অনন্যময়ী সানজিতা_তুল_জান্নাত পর্ব_৩৩

0
5784

অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_৩৩

সোনালি বিকেল গড়িয়ে ধূসর সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। নির্লীপ্ত দৃষ্টি সামনের ব্যস্ত সড়ক পেরিয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে অদূরে চেয়ে আছে। স্থির সেই দৃষ্টির ভাষা বোঝা শুধু মুশকিলই নয় এ যেন অসাধ্য। আর যদি তা হয় চির অপরিচিত অনন্যময়ীর তবে সে দৃষ্টির মর্মার্থ খুঁজে পাওয়া প্রায়ই দুষ্কর। নিজ জন্মভূমি আজ সে বড্ড বেমানান অপরিচিত এক আগন্তুক। সীমিত সময়ের অতিথি বেলা ফুরোলেই যেন ফিরতে হবে কৃত্রিমভাবে পাওয়া বাসস্থানে। সাথে নিয়ে যাবে এই সীমিত সময়ের মাঝে পাওয়া কিছু অপ্রত্যাশিত সম্পর্কের সাথে জড়িয়ে যাওয়া স্মৃতি। সে স্মৃতি সুখকর কিনা তা বোধগম্য হচ্ছে না। সবকিছুর উর্ধ্বে সে কিছু নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করেছে অনুভব করেছে কিছু অদ্ভুত সুখকর অনুভূতি। অনির জীবনের অস্বাভাবিকতাগুলোর মাঝে এই স্বাভাবিক জীবনের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা যেন জীবনকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে তাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। কত অদ্ভুত তার এই জীবন।

অনন্যময়ীর অন্যরকম জীবনযাত্রার সূচনা হয়েছিল বছর তেইশেক আগে ফালগুনের দ্বিতীয় দিবসের অপরাহ্ণকালে। প্রসব বেদনায় কাতর অনামিকা শেখ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। প্রসব বেদনার তুলনায় মানসিক পীড়া তাকে অধিক কাবু করে ফেলেছেন। তবে স্বামীর শোকে শোকাহত হওয়ার মতো মানসিক যন্ত্রণা নয়। এই যন্তণা হলো নিজের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হারানোর। যা হারিয়ে তিনি অনেক আগেই পাগলপ্রায় অবস্থায় উপনীত হন। আজকের অনামিকা শেখ তখন ছিলেন সদ্য বিধবা হওয়া বিশ বছরের এক অতি সাধারণ যুবতী। সাধারণের মধ্যেও যেন তিনি ছিলেন অসাধারণ এক মানুষ। যতটা সে বাবা মায়ের আদরের পাত্রী তার চেয়েও অধিক স্নেহের ছিলেন বড় ভাই আদনান সাহেবের কাছে। দু ভাই বোনের এমন ভালোবাসার জুড়ি মেলা ভার। একে অপরের জন্য পাগলপ্রায় ছিল তারা।

অনামিকার জন্মের পর থেকেই আদনান সাহেব তার দেখাশোনা করতেন।অনামিকার জন্মের সময় আদনানের বয়স ছিল দশ বছর। জাহানারা বেগম বিশেষ কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন বিধায় বেশির ভাগ সময়ই শয্যাশায়ী থাকতেন। এমতাবস্থায় তিনি সদ্য জন্ম দেয়া অনামিকার দিকে নজর দিতে পারতেন না। তবুও কষ্ট করে যেটুকু পারত যত্ন নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যেত বাকিটা কাজের লোকরা সামলে দিত। কিন্তু সে সময় তিনি এতটাই অসুস্থতায় ভুগছিলেন যে নিজের মেয়ের কোন যত্নাভাব হচ্ছে কিনা তা তদারকি করাটাও যেন তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।

মাঝে মাঝে কাজের লোকদের আদরবিহীন রঢ় স্পর্শ গুলো আদনানের মনে বিশেষ ভাবে আচড় কাটে। তাই নিজেই ধীরে ধীরে পুতুলের মতো বোনটার খেয়াল রাখতে শুরু করে। গোসলের পর অপটু হাতে শিশুকন্যা অনামিকার গায়ে তেল মালিশ করা থেকে শুরু করে সর্দি জ্বরে রাত জেগে পাশে বসে থাকা অবধি সে করেছে।

