Mysterious Part 20

0
225

Mysterious
Part -20
Romoni

অতীত,

বৃষ্টি ভেজা ছিলো সেই দিনটা, ব্রিজ এর উপরে দাঁড়িয়ে দুইজন মাঝ বয়সী পুরুষ এবং মহিলা, অপেক্ষা করছেন তাদের একমাএ মেয়ের জন্য।
তাদের মেয়ে ব্রিজ এর অপর পাশের আইসক্রিম পার্লার থেকে আইসক্রিম কিনছিলো।
সেদিন মেয়েটার জন্মদিন ছিলো,তাই সেদিন সেই মেয়েটা তার মা বাবাকে নিয়ে এসেছিলো বাহিরে ঘুরতে।

সবকিছু ঠিকঠাক-ই অতিবাহিত হচ্ছিলো।
তবে হঠাৎ করেই ব্রিজের নিচে বয়ে যাওয়া জলধারার থেকে এক ভয়ঙ্কর আওয়াজ ভেসে এলো, আর দুটি অসহায় আর্তনাদ এই বারবার বেজে ওঠা যানবাহনের বিরক্তিকর হর্ন মুখর পরিবেশটাকে মুহুর্তেই যেনো নিস্তব্ধ করে দিলো শুধু মাএ সেই মেয়েটার কাছে।
অথচ সব কিছু আগের ন্যায়ই নিজের গতিতে অতিবাহিত হচ্ছে,কোনো কিছুই যেনো এই আর্তনাদ এর উপর ভিওি করে থেমে নেই,শুধু একজন ছাড়া।
আর সে হলো সেই মেয়েটি।
মেয়েটি হাতে থাকা আইসক্রিম তিনটি অতিব জোড় দিয়ে আঁকড়ে ধরে আছে নিজের হাতের মুঠোয়, আর চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে বাঁধাহীন অশ্রু ধারা।
মেয়েটার কাছে যেনো সব কিছুই থমকে গেছে।
কোনো রকমের কোলাহলই যেনো মেয়েটার মস্তিষ্ক অনুভব করতে পারছে না।

হঠাৎ ছুটে চলা গাড়ি গুলোর মধ্যে একটি গাড়ির অতি তীব্র হর্নের আওয়াজে মেয়েটার ধ্যান ভাঙে, আর সাথে সাথে মেয়েটা দৌড়ে যায় ব্রিজের অপরপাশে, আর গিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখে পানিগুলো ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যাচ্ছে, জলের উওল ভাবটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে।
আস্তে আস্তে কয়েকজন মানুষের ভীড় বাড়তে থাকে সেখানে, সবাই নিজের মতো করে কথা বলে চলেছে।
কেউ কেউ বলছে এটা কিভাবে সম্ভব?
কেউ যদি নিচে পড়ে যায় তাহলে তো বাঁচার জন্য প্রান পনে চেষ্টা করবে, আর তার ফলে পানিগুলোও অশান্তও হয়ে ওঠার কথা ছিলো, তাহলে পানিগুলো আবার আগের ন্যায় স্বাভাবিক ভাবে বইছে কি করে?

মেয়েটার ভেজা চোখ মোছার সময় পাশে চোখ পড়তেই দেখতে পায়,একটা গাড়ি গিয়ে ব্রিজ এর রেলিং এর সাথে ধাক্কা লেগে থেমে আছে,কয়েকজন ব্যাক্তি সেখানে গিয়ে ভীড় জমিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আর ভীড়ের ফাঁকে দেখা যাচ্ছে গাড়ির পাশের কাঁচ ভেঙে একটা হাত বেরিয়ে আছে বাহিরের দিকে।
মেয়েটার কাছে সেই হাতটা খুব পরিচিত মনে হয়, তাই মেয়েটা একবার ব্রিজের নিচে তাকিয়ে তারপর দৌড়ে যায় গাড়িটার দিকে।
মেয়েটা সেখানে গিয়ে আরো একবার বিস্মিত হয়ে যায়।

