Different Love পার্ট ৫

0
1777

Story :- #Different_Love
Writer :- গল্পছোঁয়া
Part :- 05

— এই থাম।
আরু,তুই গাড়ির নম্বর টা দেখেছিস?? নম্বর ট্রাক্ট করলেইতো পেয়ে যাব তাইনা?

— উফফ শিট,এতো এক্সাইটমেন্টে জন্য আমার মাথায় একবারও এই কথা আসেনও।আমি দেখিনি নম্বর

— কি আর করার,চিন্তা করিসনা।
আল্লাহ সহায় হলে ঠিকই খুঁজে পাবি।ফেসবুকেও তো খুঁজে যাচ্ছিস তুই।আমরা ছোট মেয়ে,আমাদের দাঁড়া যতটুকু সম্ভব ততটুকুই চেষ্টা চালাচ্ছি,ইনশাআল্লাহ পাব।

— আমার মনে হয় আয়মান অন্য কোনো নামে ফেসবুকে আছে, তানাহলে পাবোনা কেন।

— হয়তোবা।
আচ্ছা এখন চল হোস্টেলে ফিরে যাই,কাল থেকে কলেজের ফার্স্ট ডেয়।

— হুম

নিমু আর আরিয়া আরেকটা রিকশা ধরে হোস্টেলে ফিরে গেলো।
রাতে বেডে সুয়ে ফেসবুকে গল্প পরছে নিমু,আর আরিয়া কপালে হাত রেখে চুপ করে সুয়ে আছে। কোনো এক গভীর চিন্তায় মগ্ন সে।

— আরু,কি হয়েছে।
কোনোকিছু নিয়ে চিন্তায় আছিস মনে হয়

— ভাবছিলাম, তোর কথাটাই।
আয়মান মাফিয়া হলোনা মানলাম,বাট ও যেভাবে তখন ওই ছেলেটা কে নিয়ে গেলো আমার তো মনে হয় ও সৈনিক, পুলিশ বা এমন টাইপের কিছু।

— এইরে,সর্বনাশ করছে।
এরকম হলে তো বিপদ, তোর আব্বুআম্মু তো এসব চাকরি একদম পছন্দ করেনা। ধরে নিলাম তুই দুলাভাই কে খুঁজে পেলি,সেও মেনে নিলো তোকে।তারপর তোর আব্বুআম্মু কে বিয়ের প্রপোজাল পাঠালে তোর বাপ-মা তো জিন্দেগিতেও রাজি হবে না।

— নেগেটিভ ভাবিসনা তো,যা হবার হবে।
নিকার মধ্যে আমি নেই, হয় আয়মান কে খুঁজে ওর সাথেই সংসার করবো নয়তো ডিভোর্স দিয়ে কুমারি থাকবো।২য় বিয়ে করতাম না

নিমু কিছু বলবে তখনই আরিয়ার ফোন বেজে উঠলো, দেখে ওর আম্মু কল দিছে।
কল ব্যাক করে কিছুক্ষণ ওর আম্মুর সাথে কথা বললো,তারপর অহনা কথা বলা শুরু করলো…

— আরিয়া আপু,ভাইয়ার খোঁজ পাইছিস??

— বাপরে,আজ আবার আপু বলছিস যে।সূর্য কোনদিকে উঠছিলো আজ।

— ধুরর,বললেও দোষ না বললেও দোষ।
যেটা জিগালাম সেটা বলো

আরিয়া আজকের ঘটনা টা খুলে বললো।

— ওউ,খুশি হলাম।শীঘ্রই পাবে দেখো

আরও কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলো।


এভাবে কেটে গেলো আরও ২মাস,আরিয়া আর একবারও আয়মান কে দেখেনি।
নিমুর সাথে মিলে যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছে,প্রতিদিন বিকালে ঘুরাঘুরির নাম করে এদিক-ওদিক দেখতো বাট ফলাফল শূন্য।
কলেজ ছুটি হলো,আরাফাত, নিমু আর আরিয়া কলেজ গেইট থেকে বের হয়েছে।
আরাফাত হলো আরিয়া আর নিমুর নতুন ফ্রেন্ড, কলেজে এসেই বন্ধুত্ব হয়েছে। ভালো বন্ধু এখন ওরা,আর আরিয়ার রিয়াল লাইফে আরাফাতই ১ম ছেলে বন্ধু।
আরাফাত আরিয়া আর আয়মানের বিষয়টা জানে,সেও আয়মান কে খুজতে হেল্প করবে বলেছে।
৩জন হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে, আরাফাত আজ ওদের দুজনকে চটপটি খাওয়াবে।
চটপটির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ৩জন ৩বাটি নিয়ে বসেবসে খাচ্ছে।
আরিয়ার ছোট থেকেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, এগুলো সেভাবে খেতে পারেনা। ৪-৫চামচ মুখে নিতেই এখন বমিবমি লাগছে।
বসার জায়গা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে পানি খাচ্ছে, হঠাৎই একটা ছেলে এসে আরিয়ার পায়ের কাছে ধপাস করে পড়লো।
আকস্মিক ঘটনায় আরিয়া ভয়+চমকে দু কদম পিছিয়ে গেলো।
ছেলেটার গায়ের শার্ট, প্যান্ট জায়গায় জায়গায় ছিড়ে গেছে, আগেও মনে হয় পরে গেছিলো।ছেরা জায়গা থেকে একটু আকটু রক্ত দেখা যাচ্ছে।
ছেলেটা উঠতে পারছেনা,ছেচড়িয়ে আবার আরিয়ার পা জড়িয়ে ধরলো।