অনামিকার প্রতি আদনানের এত আদর স্নেহ দেখে জাহানারা বেগমের অন্তরে প্রশান্তির শীতল হাওয়া বয়ে যায়। অসুস্থতার জন্য জাহানারা বেগমের মনে হাজার রকমের চিন্তা ভাবনা এসে ভিড় করে। তবে এটুকু ভেবে স্বস্তি পান যে তার অনুপস্থিততে তার পুতুল কন্যাকে সামলানোর জন্য কেউ রয়েছে। কারো যেন নজর না লাগে। তাদের এই ভালোবাসার বন্ধন অটুট থাকুক সারাজীবন।

আস্তে আস্তে আদনানের পুতল বড় হতে থাকে। হামাগুড়ি দিতে দিতে একদিন নিজের পায়ে হাঁটতে শুরু করে। ছোট ছোট পায়ে সব সময় আদনানের আগে পিছে ঘুর ঘুর করে। জাহানারা বেগমের চেয়ে সে যেন আদনানের সঙ্গটাই বেশি পছন্দ করে। আদনান যখন স্কুলে যায় চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে আদনানের ফেরার অপেক্ষায়।

গাড়ির হর্ণের আওয়াজ শুনলেই সে মায়ের কোল থেকে নেমে গিয়ে ছোট ছোট পায়ে দৌঁড়ে যায় ভাইয়ের দিকে। তাকে আর আটকায় কে এখন। ভাইটাও ঠিক তেমনি সব কিছু ফেলে সে অনামিকাকে কোলে তুলে নেয়। ভাই বোনের এই অপূর্ব ভালোবাসার দৃশ্য জাহানারা বেগমের চোখে মাঝে মাঝে আনন্দের অশ্রু গুলো আবেগ সামলাতে না পেরে বেরিয়ে আসতে চায়।

ছোট্ট অনামিকা যখন আরেকটু বড় হলো তার আনন্দের যেন সীমা নেই। সেও তার ভাইয়ের মতো স্কুলে যাবে। এটাই তার আনন্দের কারণ না। কারণ হলো সে তার ভাইয়ের স্কুলেই ভর্তি হয়েছে। আনন্দে পুরো বাড়ি সে যেন মাতিয়ে রেখেছে। আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু টাই হলো অনামিকা-আদনান।

স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে অনামিকা আজ কলেজে আর আদনান ভার্সিটি লাইফ শেষ করে ব্যবসার কাজে হাত লাগিয়েছে। কাজের ব্যস্ততা হয়তো বেড়ে গেছে তবুও দিনশেষে নীড়ে ফিরে অনামিকার মিষ্টি হাসিটাই যেন আদনানের সকল ক্লান্তি অবসাদ দূর করে দেয়। হাজার ব্যস্ততায় হয়তো আগের মতো অনামিকাকে খুব বেশি সময় দিতে পারে না ঠিকি তবুও ভালোবাসার গভীরতা সম্পর্কের দৃঢ়তা যেন আগের তুলনায় হাজার গুণ বেড়ে গেছে। মাতা জাহানারা বেগম আর পিতা জহির সাহেবের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হয়ত তাদের দুই সন্তান অনামিকা-আদনান।

কাজের ব্যস্ততায় অনামিকার উপর থেকে কিছুটা নজর সরে যায় আদনানের। কলেজের নতুন নতুন বন্ধুবান্ধবের সাহচর্য লাভ করে অনামিকা। যা ছিল ভালো খারাপ মিশিয়েই। পাশাপাশি তার মনে সুপ্ত ভালোবাসার অনুভূতি কিছুটা নাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করে। সেই মানুষটা আর কেউ নয়; আশরাফ খান।

অনামিকা বড়লোক বাড়ির মেয়ে হলেও তার অতি সাধারণ চলাফেরা তাকে সবার মাঝে অসাধারণ করে তুলেছিল। বিধায় অনেকেরই চোখে পড়ে অনামিকা। অনামিকার প্রশংসায় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ ভাবে তার নাম ছড়িয়ে পরার পেছনেও রয়েছে একটু ছোট্ট কাহিনি।