ইফানের কপালের অংশ থেকে কেটে রক্ত ঝরছে, আর পাশের ড্রাইভার সিটে যে ছিলো তারও অনেকটাই আঘাত লেগেছে, আর দুজনেই সেন্সলেস হয়ে গেছে।
মেয়েটা একসাথে এতোটা ধাক্কা সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেয়ে গেছে,একদিকে মা বাবা অন্যদিকে তার জীবন সঙ্গী।
মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বারবার করে ইফানকে ডাকতে থাকে, অতঃপর ধীরে ধীরে ইফান চোখ মেলে তাকায় আর ব্যাথাতুর কন্ঠে বলে ওঠে, তায়াশা তুমি?

তায়াশা ইফানের কথার প্রতিউওরে বলে, তুমি আগে বের হও।
তারপর ইফান আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে, আর ততক্ষণে কয়েকজন লোক মিলে গাড়ির ড্রাইভার সিটে থাকা লোকটিকেও সাবধানে বের করে নিয়ে আসে।
তারপর ইফান আর সেই আহত ব্যাক্তিটিকে হসপিটালে নেওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়।
এদিকে পুলিশকেও এই দুর্ঘটনার কথাটা জানানো হয়, তার এসে নিজেদের মতো তদন্ত শুরু করে দেয়।
নদীতে ডুবুরি পাঠানো হয়, তবে অনেক চেষ্টা করেও তারা কোনো লাশ উদ্ধার করতে পারে নি, পানির নিচে কোনো ব্যাক্তির চিহ্ন মাএ নেই।
এতে সবাই বেশ আশ্চর্য হয়ে যায়, এসব কি হচ্ছে কেউই কিছু বুঝতে পারছে না।
অন্য দিকে তায়াশা এতোগুলো মানসিক আঘাতের ফলে পাথরের ন্যায় একস্থানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে নির্বাক হয়ে সব কিছু দেখে চলছে।

এরপর পুলিশ সেই গাড়িটার সামনে গিয়ে দেখে গাড়িটার সামনের দিকে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে, আর গাড়ির ভেতরেও রক্ত লেগে আছে, পুলিশ আশেপাশের লোকজনদের জিজ্ঞেসাবাদ করে জানতে পারে গাড়িতে থাকা দুজনকে হসপিটাল এ এডমিট করা হয়েছে।
তারপর পুলিশ সেই হসপিটালের ঠিকানা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়, আর ডক্টর এর সাথে কথা বলে,সেই গাড়িতে থাকা দুজন ব্যাক্তির সাথে কথা বলার পারমিশন নিয়ে নেয়।
তারপর পুলিশ কবিনে ঢুকে গিয়েই জিজ্ঞেস করে গাড়ি কে ড্রাইভ করছিলো?
প্রতিউওরে ইফানের পাশে থাকা ছেলেটি বলে ওঠে, স্যার আমি।
তারপর ইফান কে প্রশ্ন করে, তোমার নাম, আর এই এক্সিডেন্ট কি ভাবে হলো?

–স্যার আমি ইফান।

তারপর পাশে থাকা ছেলেটি বলে ওঠে ,স্যার ও আমার ফ্রেন্ড হয়, আমরা দুজনে আমার এক বন্ধুর বাসা থেকে ফিরছিলাম, প্রথমে সব ঠিকঠাকই ছিলো তবে হঠাৎ করেই গাড়িটা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়, আমি গাড়িটা থামানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু কিছুতেই থামছিলো না, আর তারপর গাড়িটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজ এর পাশে থাকা দুজন ব্যাক্তির সাথে গিয়ে ধাক্কা লেগে যায়, আর তারা উল্টে নিচে পড়ে যায়, আর গাড়িটা আরো কিছুটা সামনে গিয়ে ব্রিজের রেলিং এর সাথে ধাক্কা লেগে যায়, তারপরে আমার আর কিছু মনে নেই স্যার।
ছেলেটা থেমে গিয়ে আবার তড়িঘড়ি করে বলতে শুরু করে,
তবে স্যার সব কিছু কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছিলো, আমি না নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম, আর না গাড়ির উপর, সব কিছু কেমন যেনো এলোমেলো হয়ে আসছিলো, আর গাড়িটা মনে হচ্ছিল কেউ যেনো নিজের নিয়ন্ত্রণে করে চালাচ্ছে, এতোটা নিখুত ভাবে গাড়িটা চলছিলো, যেনো কেউ ইচ্ছা কৃত ভাবে গাড়িটাকে এমন ভাবে অনিয়ম এ চালাচ্ছে।

