্রু কুঁচকে যায় ওর। এই মেয়েটাই কেন সবসময় সামনে পড়ে ওর? দুনিয়ায় আর কোনো মানুষ নেই? আজব!

অন্য কারো গলা শুনে সেদিকে ফিরে তাকালো প্রাপ্তি। চোখের সামনে দাড়িয়ে আছে ওই “ধমকি-ধামকি বজ্জাত ছেলে!” পরনের আকাশী রঙের শার্টটা ঘামে ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। মাথার চুলগুলোও কেমন ভেজা ভেজা, এলোমেলো করে কপালে এসে পড়েছে। গুটিয়ে রাখা শার্টের হাতার ফাঁকে কোথা থেকে যেন রক্ত ঝরছে! একহাতে ওর হ্যান্ড ব্যাগটা। প্রাপ্তি অবাক চোখে বললো,

– আপনি?

– একই প্রশ্ন তো আমারও!.. দুনিয়াতে কী আর মানুষ নেই?.. যতো ঝামেলা তোমার, সব আমার কাছে এসেই ব্রেক মারে?.. দেখে হাঁট না লাইব্রেরীর সামনে উল্টে পরো, রাস্তায় ব্যাগ ছিনতাই হয়ে যায়… সবই আমার সামনে এসে হতে হয়?

আবিরের চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট। বাকিরা অবাক চোখে তাকায়। প্রাপ্তির সাথে ওর কীসের শত্রুতা সেটা বুঝতে পারে না। প্রাপ্তিও বিস্ময় দৃষ্টিতে বলে,

– আমি আপনাকে কি ইচ্ছে করে বিরক্ত করেছি, ভাবছেন?.. আমি কিন্তু ইচ্ছে করে কিছু করি নি। সেদিন বড় আপুরা..

– হয়েছে আর কৈফিয়ত দিতে হবে না!.. আমি কিছু শুনতে চাই নি। এই নাও তোমার ব্যাগ, দেখ সব ঠিক আছে কি না। আর এরপর থেকে যেন তোমার ঝামেলায় আমাকে না জড়াতে হয়!

বলেই ব্যাগটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায় আবির। ওর পেছন পেছন ছুটে আসে ওর বন্ধুরাও। নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারপর!

আবিরের কথা শুনে হঠাৎ কেন যেন চোখে জল এসে যায় প্রাপ্তির। ঝাপসা চোখে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

– আমি তো কখনও আপনাকে ডাকি নি। আপনিই এসেছেন তাহলে আমাকে কেন বকলেন?..

চোখের পানিটুকু ওড়নার কোণায় মুছে ফেলে। ব্যাগটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসে ফার্মেসীর ভেতর থেকে। আবারও হাঁটতে থাকে ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে।
___________________________

ক’টা দিন পেরিয়ে যায়। কো-ইন্সিডেন্সই বলুন আর বাস্তবিকই বলুন এর মধ্যে একবারও প্রাপ্তি আর আবিরের মধ্যে কোন দেখা সাক্ষাৎ হয় নি।

সেদিনের পর আবিরের প্রতি অজানা, অহেতুক অভিমানটা আরও বেড়ে যায় প্রাপ্তির। ছেলেটা অহেতুক ওকে বকা-ঝকা করেছে, সবার সামনে অপমান করেছে। এরপরে ও আর কোনোভাবেই চায় না, আবিরের সাথে ওর দেখা হোক। কারণ ছেলেটা অন্যের জন্য ভালো হোক কিংবা মন্দ, মানুষের সাথে ব্যবহার হোক না কেন অমায়িক তারপরেও প্রাপ্তির জন্য ও ভালো না। কুফা টাইপের লোক একটা! বিনা কারণে ওর সাথে বাজে বিহেভ করে। আর যাই হোক, এমন ধারা লোকের সাথে বারবার দেখা হয়ে নিজের আত্মসম্মান খোয়াতে চায় না প্রাপ্তি!

রেস্টুরেন্টে বসে আছে আদ্রিতা-প্রাপ্তি। আদ্রিতাই ধরে এনেছে ওকে। ওর বড় ভাই না কি উপলক্ষ্যে ওকে ট্রিট দিবে সেটাই শেয়ার করার জন্য। শত হোক, বড় ভাইয়ের দেয়া ট্রিট! সে ট্রিটে যদি ভাইয়ের টাকা-পয়সা সব খসাতেই না পারে সার্থকতা কোথায়? তাই প্রাপ্তিকে এনেছে। দুজনে একসাথে অর্ডার করে বড় ভাইয়ের ট্যাঁক খালি করবে! মনে মনে এই ফন্দিই আঁটছে আদ্রিতা!

একটু পরেই রেস্টুরেন্টের গেট দিয়ে ঢুকতে দেখা গেল একটা ছেলেকে। গ্লাসের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো কফি কালারের শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স পরিহিত সুদর্শন এক যুবক। সিল্কি চুল আছড়ে পড়ে কপালের খানিকটা ঢেকে ফেলেছে, চোখে মুখে হাসি হাসি ভাব। ছেলেটা এগিয়ে আসছে ওদের টেবিলের দিকেই। ওকে দেখেই আনন্দে হাত নাড়ায় আদ্রিতা। খুশি খুশি গলায় ডাকে,

– ভাইয়া! এদিকে আয়!

