অন্যরকম_ভালোবাসা ? ইফা_আমহৃদ পর্ব::২৩(অন্তিম)

0
4712

অন্যরকম_ভালোবাসা ?
ইফা_আমহৃদ
পর্ব::২৩(অন্তিম)

আজ ইশরার হলুদ সন্ধ্যা।।কিভাবে এতোক্ষণ দিন কেটে গেল ,, ভাবা যায় না।। আয়ান তো সারাদিন ইশরার জন্য ছটফট করেছে ,, তবুও একসাথে থাকার পারমিশন পায়নি।। তখন বাধ্য হয়ে সুপারী গাছ বেয়ে বেলকেনি দিয়ে ইশরার সাথে দেখা করতো।। একদিন হাতে নাতে ধরা পড়লো তিথির কাছে,,, সেদিন থেকে ইশরাকে চোখে দেখাও দেখতে পারে না।।আয়রা একদিন আয়ানের সাথে ঘুমিয়েছে,,আরেক দিন ইশরার সাথে।।তখন বুঝতে পারে নি,, বিয়ের আগে একসাথে ,,বাবা মায়ের সাথে থাকতে পারবে না।।
বর্তমানে সবাই নিজেদের মতো করে সাজতে ব্যস্ত ।।পার্লারের মেয়েরা দিবা আর অনয়াকে সাজিয়ে দিচ্ছে।। ইশরার সাজ একদম কম্পিলিট ।। গ্ৰামীন ধরনের শাড়ি পড়া,, ভারী মেকআপ ,, সাথে ফুলের সাঝ।। চুলগুলো ফুলিয়ে হাত খোঁপা করে,, উপরে ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়া।। ইতিমধ্যে অনয়ার সাঝও কম্পিলিট ।।অনয়া আর ইশরা বিয়ের কোণে তাই দুজনের সাঝ সেম।। দিবার সাঝ ওদের থেকে একটু আলাদা।। –“আমি একটু আসছি !! বলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো ইশরা।।
মেয়েরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।। একটু ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেডে শুয়ে পড়লো।।এমন সময় রুমে ঢুকলো তমোনা।। ।। এগিয়ে গিয়ে অনয়া আর দিবার গালে হাত রাখলো।।মুচকি হেসে বললো..

— বাহ্হ্ তোমাদের দুজনকে খুব সুন্দর লাগছে।।

— ধন্যবাদ আন্টি ।।(মাথা নিচু করে অনয়া)

— আচ্ছা ইশরা কোথাও ।। ওকে দেখছি না যে ?! সময় তো হয়ে এলো ,, দুজনকে উপরে নিয়ে যেতে হবে!!(এদিক ওদিক তাকিয়ে)

— আন্টি,,, ভাবী একটু ওয়াশরুমে গেছে ।। চিন্তা করো না ,, চলে আসবে।।

দূর্বল কন্ঠে উচ্চারণ করলো “ও আচ্ছা” ।।মেয়েকে মন ভরে দেখতে এসে আর দেখা হলো না।।যেমন দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে ঢুকেছিল ,, তেমন আবার দ্রুত পায়ে রুম ত্যাগ করলেন সে।।তমোনা রুম থেকে বেরিয়ে গেলে এক প্রকার দৌড়ে রুমে ঢুকলো আয়রা।। কানের একটু উপরে হাত দিয়ে স্লাইড করে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে অনয়া আর দিবার দিকে।। দুজনের মধ্যে কোনটা তার মা চেনার চেষ্টা করছে।। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পরেও খুঁজে পেল না তাকে ।। নিজের মধ্যে আর কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারলো না ,, একটু ভেবে বললো…

— আচ্ছা আমার মাম্মা কোথায় ।। তোমাদের মধ্যে কি কেউ আমার মাম্মা !!

আয়রার কথায় দুষ্টু হাসলো দিবা।।দাঁত কেলিয়ে কন্ঠস্বর খানিকটা মোটা করে বললো..

— মাই প্রিন্সেস বাবুই আয়ু সোনা ?!! আমাকে চিনতে পারছো না।।

— কেন মিথ্যা বলছো তুমি ।। তুমি আমার মাম্মা নও।।আমি আমার মাম্মাকে খুব ভালো করে চিনি!!(নাক ফুলিয়ে আয়রা)

কথাটা বলেই ছুটে বেরিয়ে গেল আয়রা।।আয়রার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেঁসে দিলো সবাই।। ইতিমধ্যে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো ইশরা।।সবাইকে এভাবে গড়াগড়ি খেয়ে হাসতে দেখে তাজ্জব বনে গেল সে।। কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলো সে…

