অপরিচিত পর্বঃ ০৮

0
1062

অপরিচিত পর্বঃ ০৮
লেখিকাঃ তাহমিনা তমা

হসপিটালের বেডে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে মুজাহিদ খান। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে পৃথিবী থেকে যাবার আগে একটাই ইচ্ছে এখন তার। মৃত্যুর আগে নিজের পুত্রবধূর কাছে ক্ষমা চাইতে চান তিনি, জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করার পর সে বুঝতে পেরেছে অন্যায় করেছে মেহেকের সাথে কিন্তু তখন করার মতো কিছুই ছিলো না তার। মেহেক আর মেহরাবকে খুঁজতে অনেকবার কানাডা পাঠিয়েছেন নিজের ম্যানেজার হাসান মাহমুদকে। কিন্তু প্রত্যেকেবারই খালি হাতে ফিরেছে সে। তাই ছেলের বউ আর নাতিকে ফিরে পাবার আশা দিনে দিনে একদম তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। নিজের কলিজার টুকরো নাতিটাতে দুচোখ ভরে দেখতে চান মৃত্যুর আগে। মুজাহিদ খান জানেন না তার জীবনের এই শেষ আশা পূরণ হবে কী না। হঠাৎই তার আরফার কথা মনে পড়লো। মেয়েটাকে কেনো জানি বড্ড বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে মুজাহিদ সাহেবের। তাকে দেখে মনে হয় একমাত্র সেই পারবে মেহরাব আর মেহেক কে খুঁজে দিতে।

নার্সকে ডেকে বললো, নার্স এদিকে এসো।

নার্স মুজাহিদ খানের সামনে এসে বললো, জী স্যার বলুন ? কিছু লাগবে আপনার ?

মুজাহিদ খান গম্ভীর গলায় বললো, ডক্টর আরফাকে ডেকে নিয়ে আসো এখনই।

নার্স একটু অবাক হয়ে বললো, কিন্তু স্যার উনি তো আপনার চিকিৎসা করেন না। আপনার কী কোনো সমস্যা হচ্ছে ? আমি ইশতিয়াক স্যারকে ডেকে আনবো ?

মুজাহিদ খান বিরক্তি নিয়ে বললো, যেটা করতে বলেছি সেটা করো। এতো প্রশ্ন কেনো করতে থাকো ?

নার্স আমতা আমতা করে বললো, স্যার এখানে তো সবার আসার অনুমতি নেই।

মুজাহিদ খান রেগে বললো, হসপিটালের মালিক কী তুমি নাকি আমি ?

নার্স ভয়ে ভয়ে বললো, স্যার আপনি।

মুজাহিদ খান আগের মতো রাগি গলায় বললো, তাহলে কোথায় কার যাওয়ার অনুমতি আছে আর কোথায় কার যাওয়ার অনুমতি নেই সেটা আমি বুঝে নিবো। এখন তোমাকে যেটা করতে বলেছি সেটা করো চুপচাপ।

নার্স ভয়ে ভয়ে আবার বললো, কিন্তু ইশতিয়াক স্যার জানলে রাগ করবেন আমার সাথে।

মুজাহিদ খান এবার রেগে আগুন হয়ে নার্সের দিকে তাকালো তা দেখে নার্স ভয়ে কেঁপে উঠলো। মুজাহিদ খানের রাগ সম্পর্কে সবারই জানা আছে তাই নার্স কাঁপতে কাঁপতে বললো, এখনই ডেকে এনে দিচ্ছি স্যার।

নার্স আর এক মুহূর্ত দেড়ি না করে আরফার কেবিনের দিকে যেতে লাগলো। মুজাহিদ খান রেগে গেলে তার চাকরি যেতে হয়তো দু মিনিট সময়ও লাগবে না। চাকরি হারানোর থেকে ইশতিয়াক স্যারে দুটো বকা খাওয়া ভালো মনে করলো নার্স। এদিকে আরফার আজ ডিউটি টাইম শেষ তাই সব গুছাতে শুরু করেছে তখনই নার্স নক করলো কেবিনের দরজায়।

আসবো ম্যাম ?

