অপরিচিত পর্বঃ ০৭

0
956

অপরিচিত পর্বঃ ০৭
লেখিকাঃ তাহমিনা তমা

আরফা গিয়ে নিজের কেবিনে বসে পড়লো। সে কিছু ভেবে পাচ্ছে না সে কী করবে ? কোথায় খুঁজবে মেহরাবকে কীভাবে পাবে তার দেখা ? হঠাৎ আরফার চোখ গেলো নিজের ল্যাপটবের দিকে। তাড়াতাড়ি ল্যাপটব অন করে ফেসবুকে মেহরাব খান নাম লিখে সার্চ দিলো আর মেহরাব খান নামের অসংখ্য মানুষের আইডি এসে ভরে গেলো ল্যাপটবের স্কিনে।

আরফা হতাশ গলায় বললো, এতো আইডির ভীড়ে একজনকে কীভাবে খুঁজে বের করবো ?

আরফা একে একে আইডি দেখতে লাগলো। এক আইডিতে গিয়ে খানিকটা অবাক হলো আরফা। অনেকটা কৌতূহল নিয়ে আইডিতে গেলো। প্রোফাইলে খুব সুন্দর একটা ছেলের ছবি দেওয়া। দেখে বুঝা যাচ্ছে না ফরেনার নাকি বাঙালি। গায়ের রং দেখে ফরেনার মনে হলেও মুখের আদুল বলছে সে খাটি বাঙালি আর অদ্ভুতভাবে মিস্টার মুজাহিদ খানের চেহারার সাথে মিল আছে। আরো ভালো করে দেখতে লাগলো। ব্ল্যাক টিশার্টের ওপর ডার্ক ব্লো জ্যাকেট গায়ে, চোখে সানগ্লাস ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি, চুলে হাত দিয়ে অ্যাটিটিউড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামনের দিকে তাকিয়ে। আরফার জায়গায় যেকোনো মেয়ে থাকলে হয়তো ক্রাশ খেতো কিন্তু আরফা সেসব না ভেবে ডিটেইলস থেকে বুঝতে পারলো লোকটা কানাডার ফেমাস এক হসপিটালের একজন নিউরোসার্জন আর ফলোয়ারের সংখ্যা অনেক বেশি। আরফার কেনো জানি মনে হচ্ছে এটাই সেই আরফা যাকে খুঁজছে। অনেক ভেবে চিন্তে একটা ম্যাসেজ দিলো একটু কথা বলা যাবে লিখে। এখন রিপ্লাই পাওয়ার অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার নেই। আরফা একটু চালাকি করে বাংলায় ম্যাসেজ লিখে সেন্ট করেছে।

আরফা চিন্তা করতে লাগলো, যদি এই মেহরাব সে হয় তাহলে হয়তো বাংলা বুঝতে পারবে। যদি বুঝতে না পারে তাহলে কী হবে ? কত বছর বয়স থেকে কানাডা আছে সেটাও তো জানি না বুঝবো কীভাবে বাংলা জানে নাকি ? যদি সিন করে রিপ্লাই দেয় তাহলে বুঝবো বাংলা জানে আর যদি সিন করে রিপ্লাই না দেয় বুঝবো বাংলা জানে না তখন নাহয় আবার ইংরেজিতে দিবো।

