Different Love পার্ট ৯

0
1611

Story:- #Different_Love
Writer:- গল্পছোঁয়া
Part:- 09

— বেস অনেক হয়েছে, আর নাহ্।
ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবে, সাইন করে দিও।

কথাটা শুনে আরিয়া বিস্ফোরিত চোখে আয়মানের দিকে তাকালো, আয়মানের দৃষ্টি সামনের দিকে। যেন সে তেমন কিছুই বলেনি,কিন্তু আরিয়ার মনে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে সেটা কি আয়মান জানে?? হ্যাঁ জানে কিন্তু সে নিরুপায়।

— কি বললেন আপনি??

— ঠিকই বলেছি আমি।
আমি বারবার বলেছি এই বিয়েটা কোনো বিয়েই না,ভুলে যাও এই বিয়ে। বাট তুমি তো সেটা শুনবেনা,উল্টো বিয়েটাকেই জীবনের সবচেয়ে উঁচুতে উঠিয়ে নিজের জীবনটা শেষ করে দিতে চাইছো।
তোমার মতে এই বিয়েটা সত্যিকারের বিয়ে, তাহলে এই বিয়েটা নষ্ট করার উত্তম মাধ্যম হলো ডিভোর্স।

আরিয়ার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরছে, সে ভাবতেও পারেনি আয়মান তাকে ডিভোর্স দিতে চাইবে। সে তো ভেবেছিলো ভেবে ছিলো কোনোভাবে আয়মানকে বুঝিয়ে ওর সাথে স্যাটেল হবে।কিন্তু হলো টা কি…

— ডিভোর্সের পর নিজের লাইফটাকে নিজের মতো সাজিয়ে নিও,তোমার জন্য অনেক ভালো ভালো ছেলে রয়েছে, বেটার টাকেই চুজ করে বিয়ে করে নিও।
জানিনা আর কখনো দেখা হবে কিনা,রাতেই আমি রাজশাহী ছেড়ে চলে যাচ্ছি। কোরিয়ার সার্ভিসে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিব,সাইন করার পর তুমি…

— ব্যাস মিঃ আয়মান আহির চৌধুরী
আমার ভালো আমার ভবিষ্যৎ আপনাকে না ভাবলেও চলবে।আমি আর কখনও আসবোনা আপনার কাছে না আপনাকে খুজার চেষ্টা করবো।তবুও প্লিজ ডিভোর্সের কথা বলবেননা।
আপনাকে আমি মনেপ্রাণে নিজের স্বামী হিসেবে মানি,শেষ নিঃশ্বাস অবধি আপনার বউ হয়েই আপনার অর্ধাঙ্গিনী হয়েই বাঁচতে চাই।
আপনার লাইফে আপনার প্রফেশন টাই সব তাইনা, ওকে আপনার কাছে যেমন আপনার প্রফেশন টা ইম্পর্ট্যান্ট আমার লাইফেও তেমন আপনি আর এই বিয়েটা ইম্পর্ট্যান্ট।
ভালো থাকবেন,আর কখনো ডিস্টার্ব করবোনা।আল্লাহ হাফেজ।

আয়মান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আরিয়া হাঁটা দিলো।


—আপনি আমার হাত ধরে এভাবে টেনে আনলেন কেন বলুনতো,মেয়ে দেখলেই হাত ধরতে ইচ্ছে করে তাইনা (নিমু রেগে)

— তুমিইতো ইশারা করলে হাত ধরার জন্য (রোজ ফোন স্ক্রল করতে করতে)

— হনুমান কোথাকার, আমি কেন বলব আমার হাত ধরতে।আমি কি ছোট বাচ্চা যে আমায় হাত ধরে হাটতে হবে নয়তো হারিয়ে যাব,আজিব।

— আরে এতো হাইপার হচ্ছো কেন,দেখো সবাই কেমন হাত ধরে ঘুরছে।আর আমরা কি তাকিয়ে দেখবো বলো

— শাট আপ।
এই এক্সিউজ মি,এদিকে তাকানতো।
আরে আপনি সেই লোক না,ওইদিন চটপটি পার্লারের সামনে চোখ মেরেছিলেন আমায়।

— বাহ,স্ট্রোং মেমোরি তো তোমার।
ইয়াহ,ইউ আর রাইট।

একটা সুন্দরী মেয়ে যদি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে,মানে চোখ দিয়ে গিলে খায় তো আমার তো তাকে সাবধান করা উচিত।তাই…

— তাই চোখ মেরে দিলেন
ইতর,বজ্জাত,হনুমান

— এতদিন দেখেছি,খুব শখ ছিল বুঝলে তোমার মুখ থেকে এই মধুমিশ্রিত বানিগুলো শুনতে।আজ শখ টা পূরণ হলো

— মানেটা কি,এতদিন দেখেছেন মানে??

— মেসেঞ্জারে কতবার গালিগুলো দিলে বলো,তোমার গালি ছাড়া কি ঘুম ভাঙে আমার।

— হোয়াট,আমিকি আপনাকে চিনি??

