Different Love পার্ট ৮

0
1700

Story :- #Different_Love
Writer :- গল্পছোঁয়া
Part :- 08

মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললো…

— কান্নাকাটি বন্ধ করে এবার ঘুমাও।
কি হলো, চোখটা বন্ধ করো??

— একটা কথা বলবেন প্লিজ??

— কি?

— আপনি কি করেন??
মানে লাইফরিস্ক এর ব্যাপার টা বুঝলাম না, কি এমন করেন যে আপনার জীবনের নিশ্চয়তা নেই??

— ইট’স সিক্রেট।
এগুলো শুনে তোমার কাজ নেই।

— না মানে,আপনি কি কোনো মাফিয়া??
রিভলবার নিয়ে ঘুরেন,রাস্তাঘাটে গুন্ডামী করেন।

— পাগলি,আরে ওই ছেলেটা একটা চোর ছিল।
এর আগেও একবার ওকে সাবধান করেছিলাম বাট আবার চুরি করলো।একজন বয়স্ক মহিলা তার হাজবেন্ডের ট্রিটমেন্টের জন্য ৫০,০০০ টাকা নিয়ে বাসে করে যাচ্ছিলো আর ওই ছেলেটা সুযোগ বুঝে টাকাগুলো চুরি করে নেয়।

— বুঝলাম।
কিন্তু কি করেন সেটা বললে কি প্রবলেম, বলুননা প্লিজ

— বাদ দাও,এসব কথা। ঘুমাও

— ঠিক আছে, বলতে হবে না।
জানেন, আমার বোন অহনা যদি জানতে পারে আমি আপনাকে খুঁজে পেয়েছি তাহলে কতো খুশি হবে।প্রতিদিন আমাকে ২বার কল করে খোজ নিতো,যে আমি আপনাকে খুজে পেয়েছি নাকি।

— দুজনেই পাগলি,এরকম কেউ করে??

— আচ্ছা শুনুননা,একটা কথা রাখবেন প্লিজ??

— বলো

— কালকে বলবো,কিন্তু প্রমিস করুন যে রাখবেন আমার কথা

— দেখো,আমি আমার সাথে তোমাকে জড়াতে পারবোনা।সো…

— আরে আমি অন্যকিছু চাইবো,খুবই সামান্য। ট্রাস্ট মি,আপনি আপত্তি করতে পারবেননা।

— ওকে,যদি মনে হয় আমি সেটা পারবো তাহলে অবশ্যই তোমার কথা রাখব আই প্রমিস ইউ।এখন ঘুমোও,অনেক রাত হয়েছে।

আরিয়া আর কোনো কথা না বলে গুটিশুটি মেরে আয়মানের বুকেই ঘুমিয়ে গেলো,এদিকে এই ১ম কোনো মেয়েকে এভাবে নিজের এতো কাছে,প্লাস নিজের বুকে নিয়ে ঘুমোতে প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে আয়মানের। কোনোরকমে নিজেকে কন্ট্রোল করে এভাবে থাকতে থাকতে সেও ঘুমিয়ে গেলো,তবে গভীর ঘুম না।


সকালে ঘুম ভাঙলে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো আরিয়া,আয়মান বিছানায় নেই। সে কোথায় গেলো??
হঠাৎ আরিয়ার চোখ গেলো রুমের পাশে থাকা বেলকনির দিকে,ওদিক থেকে কেমন একটা আওয়াজ আসছে।কৌতুহল বসত আরিয়া গিয়ে দেখলো,
আয়মান খালি গায়ে গায়ে পুশআপ করছে, বারকয়েক পুশআপ করে উঠে দাঁড়ালো। সাইডে থাকা এক্সারসাইজ সাইকেলে উঠে সাইক্লিং করলো বেশ কিছুক্ষণ। তারপর ওয়েট নিয়ে কিছুক্ষণ এক্সারসাইজ করে আবার সাইক্লিং করতে শুরু করলো, আয়মান আরিয়াকে খেয়াল করেনি কিন্তু আরিয়া বেলকনির দরজার কাছে দাঁড়িয়ে হা করে আয়মানকে দেখে যাচ্ছে।
মাই গড,এই ছেলেটা ওর হাজবেন্ড ভাবা যায়।কি মাসকিউলার বডি মাইরি।
কিছুক্ষণ সাইক্লিং করতেই আয়মানের চোখ গেলো দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা আরিয়ার দিকে,সাইকেল থেকে নেমে টাওয়াল টা নিয়ে নিজের ঘামগুলো মুছে ঘাড়ের ওপর টাওয়াল ঝুলিয়ে নিলো।
আগে থেকেই রাখা গ্লুকোজ মেশানো পানির পট টা নিয়ে পানি খেতে খেতে আরিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