আরফা দরজার দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁ আসুন।

নার্স ভেতরে গিয়ে আরফার দিকে তাকিয়ে বললো, মুজাহিদ স্যার আপনাকে এখনই যেতে বলেছে।

আরফা প্রথমে একটু অবাক হলো। আরফা মনে করেছিলো সেদিন হয়তো ঘুমের থেকে উঠে এসব বলেছে মুজাহিদ স্যার পরে আর মনে থাকবে না হয়তো যতই হোক বয়স হয়েছে তার। আরফাকে সে মনে রেখেছে এতে একটু অবাকই হলো আরফা। আরফার হঠাৎ আবার ইশতিয়াকের হুমকির কথা মনে পড়ে গেলো। ইশতিয়াকের অনেক পাওয়ার সে চাইলে সত্যি আরফার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই আরফা যা করার আড়াল থেকে করতে চেয়েছিলো। কিন্তু এখন মুজাহিদ সাহেবের কাছে গেলে ইশতিয়াক যদি সত্যি ওর ক্যারিয়ারের ক্ষতি করে দেয়।

এসব ভাবনার মাঝেই নার্স আবার বললো, কী ভাবছেন ম্যাম ? স্যার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

আরফা গম্ভীর গলায় বললো, আপনি জান আমি আসছি।

নার্স ভীত গলায় বললো, ম্যাম একটু তাড়াতাড়ি আসবেন নাহলে স্যার হয়তো আমার ওপর রেগে যাবেন।

আরফা আগের ন্যায় বললো, হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি আপনি যান আমি এখনই আসছি।

নার্স চলে গেলে আরফা সব গুছিয়ে মুজাহিদ খানের কেবিনের দিকে যেতে লাগলো। যতই আগাচ্ছে ততই ইশতিয়াকের হুমকির ভয় আরফার মনে জেঁকে বসছে। ডাক্তারি পড়া কমপ্লিট করতে অনেক লড়াই করতে হয়েছে আরফা আর তার মাকে এখন ক্যরিয়ারের শুরুতেই কোনো খারাপ কিছুর সম্মুখীন হলে আরফা বা তার মা কেউ সেটা সয্য করতে পারবে না। ভাবতে ভাবতেই আরফা কেবিনের সামনে চলে এলো। অনেকটা সাহস নিয়ে নক করলো কেবিনে।

আসবো স্যার ?

মুজাহিদ খানের ব্রেন খুব তীক্ষ্ণ তাই আরফার গলা চিনতে কষ্ট হলো না তার। খুশি হয়ে বললো, হ্যাঁ হ্যাঁ এসো তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।

আরফা কেবিনে প্রবেশ করে মুচকি হেঁসে বললো, আসসালামু আলাইকুম স্যার।

মুজাহিদ খানও মুচকি হেঁসে বললো, ওয়ালাইকুম আসসালাম।

সেদিন রাতে আরফাকে দেখেছে ঠিকই কিন্তু খুব ভালো করে না কারণ ঘুমের চোখ ছিলো কিছুটা। আজ আরফাকে দেখে মুজাহিদ খান মনে মনে বলে উঠলো মাশাআল্লাহ খুব মিষ্টি মেয়েটা।

আরফা মুখে হাঁসি বজায় রেখে বললো, কেমন আছেন স্যার ?

মুজাহিদ খান ভাবনা বাদ দিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, আলহামদুলিল্লাহ শরীরটা আল্লাহ এখন ভালোই রেখেছে। তবে মনটা একদমই ভালো নেই।

মুজাহিদ খানের মলিন মুখ দেখে আরফার মনটাও খারাপ হয়ে গেলো। খুব ইচ্ছে করছে মানুষটাকে সাহায্য করতে। কিন্তু সে কী করবে ? মেহরাব নামের সেই ছেলেটা আর তার ম্যাসেজের রিপ্লে দিচ্ছে না। আরফা যখন বললো আপনার দাদাজানের আপনাকে খুব প্রয়োজন। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনি বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করুন দেরি হয়ে যাওয়ার আগে। এই ম্যাসেজ পাওয়ার পর আর কোনো রিপ্লে আসেনি ওপাশ থেকে। আরফা অনেকবার নক করেছে কিন্তু কিছু বলেনি মেহরাব। তাই আরফাও হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে।

আরফাকে অন্যমনস্ক দেখে মুজাহিদ সাহেব বললো, কী ভাবছো আরফা মণি ?