কলেজে নতুন ভর্তি হয়েছে সে। সপ্তাহ খানেকের মতো ক্লাস করেছে। রোজকার মতো কলেজে আসছিল সে। কলেজের গেটে কিছু একটা দেখে থমকে যায় অনামিকা। তার মেজাজ চড় চড় করে চরমে উঠে যায়। সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে সপাটে চড় মারে।

এই ঘটনায় যেন চারপাশটা স্তব্ধ হয়ে যায়। সবার নজর এখন অনামিকা আর রাজীবের উপর যাকে কয়েক সেকেন্ড পূর্বেই থাপ্পড় মেরেছে অনামিকা। তবে থাপ্পড়টা সে বিনা কারণে মারেনি। কলেজে ঢুকতেই দেখতে পায় অনামিকা কলেজেরই এক স্টুডেন্ট কে হ্যারাস করছে রাহাত নামের ছেলেটি।

রাহায় এই কলেজেই পড়ে মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র সে। পড়াশোনায় তার বিশেষ কোন নামডাক নেই। তার নাম ডাক শুধুমাত্র সন্ত্রাস ক চাঁদাবাজির জন্য। এসবের পাশাপাশি কলেজের মেয়েদের উত্যক্ত করা,র‍্যাগিং করা তার চিরায়ত স্বভাব। কলেজের বেশির ভাগ মানুষই তাকে ভয় পায়। এমন কি শিক্ষকরাও তাকে এড়িয়ে চলে।

অনামিকার এই কাজে সবাই যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। চারপাশটা কেমন থম থমে হয়ে যায়। তবে অনামিকা এক চুলও অনড় হয়নি। রাহাতকে খুব বাজে ভাবে অপদস্থ করে সে। রাহাত জবাবে অনামিকার গায়ে হাত তুলতে যেয়ে থেমে যায়। আর যাই হোক সে কখনো মেয়েদের গায়ে হাত তোলে না। রাগে তার চেহারাটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। প্রিন্সিপাল স্যার এসে সাময়িক ভাবে বিষয়টা সামলে নেন ঠিকি। কিন্তু রাহাতের রাগ বিন্দু পরিমাণও কমেনি।

বন্ধুমহলের সবাই তার উপর প্রসন্ন হলেও কিছু কিছু মানুষের চোখের বালি হয়ে যায় অনামিকা। বিধায় তারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে থাকে কিভাবে তাকে অপদস্থ করা যায়। অনামিকার সুচতুরতায় বার বার তারা ব্যর্থ হতে থাকে। বিধায় তাদের ক্ষোভটাও পাহাড় সমান হয়ে যায়।

ছোটখাটো কারসাজি গুলো যখন তাদের বিফলে যায় তখন তারা বড় সড় ষড়যন্ত্র করার পরিকল্পনায় মেতে ওঠা। অণু পরিমাণ ঈর্ষা ধীরে ধীরে প্রতিশোধে পরিণত হয়। কিছুটা আঁচ করতে পারেন অনামিকা। তাই সর্বদা চোখ কান খোলা রেখে সতর্ক ভাবে চলাফেরা করে অনামিকা। এসব কিছুই টের পাননি আদনান সাহেব। যদিও অনামিকা সব কথাই আদনানের সাথে শেয়ার করে। বিগত কয়েক দিন ধরে ব্যবসার কাজে আদনান আগে থেকেই কিছুটা চিন্তিত ছিল। বিধায় অনামিকা আর তাকে এই বিষয়ে কিছু বলে তাকে মানসিক চাপে ফেলতে চায়নি। যা অনামিকার জন্য কাল হয়ে জানতো। কে জানতো তার বন্ধু নামক শত্রুরাই তাকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করবে।

কোন এক শুক্রবারের কথা। ছুটির দিনে অনামিকার প্রাইভেটগুলো বন্ধ থাকে। তবে সামনেই পরীক্ষা বিধায় তাদের এক্সট্রা ক্লাস নিচ্ছিলেন টিচার। সকাল সকাল সে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় তাড়াহুড়ো করে। বাসা থেকে মিনিট বিশেকের দূরত্বে তার প্রাইভেট সেন্টার।

সকালবেলা হওয়ায় রাস্তা কিছুটা নির্জন। তবে দু একজন মানুষ জনকে দেখা যাচ্ছে। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে এসে শর্ট কাট রাস্তা দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি হবে ভেবে গলির মতো একটা রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যায় অনামিকা।

