Different Love পার্ট ৪

0
1883

Story :- #Different_Love
Writer :- গল্পছোঁয়া
Part :- 04

— আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা হয়েছে, আল্লাহ নিজেই আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছে বুঝলি।

— হোয়াট,কি বলছিস?
কি করে প্রতিজ্ঞা রক্ষা হলো,ওইদিন তো আমাদের কোনো বান্ধবীর বিয়ে ছিলোনা।

— তুই হয়তো ভুলে গেছিস,আমি এটাও বলেছিলাম বান্ধবীদের আগে যদি আমার বিয়ে হয় তাহলে আমি আমার বিয়েতে লাইফে প্রথম শাড়ি পরবো।

— হুম,মনে আছে।
কিন্তু তোর তো বিয়ে হয়নি।এই ১সেকেন্ড,তুই একথা বলছিস মানে বাই এনি চান্স তুই…

— হ্যাঁ, আমার বিয়ে সেদিনই হয়েছে।

— হোয়াট,কি যা তা বলছিস আরু।
তোর বিয়ে হয়ে গেলো আর আমরা কেউ জানিনা।আন্টি আঙ্কেলও তো কিছু বলেনি,আর তুই শশুরবাড়ি ছেরে এখানে কি করছিস।মানেটা কি,বুঝতে পারছিনা আমি।

— তুই আমার বেস্টু,তোর কাছে কখনো কিছু লুকাইনি আজও লুকাবোনা।এই কথাগুলো লুকিয়ে ভেতরে ভেতরে আমিও দুমড়ে মরছি,তোর সাথে শিয়ার করলে আমারও মনটা হালকা হবে।কিন্তু প্রমিস কর,কাউকে বলবিনা

— আরে ইয়ার,আমিকি কখনও কাউকে কিছু বলছি বল।যা প্রমিস,এই আমার চোখ ছুঁয়ে প্রমিস করছি কাউকে বলবোনা, যদি বলি তাহলে আমার চোখ অন্ধ হয়ে যাবে। এবার বল

আরিয়া ফুস করে একটা দম ছেড়ে শুরু থেকে সবটা খুলে বললো।ব্যাগ থেকে রেজিস্ট্রার পেপারও বের করে দেখালো,সেখানে আয়মান আর আরিয়ার সাদাকালো ৫পোট সাইজের ২টা ছবিও আছে। ওই লোকগুলোই সব করেছে।

— আরু,এতোকিছু হয়ে গেলো আর তুই আমাকে কিছুই বললিনা??

— কি বলতাম বল।
হ্যাঁ মানছি আমি আয়মান কে ফার্স্টে কমিউনিটি সেন্টারে দেখে ক্রাস খেয়েছিলাম, ভাবছিলাম ইশ এমন ছেলে যদি আমার হাজবেন্ড হতো তাহলে সব ফ্রেন্ডকে দেখিয়ে বেরাতাম। দেখ আমার হাজবেন্ড কতো হ্যান্ডসাম,হট।কিন্তু এভাবে যে বিয়ে হবে সেটাতো চাইনি আমি।

— দুলাভাইয়ের কোনো নম্বর আছে তোর কাছে??

— না,কিছুই নেই।
বিয়ের পর ও আমায় এটা বলেছিলো আমি যেন সবটা ভুলে যাই, এই বিয়ে কোনো বিয়েই নয়।এসব নিয়ে না ভাবাই ভালো, দুঃস্বপ্ন ভেবে যেন ভুলে যাই।
কিন্তু সব বিষয় কি ভুলে যাওয়া যায়?? তখন আমি তাকে বলতে চাইছিলাম যে বিয়েটা যখন হয়েই গেছে তাহলে ফেমিলি কে বলে নতুন করে বিয়ে করি।
কিন্তু কেন জানিনা আমার গলা দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছিলোনা,অপরিচিত এক ছেলে।কিইবা বলতাম,সে না মানুক সত্যি বলতে আমি বিয়েটাকে মনে প্রাণে মানি।প্রতিটা নামাজের মোনাজাতে তাকে চাই। আমি জানতাম আমি বাড়িতে থাকলে কখনোই আয়মান কে খুঁজে পাবোনা,তাই এতো কষ্ট করে আম্মুকে দিয়ে আব্বুকে বুঝিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি।শুধু আয়মানকে খুঁজে পাওয়ার জন্য।

— কিন্তু দুলাভাই যে এই রাজশাহী শহরে আছে, তুই বুঝলি কি করে।

— রেজিস্ট্রার পেপারটা দেখ,ওখানে লেখা আছে।
আমি শিওর, কপালে যদি থাকে আমি এই শহরেই খুঁজে পাবো তাকে।ইনশাআল্লাহ।

— আরু একটা কথা বলি,কিছু মনে করিসনা।

— কি বল

— দুলাভাই তো ম্যারিডও হতে পারে তাইনা,বা তার যদি কোনো গার্লফ্রেন্ড থাকে??