— আপু প্লিজ বাঁচান আমায়,কোথাও লুকোতে সাহায্য করুন।আমি আর জীবনেও চুরি করবোনা আপু,আপনি আমাকে লুকাতে সাহায্য করুন।

আরাফাত আর নিমুও এসে আরিয়ার পাশে দাড়িয়েছে।

— এই ছেলে,কে আপনি।
ওর পা ধরে আছেন কেন সরুন (আরাফাত)

— কি হয়েছে আপনার,আমি কিভাবে বাঁচাবো। ছাড়ুন আমায়
আরে আজবতো

ছেলেটি একবার পিছনে তাকিয়ে ভয়ার্ত মুখে আবার বললো..

— আজ আমি শেষ

আরিয়া কিছু বলতে যাবে তখনই একজন মাস্ক পড়া চোখে সানগ্লাস দেওয়া ছেলে এসে ওই নিচে পড়ে থাকা ছেলেটার কলার ধরে টেনে তুলে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিলো।

— পালাচ্ছিলি কেন,কি ভেবেছিস আমি তোকে ধরতে পারবোনা??
আগের বার লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম না,শুধরে যা শুধরে যা।
কিন্তু শুধরালি না,এবার তোর রক্ষা নেই।

— আমাকে ছেড়ে দিন স্যার, আর কখনো এমন করবোনা।
শেষ সুযোগ দিন স্যার প্লিজ

— আহির চৌধুরী সবাইকে একবারই সুযোগ দেয় ২য় বার নাহ্।তোকেও সেকেন্ড & লাস্ট চান্স দিছিলাম বাট তুই সেটার সদ্ব্যবহার করিসনি।এবার তোর কর্মের ফল তুই পাবি।

— আর কখনও এমন হবেনা

মাস্ক পড়া ছেলেটি ওই চোরের কলার ধরে রেখেই আরেক হাতে পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে কাউকে ডায়াল করলো..

— রোজ,গাড়ি নিয়ে চলে আয়।
ধরেছি রাসকেল টাকে

চোর ছেলেটির হাতে পায়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত পরছে,ছুলে গেছে চামড়া।
আরিয়ার বেশ খারাপ লাগলো।

— এইযে মিঃ,হ্যালো আপনাকেই বলছি।
এই ছেলেটাকে এভাবে ধরে রেখেছেন কেন।মানছি সে চোর,কিন্তু চুরি তো মানুষ এমনি এমনি করেনা।নিশ্চয়ই কোনো কারণ ছিল তাইনা।
আর চোরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য পুলিশ আছে, আপনি কে তাকে শাস্তি দেওয়ার?

আরিয়া কথাটা বলে হাতে থাকা বোতল টা চোর ছেলেটির দিকে এগিয়ে দিলো।

— ভাইয়া,নিন।
আপনার তো অনেকজায়গায় ছুলে গেছে দেখছি,বালি লেগে আছে ক্ষতস্থানে। ইনফেকশন হয়ে যাবে,পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
আর এইযে আপনি (মাস্ক পড়া ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে) এই ছেলেটিও তো মানুষ, আপনিকি কাউকে মানুষ মনে করেননা নাকি।দেখছেন ছেলেটা আহত,আর তার ক্ষতস্থানে হাত দিয়ে চেপে ধরে আছেন।ছাড়ুন বলছি।

মাস্ক পড়া ছেলেটা চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে শার্টের সাথে রাখলো।সরু চোখে আরিয়ার দিকে তাকালো।

— আরু,কি করছিস টা কি।
একটা অচেনা লোকের সাথে তর্কে না যাওয়াই শ্রেয়।তাও আবার এই চোর টার জন্য এমন করছিস কেন (নিমু)

— আরিয়া,চল তো এখানে থেকে।
ফালতু ঝামেলায় জড়ানোর কি দরকার। (আরাফাত)

চোর ছেলেটি বোতলের পানি দিয়ে হাতের পায়ের ক্ষতস্থানে পানি দিচ্ছে।
মাস্ক পড়া ছেলেটি কিছুক্ষণ আরিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আরিয়ার থেকে চোখ সরিয়ে ব্যাক সাইড প্যান্টের পকেট থেকে রিভলবার বের করে চোর ছেলেটির মাথার পেছনে ধরে রাখলো..