— অবশ্যই চিনো,খুব ভালো করে চিনো।
তোমার একান্ত আপন আমি

— ভনিতা করা বন্ধ করুন,কে আপনি পরিচয় দিন।মাস্ক খুলুন,মুখ দেখবো,মাফিয়াদের মতো দিনেদুপুরে মাস্ক পড়ে ঘুরছেন কেন।

— কুল আরুর নিমকি কুল

— আরু নিমকি এগুলাও জানেন
এই পরিচয় দিন আপনি।

রোজ মাস্কটা খুলতেই নিমু টাসকি খেলো,ওও গড এটাতো রোজ আহাম্মদ। নিমুর বিএফ,মানে এফবি তে আরকি।
রিয়াল লাইফে নিমুর কোনো বিএফ তো দূর ছেলে ফ্রেন্ডও নেই, আরিয়ারও সেইম। গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেছে কিনা।
রাজশাহী কলেজে এসে আরাফাত একজনই ওদের ফ্রেন্ড। রাজশাহী আসার আগের দিন নিমুর বাবা নিমু কে ফোন কিনে দেয়,তারপরই ফেসবুক খুলে।
১৫দিন পর রোজের সাথে ফেসবুকে ওর আলাপ হয়,ধীরেধীরে বন্ধুত্ব তারপর প্রেম আর এখন ভালোবাসা। দুজন দেশের দু-প্রান্তে থাকলেও ভালোবাসার কমতি নেই, অনেক কেয়ার করে একে-অপরের।
রোজ কথা দিয়েছিল খুব শীঘ্রই তারা মিট করবে,বাট এভাবে হুট করে সারপ্রাইজড হয়ে যাবে ভাবেনি।নিমুতো পারেনা রোজ কে ঝাপটে ধরে, কিন্তু বাঙালি তো।লজ্জা লাগছে।

রোজ নিমু এই প্রথম একে-অপরের সামনে,ওরা নিজেদের মতো গল্প করছে।তাদের ভারচুয়াল লাইফের #Different_love এখন সাকসেস।


— সিরিয়াসলি, আমি খাঁটি সিঙ্গেল ট্রাস্ট মি হিমু। (আরাফাত)

— সো হোয়াট (হিমু)

— (মুড়ি খা তোর হোয়াট লইয়া) তখন থেকে বলছি এসো আমরাও প্রেম করি

— প্রেম কি ছেলের হাতের মোয়া,আপনি বলবেন আর আমি নাচতে নাচতে রাজি হব।

— আচ্ছা ঠিক আছে, নম্বর টা পাওয়া যাবে

চোখ গরম করে তাকালো হিমু।

— ওকে ওকে,ফেসবুক আইডির নাম বলো।
প্রেম করতে হবে না, ফ্রেন্ডশিপ করবো।যখন তোমার ভালো লাগবে আমায় বলো

— আমি ক্লাস ৯এ পড়ি,আমার কোনো ফোন নেই। ফেসবুকও চালাইনা,এটা আমার আন্টির ফোন।আমার কাছে ফোন রেখে আঙ্কেলের সাথে ঘুরছে।ওই দেখুন

— (লে শালার,কপালটাই খারাপ ধুরর)
বাড়িতে কোনো ফোন নেই নাকি,লুকাচুরি করে কথা বলতাম

— আছে, আম্মুর বাটন ফোন।
আমার কাছেই বেশি সময় থাকে,গান শুনি তো।

— ও,নম্বর তো আর দিবে না।আচ্ছা চলি

আরাফাত চলে যেতে নিলেই পেছন থেকে হিমু ডাক দিলো,আরাফাত পেছনে ঘুরতেই আরাফাতের হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নিজের নম্বরে ডায়াল করে তারপর আরাফাত কে ফোন ফিরিয়ে দিলো।
আরাফাত মাথা চুলকে মুচকি বিশ্বজয় করা হাসি দিলো।


আরিয়া হাটতে হাটতে নিমুর কাছে আসলো,রাগি স্বরে ওকে উঠতে বললো।
নিমুর হাত ধরে পার্ক থেকে বেরিয়ে রিকশা নিয়ে সোজা হোস্টেলে চলে গেলো। আরিয়া আর রোজ এফবিতে বেস্টু,আরিয়ারও ইচ্ছে ছিল রোজ কে সামনাসামনি দেখার।বাট আয়মান আজকে ওকে এতোটাই হার্ট করেছে যে ও অন্যকিছু ভাবা বা দেখার মানসিকতায় নেই।
নিমু বুঝতে পারছেনা,হঠাৎ করে আরিয়ার হলোটা কি।আয়মান কে পেয়ে বেশতো খুশি ছিল,এখন এমন কান্না করছে কেন আরিয়া।
নিমু আরাফাত কে মেসেজ করে বলে দিলো তারা চলে এসেছে,ও যেন না খুঁজে।আজ ক্লাস করবেনা আর।


