অপরিচিত লেখিকাঃ তাহমিনা তমা পর্বঃ ২০

0
1025

#অপরিচিত
লেখিকাঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ২০

মেহরাব একটু আগাতেই দাদাজান দেখে বললো, আরে মেহরাব চলে এসেছো ?

মেহরাব কিছু না বলে দাঁড়িয়ে আছে।

হাসান মাহমুদ বললো, স্যার সব কাজ কমপ্লিট এখন শুধু গেস্টদের আসার অপেক্ষা।

দাদাজান বললো, হাসান,,, আমার একমাত্র নাতি রিসিপশন আজ। আমি কোনদিক থেকে কোনো খামতি চাই না। আর তুমি ছাড়া আমি কারো ওপর ভরসাও করতে পারি না জানো তো ?

হাসান বললো, স্যার আপনি চিন্তা করবেন না আমি সবটা সামলে নিবো।

হাসানের কথা শুনে মেহরাবের ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফোটে উঠলো। মানুষ কতটা খারাপ হলে এতোটা নিখুঁত অভিনয় করতে পারে। মেহরাবের ইচ্ছে করছে মেরে পুঁতে ফেলতে কিন্তু মেহরাব এখন সেটা করতে পারবে না। এই লোকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেও ঘৃণা হচ্ছে।

মেহরাব মনে মনে বললো, আজ দিনটা যত পারিস উড়ে নে। খুব তাড়াতাড়ি মুখ থুবড়ে মাটিতে পরবি।

ওকে দেখে মেহরাব বেশি সময় নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারবে না এখানে থাকলে তাই গটগট করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে এসে মেহরাবের পা থমকে গেলো বেডের দিকে তাকিয়ে । আরফা ঘুমিয়ে আছে বেডে, শাড়ীটা এখনো এলোমেলো হয়ে আছে। রুমের এসি অার ফ্যান দুটোই বন্ধ তবে বেলকনির দরজা খোলা। হালকা বাতাস আসছে বেলকনি থেকে আর তাতে আরফার মুখের ওপরের চুলগুলো মৃদু নড়ছে। আরফার এই রুপ খুব টানছে মেহরাবকে। এতোক্ষণ আগুন জ্বলতে থাকা মাথা যেনো মুহুর্তে ঠান্ডা হয়ে গেলো। কখন আরফার সামনে এসে দাড়িয়েছে মেহরাবের খেয়ালই নেই। ফ্লোরে হাটু মুড়ে বসে আরফার মুখের দিকে তাকালো। মুখে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে শাড়ীর আঁচল ঠিক করে দিলো। মেহরাবের কী হলো সে নিজেও জানে না। আলতো করে আরফার কপালে একটা কিস করলো।

বিশ্বাস করো দু’দিন আগেও তোমার জন্য আমার মনে কিছুই ছিলো না। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তোমার জন্য মনের মাঝে অজানা এক মায়া তৈরি হয়েছে। তোমার উপস্থিতি আমাকে শান্তি দিচ্ছে। জানি না কেনো তবে এটা কীভাবে সম্ভব তাও বুঝতে পারছি না।

মেহরাব আরফার কপালে আরো একটা কিস করে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখতে পেলো আরফা বেডে বসে আছে। সেদিকে একবার তাকিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো মেহরাব।

ওয়াশরুমের দরজা আটকানোর শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আরফার। উঠে বুঝতে পারে মেহরাব এসেছে। ওয়াশরুম থেকে বের হলে আরফা নোটিশ করতে লাগলো মেহরাবকে।

আরফা বললো, দুপুরে খেয়েছেন ?

মেহরাব হেয়ার ব্রাশটা টেবিলে রেখে আরফার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো, না কাজের জন্য খাওয়ার সুযোগ হয়নি।

আরফা বেড থেকে নামতে নামতে বললো, আমি ফ্রেশ হয়ে এসে আপনার খাবার দিচ্ছি।

মেহরাব বললো, নিচে গিয়ে খাওয়ার মুড নেই।

আরফা বললো, উপরেই এনে দিচ্ছি।

তুমি লান্স করছো নাকি ঘুমিয়েই কাটিয়েছো সারাদিন ?

