অন্যরকম_ভালোবাসা ? ইফা_আমহৃদ পর্ব::২২

0
3383

অন্যরকম_ভালোবাসা ?
ইফা_আমহৃদ
পর্ব::২২

–” যাও চলে যাও ।।প্লীজ চলে যাও।। আমার কাউকে দরকার নেই ,, প্রয়োজন নেই তোমাদের কাউকে।। একজন আরো আগেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।।অন্যজন মরতে মরতে আবার বেঁচে এসেছে।। তুমি তো আগেই চলে গেছো।। মাঝখানে আবার ফিরে এসেছ,, যাও চলে যাও।।(একটু থেমে আবার) জানো,, একদিন বাবা আমাকে নিয়ে অহংকার করতো ,,আজ আমি বাবার সকল অহংকার ভেঙ্গে দিয়েছি।।কতোটা অপদার্থ আমি একবার ভেঙ্গে দেখেছ,, পৃথিবীর সব বাবারা তাদের সন্তানদের হাত ধরে হাঁটা শেখায়।। বেঁচে থাকার পথ দেখায় ।।আর আমি আমার বাবার মৃত্যুর কারণ হয়েছি।। শুধুমাত্র আমার জন্য আজ বাবা এই পৃথিবীতে নেই ,, মা হাজার কষ্ট বুকে চেপে আমার জন্য বেঁচে আছে।। মনে হচ্ছে,, আমাকে জন্ম দিয়ে সবচেয়ে বড় ভুল করেছে তারা।।এখন শুধু বাকি আছে আয়রা।।ওকে আমি আমার কাছে আগলে রাখবো।। ছেড়ে যেতে দিবো না”।।

কথাগুলো বলতে বলতে ফ্লোরে বসে পড়লো ইশরা।।ইশরার কথার মাঝে লুকিয়ে আছে হাজারও অভিমান। আয়ানকে দূরে যেতে না বলার আহ্বান।। ভালোবাসার মানুষটির উপর যতো অভিমান জমে থাকুন না কেন ,,চলে যাওয়ার কথা শুনতে সব অভিমান কাঁচের মতো তছনছ হয়ে যায়।।পূর্নরায় আবার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।।ইশরার সামনে বসে পড়লো আয়ান।। চোখের নোনা জল মুছে দিয়ে চুলের বাজে হাত রাখলো। আয়ানকে নিজের এতো কাছে অনুভব করে স্তব্ধ হয়ে বসে না থেকে সাথে সাথে জাপটে ধরল আয়ানকে।।আয়ানও দুহাতে ইশরাকে জড়িয়ে নিল পরম আবেশে।। ইশরা কাঁদছে,, আয়ানও নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে।। না চাইতেও অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে আয়ানের চোখ থেকে।।দুজনে একসাথে কাঁদছে।।কেউ কষ্টগুলো বিস্রজন দিয়ে নিজেকে হালকা করতে কাঁদছে।।কেউ প্রিয়শ্রীর কান্না সহ্য করতে না পারাতে কাঁদতে।।তবে দুজনের কান্নার কারন কোথাও না কোথাও একই।। বৃষ্টির বেগ আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে গেছে।। এতোক্ষণে দুজনেই ভিজে একাকার হয়ে গেছে।।কোনটা চোখের অশ্রু আর কোনটা বৃষ্টির পানির ফোঁটা যেটা আলাদা করা সম্ভব নয়।।আয়ান ইশরার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বললো….

— “এখানে তোমার কোনো দোষ নেই ইশরা।। আল্লাহ যা করে ,, ভালোর জন্যই করে।। তিনি আগে থেকে বিধান ঠিক করে রেখেছে।। তুমি হয়তো আঙ্কেল আন্টির পাশে থাকতে পারোনি।। কিন্তু আমি তো ছিলাম।। তুমি আর আমি কি আলাদা।। তাছাড়া আমি আমার ইশুপাখি আর আয়রা সোনাকে রেখে কোথায় যাবো।। তুমি যদি সত্যি আমাকে যেতে বলতে ,, তবুও আমি যেতাম না।।আমি জানি,, তুমি আমাকে কখনো মন থেকে যেতে বলবে না,, সব রাগের বশে বলবে”।।

আয়ানের কথায় চোখ তুলে তাকালো ইশরা।।আয়ান কাঁদছে ‌।।ইশরা হাত বাড়িয়ে আয়ানের চোখে মুছে দিয়ে আবার আয়ানের বুকে মুখ গুজে নিল।। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে দু’জন।। কিন্তু কোনো আক্ষেপ নেই তাদের।।আজ এতো গুলো বছর পর একসাথে হয়েছে দুজনে ,, সেদিকে দৃষ্টি তাদের!!