রাত ৯ঃ৪৬
আরিয়া বিছানায় সুয়ে সুয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে, নিমু ওর পাশেই চিন্তিত হয়ে বসে আছে।
আরিয়া এখনো বলেনি কি হয়েছে যে এভাবে কাঁদছে ও,দুপুরের+রাতের খাবারও খায়নি,গোসলও দেয়নি সেই যে পার্ক থেকে হোস্টেলে ফিরলো,সেই তখন থেকেই বিছানায় সুয়ে বিরতিহীন ্ কান্না করেই যাচ্ছে।এতদিন রোজ কে না বললেও আজ নিমু রোজ কে বলে দিয়েছে, উমম বিয়ের কথা না শুধু বলেছে আরিয়া আর আয়মান রিলেশনশিপে ছিল।
আজ আয়মান কি আরিয়াকে কিছু বলেছে নাকি, আরিয়া নাওয়াখাওয়া ভুলে কান্না করছে।
রোজ বলেছে সে কিছু জানেনা,তবে আরিয়া চলে যাওয়ার পর থেকে আয়মানও নাকি এপার্টমেন্টে নিজের রুমে গিয়ে রুম লক করে রেখেছে আর বের হয়নি।

— আরু,কি হয়েছে বলনা।
না বললে হাল্কা হবি কি করে, আমায় বল।দেখি আমি কোনো সলিউশন দিতে পারি কিনা।
আচ্ছা, দুলাভাই কি তোকে নম্বর দেয়নি নিজের??
কাঁদিস না,শোননা আমরাতো জানতাম না বল রোজ আর আয়মান ভাইয়া ফ্রেন্ড+কলিগ।জানলে অনেক আগেই ভাইয়ার নম্বর,ফেসবুক আইডি কালেক্ট করতে পারতাম।
কাঁদিস না তুই,আমি এখনই ভাইয়ার নম্বর কালেক্ট করে দিচ্ছি রোজকে বলে।

— নো নিড,আমার চাইনা কারোর নম্বর।
কে আয়মান, হু ইজ হি।আই ডন্ট নৌ হিম। (চেচিয়ে)

— কি হয়েছে,আরু এমন করছিস কেন।
দেখ,সারাদিন ধরে সহ্য করছি বর নাহ।কি হয়েছে সবটা বলবি,তোকে আমার দিব্বি।

আরিয়া সবটা খুলে বললো নিমুকে,নিমুও বিশ্বাস করতে পারছেনা আয়মান ডিভোর্সের কথা বলবে। অবিশ্বাস্য, নিমু আরিয়াকে সান্ত্বনা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।

— না নিমু,আমি আর কখনো আয়মানকে ফোর্স করবোনা।ওর ওর প্রফেশন নিয়েই থাকুক,আমি আর কখনো ডিস্টার্ব করবোনা ওকে।ভাগ্যে যদি থাকে,ঠিকই পাব তাকে।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ছারবোনা।

— এশার নামাজ টা তো পরিসনি,পড়ে নে

— হুম,তুই আন্টিকে (হোস্টেলে যে রান্না করে) বলে খাবার নিয়ায়।আমি নামাজটা পড়ে নিই (দুহাত দিয়ে চোখ মুছে)

কেটে গেলো ১টা বছর,আরিয়া,নিমু আর আরাফাত এখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্টস।এই এক বছরে আরিয়ার সাথে একবারও আয়মানের দেখা হয়নি,আরিয়াও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।ছ্যাচড়ার মতো আর আয়মানের পিছনে ঘুরবেনা,তবুও বেহায়া চোখদুটো সবসময়ই আয়মানকেই খুজে বেড়ায়।কলেজ,টিউশনে যাবার সময়ে এদিক-ওদিক তাকায়,হঠাৎ করেও যদি আয়মান কে দেখতে পায়।কিন্তু না,সেই দিনের পর থেকে আরিয়া পায়নি আর আয়মানের দেখা।
নিমু রোজের থেকে জেনে বলতে চেয়েছে কিন্তু আরিয়া কিছুই শুনতে-জানতে চায়নি।
নিমু আর রোজ চুটিয়ে প্রেম করছে,পবিত্র এক ভালোবাসার সম্পর্ক ওদের। না আছে কোনো বারতি চাহিদা, যা আছে শুধু ভালোবাসা,কেয়ার।ইন্টার পরিক্ষা শেষ হলেই বিয়ে করার প্ল্যানিং করেছে ওরা।
আরাফাত আর হিমুও চুটিয়ে প্রেম করছে, হিমু এখন ক্লাস ১০এ পড়ে।আর ৩মাস পরে ওর এসএসসি পরিক্ষা, আর্স নিয়ে পড়ছে ও।
আরাফাত ওকে অঙ্কে,ইংলিশে হেল্প করে যতটা পসিবল….

To be continue….

(( একদিন পরপর গল্প পাবেন,কারণ আরেকটা গল্প রানিং এ আছে))

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here