সাদা বরফের চাদরে ঢাকা পরেছে চার ঋতুর দেশ কানাডা। জানুয়ারি মাসেই সবচেয়ে বেশি শীত পরে তবে পুরো শীতকালেই কানাডাজুড়ে হয় প্রচণ্ড তুষারপাত। এ সময় তাপমাত্রা থাকে খুবই কম। কোনো কোনো প্রদেশে চলে গেছে শূন্য দশমিক হিমাঙ্কে ২০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড নিচে। মাঝেমধ্যেই হচ্ছে তুষার ঝড়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ হয়ে গেছে তুষার ঝড়ের কারণে। মানুষজন প্রকৃতির কাছে হয়ে পড়েছে বড় অসহায়। যদিও কানাডা অনেক উন্নত দেশ, তার পরও নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। তুষার ঝড়ে ভেঙে পড়ে বড় বড় গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি আর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে অনেক এলাকা। শীতকালে রাস্তাঘাট থেকে তুষার সরানোর জন্য নামানো হয়েছে স্নো-ট্রাক। হাইওয়েগুলো পিচ্ছিল থাকার কারণে গাড়ির গতি সীমা কমানো হলেও ঘটে নানা দুর্ঘটনা। প্রচণ্ড শীতেও দেখা যায় ছোট ছোট ছেলেমেয়ে তুষার নিয়ে খেলছে। মেহরাব শীতের পোষাকে নিজেকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই লেকের পাড়ে। লেকের পানি জমে বরফে পরিণত হয়েছে, লেকের সাথের পাহাড়টা সাদা বরফে ঢাকা পরে আছে আর সেখানে স্কিইং করছে অনেকে। মেহরাব শুধু দাঁড়িয়ে দেখছে। এমনই একটা শীতে সিনথিয়াকে স্কিইং শিখিয়েছিল মেহরাব। সিনথিয়ার কথা মনে পড়তেই বুকের বা বা পাশটায় তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো মেহরাব। সেদিন যদি বুঝতে পারতো সিনথিয়াকে যেতে দিলে আর কখনো ওর বুকে ফিরে আসবে না তাহলে কখনোই যেতে দিতো না নিজের প্রিয়তমাকে। কিন্তু নিয়তির কাছে মানুষ খুব বেশি অসহায়। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গাড়ির দিকে চলে গেলো। আজ আর হসপিটালে যাবে না ঠিক করেছে মেহরাব। একটা অপারেশন ছিলো অনেক ক্রিটিক্যাল। আল্লাহর অশেষ কৃপা আর মেহরাবের চেষ্টায় বেঁচে গেছে লোকটা। অপারেশন শেষ করে এখানে চলে এসেছে এখন প্যালেসে যাবে তাই সেদিকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো। হাইওয়ে পিচ্ছিল হওয়ায় অনেক ধীর গতিতে ড্রাইভ করছে মেহরাব সাথে লো ভয়েসে গান চলছে। একটা সময় ইংলিশ গান আর হিন্দি গান নিয়ে তুমুল ঝগড়া হতো মেহরাব আর সিনথিয়ার কিন্তু আজ ঝগড়া করার মানুষটা আর নেই তবে চলছে তারই পছন্দের হিন্দি গান

♪♪♪♪
Agar tum mil jao
Zamana chod denge hum

গানের প্রত্যেকটা কথা যেনো সিনথিয়া মেহরাবের কানে কানে বলছে। খুব পছন্দ ছিলো গানটা সিনথিয়ার। মাঝে মাঝে নিজেই গেয়ে শুনাতো মেহরাবকে।

হঠাৎ মেহরাব নিজে নিজেই বলে উঠলো, সবসময় মিথ্যা বলেছো তুমি সিনথিয়া। কথা দিয়েছিলে কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না। নিজের কথা রাখনি তুমি। চলে গেছো আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে। খুব বেশি মিস করি তোমায় শুনতে পাচ্ছো তুমি আমার কথা। বুঝতে পারছো আমার বুকের তীব্র যন্ত্রণাটা। কখনো বুঝতে পারোনি তুমি আমাকে কখনোই না।

