অন্যরকম_ভালোবাসা ? ইফা_আমহৃদ পর্ব::২১

0
2920

অন্যরকম_ভালোবাসা ?
ইফা_আমহৃদ
পর্ব::২১

— পরপর দুইটা গুলি করলো তোর বাবার বুকে।।রক্তে ভেসে যাচ্ছিল মাটি।। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে এমন অবস্থায় দেখে বুকে ফেটে যাচ্ছিল আমার।। বারবার মনে হচ্ছিল,, মেঘ যদি এই গুলিটা আমার বুকে করতো ।।তাহলে রৌদ্রের এমন কষ্ট আর্ত চিৎকার আমাকে শুনতে হতো না।। বুকের ভেতরে এক পাহাড় কষ্ট নিয়ে একপ্রকার বাঁধ্য হয়ে তোকে ফোন করে মিথ্যা বলেছিলাম।।আয়ানের চোখে তোকে ছোট করেও শান্ত হয়নি মেঘ ,, ছেড়ে দেয়নি আমাদের।। মেঘের ধারণা ছিল,, আমাদের ছেড়ে দিলে পরে আমি আয়ানকে সব শক্তিটা জানিয়ে দিবো।।তাই হিংস্রের মতো আমাদের মেরেছিল।। মেঘের মার সহ্য করার মতো ক্ষমতা আমাদের ছিলো না,, সেখানেই জ্ঞান হারালাম।। যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করলাম।। ভেবেছিলাম,, হয়তো মেঘ নিয়ে এসেছে।। কিন্তু না,, আয়ানের মুখটা চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠলো। বুঝতে বাকি রইল না,, কে আমাদের হসপিটালে নিয়ে এসেছে।।জ্ঞান ফেরার পর তোর বাবার খোঁজ করেছিলাম,, আয়ান আমাকে সত্যি টা বলেনি ।। শুধু বলেছে,, তিনি এখন সুস্থ আছে ।।ভালো আছে ,, একটুও আঘাত নেই।।চাইলেও আমার সাথে দেখা করতে পারবে না।। তখন সবকিছু আমার কাছে ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা লাগছিল।।যদি সুস্থ থাকে , আঘাত না থাকে ,, ভালো থাকে তাহলে কেন আমার সাথে দেখা করতে আসছে না।। মনের মধ্যে একটা চাপা অভিমান কাজ করছিল।। কিন্তু দুর্ভাগ্য,,আমি আয়ানের কথার মানে বুঝি নি।।আসলে তোর বাবা ,, বেঁচে ছিলেন না।। হসপিটালে আনার পরপরই মারা যায়।। মেঘের গুলি রৌদ্রের হার্ট বেধ করে বের হয়ে গিয়েছিল ঠিকই,, কিন্তু রক্তখরন হওয়াতে ডাক্তার বাঁচাতে পারেনি।। শেষে কিনা এমন একটা ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে চেয়েছিলাম,, যে আমাদের খুন করতে দ্বিধা বোধ করলো না।। ভাগ্যিস মেঘের সাথে তোর বিয়েটা হয়নি,, নাহলে আজ নিজেকে খুব ছোট মনে হত।।

কথাগুলো শেষ করে অন্যদিকে ফিরে রইল তমোনা।।আজ এই ভয়ার্থ চোখের বাঁধ মানছে না।। বারবার চোখ মোছার পরেও গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু।। সেদিনের ভয়ঙ্কর দৃশ্য গুলো ক্রমাগত চোখের সামনে ভেসে উঠছে।ইশরা আরো আগে বাকশক্তি হারিয়ে ফেরেছে।।এতোবড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে আর কিছুই জানে না সে।।বাবা হারিয়ে এতিম হয়ে গেছে ,, তা আজ পাঁচ বছর পর জানালো।।ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে।। চোখের পাতা সেকেন্ডের মধ্যে ৫ বার উঠানামা করছে ।।পালস রেট দ্রুত গতিতে বেড়ে মিনিটে ১৪০ বিট করছে।।বিট এর শব্দ আজ সকল শব্দকে হার মানাতে প্রস্তুত।। বাহিরে থেকে যে কেউ সেই শব্দ নিশ্চিত শুনতে পারবে ।।দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি নেই ।।হাটু ভেঙে বসে পড়লো নিচে।। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে মাটির দিকে মাথা নিচু করে রইল।।চোখ খুলতেই চোখ টলমল করা অশ্রু গুলো গাল গড়িয়ে ঝড়ে পড়লো।।জোরে চিৎকার করে উঠলো ইশরা।।