আরফা মাথা নিচু করে বললে, মা খেতে ডেকেছিলো বলেছি আপনি এলে একসাথে খাবো। তাই মা আর দাদাজান খেয়ে নিয়েছে। আমি আপনার জন্য ওয়েট করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

মেহরাব অবাক হয়ে বললো, আমার জন্য ওয়েট করছিলে ? কে বলেছে আমার জন্য না খেয়ে বসে থাকতে তোমাকে ?

আরফা বললো, মা বলেছে আপনার আগে না খেতে।

মেহরাব মুচকি হেঁসে বললো, আর কিছু বলেনি ? বউয়ের দ্বায়িত্ব কী শুধু এটুকুই ?

আরফা না বুঝে বললো, মানে ?

মেহরাব মুচকি হেঁসে বললো, কিছু না তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।

আরফা আর কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার নিয়ে এলো নিচ থেকে। আরফা শুধু মেহরাবের জন্যই খাবার এনেছে নিজের জন্য না।

তা দেখে মেহরাব বললো, কী ব্যাপার আমার সাথে খাবে বলে সারাদিন না খেয়ে আছো। তাহলে তোমার খাবার কোথায় ?

আরফা খাবারটা টেবিলে রেখে বললো, আপনি খেয়ে নিন আমি নিচে গিয়ে খেয়ে নিবো। আপনি শুরু করুন।

মেহরাব বললো, আমার নিজের হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না,, খুব ক্লান্ত লাগছে। বউয়ের দ্বায়িত্ব যখন পালন করছো তাহলে ভালো করেই করো।

আরফা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, মানে ?

মেহরাব আরফাকে নিজের পাশে সোফায় বসিয়ে বললো, এতো মানে মানে করো কেনো ? তুমি এখন আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেবে।

মেহরাবের কথায় আরফা বিস্ফুরিত চোখে তাকালো তা দেখে মেহরাব হেসে বললো, এমনভাবে তাকালে মনে হচ্ছে খাইয়ে দিতে না বরং কারো খুন করতে বলছি।।

মেহরাবের কথায় আরফা মাথা নিচু করে ফেললো তা দেখে মেহরাব আবার বললো, কী হলো খাওয়াবে নাকি চলে যাবো ?

আরফা ব্যস্ত হয়ে বললো, না না খাওয়াচ্ছি।

আরফা এক লোকমা ভাত মেহরাবের মুখের সামনে ধরলো। মেহরাব খেয়াল করলো আরফার হাত মৃদু কাপছে। তা দেখে মুচকি হাসলো তবে কিছু বললো না চুপচাপ খাবারটা মুখে নিলো। আর খাবার মুখে নেওয়ার সময় ইচ্ছে করেই আরফার হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মেহরাবের ঠোঁটের স্পর্শ হাতে পেয়ে আরফা কেঁপে উঠলো। তবু নিজেকে স্বাভাবিক করে পরের লোকমা মুখের সামনে নিয়েই মেহরাব এক লোকমা আরফার মুখের সামনে ধরলে আরফা অবাক হয়ে তাকালো।

মেহরাব মুচকি হেঁসে বললো, শুনেছি স্বামী স্ত্রী এক প্লেটে খাবার খেলে ভালোবাসা বাড়ে। আর আমিও চাইছি আমাদের মধ্যে ভালোবাসা বাড়ুক।

আরফা একের পর এক অবাক হচ্ছে। কী রিয়াকশন দিবে তাও ভুলে যাচ্ছে ? চুপচাপ খাবার মুখে নিতে গেলে মেহরাব ইচ্ছে করে আরফার ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো আঙুল দিয়ে। এবারও আরফা কেঁপে উঠলো।

আরফা মনে মনে বললো, কী চাইছে মানুষটা ?

অতীত ভুলে ভালো থাকতে চাইছি। খুব কী অন্যায় আমার চাওয়াটা ?

আরফা অবাক চোখে তাকালো মেহরাবের দিকে।

মেহরাব বললো, আমি বুঝতে পারছি না, আমি যাই করছি বা বলছি তুমি তাতেই এতো অবাক কেনো হচ্ছো। আরে বিয়ে হয়ে গেছে আর মানুষ বিয়ে জীবনে একবারই করে। তাই সময় নষ্ট না করে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করাই ভালো নয় কী ? এমনিতেই পড়াশোনা আর ক্যারিয়ার নিয়েই জীবন থেকে ৩১ বছর চলে গেছে। এখন বউ পেয়েও যদি সময় নষ্ট করি তাহলে জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলো উপভোগ করার আগেই চলে যাওয়ার সময় হয়ে যাবে আর তোমারও কিন্তু ২৪ বছর হয়ে গেছে। তাই সব স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে চেষ্টা করো।

আরফা বরাবরের মতোই অবাক মেহরাবের আচরণে। আরফার এখন মনে হচ্ছে সিনথিয়া বলে কাউকে মেহরাব সত্যি ভালোবেসেছিলো তো ?

