Different Love পার্ট ৭

0
1728

Story :- #Different_Love
Writer :- গল্পছোঁয়া
Part :- 07

— মিসঃ নয় মিসেস হবে?

— হোয়াট

— ভুলে গেছেন নাকি মিঃ আয়মান আবির চৌধুরী

— দেখো,তোমাকে আগেও বলেছি এই বিয়েটা কোনো বিয়েই নয় সো তুমি তোমার মতো আর আমি…

— হ্যাঁ আপনি আপনার মতো তাইতো।

— হুম,ভবিষ্যতে অনেক ভালো ছেলে পাবে তুমি তাকে বিয়ে করে সুখি হবে,আমাকে আর এই বিয়েটাকে ভুলে যাও।

—শুনুন,বাঙালি মুসলিম মেয়েদের বিয়ে একবারই হয়,পরে যেটা হয় সেটা নিকা।আর আমি নিকা করতে চাইনা।আর কি যেন বললেন এই বিয়েটা বিয়ে নয় তাইতো,এই হ্যালো ধর্মানুসারে আর আইনগতভাবে ২ভাবেই বিয়ে হয়েছে। বললেই তো আর হবেনা,আইনত আমি আপনার ওয়াইফ বুঝেছেন।

— তুমি এখনও অনেক ছোট,আবেগের বসে এমন অনেক চিন্তাই আসে।এগুলো মাথা থেকে ঝেরে ফেলো,আর ওইটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল।

— আবেগ নয়,আমি এখন এডাল্ট।
১৮বছর ৭মাস ৪দিন চলছে।আপনার জন্য, আপনাকে খুজতে আমি এই শহরে এসেছিলাম।আমাদের এলাকাতেই সরকারি কলেজ আছে, আব্বু ওখানেই ভর্তি করতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি ওখানে ভর্তি হইনি।কেন জানেন,কারণ এলাকায় থাকলে আমি আপনাকে খুজে পেতামনা।এইখানে ভর্তি হওয়ার জন্য আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিছিলাম,রুমবন্দি করেছিলাম নিজেকে।এটলাস্ট বাধ্য হয়ে এখানে ভর্তি করেছে আমায়।ইউ নৌ হোয়াট,ফেসবুকে প্রতিদিন আপনার নাম লিখে সার্চ দিয়ে আপনার আইডি খুঁজতাম, দিনের বেলা প্রতিদিন আপনাকে খুজতে বের হতাম যদি বাই এনি চান্স পেয়ে যাই।
১ম দিন পেলাম বাট আপনি আমাকে দেখতে পাননি,আপনার গাড়ির পেছনে আধঘন্টা দৌড়াইছি।বাট আমি পৌছানোর আগেই আপনি হাওয়া।আর ওইদিন আপনি আমাকে দেখেও চলে গেলেন। আমাকে কথা বলার চান্সই দিলেননা।আচ্ছা এই ৬মাসে একবারও কি আমার কথা মনে হয়নি আপনার বলুন (কাঁদতে কাঁদতে)

— পাগলামি বন্ধ করো আরিয়া,এসবের পিছে আই মিন আমার জন্য সময় নষ্ট না করে নিজের পড়াশোনা আর ক্যারিয়ারের দিকে ফোকাস করো।
এখন খাওয়াদাওয়া করে সুয়ে পড়ো,সকালে হোস্টেলে পৌঁছে দিব।

— আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই

— আমার uncertain (অনিশ্চিত) জীবনের সাথে কারোর জীবন জড়াতে চাইনা।

— কিন্তু কেন,আমাকে কি আপনার পছন্দ নয়??আমি কি এতোটাই খারাপ, নাকি আপনার সঙ্গে আমার যায়না কোনটা??
নাকি আপনি ম্যারিড??

