Different Love পার্ট ৬

0
1757

Story:- #Different_Love
Writer:-গল্পছোঁয়া
Part:-06

আরিয়ার মুখ থেকে একটাই কথা বের হলো শুধু ❝আয়মান❞

এদিকে নিমু হা করে দাঁড়িয়ে আছে, আরাফাত অনেক্ষণ ধরে ডাকছে,বাট নো রেসপন্স।

— কিরে,সামনে তো কেউই নেই। হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন,মশা ঢুকে যাবে।

— ছেলেটা আমায় চোখ মারলো কেন (বিরবির করে)

— কি-ই, ওই কে তোকে চোখ মারলো

হুশ আসে নিমুর।

— ওওই আরকি,কিছুনা।
আরিয়া কোই?

দুজনেই তাকিয়ে দেখলো আরিয়া চুপ করে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, নিমু গিয়ে আরিয়ার হাত ধরলেই আরিয়ার হুশ আসে।

— কিরে,দাড়িয়ে আছিস কেন??
চল,এখানে আর আসবোনা বাবাহ অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।
তুই যা শুরু করছিলি,ওই ছেলেটা যদি আমাদের শুট করে দিতো। (নিমু)

— পাবলিক প্লেসে যে মানুষ গুন্ডামু করতে পারে তার দাড়া কিছুই অসম্ভব নাহ,সত্যিই অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। (আরাফাত)

— শাট আপ, কিসের গুন্ডা গুন্ডা করছিস।
ওটা আমার আয়মান ছিল?

— ওও
কি-ইইইই (আরাফাত+নিমু)

— ওইটা আয়মান ভাইয়া ছিলো? (নিমু অবাক হয়ে)

— তুই চিনলি কি করে ওটা আয়মান ভাইয়া,আর যদি চিনেই থাকিস তাহলে ওকে আটকালিনা কেন আর তখন এভাবে কথা বলা??

— আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি, যাওয়ার আগে মাস্ক খুলেছিলো তখন দেখেছি।
আমি এতোটাই শক খেয়েছি যে কিছু বলার আগেই চলে গেলো??

— উফফ শিট, আমি অন্যমনস্ক না হলে আজ ভাইয়াকে আটকাতাম। (নিমু)

— হয়েছে, এখন তো কিছু করার নেই।
চল সবাই যাওয়া যাক। (আরাফাত)

— আমার ভালো লাগছে না,আমি হোস্টেলে যাব।

— চল,আমি তোদের পৌঁছে দিই।

— না থাক,তোর বাইকে আমাদের জায়গা হবেনা। ৩জন বসা যায়না,তুই চলে যা আমি আর নিমু রিকশা নিয়ে যাচ্ছি।

— আচ্ছা

নিমু আর আরিয়া রিকশা নিয়ে হোস্টেলে ফিরে আসলো,আসার পর থেকেই আরিয়া মন খারাপ করে সুয়ে আছে। নিমুও ওর পাশে চুপ করে বসে আছে।
একটুর জন্য হাতছাড়া হয়ে গেলো।

— আরু,মন খারাপ করিসনা।
আবার দেখা হবে দেখিস।

— কবে বলতে পারিস।
২মাস পর আবার দেখা পেলাম,কিন্তু সে আমার সাথে কথাও বললোনা।আরে অ্যাক্সিডেন্টলি হোক আর যাইহোক,আমিতো তার ওয়াইফ নাকি।আমার জন্য কি তার মধ্যে কোনো ফিলিংই নেই, আজ ৫টা মাস ধরে তার জন্য আমি ভেবেভেবে কষ্ট পাচ্ছি, ২মাস ধরে খুঁজে চলেছি তাকে।কিন্তু সে,সে কি আমাকে কখনোই খুজেনি?? হয়তো না,খুঁজলে আজ আমায় পেয়েও এভাবে চলে যেতোনা নিমু।

— ভাইয়া তো বিজি ছিল,দেখলিতো।
দেখিস ঠিকই পাবি।
আয় পড়তে বসি,একটু পরে আবার বায়োলজি টিউশনে যেতে হবে।

— হুম,কিন্তু ওর কাছে রিভলবার ছিল।
ও রিভলবার দিয়ে কি করতে পারে??

