Different Love পার্ট ৩।

0
2049

Story:- #Different_Love
Writer :- গল্পছোঁয়া
Part :- 03


বর্তমান…
আয়মান মেইন রোডের সাইডে পার্কিং করা তার প্রাইভেট কারের কাছে এসে থামলো।আরিয়াও আয়মানের পিছুপিছু এসে ওখানে দাঁড়ালো।
কি বলবে কি বলবেনা বুঝে উঠে পারছেনা,তাই চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আরিয়া।আয়মান কারের ভেতর থেকে একটা ফ্রেশ পানির বোতল বের করলো।

— পানি দিয়ে চোখমুখ ধুয়ে নিন,ধরুন (বোতল টা এগিয়ে দিয়ে)

আরিয়া কিছু না বলে বোতলটা নিয়ে চোখেমুখে পানি দিল।
আয়মান কার থেকে নিজের ফোন টা বের করে কাউকে কল দিলো..

— হ্যালো রাহুল, চলে আয় ফাস্ট।
মিশন ফেইল, একচুয়ালি একটা প্রবলেমে ফেঁসে গেছিলাম।
আরে নাহ না,আই এম ওকে।

আরিয়া চোখমুখ ধুয়ে বোতল থেকে একটু পানি খেলো,তারপর বোতল এগিয়ে দিলো আয়মানের দিকে।

— দেখো,আজকে যেটা হলো সেটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট।দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও,এগুলো নিয়ে ভেবোনা।কিছুই হয়নি, ভয় পাওয়ার কিছু হয়নি। তুমি বয়সে আমার অনেক ছোট তাই তুমি করেই বললাম।আসলে আমি এখানে একটা মিশনে এসেছিলাম,তারপর কি থেকে কি হয়ে গেলো।
ফোনটাও গাড়িতে ফেলে গেছিলাম তাই কারোর থেকে হেল্প ও নিতে পারিনি, ওখানে কিছু করারও ছিলোনা।এতো লোকের সাথে আমার একা পেরে ওঠা পসিবল ছিলোনা আর আমার কাছে আইডিকার্ডও ছিলো।

— এএখন কি হহবে??

— মিসঃ আরিয়া,এই বিয়েটা বিয়েই নয়।
তুমি বাড়ি যেতে পারো,নাকি আমি পৌঁছে দিব??

এরমধ্যেই একজন ছেলে আসলো বাইক নিয়ে, এসে আয়মানের সামনে স্যালুট করলো।

— স্যার আপনি ঠিক আছেন??

— হ্যাঁ, রাহুল।আই এম ওকে

— এই মেয়েটা?? (আরিয়ার দিকে তাকিয়ে)

— মেয়েটা বিপদে পরেছিলো,তুমি ওকে পৌঁছে দাও একটু।
বাইকের চাবিটা দাও,আমি সেকেন্ড মিশনে যাচ্ছি। ওখানে সব ঠিক আছে তো?

— ইয়েস স্যার, সবাই নিজের নিজের পজিশনেই আছে।

রাহুল নামের ছেলেটা আয়মানের কাছে বাইকের চাবিটা দিলো,আয়মানের হুডি টা এখনও আরিয়ার গায়ে
আয়মান শুধু এখন একটা ব্রান্ডের হাফহাতা গেঞ্জি পরে আছে,হোয়াইট কালার।কার থেকে নিজের একটা ব্লাক কোর্ট বের করে গায়ে পড়ে নিলো গেঞ্জির ওপর।তারপর বাইকে বসে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।
আরিয়া আয়মানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।

— হ্যালো মিস??

— হুহ হ্যাঁ

— চলুন আপনাকে পৌঁছে দিই

আরিয়া গিয়ে কারের পেছনের সিটে বসলো,রাহুল গাড়ি স্টার্ট দিলো।

— আপনার নামটা??

— জ্বি, আরিয়া

— কোথায় যাবেন বলুন

আরিয়া কমিউনিটি সেন্টারের ঠিকানা বললে রাহুল সেখানে পৌঁছে দিলো আরিয়া কে।আরিয়া কার থেকে নেমে লিফটে করে চলে গেলো ওপরে।
গিয়ে দেখে অহনা চেয়ারে বসে ফোনে টিকটক ভিডিও দেখছে,আরিয়া অহনার পাশের চেয়ারে বসলো।
রেজিস্ট্রার পেপার টা হুডি গেঞ্জির পকেটে রেখেছে।

— কিরে,তুইওকি বাড়ি অবধি গেছিলি নাকি।এতো টাইম লা… (অহনা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আরিয়ার দিকে তাকাতেই ওর চোখ কপালে) কিরে এই হুডিটা তোর কাছে কি করছে?? এটাতো ওই ছেলেটার গায়ে ছিল। আর তোর চোখ মুখের এই অবস্থা কেন??