— তোদের কি পাগলা কুকুরে কামড় দিয়েছে।। এভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসার কি আছে।।

ইশরার কথা শোনার আগেই পুরো ঘটনা খুলে বললো অনয়া।।বলেই আবার দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগলো সে।।‌কথার ফাঁকে ফাঁকে হাসার কারণে,, পুরো কথাটা মুখের কোণে আটকে যাচ্ছিল।।
অপেক্ষা না করে আয়ানের রুমের দিকে পা বাড়ালো ইশরা।।ইশরা ভালোভাবেই জানে এখন আয়রা কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিয়েছে।।

________________

বালিশে মুখ গুজে কুপিয়ে কুপিয়ে কেঁদে চলেছে আয়রা।মাকে চিনতে পারে নি নাকি ,, মাকে খুঁজে পায়নি বুঝতে পারেনি সে।। রুমে ঢুকে আয়রাকে শুয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকালো আয়ান।। একটু এগিয়ে আয়রার পাশে বসলে ,, কান্নার আওয়াজ অনুভব করলো সে।। বুজতে বাকি রইলো না আয়রা কাঁদছে ‌‌।।আয়রার মাথায় হাত রাখলে চোখ তুলে তাকালো সে।।পাপার কোমর জড়িয়ে শব্দ করে কেঁদে দিল আয়রা।।মেয়েকে এভাবে কাঁদতে দেখে ঘাবড়ে গেল আয়ান।।শান্ত গলায় বললো…

— কি হয়েছে সোনা ।।এভাবে কাঁদছো কেন?? কেউ কি তোমাকে বকেছে??

— না পাপা কেউ আমায় বকেনি।।মাম্মা বদলে গেছে পাপা।। খুঁজে পাচ্ছি না।।(কাদতে কাদতে আয়ানকে জরিয়ে ধরে আয়রা)

আয়রার কথার কোনো আগা মাথা পাচ্ছে না আয়ান।। একবার বলছে মাম্মা বদলে গেছে আবার বলছে খুঁজে পাচ্ছে না।। ততক্ষণে ইশরা এসে দাঁড়িয়েছে আয়ানের রুমে।।মেয়েকে এভাবে কাঁদতে দেখে তারও কষ্ট হচ্ছে।।হাত বাড়িয়ে আলতো স্বরে আয়ারাকে কাছে ডাকলো।।– “আয়রা এই তো আমি কাঁদছো কেন প্রিন্সেস”।।মাম্মার ডাক শুনে ইশরার দিকে তাকালো সে।। দৌড়ে এসে ইশরাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।। এতোক্ষণ আটকে রাখা দমটা যেন এবার বেরিয়ে এলো।।মুখে শুধু একটা কথাই বলছে ,, “মাম্মা তুমি এসেছো”।।

______________

একটু আগে বাসর ঘরে দিয়ে গেছে ইশরাকে ।।ভারী সাজে দম প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।। ভারী নেকলেসটিতে গলার পেছনের দিকটা ছিলে গেছে।। আয়ানের আসার অপেক্ষা করলো না সে ।।এক হাতে শাড়ির কুচিগুলো ধরে আয়নার দিকে এগিয়ে গেল।। সাবধানে আস্তে আস্তে নেকলেসটি খুলে নিল।।পেছনের দিকে রক্ত জমাট বেঁধে শুকিয়ে আছে।।
দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো আয়ান।। চারদিকে যখন ইশরাকে দেখতে পেল না,, তখন চোখ আটকে গেল আয়নাতে ।।ইশরা শান্ত মনে গহনাঘাটি খুলছে।।বিরক্তি নিয়ে এগিয়ে গেল সেদিকে।।হাত দিয়ে বাঁধা দিল।।পূর্নরায় গহনা গুলো ইশরাকে পড়িয়ে দিতে দিতে বললো ….

— তোমাকে বউ বেশে দুচোখ জুড়ে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল আমার ।।কিন্তু সেটা কখনো হয়ে উঠেনি ।। একবার দেখেছিলাম,, তখন কেঁদে কেঁদে ভাসিয়ে দিয়েছিলে।।আজ দেখবো প্লীজ খুলোনা।।

— ঠিক আছে আস্তে পড়াও ।।গলার দিকটায় খানিকটা ছিলে গেছে।।

আয়ান গহনাগুলো ইশরাকে পড়িয়ে দিয়ে ,, ক্ষতস্থানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল।।ইশরাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।।আজ আবার নতুন করে শুরু হবে বাঁচার লড়াই।। অবসান হবে এতোদিনের অপেক্ষা।। আবার এক হবে দুটো ভালোবাসার মানুষ।।।।।।।
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!