— নে,তাড়াতাড়ি কর।
এরপর তোকে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দেব।

— আরে আজব লোকতো আপনি,পাবলিক প্লেসে গুন্ডামু করছেন।
বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন,আপনাকে লাইসেন্স দিলো কে।ওফ সরি,আপনাদের মতো গুন্ডাদের আবার লাইসেন্স লাগে নাকি। (আরিয়া)

এদিকে মাস্ক পড়া ছেলেটার হাতে রিভলবার দেখে নিমু আর আরাফাত তো ভয়ে জমে গেছে। নাজানি ছেলেটা কে,কোনো গুন্ডা বা মাফিয়া হয় যদি।নিমু আরিয়ার হাত ধরে টানছে..

— বইন,এই ছেলেটার হাতে বন্দুক।
তুই কি শুরু করলি বলতো,যদি শুট করে দেয় আমাদের।চল বইন কেটে পরি,অনেক বলছিস (নিমু)

— আরে থামতো তুই,এই লোকটা পাবলিক প্লেসে গুন্ডামু করবে,বন্দুক নিয়ে ঘুরবে আর আমরা কিছু বলবোনা নাকি।
আরাফাত,এখনই পুলিশে কল কর।আজ এই গুন্ডাকে পুলিশে দিব আমি

মাস্ক পড়া ছেলেটা আরিয়াকে কিছুই বলছেনা,শুধু সরু চোখে তাকাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরে একটা বিএমডব্লিউ গাড়ি এসে থামলো।একজন হ্যান্ডসাম ছেলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো আর মাস্ক পড়া ছেলেটা কে স্যালুট করলো।

— নে,গাড়িতে তোল একে।

মাস্ক পড়া ছেলেটা চোর ছেলেটাকে ওই নতুন ছেলেটার কাছে দিলো।

— রোজ,এই রাস্কেল টাকে রাহুলের কাছে পাঠা।এর স্পেশাল ট্রিটমেন্ট ও-ই করবে আজ,একে ঘেটে নিজের হাত নোংরা করতে চাইনা।

রোজ বাকা হেসে চোর ছেলেটাকে গাড়িতে তুলে নিজেও গিয়ে বসলো।
মাস্ক পড়া ছেলেটাও গাড়ির দিকে ২ধাপ দিতেই আবার কিছু একটা ভেবে একদম আরিয়ার মুখোমুখি এসে দাড়ালো।মুখের মাস্ক টা খুলে..

— যে মেয়ে সামান্য কুকুরের ভয়ে দিকদিগন্ত ভুলে পালায়,সেই মেয়ে আজ রিভলবার দেখে ভয় না পেয়ে উল্টে তেজ দেখাচ্ছে। নট ব্যাড (কথাটা বলেই বাকা হেসে আবার মাস্ক টা পড়ে চোখে সানগ্লাস দিয়ে চলে গেলো ছেলেটি)

আরিয়ার মুখ থেকে একটাই কথা বের হলো শুধু ❝আয়মান❞….

To be continue….

((রেসপন্স কম দেখে ভাবলাম গল্পটি কারোর পছন্দ হচ্ছে না,গত পর্বে ভালো রেসপন্স দেখলাম।সবাই চাচ্ছেন গল্পটা কন্টিনিউ করতে,ঠিক আছে করবো কন্টিনিউ।তবে এটা ৬০পর্বের মতো এত বড় গল্প হবেনা আবার হতেও পারে বলতে পারছিনা।
অনেকেই বলছেন নায়িকার চুল ছোট কেন,বড় করেন।সব গল্পেই তো নায়িকার চুল ইয়া বড় হয়,এই গল্পে নাহয় ছোটই থাক।অবশ্য পরে বড় হয়ে যাবে সমস্যা নেই। আজকের পর্ব কেমন হলো বলবেন প্লিজ,আপনাদের উৎসাহ আমাকে গল্প লিখতে অনুপ্রেরণা জোগায়))

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here