আরফা হাসি মুখে বললো, কিছু না স্যার।

মুজাহিদ সাহেব মুখ গুমরা করে বললো, তোমাকে না বলেছি আমাকে দাদাজান বলতে।

আরফা চিন্তিত হয়ে বললো, কিন্তু স্যার,,,

মুজাহিদ সাহেব আহত স্বরে বললো, আমি কী তোমার দাদাজান ডাক শোনার যোগ্য নই ?

আরফা ব্যস্ত হয়ে বললো, এ মা তা কেনো হবে ? আমি সেটা বলছি না। আসলে হসপিটালের অন্য সবাই কী ভাববে তাই আর কী ?

মুজাহিদ সাহেব হতাশ গলায় বললো, আসলে কী জানো আরফা ? এই হসপিটালে এখন পর্যন্ত আমার জন্য যে যা করেছে স্বার্থের জন্য করেছে। এমন কী সবাই তাই করে ? জীবনের শেষ সময় এসে মানুষ মানুষের সঙ্গ চায়। বয়স হয়ে গেলে মানুষ গল্প করতে পছন্দ করে। কিন্তু বুড়ো মানুষের সাথে গল্প করতে কেউ চায় না। বিরক্ত হয় তাদের কথায়। আমি বরাবরই বড্ড চাপা স্বভাবের মানুষ ছিলাম এখনো আছি কিন্তু আমি সবসময় বড্ড একা ছিলাম। ছেলের দু বছর বয়সে আমার স্ত্রী মারা যান কী এক রোগে। টাকার অভাব ছিলো না আমার কিন্তু ভালো ডক্টরের জন্য ভালো চিকিৎসা হয়নি তার। তাকে খুব ভালোবাসতাম তাই আর দ্বিতীয় বিয়ে করা হয়ে উঠেনি। ছেলেটা একটু বড় হতেই বিদেশ পাঠিয়ে দিলাম ভালো ডক্টর বানাতে। ছেলে যখন বিয়ে করে বউমা আর নাতি নিয়ে বাড়ি ফিরলো প্রথমে রেগে থাকলেও পড়ে আমার একাকিত্ব দূর হয়েছিলো। ছেলে, ছেলের বউ আর নাতি নিয়ে ভরা সংসারে খুব ভালো ছিলাম কিন্তু সেখানেও কারো কালো ছায়া পরে গেলো।

এটুকু বলে ক্লান্ত হয়ে থামলেন মুজাহিদ সাহেব। আরফা উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো তা ঢকঢক করে খেয়ে নিলেন তিনি। একে একে সব খোলে বললেন আরফাকে তিনি।

সব বলা শেষে বললেন, অনেকদিন পর নিজের কষ্ট কারো সাথে ভাগ করে নিয়ে ভালো লাগছে। আচ্ছা আরফা মণি আমার বউমার সাথে আমি অন্যায় করেছি তাই না ?

আরফা মলিন মুখে বললো, হ্যাঁ তা তো করেছেন।

মুজাহিদ খান আবার অনুরোধের স্বরে বললো, আরফা মণি একটু খোঁজে দাও না আমার বউমা আর মেহরাবকে। ওদের কাছে ক্ষমা না চাইলে আমি মরেও শান্তি পাবো না যে। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে তুমি পারবে তাদের খুঁজে দিতে।

আরফার বড্ড কষ্ট হচ্ছে মুজাহিদ খানের জন্য কিন্তু সে তো চেষ্টা করেছে। এবার বুঝতে পেরেছে আরফা, হয়তো এসবের জন্য মেহরাব আর তার মায়ের মনে অভিমান জমে আছে তাই মেহরাব আর কিছু বলেনি। আরফা ভেবে নিলো সে আবার চেষ্টা করবে মেহরাবকে এখানে আনার জন্য।

আরফা মুজাহিদ সাহেবের হাত ধরে বললো, আমি কখনো আমার দাদাজানকে দেখিনি আমার জন্মের অনেক আগেই আমার দাদা-দাদি ইন্তেকাল করেছেন তাই তাদের আদর কেমন হয় আমি জানি না। আপনাকে দাদাজান বলে ডেকেছি তাই আপনাকে কথা দিলাম আমি তাদের খোঁজে এনে দিবো আপনার কাছে।

কৃতজ্ঞতায় চোখে পানি চলে এসেছে মুজাহিদ সাহেবের। মাত্র দুদিনের পরিচয়ে আরফা তাকে এতোটাই গুরুত্ব দিবে ভাবেননি।