— বা-বা…………….!! কোথায় আছো তুমি প্লীজ ফিরে এসো।। তুমি তো আমার কান্না একদম সহ্য করতে পারো না ।। তাহলে প্লীজ এসে আমার চোখ মুছে দাও।।(হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে মেঝেতে মাথা ঠেকিয়ে ইশরা)

— পাপা মাম্মা এভাবে কাঁদছে কেন ?? মাম্মা তো কখনো এভাবে কাঁদে না।। শুধু তোমার কথা জিজ্ঞাসা করলে কাঁদে।। তুমি কি মাম্মাকে বোকেছ??(ইশরার দিকে এগিয়ে গিয়ে আয়রা)

ছোট ছোট পা ফেলে ইশরার দিকে এগিয়ে গেল ছোট আয়রা।।ইশরার কাঁধে হাত রাখলে হুশ ফিরল তার।। মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে গেল ইশরা।। একদিকে পাপার প্রতি ভালোবাসা, সম্মান অন্যদিকে মেয়ের প্রতি দায়িত্ববোধ, ভালোবাসা কোনো টাই অস্বীকার করতে চায় না সে।। এখানে থাকলে ইশরা কান্না থামাতে পারবে না।।যাতে আয়রাও কেঁদে ভাসিয়ে দিবে।।

___________________

— পাপা মাম্মা সারাদিন কিছু খায়নি।।মাম্মা আমার সাথে কথা বলেনি,, তুমি আমাকে মাম্মার কাছে যেতেও দাও নি।। এভাবে চললে মাম্মা অসুস্থ হয়ে পড়বে।।এখন যদি মাম্মা আমাকে খাইয়ে না দেয় আমিও খাবো না।।(মনে খারাপ করে আয়রা)

— প্রিন্সেস সোনা মাম্মার শরীরটা ভালো নেই তাই আমি তোমাকে মাম্মার কাছে যেতে দেয়নি।।তবে আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে ।। এপ্লাই করলে ,, তোমার মাম্মাও খাবে আর তুমিও মাম্মার হাতে খেতে পারবে।।

তারপর আয়রা কানে কানে কিছু একটা বলে দিল আয়ান।।আয়রা অপেক্ষা না করে পাপার হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে উপরে ছুটলো।। দীর্ঘ শ্বাস নিল আয়ান।। সারাদিন ইশরা কিছু খায়নি,, বিরক্ত করতে বারণ করে দিয়েছে।।তাই আয়ান আয়রাকে পাঠিয়েছে ,, অন্তত আয়রার জন্য যদি কিছু খায় ইশরা।।।‌।।।

||||

সকালের দিকে আকাশের কোণে ছিল সূর্যের আলোর ছড়াছড়ি।। কিন্তু মুহূর্তেই মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ছে রোদের সোনালী আভা।। সারাদিন কালো মেঘে অন্ধকার করে ছিল নীল আকাশ।।আজ যেন ইশরার ব্যথায় ব্যথিত হচ্ছে প্রকৃতি।।হয়তো অপেক্ষায় আছে কখন ইশরার কষ্ট মুছে যাবে আবার আকাশ আলোকিত করে রোদ্দুর ছড়িয়ে যাবে।।জানালার পাশে বসে আকাশের লুকোচুরি খেলা দেখছে ইশরা।।মাম্মা কারো ডাকে ধ্যান ভাঙল তার ।।দ্রুত চোখ মুছে পেছনে তাকালো ।। খাবারের প্লেট নিয়ে আয়রা এসেছে।।বাবার চিন্তায় মেয়ের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো ইশরা।।আয়রা এসে বেডে বসতে নিলে টেনে কোলে বসিয়ে দিল।।আলতো হাতে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে চুলের বাজে অধর ছুয়ে দিল।।আয়রা একটু বেকে বসে‌,,, আধো আধো হাতে খাবার মেখে ইশরার মুখের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল…

— মাম্মা আমার ক্ষুধা লেগেছে।। তুমি সারাদিন কিছু খাওনি ,,এখন যদি কিছু না খাও তাহলে আমিও খাবো না।। তুমি ভালো করেই জানো ,,আমি না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়ি।।