কথাগুলো বলতেই মেহরাবের চোখ থেকে টপ করে এক বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়লো। আঙ্গুলে থাকা এনগেজমেন্ট রিংটা একবার দেখে নিলো মেহরাব। সিনথিয়া যখন এটা কিনেছিলো ওর একটুও পছন্দ হয়নি কিন্তু আজ সবচেয়ে প্রিয় জিনিস এটা। কারণ এটাই সিনথিয়ার শেষ স্মৃতি ওর কাছে। রিংটাতে একটা কিস করলো মেহরাব কারণ এটাতে সিনথিয়ার স্পর্শ আছে। কখনো আঙ্গুল থেকে এটা খোলে না। প্যালেসে পৌঁছে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো আর গিয়ে একটা হট শাওয়ার নিলো। এক কাপ কফি নিয়ে বেলকনিতে বসে বাইরে তাকিয়ে রইলো। স্নো পড়া শুরু হয়েছে সেগুলো দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যে চারদিকে অন্ধকার নেমে এলো। এখানে গ্রীষ্মকালে যেমন দেরিতে সূর্য ডুবে শীতকালে ডুবে তেমনই তাড়াতাড়ি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে দিন হয় মাত্র ৮ ঘণ্টার মতো। মেহরাব রুমে এসে নিজের ল্যাপটব নিয়ে বসে পড়লো কিছু কাজ করতে হবে। ল্যাবটব অন করতেই একটা নোটিফিকেশন দেখতে পেলো। মেহরাব কিছু না ভেবেই ওপেন করলো আর সামনে যা ভেসে উঠলো তাতে মেহরাবের কপাল কুঁচকে গেলো সাথে অবাকও হলো। এতো বছর হয়ে গেলো মেহরাব ফেসবুক ইউজ করছে কখনো বাংলায় ম্যাসেজ পায়নি। মেহরাব যখন কানাডা আসে তখন ওর বয়স সাত বছর ক্লাস ওয়ানে পড়ে কিন্তু বাংলা পড়তে লেখতে শিখে গেছে ভালোভাবে তারপর চর্চা ছিলো তাই বাংলা ভাষাটা পড়া আর লেখা মোটামুটি ভালোই পাড়ে কিন্তু এভাবে কখনো বাংলা ম্যাসেজ পায়নি। তাই কৌতুহল নিয়ে আইডিতে গেলো। পুরো আইডি চেক করে কোনো ছবি পেলো না। আসলে আরফা ফেসবুকে নিজের ছবি দেয়নি কখনো।

আইডি গিয়ে মেহরাব বললো, আরফা ইসলাম এই নামে তো আমি কাউকে চিনি না। ছবিও নেই যে দেখে চিনতে পারবো।

ডিটেইলস চেক করে জানতে পারলো আরফা বাংলাদেশী। লিভ ইন ঢাকা বাংলাদেশ লেখা। বাংলাদেশ লেখাটা দেখে মেহরাবের বুকের ভেতরটা কেমন যেনো করে উঠলো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো নিজের ফেলে আসা শৈশব। এক জায়গায় মেহরাবের চোখ আঁটকে গেলো।

New Doctor of Mehrab Health Care Hospital.

মেহরাব বার বার আওড়াতে লাগলো, মেহরাব হেলথ কেয়ার হসপিটাল ?

মেহরাব তাড়াতাড়ি আরফার আইডি থেকে বের হয়ে গুগোলে সার্চ দিলো মেহরাব হেলথ কেয়ার হসপিটাল লিখে। সাথে সাথে হসপিটালের সমস্ত ইনফরমেশন চলে এলো। নিজের বাবা আর দাদার নাম দেখে মেহরাবের হাত পা জমে গেলো। তার নামে একটা হসপিটালও আছে সেটা জানা ছিলো না মেহরাবের। পুরো হসপিটালের ছবিও এসে পড়েছে সাথে মিস্টার মুজাহিদ খানের ছবিও। এতো বছর পরও দাদাজানকে দেখে মেহরাবের একটুও কষ্ট হলো না চিনতে। ছবির ওপর একবার আঙ্গুল বুলিয়ে নিলো মেহরাব সাথে সাথে চোখের কোণে পানি জমে গেলো। মেহরাবের হঠাৎ আরফার কথা মনে পড়ে গেলো।

মেহরাব ব্যস্ত হয়ে নিজে নিজেই বলতে লাগলো, এই মেয়েটা আমাকে কেনো নক করেছে ? দাদা জানের কোনো বিপদ হয়নি তো ? দাদাজান ঠিক আছে তো ?

মেহরাব আবার ব্যস্ত হয়ে আরফার আইডিতে গেলো আর লিখলো, What do you want to tell me ?

আরফা ডিউটি শেষ করে নিজের ফ্ল্যাটে এসে কেবল শাওয়ারে গেলো। আরফা আর তার মা এখন এই ফ্ল্যাটেই থাকে। গ্রামে বাড়ি ছাড়া বাকি যা জমিজমা ছিলো সব বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে আরফার লেখাপড়ার জন্য। এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিয়েছে আরফা হসপিটালে জয়েন করার পর। ফ্ল্যাটটা বেশি বড় না মাত্র দুটো বেডরুম আর প্রত্যেক রুমেই একটা করে ওয়াশরুম, আরফার রুমের সাথে ছোট একটা বেলকনিও আছে, একটা কিচেন আর ছোট একটা ড্রয়িংরুম। ছোট হলেও মা মেয়ের জন্য পার্ফেক্ট। তাইয়েবা গ্রাম থেকে আসতে না চাইলেও মেয়ের কথা ভেবে চলে এসেছে। এতোদিন আরফা কলেজের হোস্টেলে ছিলো আর ম্যাচের খাবার খেয়েছে। রান্নাবান্না কিছু পারে না তাই সব দিক ভেবে তাইয়েবা চলেই এসেছে আরফার কাছে।