মাথায় নাড়ায় ছেলেটা। এতোক্ষণ উল্টো দিকে ঘুরে বসেছিল প্রাপ্তি। তাই ওকে দেখতে পায় নি। আদ্রিতার কথা শুনে ফিরে তাকালো। দেখার চেষ্টা করলো আদ্রিতার সেই গুণধর ভাইয়ের চেহারাখানা। দেখতে গিয়েই অবাক হতে হলো ওকে। ছেলেটা আর কেউ নয়, ওর সেই “ধমকি-ধামকি বজ্জাত ছেলে!”ওকে দেখেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে ছেলেটা। আদ্রিতা অবশ্য কিছু বুজতে পারে না। সে তার মতো আনন্দের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

– ভাইয়া, মিট মাই ফ্রেন্ড সানজানা প্রাপ্তি। অ্যান্ড, প্রাপ্তি.. মিট মাই বিগ ব্রাদার আবির ইশতিয়াক।

আদ্রিতা সানন্দে পরিচয় পর্ব সমাধা করে দেয়। সৌজন্যতার খাতিরে দুজনকেই হাত নেড়ে হায় বলতে হয়। টুকটাক ফর্মালিটিও করতে হয়। অনেকটা বাধ্য হয়েই। কিন্তু কেউ কোনো রকম সিনক্রিয়েট করে না। এবং যথাসম্ভব চেষ্টা করে আগের ব্যাপারটা ভুলে যেতে। তারপর কথা অনুযায়ী একসঙ্গে খাওয়া শুরু করে ওরা। আদ্রিতাই সব অর্ডার করে, ওই সব কিছু নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করতে থাকে। ওরা দুজন শুধু “হ্যাঁ, হু” তেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাড়তি কথা বাড়ায় না।

রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে প্রাপ্তি। পেছন পেছন আদ্রিতা আর ওর বড় ভাই আবিরও। আবির তার কার এনেছে তাই ওরা দু’ ভাইবোন কারে করেই যাবে। এই ভাবনা নিয়েই নিজের জন্য রিকশা খুঁজতে থাকে প্রাপ্তি। রাস্তার একপাশে এসে দাড়িয়ে রিকশা ডাকতে থাকে।

এদিকে ওকে এভাবে চলে যেতে দেখে কী যেন ভাবে আবির। মেয়েটা এতক্ষণ ওদের সাথে ছিল, ওর ছোট বোনের বান্ধুবি তার প্রতি ওর একটা দায়িত্ত্ব আছে না? তাছাড়াও এখন গোধূলি বেলা। একটু পরই সন্ধ্যা নামবে। তখন মেয়েটার যেতে সমস্যা হবে না? এটা ঢাকা শহর, রাতে কি একটা যুবতী মেয়ের নিরাপত্তার কথা বলা যায়? তারপর মেয়েটা সুন্দরী। কিন্তু ও যদি নিজে থেকে ওকে ডাকতে যায়, সেটাও কেমন যেন দৃষ্টিকটু লাগে! আদ্রিতা আর ওই বা কি মনে করবে!

ভাবতে ভাবতেই ওর সামনে এসে হাজির হয় আদ্রিতা। একহাতে প্রাপ্তির বাহু ধরে আছে ও। আবিরকে দেখেই বললো,

– দেখেছিস ভাইয়া, প্রাপ্তিটা কতো খারাপ?,।। এতোক্ষণ আমাদের সাথে বলে কী না এখন ওর সময় নেই!.. বাড়ি যাবে, তাই রিকশা খুঁজছে!.., আচ্ছা, আমরা গাড়ি আনার পর কেন ও রিকশায় যাবে? এটা কি ঠিক, ভাইয়া তুইই বল?

– উহুম, একদম ঠিক না। মিস. প্রাপ্তি আপনি অবশ্যই আমাদের সাথে যাবেন। আপনাকে পৌঁছে দেয়া আমাদের রেসপনসিবিলিটি!

– কিন্তু আমি..