— গুড মর্নিং।
কখন উঠেছো??

— (নো রেসপন্স)

— হেই হ্যালো (আরিয়ার হাত ধরে)

— হ্যাঁ জ জ্বি জ্বি

— বললাম কখন উঠেছো??

— এইতো,একটু আগে।

— ফ্রেশ হয়ে নাও,তারপর ব্রেকফাস্ট শেষে তোমাকে কলেজে নামিয়ে দিব।তোমার ফ্রেন্ড কে বলে দিও তুমি ডাইরেক্ট কলেজে যাবে।

— হুম।

আরিয়া ফ্রেশ হয়ে নেওয়ার পরে আয়মানও ফ্রেশ হয়ে নিলো,আরিয়া নিমুকে কল করে যা বলার বলে দিয়েছে।
ব্রেকফাস্টে আরিয়া আলুপরোটা আর সবজি খেলো,বাট আয়মান জাস্ট ২টা আধসিদ্ধ ডিম,সালাদ আর অরেঞ্জ জুস। ওর বডি ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য অয়েলি ফুড খাওয়া নিষিদ্ধ। আরিয়ার গতকালের বোরকা+ড্রেস তো নষ্ট হয়ে গেছে। আয়মান হোস্টেলের স্টাফদের নিয়ে নতুন বোরকা,হিজাব,টপস,ল্যাগিংস আনিয়েছে।অবশ্যই আরিয়ার এডভাইস অনুযায়ী। বোরকার নিচে লং কিছু পড়লে হাঁটতে গিয়ে গুছিয়ে যায় তাই টপস পরাই শ্রেয়।
আরিয়া সেসব নিয়ে নিজের মতো রেডি হয়ে নিলো।
আয়মান ব্লাক জিন্স,ক্লিম কালার টিশার্ট তারওপর হোয়াইট ব্লেজার পড়লো।রিভলবারে বুলেট লোড করে প্যান্টের পেছন পকেটে নিলো।চুলগুলো ঠিকঠাক করে গায়ে পারফিউম স্প্রে করে নিলো।
তারপর মোজা জুতা পরলো,বেস রেডি।
আরিয়াকে নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে, মেইন দরজা লক করে লিফটে গিয়ে উঠলো,কাউকে একটা কল করে কার নিয়াসতে বললো।
লিফট থেকে নেমে এপার্টমেন্টের বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে থাকা একটা প্রাইভেট কারে আরিয়াকে বসিয়ে দিয়ে আয়মান নিজেও গিয়ে আরিয়ার পাশে বসলো। অন্য আরেকজন ছেলে ড্রাইভিং করছে, কিছুক্ষণ পরে ব্রেক কষলো গাড়ি।

— স্যার, চলে এসেছি

— আরিয়া,তোমার কলেজ এসে গেছি।
এবার নামো,আর শোনো ছেলেমানুষী করোনা।নিজের লাইফে এগিয়ে যাও ওকে।

— আপনিও আসুন আমার সাথে।

— হোয়াট

— গতরাতে আপনি প্রমিস করেছিলেন আমি যা চাইবো দিবেন,এখন চাচ্ছি আপনি আজকে সারাদিন আমাদের সাথে থাকবেন।

— মানে

— আমার ফ্রেন্ড রা আপনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলো,আমিও ওদের প্রমিস করেছিলাম।
এখন আপনি যদি না করেন আমার কথার খেলাপ হবে,প্লিজ না করবেননা।আমি তো একটা দিনই চাচ্ছি আপনার কাছে,প্লিজ।