ব্রেকফাস্ট রেডি করে আরফার রুমে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাইয়েবা বললো, আরফা না খেয়ে ঘুমালে কিন্তু আমি তোকে শান্তিতে ঘুমাতে দিবো না। তাই গোসল শেষ করে আগে খাবি আর তারপর ঘুমাবি।

আরফা গায়ে সাবান মাখতে মাখতে বললো, মা একদম জ্বালাবা না। খুব ঘুম পাচ্ছে ইচ্ছে তো করছে এখানেই ঘুমিয়ে যাই কিন্তু কী করবো শাওয়ার না নিলে ঘুম হয় না শান্তি মতো তাই এটুকু কষ্ট করছি। কিন্তু বের হয়েই শুয়ে পড়বো।

তাইয়েবা কড়া গলায় বললো, একদম না আগে খাবি তারপর ঘুম।

আরফা আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি শাওয়ার শেষে চেঞ্জ করে টাওয়েল মাথায় জড়িয়ে বের হয়ে এলো। রুমে এসে দেখে তাইয়েবা খাবার নিয়ে বেডে বসে আছে। আরফা মায়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।

তাইয়েবা কড়া গলায় বললো, এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই আগে খাওয়া পড়ে ঘুম।

আরফা হাতে মুখে ক্রিম মেখে শীতে কাঁপতে কাঁপতে বেডে এসে কম্বলটা বাচ্চাদের মতো গায়ে মুড়িয়ে বসে পড়লো আর তাইয়েবা খাইয়ে দিতে লাগলো। আরফা নিজের ফোন নিয়ে ওয়াইফাই কানেক্টেড করতেই ম্যাসেজের শব্দে ফোন কেঁপে উঠলো। আরফা মুখে রুটির টুকরো নিয়েই হা হয়ে আছে এতো তাড়াতাড়ি রিপ্লে পাবে আসা করেনি।

তাইয়েবা আরফাকে হা করে থাকতে দেখে বললো, না চিবিয়ে এমন হা করে বসে আছিস কেনো ?

আরফা মায়ের কথায় তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকালো। তা দেখে তাইয়েবা আবার বললো, এই নাকি ঘুমে চোখে দেখছিস না এখন আবার ফোন নিয়ে পড়লি কেনো তাহলে ?

আরফা নিজের ফোন রেখে তাড়াতাড়ি ল্যাপটব বের করে বসে পড়লো। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এতো তাড়াতাড়ি রিপ্লে আসবে। এদিকে মেহরাব শুধু হাসফাস করছে কখন আরফা নামের মেয়েটা আবার ম্যাসেজ দিবে আর সে দাদাজানের খোঁজ নিতে পারবে। এদিকে রাগও হচ্ছে মেয়েটা অনলাইন কেনো হচ্ছে না। রাত গভীর হতে চলেছে মেহরাবের চোখে ঘুম নেই বারবার চেক করছে আরফা নামের মেয়েটা অনলাইন হয়েছে কিনা। এদিকে আরফা কোথা থেকে কথা শুরু করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। এ কী সেই মেহরাব তাও বুঝতে পারছে না।

অনেক ভেবে আরফা লিখলো, You know something about Bangladesh ?

ম্যাসেজের শব্দে মেহরাব তাড়াতাড়ি ল্যাপটবের দিকে তাকালো। আরফার ম্যাসেজ দেখে পড়ে নিয়ে প্রায় সাথে সাথেই লিখলো, Not that I just know,,,, Bangladesh is a big part of my life.

আরফা মেহরাবের রিপ্লাই দেখে আবার লিখলো, মেহরাব হেলথ কেয়ার হসপিটালের ওনার মিস্টার মুজাহিদ খানকে চেনেন ?