— সব বলবো,আগে বাড়ি চল।আমার ভালো লাগছে না এখানে।

আরিয়া অহনাকে নিয়ে লিফটে করে নিচে আসলো, তারপর সিএনজি করে দাদির বাড়ি চলে গেলো।


বিছানার ওপর রেজিস্ট্রার কাগজ হাতে হতভম্ব হয়ে বসে আছে অহনা।তারপাশেই মাথা নিচু করে বসে আছে আরিয়া,ইতিমধ্যে চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে নিয়েছে। তারপর অহনা কে সব বলেছে।
বিয়ের রেজিস্ট্রার কাগজ টা ভালো করে দেখে জানতে পারলো ছেলেটির নাম “আয়মান আহির চৌধুরী ”

— এখন কি হবে আরিয়া,আয়মান ভাইয়ার নম্বর আছে,সেটাও তো নেই।
আম্মু আব্বু জানতে পারলে কি হবে ভাবতে পারছিস?? (চিন্তিত হয়ে)

— কাউকে বলার দরকার নাই, এটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিলো।আয়মান নিজেই বলেছে এই বিয়ে কোনে বিয়েই নয়।
শোন,এই কাগজ টা ব্যাগে লুকিয়ে রাখ,কারোর চোখে যেন না পরে।

—আর হুডি টা?

—আয়মান কে তো কমিউনিটি সেন্টারে দেখেছিলাম প্রথমে, মনে হয় দাদিরা ইনভাইট করেছে। কালকেও আসতে পারে,তখন ফেরত দিব।

মুখে যেটাই বলুক,আরিয়া বিয়েটাকে মন থেকে মেনে নিয়েছে। মুসলিম মেয়েদের বিয়ে একবারই হয়,পরে যা হয় সব নিকা।আর আরিয়া নিকা করতে চায়না।
বিয়েটা যেভাবেই হোক,হয়েছে তো।এরপরে কি হবে তখন ভাবা যাবে।এখন চুপ থাকাই শ্রেয়।

পরেরদিন বিয়ে,বৌভাত সব মিটে গেলো,আরিয়া আর দেখা পায়নি আয়মানের।জানেনা সে আর কখনো দেখা হবে কিনা,বাড়ি ফিরে এসেছে সবাই।
দেখতে দেখতে কেটে গেছে সাড়ে ৩মাস,বিয়ের কথাটা অহনা ছারা কেউ জানেনা।রেজিস্ট্রার কাগজ টা আরিয়া নিজের লক ড্রয়ারে লুকিয়ে রেখেছে।আরিয়া বিয়েটাকে মনেপ্রাণে মানে,প্রতিটি নামাজের মোনাজাতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে সে যাতে আয়মানের সাথে আবার দেখা হয়।আয়মান কে বুঝাবে সে,তারপর ফেমিলির মতানুযায়ী আবার বিয়ে করবে।অপরিচিত হোক,হয়তো বিয়ের এক পবিত্র বন্ধনের জন্য হলেও আরিয়ার মনে আয়মানের জন্য একরকম ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে,আরিয়া অনুভব করে সেটা।
আরিয়ার এসএসসি রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে, ৪ঃ৫৬পেয়েছে সে।সাইন্স থেকে।
বাবার ইচ্ছানুযায়ী এলাকার কলেজেই চয়েস দিয়েছিল সে।ইন্টারেও সাইন্স নিয়েছে, কিন্তু এলাকায় ভালো টিচার নেই।
আরিয়ার ক্লাসমেইট রা সবাই রাজশাহী চলে গেছে, কেউকেউ রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়েছে, আর কেউ কেউ ওখানে কোচিং করছে।আরিয়া ওর আম্মুকে দিয়ে ওর আব্বুকে বুঝিয়েছে, ওর আব্বুও রাজি হয়েছে। পরে চয়েজ চেঞ্জ করে রাজশাহী কয়েকটা কলেজে চয়েজ দিলো।
আরিয়া রাজশাহী যাবে শুনে আরিয়ার বেস্টু নিমুর বাবা-মাও নিমুকে রাজশাহী কলেজে ভর্তি করবে।নিমুও আরিয়ার মতো আরিয়া যেকয়টা কলেজে চয়েজ দিয়েছে সেসব কলেজেই চয়েজ দিয়েছে।
আল্লাহর রহমতে দুজনেই একই কলেজে চান্স পেয়েছে।