মেহরাব আরফাকে কিছু চিন্তা করতে দেখে বললো, কী ভাবছো যদি সিনথিয়াকে সত্যি ভালোবেসে থাকি তাহলে তোমাকে এতো তাড়াতাড়ি মেনে নিতে চাইছি কী করে ?

মেহরাবের এ কথায় আরফা সবচেয়ে বেশি অবাক হলো। তা দেখে মেহরাব বললো, আমি জানি মম তোমাকে সিনথিয়ার বিষয়ে সবই বলেছে। আর অবাক হওয়ার কিছু নেই। ডাক্তারি পেশায় কয়েকবছর কাটাও পরিস্থিতি কেমন সেটা জানলে মানুষ কী ভাবছে সেটাও বুঝতে পারবে। এখন আমি তোমার সামনে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছি তাতে তোমার সিনথিয়ার কথাই চিন্তা করা উচিত।

আরফা অবাক হয়ে মেহরাবের কথা শুনছে। এতো বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছে না আরফা।

এর মধ্যে মেহরাব চেহারায় কঠোর ভাব এনে বললো, তবে আমি চাই না তুমি ঐ নামের কাউকে নিয়ে চিন্তা করে আমাদের লাইফের এক সেকেন্ড সময়ও নষ্ট করো। আমি ওর জন্য আমার জীবনের ৬ বছর নষ্ট করেছি তবে আর না।

এটুকু বলে মেহরাব রুম থেকে বের হয়ে গেলো আর আরফা খাবার প্লেটে হাত ধুয়ে ভাবতে লাগলো মেহরাবের কথা। তবে কী মেহরাব জানে সিনথিয়া মরেনি বেঁচে আছে ? যদি না জানে তবে ভালোবাসার মানুষের ওপর এতো ক্ষোভ থাকতো না। কিন্তু আরফা বুঝতে পারছে না মেহরাব কীভাবে সিনথিয়ার কথা জানতে পারলো।

আরফাকে সাজানোর জন্য বিউটিশিয়ান চলে এসেছে মেহরাব জানতো না। সরাসরি রুমে ঢুকে গেলে দেখতে পায় আরফাকে সাজানো হচ্ছে।

সরি সরি।

পার্লারের মেয়েরা মুচকি হেঁসে উঠলো মেহরাবের কথায়। আরফা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।

মেহরাব চলে যেতে গিয়েও আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো, ও এমনই অনেক বিউটিফুল। আটা ময়দা মেখে ভূত সাজানোর দরকার নেই, হালকা সাজালেই হবে।

এটুকু বলেই মেহরাব চলে গেলো আর আরফা পড়লো লজ্জায়। কি দরকার ছিলো এভাবে বলার। মেয়েগুলো কেমন মুখ চেপে হাসছে।

হঠাৎ এক মেয়ে বলে উঠলো, ম্যাম স্যার মনে হয় আপনাকে অনেক ভালোবাসে।

মেয়েটার কথা শুনে আরফা চমকে তার দিকে তাকালো। মেহরাব তাকে ভালোবাসে কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব ? একদিনে কেউ কাউকে কী করে ভালোবাসতে পারে ? তবে মেহরাবের আচরণ আরফার মনে শুধু প্রশ্নের পর প্রশ্নই জাগিয়ে তুলছে। মেহরাবের কথা মতোই হালকা সাজানো হয়েছে আরফাকে। তবে এতেই যেনো অপ্সরা লাগছে তাকে। সাদা গ্রাউনের সাথে ডায়মন্ড জুয়েলারি, মাথায় সাদা হিজাবের ওপর তরতাজা সাদা গোলাপের একটা ব্যান্ড, মুখে হালকা মেকআপ, ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক। অসম্ভব সুন্দর লাগছে আজ তাকে। মেয়েরা সন্ধ্যার মধ্যে সাজিয়ে চলে গেলো আর মিমি এসে হাজির হলো।

ওয়াও আরু তোকে দেখে তো আমারই হুঁশ উঠে যাচ্ছে ভাইয়ার কী অবস্থা হবে ?