আবিরের এতো ভালো ব্যবহার দেখে বাধা দেয় প্রাপ্তি। কারণ ওর কাছে এতো ভালো ব্যবহার আগে কখনোই পায় নি ও। তাই বুঝতে পারে না কোনটা মেকি আর কোনটা রিয়েল। আপত্তি করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদ্রিতার জ্বালায় তা আর করা হয়ে ওঠে না। আবিরও জোরাজুরি করে, তাই বাধ্য হয়েই ওদের সাথে যেতে রাজি হয়।

খানিকটা দূর এগিয়ে আসার পর হঠাৎ করে গাড়ি থামানোর জন্য লাফিয়ে ওঠে আদ্রিতা। সামনে নাকি কীসের একটা মেলা বসেছে সেটা দেখতে যাওয়ার বায়না ধরেছে। প্রাপ্তি, আবির দুজনই বাধা দেয়, যেতে নিষেধ করে কিন্তু ও কিছুতেই শুনতে নারাজ! যাবে মানে যাবেই! বোনের জেদের কাছে হার মেনে শেষ পর্যন্ত ওদের নিয়ে মেলায় ঢোকে আবীর।

কীসের মেলা সেটা অবশ্য আবিষ্কার করা সম্ভব হয় না, কিন্তু তারপরও ওদের সাথে করে পুরো মেলায় ঘুরিয়ে আনে আবির। আদ্রিতার আবদারে নাগর দোলায় চড়ে, যদিও চড়ার পর প্রচন্ড চিৎকার করে মেলা কাঁপিয়ে দিয়েছিল আদ্রিতা।

মেলার একদিকে শুধু একটিই মাত্র বইয়ের দোকান চোখে পড়ে ওদের। বইমেলা নয়, বই থাকার কথাও নয়। তবুও এখানে এটা কেন বসিয়েছে কে জানে! তারমধ্যে বই পাগলী আদ্রিতার এই দোকান চোখে পড়ার সাথেই হয়েছে! “বই কিনবো, বই কিনবো” বলতে বলতেই লাফিয়ে যায় ওখানে। হুমড়ি খেয়ে খুঁজতে থাকে পছন্দের বই। ওর আবদারে বইও কিনে দেয় কয়েকটা। সাথে যেহেতু প্রাপ্তিও ছিল তাই ওকেও একটা কিনে দেয়। শত হোক, ছোট বোনের বান্ধুবি, তাকে সেভাবেই ট্রিট করতে হবে! আগে কি হয়েছে না হয়েছে সেটা এখানে ফ্যাক্ট না!

______________________________________

নিজের বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে প্রাপ্তি। বুকের নীচে বালিশ রেখে তারউপর কনুই ঠেকিয়ে বসে আছে। সামনেই খুলে রাখা বই। যে বইটা আজ আবির ওকে কিনে দিলো। ভীষণ রোমান্টিক একটা বই। মাত্রই পড়ে শেষ করলো। পড়তে পড়তে কখন যে বইটার ভেতর ঢুকে গেছে টেরই পায়নি! মাথা থেকে এখনো সেই উপন্যাসের রেশ কাটে নি। খুব ইচ্ছে করছে কোনোকিছু কল্পনা করতে। চুপচাপ শুয়ে থাকতে থাকতেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। ধীরে ধীরে কল্পনার রাজ্যে প্রবেশ করে প্রাপ্তি। দেখতে পায় একটু আগের পড়া গল্পের বর্ণিত দৃশ্যপট।

একটা ঘরে বসে আছে নায়িকা। হাতে ক্রুশের কাঁটা আর উল। ও সেটা দিয়ে সোয়েটার বুনছে। তার মুখটা নামানো। প্রাপ্তি ভালো করে দেখার চেষ্টা করে ওর মুখটা। দেখেই অবাক হয়ে যায় আরে এ যে আমাদের প্রাপ্তি! একটু পরেই সেখানে ঢুকতে দেখা যায় নায়ক কে। সাদা পাঞ্জাবি পরা সুদর্শন এক যুবক। সিল্কি চুল যার বাতাসে উড়ছে, চোখে মুখে হাসি হাসি ভাব, স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ছে যার আগমনে। কে ও? মুখটা ঠিক আবিরের মতো। না, আবিরের মতোন না ও আবির!

ছেলেটা এগিয়ে এলো প্রাপ্তির দিকে। কিছু রোমান্টিক কথোপকথনের পর শুরু হলো তাদের রোমান্স। আবির এগিয়ে এসে ওর ডান হাতটা ঠোঁটের কাছে এনে ঠোঁট ছোঁয়ালো। গল্পের প্রাপ্তি তাতে লাজুক হেসে মাথা নুইয়ে ফেললো। ছেলেটা যেন ওর আরও কাছে চলে এলো। আলতো করে ওর চিবুক ধরে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললো, “ভালোবাসি”।

ব্যস! এটুকু দেখেই আতঙ্কে চোখ খুললো প্রাপ্তি! সারা শরীর তার ভয়ে ভিজে গেছে। গায়ের সাথে লেপ্টে আছে জামা-কাপড়। উঠে বসে দোয়া পড়ে বুকে ফুঁ দেয় প্রাপ্তি। কী সর্বনাশ! এমন ভয়ংকর স্বপ্ন কি করে দেখতে পারে ও? তাও আবার আবির নামের ওই “ধমকি-ধামকি বজ্জাত ছেলে” টাকে নিয়ে? ছিঃ, প্রাপ্তি! শেইম অন ইউ! এসব তুই কী ভাবছিস? ভুলেও আর মাথায় আনবি না এগুলো! ভুলে যা! নয় ওই ছেলেটা যে বজ্জাত, বাবা গো!

#চলবে———–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here