আরফা এবার বললো, দাদাজান এখন আমাকে যেতে হবে বাসায় মা আছে চিন্তা করবে।

মুজাহিদ সাহেব পাশের টেবিল থেকে নিজের ওয়ালেট নিয়ে একটা কার্ড বের করে আরফার হাতে দিলো আর বললো, আমিও একটু পর বাসায় চলে যাবো। এখন অনেক সুস্থ হসপিটালে আর ভালো লাগছে না। এটা আমার বাড়ির ঠিকানা তুমি এলে খুব খুশি হবো আমি।

আরফা মুচকি হেঁসে বললো, আমি অবশ্যই যাবো এখন তাহলে আমি আসি।

মুজাহিদ সাহেব মাথা দিয়ে সায় দিতেই আরফা আবার সালাম দিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে এলো। আরফার মাথায় এখন হাজারটা চিন্তা ঘুরছে কীভাবে মেহরাবকে রাজি করাবে এখানে আনার জন্য সেটা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছে না আরফা।

হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বেডে বসে আছে মেহরাব। আজ দুদিন ধরে মমকে দাদাজানের কথা বলার চেষ্টা করছে মেহরাব কিন্তু মেহেক বাংলাদেশ বা মুজাহিদ খান সম্পর্কে কিছু শুনতে রাজি নন। মেহেক চেয়েছিলো স্বামীর স্মৃতি আর সন্তানকে আঁকড়ে ধরে স্বামীর বাড়িতে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে৷ কিন্তু দাম্ভিক মুজাহিদ খান তাকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। মেহেক তো কম চেষ্টা করেনি মুজাহিদ খানের যোগ্য পুত্রবধু হয়ে উঠার তাহলে কেনো এতো অবহেলা মুজাহিদ খানের। তাকে তো মেহেক নিজের বাবার জায়গায় বসিয়েছিলো কিন্তু সে মেয়ের জায়গা তো দূর পুত্রবধূর জায়গাও দিতে পারেনি মেহেককে, এতো ছোট মন তার । শুধু ছেলে আর নাতির দিকে তাকিয়ে মেনে নিয়েছিলো। ছেলে চলে যেতেই মেহেক আরো অসয্য হয়ে উঠলো তার কাছে ?

সেদিন রাতে আরফার ম্যাসেজ দেখে তখনই মমের কাছে চলে যায় মেহরাব।

বেডে বসে একটা ডাক্তারি বই পড়ছিলো মেহেক তখনই মেহরাব নক করলো দরজায়।

May i come in Mom ?

মেহরাব তার মমের রুমে খুব কম আসে। তাই ছেলেকে দেখে প্রথমে একটু অবাকই হয় মেহেক। সিনথিয়া চলে যাবার পর থেকে মেহরাব আরো গম্ভীর হয়ে গেছে মমের সাথে আগের থেকেও কম কথা বলে এখন। এসব ভেবে পরে আবার খুশি হয়ে বলে।

হ্যাঁ এসো এসো।

অস্থির হয়ে মেহরাব বললো, মম একটা কথা বলার ছিলো।

ছেলেকে এতটা অস্থির দেখে মেহেক একটু অবাক হলো। একটু চিন্তিত হয়ে বললো, কোনো সমস্যা মেহরাব ?

মেহরাব ব্যস্ত হয়ে বললো, মম দাদাজানের আমাদের প্রয়োজন।

এতো বছর পর ছেলের মুখে দাদাজান নাম শুনে খানিকটা চমকে উঠলো মেহেক। দাদাজান শব্দটা বারবার কানে বাজছে, মেহরাবের পরের বলা কোনো কথা মেহেকের কানে যায়নি। সে একটা শব্দে আঁটকে গেলো দাদাজান।

মেহেক বই রেখে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, দাদাজান বা বাংলাদেশ সম্পর্কে তোমার থেকে কিছু শুনতে চাই না আমি মেহরাব।

মমের কথা শুনে মেহরাবের কথা বন্ধ হয়ে গেলো।সে চমকে মমের দিকে তাকালো। একটু আগের হাসি মুখটা কালো মেঘের আড়ালে ঢাকা পরে গেছে।

মেহরাব আবার বললো, কিন্তু মম,,,,

মেহরাবের কথা শেষ হওয়ার আগেই মেহেক আবার বললো, আমি একটু একা থাকতে চাই মেহরাব প্লিজ।

মমের কথা শুনে মেহরাব আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মেহরাব বুঝতে পারছে তার মমের অভিমানের কারণ। মমের অভিমান হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু দাদাজানের তো খুব প্রয়োজন তাদের সেটা মমকে কীভাবে বুঝাবে মেহরাব ?