_________________

মেঘাচ্ছন্ন মেঘলা আকাশ এখন সূর্যের সোনালী আভায় পরিপূর্ণ।। চারদিকে নতুন দিনের আলো ছড়িয়ে গেছে।।আলো পর অন্ধকার,, অন্ধকারের পর আলো এটাই রীতি।। পৃথিবীর বুকে সূর্যের আভার পর রাতের স্নিগ্ধ আলো এসে ভড় করে ।। হঠাৎ আকাশে জমে উঠে কালো মেঘের ভেলা,, আবার শুরু হয় তুমুল বেগে বৃষ্টি।। পৃথিবীতে অন্ধকার আছে বলেই আলোর এতো কদর ,, সূর্যের আলো আছে বলেই চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর এতো কদর।।আর মেঘ আছে বলেই বর্ষনের এতো কদর ।।ঠিক তেমনি জীবনে ভালোবাসা,,মান অভিমান,, দুঃখ কষ্ট,, বেঁচে থাকার এতো মূল্য আছে বলেই জীবনে বেঁচে থাকার এতো ছন্দ।। আজ দু’জন মানুষের মনে মান অভিমান সব দূর হয়ে একে অপরের খুব কাছাকাছি ।। দুহাতে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে ইশরা।। আয়ান ইশরার পিঠে হাত রেখে বেলকেনির দেয়াল ঘেঁষে ঘুমিয়ে আছে।। সূর্য তখন গাছ গাছালির ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়েছে।।বেলকেনিতে থাকা বৃষ্টির পানি ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে গেছে।।তবে একটু আধটু ফ্লোরের ফাঁকে জমে রয়েছে।। শরীরে জামা শুকিয়ে গেছে।। প্রচন্ড জোরে “পাপা-মাম্মা” ডাকে ঘুম ভাঙলো আয়ান ইশরার ।।সামনে চোখ রাঙিয়ে আয়রা দাঁড়িয়ে আছে।। মেয়ের এমন রাগের কারণ বুঝতে ব্যর্থ হলো দুজনে।। নিজেদের দিকে তাকিয়ে দুহাত বাড়িয়ে দিল ইশরা।।আয়রা ছুটে এসে ইশরা আর আয়ানের কোলে একসাথে বসে পড়লো।।মন খারাপ করে বললো…

— “পাপা মাম্মা তোমাদের দুজনের মাঝে ভাব হয়ে গেছে।আমি অনেক খুশি হয়েছি।। কিন্তু তোমারা দুজন আমাকে ঘুম পাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছো।।আমিও যদি ভিজতে পারতাম কতো মজা হতো “।।

— “তাতে কি হয়েছে মাম্মা ,, আবার যখন বৃষ্টি হবে ,, তখন আমরা একসাথে ভিজবো কেমন “??

|||||

ইশরার চুল থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে।।জামার পেছনের দিকটা চুলের পানিতে ভিজে সাট সাট হয়ে গেছে।। সে আয়রার চুল মুছিয়ে দিতে ব্যস্ত।। আয়ান এখন ওয়াশরুমে ,, শাওয়ার নিচ্ছে।। বৃষ্টিতে ভেজার কারনে সকাল সকাল শাওয়ার নিয়েছে ইশরা আয়ান।।পাপা মাম্মাকে শাওয়ার নিতে দেখে ছোট আয়রাও ব্যস্ত হয়ে গেছে।। ইশরা আয়রাকে কোলের উপর বসিয়ে চুল মুছিয়ে দিচ্ছে আর আয়রা গেমস খেলছে।।
ওয়াশরুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো আয়ান।।পড়নে ছাই রাঙা টাওজারটা অর্ধেক ভেজা,, শরীরে বিন্দু বিন্দু পানির কণা জমাট বেঁধে রয়েছে।।চুল থেকে চুসে চুসে পানি পড়ছে।। কাঁধে টাওয়াল টা ঝুলিয়ে রাখা।। দুই তিন পা সামনে বাড়াতে পা স্লীপ করে পড়ে যেতে নিল আয়ান।।পড়তে গিয়েও কোনো রকম সামনে নিল নিজেকে।।
মাথায় কারো স্পর্শ পেয়ে পেছনে তাকালো ইশরা।।আয়ান স্ব-যত্নে ইশরার চুলের পানিগুলো মুছে দিচ্ছে।।আয়ানকে এই সময় একদম আশা করেনি ইশরা।।