— সেটা নয় আরিয়া,আমি কখনও বিয়েই করতে চাইনি।আমার এসব মানায়না।
আসলে আমার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই, কখন কি হয়ে যায় ঠিক নেই।
এরকম জীবনের সাথে তোমাকে কি করে জড়াই বলো।

— কেন নিরাপত্তা নেই, আপনি কি কোনো ক্রিমিনাল নাকি মাফিয়া।যে জীবনের নিরাপত্তা নেই, বলুন

— সেটা না,তুমি বুঝবে না।
খেয়ে নাও প্লীজ,আর কথা বাড়িওনা

— আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই,আমি আপনার লিগ্যালি ওয়াইফ।আমাকে ফেলতে পারেননা আপনি

— প্লিজ আরিয়া,ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। এটা পসিবল না, আমার সাথে সুখি হবেনা তুমি।

— আমি সুখি হতেও চাইনা,বাট আপনার সঙ্গে থাকতে চাই & ইট’স এনিকোস্ট।

— ঠিক আছে, পরে ভাবা যাবে।
খেয়ে নাও এখন।

আয়মান আরিয়ার হাতে প্লেট টা দিয়ে চেয়ার টেনে বসলো,আরিয়ারও ভীষণ ক্ষুধা লাগছে তাই কথা না বাড়ির চুপচাপ খেয়ে নিলো।

— আমার ফোনটা কোই??
নিমু তো চিন্তা করছে আমার জন্য

— তোমার ফোন থেকে আমি ওকে মেসেজ করে দিয়েছি যে তোমার ফিরতে রাত হবে।

— এখন কত বাজে??

— ১২ঃ১৬

— ওহহ্ গড,আমার ফোন কোই??

আয়মান পকেট থেকে আরিয়ার ফোনটা বের করে দিতেই আরিয়া নিমুর নম্বরে ডায়াল করতেই ফোন রিসিভ হলো…

— হ্যালো,আরু কোই তুই।
মেসেজে বললি তোর ফিরতে রাত হবে,এখন কতো বাজে দেখেছিস।চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি, এতো রাতে তুই কোই আছিস।এই অচেনা শহরে আমাদের কেউ নেই, কোথায় যেতে পারিস তুই বল।
আরু সত্যি করে বল,আমি এতক্ষণ কতো চিন্তায় ছিলাম জানিস,কোনো আইডিয়া আছে তোর।

— থামবি?
তোর ননস্টপ বকবকানি বন্ধ করে আমাকেও বলার সুযোগ দে।
আমি আয়মানের কাছে আছি

— কি-ইহ
কিভাবে,এই কি করে গেলি

— কালকে সব বলবো,আমার জন্য চিন্তা করিসনা, ঘুমিয়ে পর। (আরিয়া কল কেটে দিলো)

আরিয়ার হঠাৎ খেয়াল আসে ওর ড্রেস নিয়ে।

— আমার ড্রেস চেঞ্জ কে করলো (ভ্রু-কুচকে)

— কাঁদা মাটিতে পরে ছিলে,তাই চেঞ্জ করতে হলো।আমার কাছেতো মেয়েদের কোনো ড্রেস নেই, তাই নিজেরটাই দিলাম।

— চেঞ্জ করেছে কে,আপনি চেঞ্জ করে দিছেন?? ছিছিছি, আপনি কি করে পারলেন এটা করতে।

— কেন তুমি না বললে,তুমি আমার ওয়াইফ।আর সত্যিই তো, আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ, আমি আমার বউয়ের ড্রেস চেঞ্জ করে দিছি।কি প্রবলেম এতে,আমিতো কোনো প্রবলেম দেখছিনা (মিটমিট হাসতে হাসতে)

— তাই বলে আমার অচেতন অবস্থার সুযোগ নিয়ে ??

— শাট আপ, আমি নই।
মহিলা স্টাফ এসে চেঞ্জ করে দিয়েছে। আমি এতো খারাপ নই যে কোনো মেয়ের পারমিশন ছারা তার অচেতন অবস্থায় তাকে টাচ করবো।
ঘুমোও এখন,গুড নাইট।(কথাটা বলেই আয়মান রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো)

— কোথায় যাচ্ছেন আপনি??

— ঘুমোতে।
আমাকে আর্লি মর্নিং উঠতে হবে,টাইমলি ঘুমোতে হয় আমাকে।অলরেডি লেট

— তাহলে অন্য রুমে যাচ্ছেন কেন??
এখানেই ঘুমান

— হোয়াট, আর ইউ ক্রেজি??
আমি তোমার সঙ্গে এক বিছানায় শোবো??