— ঠিকই বলছিস,বিষয়টা আমিও ভাবিনি সেটা না।যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে আমি তাকে ডিভোর্স দিবো,কিন্তু তবুও ওর সাথে আমার দেখা করতেই হবে।
আয়মান যতোই বলুক এই বিয়েটা কোনো বিয়েই নয়,কিন্তু আমি বিয়েটা মনে প্রাণে মানি।ধর্মানুসারে আইনগত ভাবে বিয়েটা হয়েছে, ডিভোর্স না দেওয়া অবধি আমি তার ওয়াইফ।

— কি করবি এখন??

— কি করবো,পরে দেখা যাবে।
এখন ব্যাগ থেকে আমার জিন্স আর গেঞ্জি টা দেতো।

— আরু তুইও পারিস বটে,বাড়িতে পুরো ছেলে গেটআপে আর বাইরে গেলে বোরকা পরে হিজাব মারিস।হোয়াট দ্য ফেশান ইয়ার?

— ছেলে হইনি কি করবো,তুইতো জানিস আমার মেয়েদের কোনো কিছুই ভালো লাগেনা।ছেলেদের পোশাকেই কমফোর্টেবল ফিল করি।

— সেটাই,এখন তো তোর চুল গুলাও ছেলেদের মতো।ট্রাস্ট মি বইন,তোকে পুরো ছেলে ছেলে লাগে যখন এগুলা পরিস

— হ জানু,আমিতো তোমার বিএফ বলো।
বাইরে গেলে যখন কোনো ছেলে তোমায় টিচ করবে,তখন আমি জিন্স-প্যান্ট,শার্ট পরে তোমার বিএফ সেজে বলবো “এই হ্যালো,আমার জিএফ কে টিস করছেন কেন,সি ইজ মাই জিএফ” হাহাহা।

— যাই কর,আমি রাগ করছি।

— কেনো নিমকি সোনা??

— এইযে,এতদিন ধরে এতবড় কথা লুকায় গেছিস।তোর সাথে কথা নাই যা

— হয়েছে যা,দেখি কতক্ষণ পারিস।
বিকালে ভাবছিলাম আইসক্রিম খেতে যাব,কেউ যদি ফুসকা খেতে চায় খাওয়াতাম।
কিন্তু কেউতো আর আমার সাথে কথা বলবেনা,কি আর করার।

— এই জানু,আরু সোনা আমি যাব (আরিয়াকে জড়িয়ে ধরে)


বিকালে..
নিমু একটা এ্যাশ কালারের বোরকা,ওপরে এ্যাশ কালারের হিজাব মেরেছে ডিজাইন করে।আর আরিয়ারও সেইম গেটআপ,কিন্তু আরিয়া ন্যাভি ব্লু বোরকা আর হিজাব।
মুখে পন্স হোয়াইট বিউটি ক্রিম লাগিয়ে ঠোঁটে হালকা করে চ্যাপস্টিক দিয়েছে। বেস রেডি।
দুই বান্ধবী হোস্টেল থেকে বের হলো,আজকে একটু চারপাশ টা ঘুরে দেখবে।
ঘন্টাখানেক আশেপাশে ঘুরাঘুরি করে এখন একটা ফুসকার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিমু আর আরিয়া।নিমু ফুসকা খাচ্ছে, অলরেডি ২প্লেট খতম।আর আরিয়া বসে বসে ফেসবুক চালাচ্ছে।
নিমু No.1 ফুসকা পাগলি আর আরিয়ার ফুসকা একদম পছন্দ না।জোর করে হলে ৩টা, এর বেশি খাওয়া পসিবল নাহ্।
আরিয়া ফেসবুকে আয়মানের আইডি খুজছে,ফ্রী হলেই ওর এই একটা কাজ, “আয়মান আবির চৌধুরী ” লিখে সার্চ দিয়ে আয়মানের আইডি খুজে।
যেদিন থেকে ফোন পেয়েছে ওইদিন থেকেই এই একটা কাজ ওর,ফ্রি টাইমে এটা করবে।