— আরিয়া,আমি বিজি।
আজ অনেক ইম্পর্টেন্ট কিছু কাজ আছে আমার।

— ওকে,বেশিক্ষণ না।মানে কয়েকঘন্টা জাস্ট, প্লিজ তবুও আসুন।

— ওকে।
রোজ, তুইও আয় আমার সাথে (ড্রাইভিং করছিলো যে তাকে উদ্দেশ্য করে)

আরিয়া কার থেকে নেমে দেখলো গেটের সামনেই নিমু আর আরাফাত দাঁড়িয়ে আছে, আরিয়াকে দেখে দৌড়ে আসলো ওরা।নিমু তো আরিয়াকে শক্ত করে হাগ করলো।
আয়মান আর রোজ মাস্ক পড়ে কার থেকে নেমে আসলো।

— নিমকি,ওই দেখ তোর দুলাভাই।
আমি আয়মানকে নিয়ে এসেছি (ফিসফিস করে)

নিমু আরিয়াকে ছেরে এবার আয়মানের দিকে তাকালো।
আরিয়া নিমু আর আরাফাতের সঙ্গে আয়মান কে পরিচিত করে দিলো।আয়মানের ২ঘন্টা পর কি একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে তাই ২ঘন্টার বেশী থাকতে পারবেনা।সবাইকে নিয়ে আয়মান আর রোজ পার্কের দিকে গেলো,কতো কাপল জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে,হাত ধরে হাঁটছে।আরিয়া মন খারাপ নিয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে, একবার আয়মানের দিকে তো একবার ওইসব কাপল দের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু আমাদের আয়মান,সে তো ডন্টকেয়ার ভাব নিয়ে চোখে সানগ্লাস আর মুখে মাস্ক পরে সামনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। পার্ক টা বেশ বড়সড়, তাই হাটাহাটি মন্দ নয় কাপলদের জন্য।
রোজ আর আয়মান পাশাপাশি হাঁটছে, দুজনেরই মুখে মাস্ক,চোখে সানগ্লাস।আয়মানের পাশে আরিয়া,রোজের পাশে নিমু, নিমুর পাশে আরাফাত।আরিয়া অসহায় হয়ে আয়মানের দিকে তাকাচ্ছে, নিমু ব্যাপার টা বুঝতে পেরে রোজের উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে বললো…

— এক্সকিউজ মি

রোজ ভ্রুকুচকে নিমুর দিকে তাকালো, নিমু ইশারায় আয়মান আর আরিয়াকে প্রাইভেসি দেওয়ার কথা বুঝিয়ে দিলো।মাস্কের ভেতরেই মুচকি হাসলো রোজ,যেটা নিমু দেখতে পেলো না।রোজ নিমুর হাত ধরে পাশে থাকা বেঞ্চের দিকে দিকে এগিয়ে গেলো,হঠাৎ এভাবে হাত ধরায় হকচকিয়ে চোখ বড়বড় করে নিমু রোজের দিকে তাকালো বাট রোজ ডন্টকেয়ার ভাব নিয়ে আছে।
আরাফাত সেলফি তোলায় বিজি,পার্কে থাকা বিভিন্ন স্থাপনার সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে।আরাফাত এদিক-ওদিক তাকিয়ে সিঙ্গেল মেয়ে খুজঋে,এখানে সবাই জোড়ায় জোড়ায়, নিমুও এখন জোড়া হয়ে গেলো আর আরাফাত বেচারা এখন একাই সিঙ্গেল। সেলফি তুলতে তুলতে হঠাৎ তার চোখ গেলো কিছুটা দূরে বেঞ্চে বসা এক মেয়ের দিকে,মেয়েটা একমনে ফোন স্ক্রোল করে যাচ্ছে। মেয়েটার থেকে একটু দূরে একটা ছেলে আর মেয়ে কাপল ভাবে সেলফি তুলছে অনেকটা ক্লোজ হয়ে,বেঞ্চে বসা মেয়েটা ফোন স্ক্রোল করার ফাঁকে ফাঁকে তাদের দিকেও তাকাচ্ছে।
মনে হয় এই মেয়েটা ওই মেয়েটার সাথেই এসেছে যে এখন বিএফ এর সাথে বিজি।
আরাফাত আর সেই বেঞ্চে বসা মেশেটা,দুজনেই ফাটা কপাইললা,এতো এতো মিঙ্গেলদের মাঝে এরা দুজনেই সিঙ্গেল বসে আছে। সাতপাঁচ না ভেবে আরাফাত মেয়েটির দিকে এগিয়ে গিয়ে তার পাশে বসে ফ্লাট করা শুরু করে দিলো।