হঠাৎ মিমির গলা শুনে পেছনে তাকিয়ে মিমিকে দেখতে পেয়ে উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আর বললো, তোকে বলেছিলাম আগে আসতে এ বাড়িতে দম বন্ধ লাগছে আমার। তাও এতো লেট কেনো করলি তুই ?

মিমি বললো, আমার ছেলেকে তো চিনিস না তাই এটা বলতে পারছিস। জীবনটা বাঁশপাতা করে দিলো একে বারে।

আরফা বললো, তো সে কোথায় এখন ?

মিমি বললো, বাইরে বাপের কোলে আছে। মেহরাব ভাইয়ার সাথে কথা বলছে। তুইও নিচে চল গেস্ট অনেক চলে এসেছে। আর শোন ভাইয়াকে আজ যা লাগছে না জাস্ট ওয়াও। একটু দেখে শুনে রাখিস এতো সুন্দর বর পেয়েছিস কেউ যেনো নিয়ে উড়াল না দেয়।

আরফা রাগী ফেস করে বললো, মিমি।

মিমি হেঁসে বললো, রাগ করতে হবে না চল আর আন্টিও চলে এসেছে মেহরাব ভাইয়া নাকি গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলো।

আরফা খুশি হয়ে বললো, মা চলে এসেছে ?

মিমি বললো, হুম শুধু আন্টি নাকি তোর মামা মামিরা আর ভাই বোনও এসেছে।

মিমি আরফাকে নিয়ে নিচে যেতে লাগলো। মেহরাব মিমির হাসবেন্ডের সাথে কথা বলছিলো তখন চোখ গেলো সিঁড়ির দিকে। মিমির সাথে হাসতে হাসতে নামছে আরফা। মেহরাব পলক ফেলতে ভুলে গেছে মনে হচ্ছে কোনো অপ্সরা দেখছে চোখের সামনে। মেহরাবের কাছে সবচেয়ে মুগ্ধকর লাগছে আরফার হাসিটা। কাল থেকে আরফা কেমন গম্ভীর হয়ে আছে তাই হাঁসিটা আরো বেশী মুগ্ধ করছে মেহরাবকে। কখন মিমির হাসবেন্ড সরে গিয়ে দিয়ান মেহরাবের সাথে এসে দাড়িয়েছে মেহরাব খেয়ালই করেনি।

দিয়ান মেহরাবের চোখের সামনে তুড়ি মেরে বললো, পড়ে না চোখের পলক কী তোমার রুপের ঝলক। দোহায় লাগে মুখটি তোমার একটু আঁচলে ঢাকো,, আমি জ্ঞান হারাবো মরেই যাবো,,,

মেহরাব ভ্রু কুচকে বললো, ডাক্তারি রেখে সিঙ্গার হলি কবে থেকে।

দিয়ান বললো, তুই যখন থেকে ভাবির দিওয়ানা হলি।

মেহরাব হাল্কা রেগে বললো, হোয়াট রাবিশ ?

দিয়ান বললো, থাক রাগ করিস না বুঝতে পারছি এমন সুন্দরী বউ থাকলে না তাকিয়ে কী থাকা যায় ?

মেহরাব রেগে বললো, এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।

আরফা তার পরিবারের সবার সাথে কথা বলতে বলতে মেহরাবকে দেখছে। আজ অনেক বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে মেহরাবকে। আরফার মতো মেহরাবও আজ সব সাদা পড়েছে। মেহরাবকে এখন একদম একটা প্রিন্স মনে হচ্ছে আরফার কাছে আর না চাইতেও বারবার চোখ যাচ্ছে মেহরাবের দিকে। হাসান মাহমুদ আর ইশতিয়াক মাহমুদও এসেছে। এদিকে মেহরাব একটু পর পর মেইন গেটের দিকে তাকাচ্ছে। ফাংশনের শেষের দিকে রিয়ান তার ফোর্স নিয়ে প্রবেশ করলো বাড়িতে। কেউ বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে। তাদের দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে উঠলো মেহরাবের।

রিয়ান সোজা হাসান মাহমুদ আর ইশতিয়াক মাহমুদের সামনে গিয়ে বললো, You are under arrest.

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here