— প্রবলেম কি,আমরাতো হাজবেন্ড ওয়াইফ। এক বিছানায় শুতেই পারি

— শাট আপ

আয়মান রুম থেকে বেরোনোর জন্য দরজা অবধি যেতেই…

— প্লিজ যাবেননা, আমি একা ঘুমোতে পারিনা।ভয় করে,প্লিজ?

— তুমি কি জানো তুমি নিজেই একটা প্রবলেম,যা করো যেখানে যাও প্রবলেম নিয়েই থাকো।কার ভরসা লয় এই অচেনা শহরে এসেছো আল্লাহ জানে।

— আপনার ভরসায়?
আমি জানতাম আমি এখানেই আপনাকে পাব,তারপর আপনাকে নিয়ে বাবা-মায়ের কাছে যাব।দেন আবার বিয়ে করে আপনার সঙ্গে থাকবো।
এখন প্লিজ এখানে আসুন,আমি একা ঘুমোতে পারিনা।বাড়িতে আমার ছোট বোন অহনা আর এখানে এসে হোস্টেলে নিমুর সাথে ঘুমাই।

রুমে একটা সোফাও নেই, বাধ্য হয়ে আয়মান আরিয়ার পাশে বিছানাতেই শুয়ে পরলো কিন্তু মাঝখানে বেশ অনেকটা ডিস্টেন্স রেখে।

— নাও,এবার হবেতো??
এখন এটা বলোনা যে জড়িয়ে না ধরে ঘুমাতে পারোনা,সেটা পসিবল না।

— বুঝলেন কি করে বলুনতো,সত্যিই আমি জড়িয়ে ধরেই ঘুমাই।
আপাতত আজকের রাতটাইতো,প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

আয়মান চোখ পাকিয়ে তাকাতেই শুকনো ঢোক গিললো আরিয়া,তবুও সাহস নিয়ে বললো…

— আরে এতে তো পাপ বা অন্যায় হবে না, আমরাতো বিবাহিত তাইনা।আপনিতো আমার স্বামী, পরপুরুষ নন,তো জড়িয়ে ধরলে কি সমস্যা

— শাট আপ, বুঝার মতো যথেষ্ট বয়স বুদ্ধি দুটোই হয়েছে তোমার। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে এভাবে আলিঙ্গন করে থাকলে পরে উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে গেলে তখন কি হবে,আমি আমার অনিশ্চিত জীবনের সাথে তোমাকে কখনোই জড়াবোনা।
নিজের মা ছাড়া এই ১ম কোনো মেয়ের এতোটা কাছাকাছি আছি।কতোটা আনইজি ফিল হচ্ছে কোনো ধারণা আছে তোমার?? চুপচাপ ঘুমাও,সকালে তোমায় পৌঁছে দিয়ে আমাকেও যেতে হবে।

— কেন,কোথায় যাবেন??
আপনি এখানে থাকেননা??

— না,বললামতো তখন আমি কোথাও পার্মানেন্ট নই।

— (তারমানে আবার হারিয়ে ফেলবো তোমাকে, কিন্তু নাহ।সেটা তো হতে দেওয়া যাবেনা। যে করেই হোক তোমার আমাকে মেনে নিতেই হবে,অনেক পরিশ্রম আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনার পর তোমাকে পেয়েছি আর হারিয়ে যেতে দিবোনা।নাহ্ আমাকেই কিছু করতে হবে))

আরিয়া এগিয়ে এসে আয়মানকে জড়িয়ে ধরলো, নিজেরও লজ্জা + অস্বস্তি দুটোই হচ্ছে কিন্তু তবুও এটা করছে কারণ সে আয়মান কে হারাতে চায়না।

— এই,শোনোনা
আমি তোমার বিয়ে করা বউ না বলো,এরকম করতে পারবে?? যদি ভয়ে আমি মরে যাই তো??
সত্যিই আমি রাতে একা এভাবে ঘুমোতে পারিনা,জড়িয়ে ধরেই ঘুমোই?