ইশরা আর দ্বিমত পোষণ করলো না,,খেয়ে নিও।। খাবারের প্লেটাটা নিজের হাতে নিয়ে নিলো ।। খাবার মেখে আয়রাকে খাইয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে গেল।।।

______________________

কালো মেঘযুক্ত আকাশ বর্তমানে বর্ষনের রুপ ধারণ করেছে।। আকাশ কাঁপিয়ে তুমুল বেগে বৃষ্টি হচ্ছে চারদিকে।। জানালার পাশে বসে এইসব দেখতে ব্যস্ত ইশরা।। পুরো রুম জুড়ে,,বেডের উপর মাঝ বরাবর ঘুমিয়ে আছে আয়রা।। মাঝে মাঝে বাজ পড়ার শব্দে ঘুমের মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছে আয়রা।।ক্যান্ডেলের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পারছে ইশরা।। বিদ্যুৎ পিলারের উপর প্রচুর বেগে বাজ পড়াতে বিদ্যুৎ নেই।।কিছুই ভালো লাগছে না ইশরার ।। ইচ্ছে করছে বৃষ্টির ফোঁটা শরীরে মেখে নিতে ।।আয়রার ভারী নিঃশ্বাস অনুভব করতে পেরে ,,বেলকেনির দিকে পা বাড়ালো ইশরা।।খোলা আকাশের নিচে হাত বাড়িয়ে দিল,, বৃষ্টির ফোঁটা ছোঁয়ার আশায়।। বৃষ্টির পানি গ্ৰিলের উপর পড়ে, ছিটকে পুরো বেলকেনি ভিজিয়ে ফেলেছে।। এতোক্ষণে আংশিক ভাবে ভিজে গেছে ইশরা।। বৃষ্টির ঠান্ডা পানিতে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে।।হালকা ভাবে কম্পিত হচ্ছে পুরো শরীর।। পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরায় কম্পনের মাত্রা কয়েক থেকে কয়েকশত গুন বেড়ে গেল।। পেছনে তাকিয়ে মানুষটিকে দেখার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই ইশরার।।কারন এই স্পর্শ ইশরার গভীরতম ভাবে চেনা।। আয়ানের স্পর্শ।। এতো গুলো বছর আয়ান ইশরার থেকে দূরে ছিল ঠিকই।। কিন্তু আয়রা ইশরার কাছে ছিল।। আয়ানের অস্তিত্ব ইশরার দ্ধারা অনুভব করেছে।।আস্তে আস্তে আয়ানের হাত ইশরার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে,,বেলকেনির অন্যপ্রান্তে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।। অপেক্ষা করলো না আয়ান।।ইশরার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।।দুকাধে হাত রেখে ইশরাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিল,, হাতে হাত রেখে করুন সুরে বলল……

— আমি কি বড্ড বেশি ভুল করে ফেলেছি।।সরি ভুল করিনি অন্যায় করে ফেলেছি।।আমাকে শেষ বারের মতো ক্ষমা করা যায় না।।এই রুমে ,,আয়রার জীবনে থাকার অনুমতি আমাকে দিয়ে দিয়েছো।। শেষ বারের মতো তোমার জীবনে আমাকে থাকার অনুমতি দাও না।আই প্রমিস ,, আমি কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না।
সারাজীবন আগলে রাখবো।। সেদিন আমি রাগের বশে অমন একটা কথা বলে ফেলেছি।। আমার বিশ্বাস ছিল,, তুমি এমন করতে পারো না।। তোমার সাথে কথা কাটাকাটি করার পর আমি আবার পুরোনো ফ্যাক্টরীতে গিয়েছিল।। সেখানে আঙ্কেল আন্টিকে ঐ অবস্থায় দেখে হসপিটালে এডমিট করি।।মেঘকে বন্দী করে রাখি।। তুমি যদি চাও ,তাহলে আর কখনো তোমার সামনে আসবো না ।।অনেক দূরে চলে যাব।।

চলবে..??

দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না।।একবার পোস্ট করতে গিয়ে পুরো ডিলেট হয়ে গেছে।। আবার লিখেছি।।হয়তো একটু অগোছালো ,, ম্যানেজ করে নিয়েন।। ভালোবাসা ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here