আজ অনেক ভেবে মেহরাব ঠিক করে নিলো আজ মমের কোনো কথা না শুনে সব খোলে বলবে। এতেও যদি মমের রাগ না কমে সে একাই চলে যাবে বাংলাদেশে। দাদাজানের বিপদে হাত গুটিয়ে বসে থাকা মেহরাবের পক্ষে সম্ভব নয়।

ব্রেডে বাটার লাগাতে লাগাতে মেহরাব বললো, মম আমার একটা কথা ছিলো।

মেহেক খাবার চিবোতে চিবোতে থেমে গেলো মেহরাবের কথায়। সে জানে আবার সেই দাদাজানের কথা বলবে তাই মেহেক বললো, দাদাজান বা বাংলাদেশ বাদে কিছু বলার থাকলে বলতে পারো।

মেহরাব হাতের ব্রেডটা প্লেটে রেখে বললো, দাদাজান বিপদে আছে তার আমাদের প্রয়োজন।

মেহেক খানিকটা রেগে বললো, মেহরাব আমি তোমাকে,,,

মেহরাব মেহেকের কথা শেষ হওয়ার আগেই বললো, আমি জানি তুমি মানা করেছো কিন্তু সেও আমার আপনজন। তোমার কেউ না হলেও তার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক। আমারও কিছু দ্বায়িত্ব আছে তার ওপর। তার বিপদে আমি যদি তার পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে যাবে। মম আমি জানি দাদাজান তোমার সাথে অন্যায় করেছে কিন্তু তোমারও বুঝা উচিত চোখের সামনে নিজের একমাত্র সন্তানের লাশ দেখা সহজ নয় কোনো বাবার কাছে। তখন দাদাজানের মনের অবস্থা কেমন ছিলো ভালো করেই জানো। হয়তো এখন সে নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত। তুমি যেতে না চাইলে থাকো কিন্তু আমি খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে যাচ্ছি।

এটা বলে মেহরাব কিছু না খেয়েই বের হয়ে গেলো এদিকে মেহেকও হাতের ব্রেডটা প্লেটে রেখে দিলো। চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে তার।

আনমনে বলে উঠলো, তোমাকে কে বলেছে মেহরাব তিনি আমার কেউ নয়। আমি তার কেউ না হলেও তিনি আমার বাবা। সে জায়গা আমি নিজে তাকে দিয়েছি। কিন্তু কী করবো বলো বড্ড আঘাত দিয়ে রেখেছে এই বুকটাতে। তখন তিনি যেমন নিজের সন্তান হারিয়েছিলেন আমিও আমার ভালোবাসা হারিয়েছিলাম। তার যেমন কষ্ট হয়েছিলো আমারও কী কষ্ট কিছু কম হয়েছিলো ? কিন্তু তিনি আমার কষ্ট দেখতে পাননি। সন্তান হারানোর কষ্ট জেনেও আমার থেকে তোমাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলো মেহরাব। কীভাবে ভুলবো আমি সেসব বলতে পারো ? তোমার বাবা মৃত্যুর আগে নিজের রক্তমাখা হাতে আমার হাত আঁকড়ে ধরে বলেছিলো আমার বাবার খেয়াল রেখো মেহেক, তার যে কেউ রইলো না। নিজের আর আমাদের সন্তানেরও খেয়াল রেখো ভালোভাবে মানুষ করো তাকে। মেহরাব তোমার দাদাজান আমাকে সেই কথাও রাখতে দেয়নি। একটু খানি কষ্ট নিয়ে আমি বাংলাদেশ ছাড়িনি মেহরাব। সেটা তুমি হয়তো কোনোদিনও বুঝতে পারবে না।

মেহেক চোখের কোণে জমা পানিটা মুছে নিয়ে ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে গেলো। এবার হয়তো মা ছেলের সম্পর্কে ফাটল ধরবে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here