মেহরাব খুব স্বাভাবিক ভাষায় উত্তর দিলো, He is my grandfather.

মেহরাবের উত্তর দেখে আরফা খুশিতে লাভ দিয়ে চিৎকার করে বললো, ইয়াহু পেয়ে গেছি। এতো তাড়াতাড়ি খোঁজে পাবো ভাবতেই পারিনি। আজকে মার্ক জাকারবার্গেকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে। ফেসবুক আবিষ্কার না করলে এতো তাড়াতাড়ি খোঁজে পেতাম না।

তাইয়েবা আরফার চিৎকার শুনে ভয় পেয়ে বললো, বড় শুধু হাত পায়ে হয়েছিস। কী করে যে তুই ডাক্তার হলি বুঝতে পারি না মাঝে মাঝে। তা কী গুপ্তধন পেয়ে এমন নাচানাচি করছিস শুনি ?

আরফা খুশিতে নাচতে নাচতে বললো, তুমি বুঝবে না যাও এখান থেকে আমার অনেক কাজ আছে।

তাইয়েবা আরফার কথা শুনে বললো, তুই না বললি ঘুমাবি ?

আরফা বিরক্ত হয়ে বললো, তুমি যাও তো এখন পরে ঘুমাবো আমি।

তাইয়েবা বিরক্ত হয়ে বললো, যা ইচ্ছে কর এখন। আমার খাওয়ানো দরকার ছিলো খাইয়েছি।

তাইয়েবা কথাগুলো বলে আরফার রুম থেকে বের হয়ে এলো আর আরফা আবার ম্যাসেজে মনোযোগ দিলো।

এর মধ্যে মেহরাব অনেক ম্যাসেজ করে ফেলেছে, আপনি আমার দাদাজানকে চেনেন। আমার দাদাজান ঠিক আছে তো ? উনার কোনো বিপদ হয়নি তো ?

আরফা শুধু ছোট করে লিখলো, উনার আপনাকে খুব প্রয়োজন। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনি বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করুন দেরি হয়ে যাওয়ার আগে।

আরফার ম্যাসেজ দেখে মেহরাবের মনে ভয় ঢুকে গেলো। কী হয়েছে তার দাদাজানে ? মেহরাবের ইচ্ছে করছে এখনই উড়ে দাদাজানের কাছে চলে যেতে না জানি কোন বিপদে আছে সে।

অন্যদিকে মুজাহিদ খানের আড়ালে চলছে গভীর ষড়যন্ত্র যার অনেকটাই আচ করে ফেলেছে মুজাহিদ খান। সেও তো কাচা খেলোয়াড় নয়।

,,,,,,না পারছি বুড়োটাকে মারতে না পারছি সম্পত্তি দখল করতে। আর এই বুড়োটা এতো ধুরন্ধর যে এমন প্যাঁচ লাগিয়ে রেখেছে। সমস্ত সম্পত্তি নাতির নামে করে রেখেছে আর নাতি ফিরে আসার আগে যদি বুড়ো মরে যায় তাহলে সব বিভিন্ন এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম আর সরকারের দখলে চলে যাবে। এখন দুটো হওয়ার আগে যে করেই হোক বুড়োকে দিয়ে সব লিখে নিতে হবে।

,,,,,,কী করবে বলো তো ? বুড়ো এতো চালাক কাউকে বিশ্বাস করে না। যে কোন সাইন করার আগে সব ভালো করে পড়ে নেয় আর এমন ব্যবস্থা করে রেখেছে সাইন ছাড়া ফিঙ্গার প্রিন্ট কোনো কাজ করবে না।

,,,,,,না না আমার এতো দিনের সাজানো খেলা এভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে না। সারাজীবন এর পাশে থেকে এতো সম্পত্তির পাহাড় বানাতে সাহায্য করেছি আর উড়ে এসে জুড়ে বসে সব ভোগ করবে এর নাতি। এটা হতে দিবো না আমি। এই সম্পত্তির জন্য বুড়োর ছেলেকে পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছি। এতো বছরের সাজানো গুটি আমি এলোমেলো করতে দিবো না কাউকে। একটা খুন যেহেতু করতে পেরেছি প্রয়োজনে আরো খুন করবো কিন্তু এই সবকিছুর একমাত্র মালিক হবো আমি শুধু আমি।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here