রাস্তাটা পার হয়ে এসে গলির মাথায় কিছু লোক এসে পথ আটকে দাঁড়ায় অনামিকার। এক নজর বুলিয়ে নেয় সে। এরা সবাই রাহাতের বন্ধু বান্ধব। সবার পেছন থেকে রাজীব একটা জ্বলন্ত সিগারেট হাতে বেরিয়ে আসে। সিগারেটের ধোয়া অনামিকার মুখের সামনে এসে ছেড়ে দিয়ে শয়তানি হাসি দেয় রাহাত। অনামিকা সিগারেটের ধোয়া সহ্য করতে না পেরে খুক খুক করে কাশতে থাকে।

রাহাতের বিশ্রী হাসি অনামিকার কানে যেন খুব বাজে ভাবে আঘাত করছে। অনামিকা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার মুখে রুমাল চেপে ধরে রাহাত। কিছুক্ষণ ছটফট করতে করতে নিস্তেজ হয়ে রাহাতের গায়ে ঢলে পড়ে অনামিকা।

আবছা আবছা চোখ মেলে তাকায় অনামিকা। হাত পা নাড়াতে পারছে না সে। চারপাশটা কেমন অন্ধকার লাগছে। ভেন্টিলেটরের ফাঁক দিয়ে এক ফালি আলো এসে অনামিকার চোখে পড়ছে। হঠাৎ আলো পড়ায় চোখ দুটো কুঞ্চিত হয়ে যায় তার। আস্তে আস্তে চোখ মেলে চারদিকে চোখ বুলায় সে। একটা চেয়ারে হাত পা বেধে রেখেছে শয়তানটা তাকে।হাত পা নাড়াতেই ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে অনামিকা। সকল শক্তি দিয়েও সে নিজেকে ছাড়াতে পারে না।

একসময় সে ক্লান্ত হয়ে থেমে যায়। সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে।কোথাও কোন সাড়া পায়না সে। ক্রমাগত দূর্বল হয়ে পড়ছে সে। দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকায় অনামিকা। একজন বয়স্ক লোককে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে রাহাত। হাতে তার গোটা চারেক শপিং ব্যাগ।

লাইট জ্বালিয়ে ব্যাগ থেকে কয়েকটা শাড়ি আর গহনা বের করে বিছানার উপর রাখে রাহাত। অনামিকার হাতের বাঁধনে গুলো খুলে দিয়ে অনামিকাকে বলে তৈরি হয়ে নিতে।

–আপনি আমাকে কেন এখানে এনেছেন? আমি বাসায় যাবো। আমি কেন তৈরি হবো। (অনামিকা)

–এতো প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় নেই। তৈরি হয়ে নাও আধ ঘন্টার মধ্যে তোমার বিয়ে।(রাহাত)

–বিয়ে!কার সাথে বিয়ে? আমি এ বিয়ে করবো না। আমি বাসায় যাবো। আমার ভাইয়া জানতে পারলে আপনাকে ছাড়বে না।(অনামিকা)

–উফফ। তুমি এত উত্তেজিত হয়ো না। বিয়েটা তো তোমাকে করতেই হবে। এক্ষুণি আমার সাথে তোমার বিয়েটা হবে।সো এত বেশি তেজ দেখায়ো না আমাকে আমার আসল রূপটা বের করতে বাধ্য করো না তুমি। লক্ষী মেয়ের মতো তৈরি হয়ে নাও।(রাহাত)

–না। আপনার মতো জঘন্য লোককে আমি কিছুতেই বিয়ে করবো। আমি মরে যাবো তবুও আপনাকে বিয়ে করবো না। (অনামিকা)

–আমি জানি তো সেটা। তাই তো সেই ব্যবস্থা আমি আগেই করে রেখেছি। এই মূহুর্তে তোমার বাড়ির সামনে আমার লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। তুমি যদি একচুল এদিক ওদিক করো তাহলে তোমার প্রিয় মা আর এই পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে না। (রাহাত)

রাহাতের কথা শুনে অনামিকা কিছুটা দমে যায়। বড়লোকের বখাটে সন্তান রাহাত। চাইলে সে সবটাই করতে পারে। কিছুটা ভয় পেয়ে যায় সে। তবুও দমে যায় না। সে তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে।

অনামিকাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে রুম লক করে বেরিয়ে যায়। আর তাকে রেডি হতে বলে। অনামিকা রাগের মাথায় শাড়ি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে। সব জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।

নিচে থেকে দৌঁড়ে এসে রাহাত দরজা খুলে অনামিকা কে ঠাস করে চড় মারে। অনামিকা সেন্টার টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে তার কপালটা কেটে যায়।

অনামিকাকে টেনে তুলে হিড় হিড় করে টানতে টানতে নিচে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই কাজি সাহেব সহ রাহাতের বন্ধুরা সবাই উপস্থিত ছিল। কিছু মানুষকে দেখে অনামিকা যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এদের মাঝেই কেউ কেউ অনামিকার তথাকথিত বন্ধু ছিল। যারা আজ তার এই সর্বনাশ করতে রাহাতকে সহায়তা করছে। বন্ধুত্বের উপর থেকে অনামিকার বিশ্বাস উঠে যায়। মূলত এদের উস্কানিতেই রাহাত এতো গর্হিত কাজ করেছে।

অনামিকাকে জোর করে বিয়ে করে নেয় রাহাত। এই মূহুর্তে নিজেকে সবচেয়ে বেশি অসহায় মনে হচ্ছে অনামিকার। অশ্রু বিসর্জন দেয়া ব্যতীত কোন উপায় নেই। খুব মনে পড়ছে তার আশরাফের কথা। তার পরিবারের কথা। না জানি কি অবস্থা তাদের।

শুধুমাত্র জোর করে বিয়ে করেই থেমে যায়নি রাহাত। অনামিকার উপর প্রতিশোধ নেয়ার আগুন এখনো দপ দপ করে জ্বলছে। যা নেভাতেই সে অনামিকার উপর পাশবিক অত্যাচার করে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া অনামিকার উপর জোর খাটিয়ে তার পুরুষত্ব জাহির করে। এর থেকে যেন মৃত্যু শ্রেয় বলে মনে হয় তার কাছে।

রাহাতের অত্যাচারগুলো অনামিকা কে ক্রমাগত অনুভূতিহীন করে তোলে। সে যেন হাসতে ভুলে গেছে। চোখের জল শুকিয়ে গেছে। তার এখন আর কান্না আসে না। শুধু জমে আছে রাহাতের জন্য এক আকাশ সমান ঘৃণা। যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

বোনের নিখোঁজ হওয়ায় পুরোপুরিভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যান আদনান। নিজেকে ক্রমাগত তিনি দোষারোপ করতে থাকেন। কাজের ব্যস্ততায় বোনের দিকে নজর দিতে পারেননি তিনি। সিব রকমভাবে চেষ্টা করে তিনি খোঁজ লাগান অনামিকার।

বেশ কয়েক দিন পর পুলিশের সহায়তায় খবর পেয়ে পৌঁছে যান রাহাতের খামার বাড়িতে যেখানে সবার চোখের আড়ালে অনামিকাকে বন্দী করে রাখে। রাহাত সেই মূহুর্তে উপস্থিত ছিল না। তাই অনামিকাকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে বেগ পেতে হয়নি আদনানের। সিকিউরিটি গার্ডরা এসে ঝামেলা করার চেষ্টা করলে পুলিশের ভয়ে তারাও দমে যায়।

অনামিকা কে দেখে আদনান সাহেবের বুকটা হু হু করে ওঠে। তার পুতুল বোনটার এই অবস্থায় মনটা কেঁদে ওঠে। নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি অনামিকেকে জড়িয়ে ধরেন। এতে যেন অনামিকার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তার কোন অনুভূতিই যেন হচ্ছে না। এতে যেন আদনান সাহেব আরো বেশি আঘাত পান। জানোয়ারটা তার বোনের কি দশা করেছে। রাহাতকে সামনে পেলে হয়ত খুনই করেই দিতেন তিনি।

চলবে……

আসসালামু আলাইকুম। খুবই দুঃখিত দেরিতে দেওয়ার জন্য।আমার পরীক্ষার জন্য গল্প লেখার টাইম পাচ্ছিনা। এই পুরো সপ্তাহ জুড়ে আমার এক্সাম। তাই একটু দেরি হবে। আমি চেষ্টা করবো দ্রুত বোনাস পার্ট সহ গল্প দেয়ার।?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here