— আরিয়া,লিভ মি এলন? (আরিয়া কে ছেড়ে উঠে বসে)
আমাকে টাচ করবেনা,বললামনা আমার জীবনের সাথে তোমাকে জড়িয়ে তোমার জীবন নষ্ট করতে চাইনা।ফারদার এমন করলে আমি রুম থেকে বেরিয়ে যাব (চেচিয়ে)

আয়মানের এমন ধমকানো রাগ চেঁচানো দেখে আরিয়ার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো, আর কোনো কথা না বলে বিছানার আরেকসাইডের একদম কর্ণারে গিয়ে গুটিসুটি মেরে সুয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
আয়মান কোনো কথা না বলে অপজিট সাইডে সুয়ে পড়লো, আরিয়া ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আয়মানেরও খারাপ লাগছে কিন্তু কিছু করার নেই, সে যে নিরুপায়।

—(( তোমাকে কি করে বুঝাই আরিয়া,আমার সাথে তোমার জীবন জড়ালে যে তোমার জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।
তোমাকে আমি অপছন্দ করি সেটা তো না,আমিও তোমাকে ভালোবাসি। অনেক আগে থেকেই, তোমাদের এলাকায় এক মিশনে গিয়ে তোমাকে ১ম দেখেছিলাম তোমাদের স্কুল ফাংশনে।স্টেজে অভিনয় করছিলে,সেদিন এক দেখাতেই তোমাকে ভালো লেগে গেছিলো, বাট আমাদের মতো মানুষের জন্য এগুলো অনুচিত।আমি তো নিজের লাইফের সাথে কাউকেই জড়াতে চাইনি,হুট করে তুমি জড়িয়ে গেলে আমার সাথে। ভাগ্য আবার আমাদের দেখা করিয়ে দিলো সেই কমিউনিটি সেন্টারে,ভাগ্যই আমাদের এক করে দিলো। অ্যাক্সিডেন্টলি হলেও আমরা যে আল্লাহর কালেমা পরে এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ,এই কয় মাস আমিও তোমাকে মিস করেছি।
কিন্তু কখনোই তোমাকে আপন করতে পারবোনা,স্বামীর অধিকার দিতে পারবো না।আমার জীবনের কোনো গ্যারান্টি নেই, আমি যে পেশাতে নিয়োজিত। সেই পেশায় কর্মরত মানুষদের ফেমিলি বলে কিছুই থাকেনা,ফেমিলি বিসর্জন দিয়েই এই পেশাতে ঢুকতে হয়।কারন আমাদের যখনতখন মৃত্যু নিশ্চিত।
তোমাকে নিজের করলে আমার যদি কিছু হয় তখন তোমার কি হবে,তাই চাইলেও কখনও তোমাকে আপন করা সম্ভব না।
সেদিন তোমাকে ফেলে চলে এসেছিলাম, ইচ্ছে করেই তোমাকে খোঁজার চেষ্টা করিনি।ভেবেছিলাম তুমি আমাকে,এই বিয়েটাকে অ্যাক্সিডেন্ট ভেবে ভুলে যাবে,কিন্তু নাহ।আই এম রং,তুমি এভাবে আমাকে খুঁজতে চলে আসবে ভাবিনি।আর আজ আমায় খুঁজতেই নিজে বারবার বিপদের সম্মুখীন হচ্ছো।সবসময় তো আমি থাকবোনা,যদি তোমার কিছু হয়ে যায় তখন আমার কি হবে, আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবোনা।
দূরে থেকে হলেও তোমাকে রক্ষা করব,তুমি আমার ওয়াইফ, তুমি আমার রেসপনসেবলিটি।))
আরিয়া,প্লিজ স্টপ ইওর ক্রাইং।কাঁদছো কেন,আরে আজবতো।
এই মেয়ে কান্না থামাও বলছি।

আরিয়ার কান্না থামানোর নামই নেই, উল্টো আয়মানের ডাক শুনে ফোঁপানো আরও বেরে গেছে। আয়মানেরও খুব খারাপ লাগছে, আর না পেরে আরিয়াকে টেনে এনে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললো…

To be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here