ছেলেটির কথা শুনে পুলিশ সন্দেহের দৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে, কিন্তু আমরা কাউকে পাই নি নদীতে।

— কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? (ইফান)

–জানিনা, দেখি কি করা যায়।
তবে তুমি যা বললে তা যদি ভুল প্রমানিত হয়, তাহলে তোমার কপালে অশেষ দুঃখ আছে, পুলিশ ছেলেটির উদ্দেশ্য কথা গুলো বলেই পুলিশ বেরিয়ে চলে যায়।

পুলিশ এর কথা শুনে সেই ছেলেটি মুখ মলিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে বেডে, আর ইফান মাথা নিচু করে এক পৈশাচিক হাসি ফুটিয়ে তোলে নিজের ঠোঁট এর কোনে, আর মনে মনে বলতে থাকে অযথা নিজের প্রানটা হারালেন, আমার কথা মেনে তায়াশার সমস্ত পাওয়ার আমায় দিয়ে দিলেই পারতেন, তাহলে আপনারা নিজের প্রানটাও হারাতেন না, আর তায়াশাকেও নিজের জন্মদিন এ মা বাবার মৃত্যু দিবস পালন করতে হোতো না।

|
|
|

(ইফান ইচ্ছা কৃত ভাবেই আজ এই রাস্তা দিয়ে ইফান এর বন্ধু কে গাড়িটা চালিয়ে আসতে বলে, কোনোনা ইফান জানতো আজ তায়াশা ওর মা বাবার সাথে এখানে আসবে, তাই পুরো পরিকল্পনার সহিত ইফান কাজটা করে, যদিও সবার সন্দেহ এড়ানোর জন্য নিজেকেও অনেকটা আঘাত দিয়েছে।
তবে পুলিশের সন্দেহও যেনো ইফান এর উপর না হয় সেই বিষয় লক্ষ্যে রেখে পুলিশদের উপরেও পাওয়ার প্রয়োগ করে, ইফান নিজের প্রতি সন্দেহের রেশটা পুলিশ কেবিনে প্রবেশ করার সাথে সাথেই কাটিয়ে দিয়েছিলো।
তাই পুলিশও আর ইফান এর উপর সন্দেহ করতে পারে নি।

পুলিশও নিজের মতো করে অনেক চেষ্টা করেছে ডেড বডি দুটো খুঁজে বের করার তবে পায়নি, এক রহস্য ময় মৃত্যু হয়েই রয়ে গেছে তায়াশার মা বাবার মৃত্যু।)

বর্তমান,

এসব ভেবে ইফান বিকট শব্দে হেঁসে ওঠে।
তবে ইফান আজও এই রহস্য উন্মোচন করতে পারে নি, তায়াশার মা বাবার ডেড বডি কোথায় গেলো?
এখনো সেই বিষয় খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে ইফান।

ইফানের মাইন্ড রিড করার পরে,তায়াশার আর বুঝতে বাকি নেই যে ওর মা বাবাকে ইফানই খুন করেছে, আর গাড়ির নিয়ন্ত্রনও ইফান নিজের আয়ওে নিয়ে নিয়েছিলো।
এই বিষয় জানতে পেরে এক তীব্র যন্ত্রনায় তায়াশার চোখ থেকে অঝরে পানি পড়ছে,তায়াশার ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে তায়াশা এমন একজন ঘৃণিত ব্যাক্তিকে এতোটা ভালোবেসে গেছে।
হঠাৎ তায়াশা চোখ মুছে ইয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,তাহলে মা বাবার ডেড বডি কোথায় ইয়ান স্যার?

To be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here