— আচ্ছা মাম্মা ,, তুমি দিন দিন কুমিরের মতো এতো মোটা হয়ে যাচ্ছ কেন?? আমি এতো এতো খাই ,, তবুও তো মোটা হইনা।। এখন মোটা হওয়াতে আমাকে কোলে নিতে পারো না।।(কোমরে হাত দিয়ে আয়রা)

— কি আমি কুমিরের মতো মোটা হচ্ছি ??(রাগি দৃষ্টি দিয়ে ইশরা)

— হে তো।।নাহলে তোমার পেট এতো বড় কেন??

— আমার এই পেটে একজন ছোট বাবু আছে ।।একদম এইটুকু ( হাত দিয়ে দেখিয়ে)

— পাপা আমার ভয় করছে (লাফ দিয়ে আয়ানের কোলে বসে ) মাম্মা রাক্ষস হয়ে গেছে‌। একটা ছোট বাবু খেয়ে ফেলেছে‌।আমাকেও খেয়ে ফেলবে!!

আয়রার এমন কথায় মুখ চেপে হাসলো আয়ান।।ইশরার দিকে তাকিয়ে বললো — হয়তো ??।। আয়ানের কথায় চোখ রাঙালো ইশরা।। সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল আয়ান।।আয়রাকে নিজের কোলে নিয়ে বললো…

— আল্লাহ আমার এই বড় পেটে ছোট্ট একটা বেবী দিয়েছে।।মানে তোমার ভাই ইশান ।।

আয়রা ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো।। তারপর বললো..

— কি আমার ভাই আসবে মাম্মা ।। দাঁড়াও আমি সবাইকে বলে আসছি।।

কোনো দিকে না তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আয়রা।।আয়রা চলে যেতেই পেটে হাত দিয়ে বেলকেনিতে চলে গেল ইশরা ।।ইশরা আট মাসের প্রেগন্যান্ট।। আগের তুলনায় একটু মোটা হয়েছে ।। আয়ান এখন ইশরাকে একদম একা ছাড়ে না ।।কখনো ধমকও দেয়না‌।। তিনজনকে আগলে রাখে।।
পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল আয়ান ।।তাতে একটুও হেলে দুলে নেই ইশরার ‌।সে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।।ইশরার ধ্যান ভাঙলো আয়ানের কথায়…

— তুমি জানলে কিভাবে আমাদের ছেলে হবে।।আর তার নামটাও ভেবে ফেলেছো ।।নামটা কিন্তু সুন্দর… ইশান ।।

— আমার এবারের ইচ্ছে ছেলে হোক ।।আর ছেলেই হবে।।নামটা দুজনের সাথে মিলিয়ে রেখেছি ।।যেমন= আয়রা,, আয়ান ,, ইশান ।। আবার =আয়রা ইশরা ,,ইশান।।

— খুব সুন্দর হয়েছে নামগুলো।।তবে কষ্ট একটাই ,, দুটো সন্তানের মধ্যে একজনের নামও আমি রাখতে পারলাম না।।তবে টেনশন নট।।পরের দুটো সন্তানের নাম আমি রাখবো।।

— পরের দুটো মানে?? আমি কি ক্রিকেট দলে নাম লেখাবো আজব!!

— ভুলে গেলে নাকি সেটাই তো কথা ছিল।।(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আয়ান)

এমন কথা শুনে চোখ পাকিয়ে তাকালো ইশরা।। সাথে সাথে দৌড় দিয়ে ছুটে পালালো আয়ান।। পেটে হাত রেখে আস্তে আস্তে সেদিন এগিয়ে গেল ইশরা।।।।

________ তুমি আমার সেই গল্পের উপন্যাস প্রিয়?️?

যার শুরুটা,,মাঝখানটা তুমিহীন থাকলেও ??

অন্তিমপাতা জুড়ে শুধু তুমিই থাকবে ?

— ইফা ?

__________________ সমাপ্ত_____________

!! আসসালামুয়ালাইকুম!!কেমন আছেন আপনারা।। হয়তো অনেক ভালো।আজ এখানে শেষ করলাম “”অন্যরকম ভালোবাসা ?”” !! মা-মেয়েকে নিয়ে আমার পুরো গল্পটা লেখা।।যেখানে একজন মা ,, তার সন্তানের জন্য সবকিছু করতে পারে।।

ফিরে আসবো কোনো নতুন জুটিকে নিয়ে।। এতো দিন পাশে থাকার জন্য অনেক ভালোবাসা।।আজ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো আপনাদের মন্তব্যের জন্য।।গল্পটা কেমন লাগলো ,, জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!! ভালোবাসা অবিরাম ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here