এদিকে আয়মান আর আরিয়া পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আরিয়া খেয়াল করলো নিমু,রোজ,আরাফাত কেউ-ই ওদের সাথে নেই। পেছনে ঘুরতেই দেখলো নিমু আর রোজ একটা বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে, নিমু আরিয়াকে ইশারা করতেই আরিয়া বুঝতে পেরে কৃতজ্ঞতার হাসি দিলো।
আরিয়া আয়মানের হাতের মাঝে নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে ধরলো,হঠাৎ এমন হওয়ার আয়মান অস্বস্তি নিয়ে ভ্রুকুচকে আরিয়ার দিকে তাকালো। আরিয়া ইনোসেন্ট ফেইচ নিয়ে বললো…

— দেখুননা,এখানে সবাই কেমন হাত ধরে হাটছে আর আমরা এমন হ্যাবলাকান্তের মতো হাঁটছি। আমরাতো একে-অপরের হাত ধরলে পাপ হবেনা তাইনা। (মেকি হাসি দিয়ে)

আয়মান নিজের হাতটা ছাড়াতে ছাড়াতে বললো…

— দেখো আরিয়া,আমার এসব পছন্দ না।
এমন করলে কিন্তু আমি চলে যাব।

— এমন করছেন কেন,ওই দেখুন আপনার ওই ড্রাইভার…

— ও ড্রাইভার না,আমার কলিগ।ওর নাম রোজ

— হ্যাঁ, হলো।
রোজ ভাইয়াকে দেখুন,নিমুর সাথে কি সুন্দর একসাথে বসে গল্প করছে।আর আপনি আমার হাজবেন্ড হয়েও এমন ভাব করছে লন যেন আমি আপনার কেউ না।আরে আমিতো আপনার বউ,বিয়ে করা বউ।আমার হাত ধরলে কি আপনার হাতে ফোসকা পড়বে নাকি আজব।শুনুন একদম বেশি কথা বলবেননা,আমার অধিকার আছে আপনার ওপর,সো আমি তো আপনার হাত ধরবোই (আবার হাত ধরে)

— আরিয়া,লিমিট ক্রস করোনা।
আমি আগেই বলেছি আমার জীবনের সাথে তোমাকে জড়াতে পারবোনা।

— (ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে) সামনে দেখুন,ওইযে ওই মোটা গাছের পাশে

আয়মান আরিয়ার ইশারা মতো সেদিকে তাকিয়ে দেখলো দুটো ছেলেমেয়ে গভীর চুম্বনে ব্যস্ত, আয়মান রেগেমেগে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো আরিয়া মিটিমিটি হাসছে।

— দেখছেন,ওরা কেমন করে ভালোবাসা নিবেদন করছে

— শাট আপ আরিয়া,ছিছিছি।
এখানে আসাই ভুল হয়েছে আমার,এগুলো পাপ।আজকালকার ছেলেমেয়ে আবেগের বসে এগুলো করবে আর পরে যখন মেয়েটা প্রেগন্যান্ট হবে তখন ছেলেটা ছেরে যাবে। শেষে মেয়েটার কি হবে,মৃত্যু।

— আমিও জানি ওরা পাপ করছে,জ্ঞান দিতে হবে না।বাট আমরাতো স্বামীস্ত্রী তাইনা,তবুও তো আপনি… সে যাইহোক শুধু হাতটাই তো ধরতে চাচ্ছি তাইনা।
আমিতো আপনার বিয়ে করা বউ বলুন।

— বেস অনেক হয়েছে, আর নাহ্।
ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবে,সাইন করে দিও….

To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here