— “তুমি কবে থেকে এতো তাড়াতাড়ি শাওয়ার নাও বলো তো।।আগে তো রাতে ওয়াশরুমে ঢুকলে রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে যেত ?? ??”!! (ভ্রু কুঁচকে ইশরা)

আয়রাকে কোলে থেকে নামিয়ে টাওয়াল মেলতে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে।। আবার টেনে বেডে বসিয়ে দিল আয়ান।। চুলগুলো মুছে দিতে দিতে বললো..

— “একটু শান্তিতে বসো আমি পানিগুলো ভালোভাবে মুছে নেই আগে।।(একটু থেমে আবার) আমার জীবন থেকে তোমরা চলে আসার পর সবকিছুই পাল্টে গেছে।। শুধু বয়ে গেছে পুরো সেই ভালোবাসা”!!

— “আসবো ভাইয়া “!!(রুমে ঢুকতে ঢুকতে অনয়া, দুয়ান)

— “পারমিশন দেওয়ার আগেই তো ঢুকে পরলি,, এখন আবার জিজ্ঞাসা করার কি আছে”??(বেলকেনিতে টাওয়াল মেলতে মেলতে আয়ান)

— “তাও ঠিক ,, কিন্তু তোমরা তো কিছুদিন একে অপরের থেকে আলাদা থাকবে।।তখন এই সময়টাকে মিস করবে ।।তাই পারমিশন নিলাম”।।(ইনোসেন্স ফেইস করে অনয়া)

— “কিসব আজেবাজে বকছিস ।।আমরা কেন আলাদা থাকবো।।এখন আমরা খুব কাছাকাছি থাকবো ,,বিকজ তোর ভাবীর সাথে আমার সব মিটমাট হয়ে গেছে”।।(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আয়ান)

— “আসলে হয়েছে কি ভাইয়া,, তোমাদের বিয়েটা আঙ্কেল আন্টি কেউ নিজ চোখে দেখেনি তো ।।তাই তোমার আর ইশরার আবার বিয়ে দিবে সবাই ।।আর সেই কয়দিন তোমরা আলাদা থাকবে আর কারো সাথে দেখা করতে পারবে না”।।(দুয়ান)

বিয়ের কথা শুনে আয়ানের মাথায় বাজ পড়ল।এখনো বিয়ে হতে কতোদিন বাকি,, ততদিন নাকি আলাদা থাকতে হবে।।কতো কষ্ট করে ইশরার অভিমান ভাঙিয়েছে।।আর এখন আজাদ আহম্মেদ আর তিথি সবকিছু স্পয়্যাল করে দিল।।

–” কি পাপা মাম্মা আবার বিয়ে করবে ।।কি মজা,,কি মজা।।আমি সবাইকে বললো ,,আমি আমার পাপা মাম্মার বিয়ে দেখেছি ,,তোরা দেখেছিস” ।।(নাচতে নাচতে আয়রা)

আয়রার খুশি দেখে কে?? সে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।। এদিকে আয়ান আয়রার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে।। ঘনঘন চোখের পলক ফেলছে।।মায়ের থেকে বাবাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে ,, আর সে নাচছে।।এটা তার মেয়ে তো ভাবতে কষ্ট হচ্ছে।। আয়ানের এমন ইনোসেন্স মার্কা ফেইসটা দেখে ,,,হাসছে সবাই।।মনে হচ্ছে বাচ্চার কাছ থেকে খেলনা নিয়ে গেছে ‌।।।

চলবে…??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here