— কি জানি।

কেটে গেলো আরও ১৫টা দিন,আরিয়া আর একবারও দেখা পায়নি আয়মানের।

আজ সন্ধ্যা ৭ঃ৩০টা,আরিয়া ফিজিক্স টিউশন শেষ করে হোস্টেলে ফিরছে।নিমুর জ্বর আসছে তাই ও আজকে আসেনি,আরিয়া একাই এসেছিলো।আরাফাত পৌঁছে দিতে চেয়েছে, কিন্তু আরিয়া না বলেছে।আরিয়ার আরও দু’জন ক্লাসমেট ছিল,ওরাও একটু আগে তাদের গন্তব্যের দিকে চলে গেছে। এখন আরিয়া সম্পূর্ণ একা,একটু ভয় ভয় করছে বটে।অন্ধকার চারিদিকে, এদিকে জায়গাটা ছমছমে। তেমন লোকজন নেই, আরিয়া ফোনের ফ্লাস জ্বালিয়ে হাঁটছে। দ্রুত হাঁটছে, যাতে দ্রুত পৌঁছাতে পারে।
কিছুটা সামনে দু’জন ছেলে আর একটা মেয়েকে দেখতে পেলো।স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে আরিয়া হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে। যাক এখন অন্তত রাস্তায় কাউকে তো পেয়েছে, কিন্তু কে জানতো ওই মেয়ে আর ছেলেগুলো নেশাখোর, আরিয়া ওদের কাছাকাছি যেতেই মেয়েটি আরিয়ার হিজাব ধরে টান দিয়ে সামনে দাঁড় করালো।

— বেববি,আজ রাতে নাকি আরেকটা মেয়ে লাগবে।নে খাঁটি মাল পাইছি,এইডারে দিয়া হবে তো (শয়তানি হাসি দিয়ে)

— হবেনা কেন,দৌড়াবে।
আজ রাতটা জমে যাবে। (একজন ছেলে)

— আপু তুমিওতো একজন মেয়ে,এমন কেন করছো।প্লিজ ছেরে দাও আমায়

— হাহাহা,আমি তোর আপু? হাসালি
তুই আমার মায়ের পেটের বোন নাকি বে,এই আসিফ মেয়েটারে নিয়া চল। (মেয়েটা আরিয়ার হাত শক্ত করে ধরে আছে)

সবাই ড্রাঙ্কড,মুখ থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হচ্ছে। আরিয়ার তো বমি উঠে আসছে,তবুও নিজেকে বাঁচানোর জন্য আকুতিমিনতি করছে কিন্তু মেয়েটা আরিয়াকে ছেরে সাথে থাকা আরেকটা ছেলের হাতে দিলো।
ছেলে দুইটা আরিয়াকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে, উপায় না পেয়ে আরিয়া ছেলেদুটির হাতে কামড় বসিয়ে দিলো।ছেলে দুজনের হাত আলগা হলেই আরিয়া হাত ছাড়িয়ে দিলো দৌড়।কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয়,সামনে ৫টা কুকুর।
আরিয়াকে দৌড়াতে দেখে কুকুর গুলাও ঘেউঘেউ করে আরিয়ার দিকে আসছে।পেছনে ওই নেশাখোর ছেলেমেয়ে আর সামনে কুকুরের দল।
আরিয়ার শ্বাসকষ্টের প্রবলেম আছে একটু দৌড়লেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়,এতটুকু দৌড়তেই আরিয়ার দম যেন আটকে আসছে।আসন্ন ভয় আর দৌড়ানোর জন্য আরিয়ার দম বন্ধ হয়ে আসছে,দাড়িয়ে থাকতে পারছেনা।হঠাৎ করেই চারিদিক আরও অন্ধকার হয়ে গেলো,ঢলে পড়লো আরিয়া।


ধীরেধীরে চোখ খুললো আরিয়া,মাথাটা ভার ভার লাগছে।মাথাটা চেপে ধরে উঠে বসলো সে,খেয়াল করতেই দেখলো সে এখন একটা হোয়াইট বেডশিটে আবৃত বেডে বসে আছে।রুমটা মিডিয়াম সাইজের,মনে হচ্ছে কোনো ফ্ল্যাটের রুম হবে।
নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা শার্ট আর ট্রাউজার পরে আছে সে,বাট ওর শরীরে ঢিলা হয়েছে। হয়তো এই পোশাকের মালিক বেশ বডিবিল্ডার টাইপের।
কিন্তু ও এখানে কেন,আর ওর পোশাক কোই।কিছুটা ভাবতেই সবটা মনে পড়ে গেলো আরিয়ার।
তারমানে কি সব শেষ,কেউ ওকে এখানে তুলে এনেছে।এটা কি কোনো ব্রথেল (পতিতলয়)

—ওমাই গড,আমিকি ব্রথেলে আছি এখন।
কিভাবে আসলাম,কে আনলো আমায় সব শেষ সব।একা-একা বের হওয়াই উচিত হয়নি আমার
নাহ্ ব্রথেল হতে যাবে কেন,টিভিতে ক্রাইম পেট্রোল দেখেছি,ব্রস্টেল তো এমন নাহ।
এটাতো কোনো ফ্ল্যাট এর রুম,আর রুচিশীল ভাবে সাজানো।এটা কোনো ব্রথেল হতেই পারেনা।
কিন্তু আমি বেঁচে গেলাম কি করে,ওই ছেলেমেয়ে গুলো তো আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো,তারপর কুকুর দেখে দাড়িয়ে যাই।আর কিছু মনে নেই,আমি কি তাহলে সেন্সলেস হয়ে গেছিলাম।তারপরেই কি কেউ আমাকে বাঁচিয়েছে?? হয়তো তাইই।কিন্তু কে সে?
আর আমার ড্রেস চেঞ্জ করলো কে?

হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে আরিয়া দরজার দিকে তাকিয়ে ১০০০ভোল্টের শক খেলো।কারণ দরজা খুলেছে আয়মান।
আয়মান আরিয়ার দিকে এগিয়ে আসলো।

—আর ইউ ওকে মিস??

— এএটা কি সসত্যিই আপনি নাকি আমার ভ্রম (অবাক হয়ে)

— মানে?

— একটা চিমটি কাটুন তো,নাহ না আমিই কাটছি। (আরিয়া নিজের হাতে চিমটি কেটে আউচ করে উঠলো)
মামমানে এটা সত্যিই আপনি,কিন্তু আপনি এখানে কেন??

— আমার ফ্ল্যাটে তো আমিই থাকবো তাইনা।

— না মানে হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনিইতো থাকবেন।
কিন্তু আমি এখানে কি করছি?

— আমি একটা কাজে গেছিলাম,রাস্তায় তোমাকে সেন্সলেস হয়ে পরে থাকতে দেখি।
রাতের বেলায় একা একটা মেয়েকে তো এভাবে রাস্তায় ফেলে আসতে পারিনা,দিনযুগও ভালো না। তোমার বাড়ির অ্যাড্রেসও জানিনা তাই এখানেই নিয়াসলাম।
কিন্তু কি হয়েছিল বলোতো??

— আমি টিউশন থেকে ফিরছিলাম,আর রাস্তায় কুকুর আর…

— আজকেও কুকুর?‍♂️
সামান্য কুকুর দেখে দৌড়ানোর কি আছে, ওরা কি তোমায় খেয়ে ফেলবে নাকি।

—পুরোটা আগে শুনবেন তো।
আসলে.. (আরিয়া ঘটনা টা খুলে বললো)

— রাতের রাস্তাঘাট মেয়েদের জন্য নিরাপদ না,একা-একা টিউশনে যেতে কে বলেছে তোমাকে।
খুব বেশি বড় হয়ে গেছো তাইনা,তুমি এখন এতোটাও ছোট নও যে কিছু বুঝোনা।
অল্পবয়সী এক মেয়ে এভাবে এরকম রাস্তায় চলাফেরা করার সাহস কোই পাও তুমি, তুমি জানোনা ওই রাস্তাটা রাতের বেলা কতোটা অনিরাপদ।
মেইন রোড থাকতে ওদিক দিয়ে কেন গেছো আনসার মি?

— শর্টকাট হয় ওদিক দিয়ে তাই আরকি

— শর্টকাট?
এই শর্টকাটের জন্য আজ যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যেতো তখন,তোমার বাড়ির অ্যাড্রেস বলো।তোমার ফেমিলি এতোটা ইরেসপনসেবল কিভাবে হয়,মেয়েকে একা একা রাতের বেলায় রাস্তায় ছারে

— আআসলে আমি এখানে হোস্টেলে থাকি,আমার বাড়ি এখানে না?

— তুমি তো নিজেকে সামলাতেই পারোনা,তাহলে এই অচেনা শহরে একা-একা কার ভরসায় এসেছো বলো।
সেদিন আমার জন্য বেঁচে গেছো,আজকেও তাই।কিন্তু প্রতিবার তো আমি থাকবোনা,যদি কোনো বিপদ হয় তখন কি হবে ড্যামেড

আয়মান তো ভীষণ রেগে গেছে, আরিয়া ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে।

— তোমার বাবার নম্বর দাও,এক্ষুনি কল করে বলছি তোমাকে নিয়ে যেতে।
কিছু একটা হয়ে গেলে তখন

— প্লিজ আব্বুকে কিছু বলবেননা,অনেক কষ্টে আব্বুকে বুঝিয়ে এখানকার কলেজে ভর্তি হয়েছি।এসব জানলে আমাকে আর পড়াশোনাই করাবেনা,বিয়ে দিয়ে দেবে। (কাঁদতে কাঁদতে)

আয়মান কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আর আরিয়া কাঁদছে।
কিছুক্ষণ পরে একটা খাবারের প্লেট হাতে আয়মান রুমে আসলো,আরিয়া তখনও কেঁদে চলেছে।

— এই-যে, মিসঃ
অনেক হয়েছে এবার কিছু খেয়ে নাও আগে

— বারবার মিসঃ মিসঃ করছেন কেন,আমার কি নাম জানেননা নাকি (গাল ফুলিয়ে)

— কি যেন নাম ছিলো,সঠিক মনে পরছেনা।

— আরিয়া,আরিয়া আমার নাম (চাপা রাগে)

— ওহ্ হ্যাঁ, মনে পরেছে।
তো মিসঃ আরিয়া,এবার চুপচাপ খাবার টা খেয়ে ঘুমাও।এতো রাতে তো হোস্টেলে যেতে পারবেনা,১১ঃ৫৪বাজে এখন।
তাই আজকে এখানেই থাকো।

— মিসঃ নয় মিসেস হবে?….

To be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here