— কিরে নিমকি,হলো তোর??
আর কতো খাবি,পরে পেট খারাপ হবে।

— আরে বইন,৩নম্বর প্লেট এখনও শেষ হয়নি।খাইতে দে,পেট খারাপ হবেনা।

— হোস্টেলে বার্গার খেতে চাচ্ছিলাম, তুই ফুচকা দিয়েই পেট ভরা।আমারই ভালো, এক্সট্রা বার্গারের বিল দিতে হবেনা।

কথাটা শুনা মাত্রই নিমু তাড়াতাড়ি হাতে থাকা প্লেটের ফুসকা গুলো শেষ করলো।

— তোর বিয়ের ট্রিট দিচ্ছিস, আজ ইচ্ছে মতো খাব।নো ওয়ে,আমি কিছু মিস করতে চাইনা।ফুসকা খাওয়া শেষ, নে বিল দে।

— তাই নাকি,ফকির বানাবি দেখছি আজ আমায়।তখন কতোগুলো চকোলেট নিলি তারপর আইসক্রিম, ৩প্লেট ফুসকা এখন আবার বার্গার হা

— এতেই শেষ নয় জানু,আরও খাবো।
আমার থেকে কথা লুকানোর শাস্তি। দুলাভাই কে পেলে তার থেকেও ট্রিট নিতাম

— আচ্ছা চল।

আরিয়া ফুসকা ওয়ালার বিল মিটিয়ে নিমু কে নিয়ে একটা ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে একটা টেবিল বুক করে বসলো।

— নিমকি সোনা,তুই যা খুশী অর্ডার কর।
আমি একটু চোখেমুখে পানি দিয়ে আসি,কেমন জানি লাগছে।

— আচ্ছা যা,আমি ২টা বার্গার আর স্পিড ক্যান অর্ডার করে আসি।

আরিয়া টেবিলের ওপর থাকা পানির বোতল নিয়ে সাইডে চলে গেলো,চোখেমুখে পানি দিবে।
নিমু বার্গার অর্ডার দিয়ে স্পিড ক্যান কিনে আবার এসে চেয়ারে বসলো।
ওয়েটার এসে ২টা বার্গার রেখে গেলো।
প্রায় ২০মিনিট হতে চললো,আরিয়া আসছেনা, নিমু পুরো বিরক্ত হয়ে গেছে। রাগ লাগছে খুব।
নিজের ফোন বের করে আরিয়ার নম্বরে ডায়াল করলো,পাশেই ফোন বেজে উঠলো। আরিয়ার ফোন ওখানেই আছে। নিমু তো রেগে বম,কোথায় গেলো মেয়েটা।
অচেনা শহর,কোনো বিপদে পড়লোনাতো।নিমুর এবার ভয় হচ্ছে খুব,ওয়েটার কে বলে বার্গার আর স্পিড ক্যান দুটো প্যাক করে নিয়ে বিল পে করে দিলো।তারপর আরিয়ার পার্স, ফোন,প্যাকেট আর নিজের ফোন নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে গেলো,ভীষণ চিন্তা আর ভয় হচ্ছে। কোথায় গেলো আরিয়া??

— আচ্ছা, হোস্টেলে ফিরে যায়নিতো??
ওখানে একবার গিয়েই দেখি আছে কিনা,থাকতেও পারে।

নিমু একটা রিকশা ডেকে রিকশায় বসতে যাবে তখনই আরিয়া কোথা থেকে দৌড়ে এসে নিমুর সামনে দাঁড়ালো, হাটুতে হাত রেখে হাঁপাচ্ছে।
নিমু রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালা কে চলে যেতে বলে আরিয়া কে ধরলো।

— কিরে কি হয়েছে, এভাবে হাপাচ্ছিস কেন??
কোই গেছিলি তুই,চোখেমুখে পানি দিতে গিয়ে লাপাত্তা। জানিস আমার কতো টেনশন হচ্ছিলো।
কিরে কথা বলছিসনা কেন,কিছুতো বল।
এই আরু,ঠিক আছিস তুই।

আরিয়া কিছু বলছেনা,হাঁপাচ্ছে শুধু।
নিমু আরিয়া কে নিয়ে গিয়ে একটা চা স্টলের বেঞ্চে বসালে।দোকান থেকে ১বোতল ফ্রেশ পানির বোতল কিনে,বোতলের মুখ খুলে আরিয়ার হাতে দিলো।

— নে পানি খা,শান্ত হ আগে।

আরিয়া নিমুর থেকে বোতল টা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেলো।আরিয়া এবার একটু শান্ত হলো।

— এবার বল, কি হয়েছে?? কোই গেছিলি তুই?

— নিমু,আ আমি আয়মানকে দেখেছি

— কি-ই, কোথায় (অবাক হয়ে)

— একটু আগে আমি দোকানের সাইডে গিয়ে বোতলের পানি দিয়ে চোখেমুখে দিচ্ছিলাম তখন হঠাৎ একটা ছেলের আওয়াজ শুনলাম।
তাকিয়ে দেখি একজন ব্লাক টিশার্ট পড়া ছেলে আরেকটা ছেলের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, ছেলেটার পা থেকে ক্রমাগত রক্ত পরছিলো।ছেলেটা বারবার বলছিলো “আর কখনও এমন করবোনা,প্লিজ ছেড়ে দিন আমায়” কিন্তু ব্লাক শার্ট পড়া ছেলেটা কোনো কথা কানেই নিচ্ছে না।আহত ছেলেটিকে টেনে নিয়ে গিয়ে একটা বিএমডব্লিউ কারে ধাক্কা দিয়ে উঠালো।
ব্লাক টিশার্ট পড়া ছেলেটি ওই আহত ছেলেটিকে গাড়িতে ঢুকিয়ে যখন পেছনে ঘুরলো তখন দেখি ছেলেটি আর কেউ না,আয়মান।

— ওমাইগড, ভাইয়া কে ডাকলিনা তুই আর ভাইয়া তোকে দেখেনি??

— আমি বোতল টা ফেলে আয়মানের দিকে দৌড় লাগাই,ততক্ষণে আয়মান গাড়িতে ঢুকে পড়ে আর গাড়ি চলতে শুরু করে।
আমি আয়মান আয়মান বলে অনেক্ষন গাড়ির পেছনে দৌড়েছি কিন্তু গাড়িটা চলে গেলো।মনে হয় আয়মান আমাকে দেখেনি,দেখলে নিশ্চয়ই থামতো।

— বইন,আমার তো ভয় হচ্ছে রে।

— কেন??

— এই,আয়মান ভাইয়া আবার কোনো মাফিয়া টাফিয়া নয়তো

— হোয়াট ননসেন্স, কি যা-তা বলছিস (রেগে)

— মানে তুই-তো বললি,ভাইয়া নাকি এক আহত ছেলেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেলো।ছেলেটির পা থেকে রক্ত পরছিলো।
তারপর তুই বললি,বিয়ের দিন ভাইয়া নাকি তোকে বলেছে সে কোনো এক মিশনে এসেছিলো।এগুলো থেকে মনে হচ্ছে সে কোনো মাফিয়া গুন্ডা বা এমন কিছু।

— নিমু,কি যা-তা বলা শুরু করলি। অন্য কিছুওতো হতে পারে তাইনা।

— তা ঠিক,আসলে অনেক গল্পে এমন দেখছিতো তাই বললাম।
আচ্ছা বাদ দে,এখন কি করবি।

— জানিনা,কিচ্ছু জানিনা আমি।
আমি বলেছিলামনা তোকে,পেলে এই রাজশাহী শহরেই আমি পাব আয়মানকে।আজ শিওর হয়ে গেলাম,ও এই শহরেই থাকে।ইশশ,একটুর জন্য আজ এতো কাছে পেয়েও হারিয়ে ফেললাম ওকে

— এই,থাম।
আরু,তুই গাড়ির নম্বর টা দেখেছিস?? নম্বর ট্রাক্ট করলেইতো পেয়ে যাব তাইনা….

To be continue…

(( আচ্ছা এই গল্পটা কি খারাপ হচ্ছে, আই মিন আপনাদের মনের মতো হচ্ছে না??
রেসপন্স খুবই কম দেখছি,খারাপ লাগলে বলুন।আর ৪-৫পার্টের মধ্যেই কোনোমতে দ্রুত শেষ করে দিবো গল্পটা।গল্প লিখি আপনাদের জন্য, আপনাদের ভালো না লাগলে লিখে কি হবে। শুধু সময় নষ্ট।
খারাপ লাগলে আজকেই কমেন্টে বলে দিন,তাহলে গল্পটি এগোনোর কথা ভাববোনা আর))

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here