বাসে বসে আছে আরিয়া,ওট পাশের সিটেই বসে আছে নিমু।কিছুক্ষণ আগেই আরিয়া আর নিমুর বাবা-মা ওদের দুজনকে বাসে তুলে দিয়েছে,বাসে ওঠার আগেই আরিয়ার বাবা একটা ভিভো স্মার্ট ফোনের বক্স ধরিয়ে দিয়েছে আরিয়ার হাতে।বক্সের ভেতরে সিমের প্যাকেটও আছে।
আরিয়া একমনে বাসের জালানা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখতে বিজি।নিমু আরিয়ার ফোনে সিম সেট করে ফোন অন করছে।
আরিয়া আর নিমুর সাথে আরিয়ার বাবার এক বন্ধু যাচ্ছেন।উনিই রাজশাহী পৌঁছে আরিয়া আর নিমুকে লেডিস হোস্টেলে নিয়ে যাবে,কোচিং বুক করে দিবে।কলেজসহ,সবকিছু চিনিয়ে বুঝিয়ে দিবেন।


একসপ্তাহ পর…
আরিয়া আর নিমু একই রুমে রুম শিয়ার করে থাকে।আরিয়া মাত্রই শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়েছে,দেখে নিমু বিছানায় সুয়ে কারোর সাথে ভিডিও কলে হেসেহেসে কথা বলছে।

— কিরে,কার লগে এতো দাঁত কেলায় কথা কস??

— আরে আরু সোনা,আজকে রিমির গায়ে হলুদ।ভুলে গেছিস নাকি,ওর সাথেই কথা বলছি। কথা বলবি নাকি,দেখ রিমিকে কতো কিউট লাগছে।(রিমি হলো আরিয়ার বান্ধবীর মধ্যে একজন)

— ওহ,না কথা বলতে ইচ্ছে করছে না এখন।(মাথা মুছতে মুছতে)

— কি মাথা মুচছিস বলতো,চুলতো এখনও ঘাড় অবধিও হয়নি।এভাবে তোকে ছেলেছেলেই লাগে,সেলুনে গিয়ে ছেলেদের মতো কাট দিস।হ্যাভি লাগবে,তোর বর তোকে মাঝেমধ্যে ছেলে ভেবে ভুল করবে হাহাহাহা

— বাদ দেতো,ভাললাগছেনা এসব কথা।

নিমু কল কেটে দিয়ে আরিয়ার হাত ধরে টেনে বেডে বসালো।

— আরু,রিমিটার বিয়ে হয়ে গেলো বল।
আমরা কতো প্ল্যান করছিলাম ১ম বান্ধবীর বিয়ে নিয়ে,প্ল্যান অনুযায়ী আজকেই কিন্তু তোর ১ম শাড়ি পড়ার কথা ছিলো রিমির বিয়েতে।কিন্তু তুই কি করলি,তোর প্রতিজ্ঞা ভেঙে তোর আঙ্কেলের বিয়েতে শাড়ি পরলি।

— বাধ্য হয়েছিলাম

— এইজন্যই বলি প্রতিজ্ঞা করার আগে ভেবেচিন্তে প্রতিজ্ঞা করতে হয়,ভবিষ্যতে কি হবে আমরা কেউ বলতে পারিনা।
কে বলছিলো তোরে,নাচতে নাচতে এরকম প্রতিজ্ঞা করার।শেষে প্রতিজ্ঞা তো ভাঙলোই,সাথে আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করায় পাপও হলো।

— (চুপ)

— কি হয়েছে বলতো,সেই তোর আঙ্কেলের বিয়ে খেয়ে আসার পর থেকে দেখছি তুই কেমন বদলে গেছিস।
আগে কতো হাসিখুশি ছিলি,বিয়ে নিয়ে কতো এক্সাইটেড ছিলি।আমাদের তো বটেই প্লাস নিজের বিয়ে নিয়ে কতো প্ল্যান করতি।আর এখন এসব বললেই কেমন এরিয়ে যাস,রেগে যাস।রিমির সাথে তো কথাই বললিনা,কতো করে বললাম রিমির বিয়েটা শেষে রাজশাহী আসবো।কিন্তু তুই আগেই চলে আসলি,সাথে আমাকেও নিয়াসলি।

— ভালো লাগছে না নিমু,ছার না এগুলো কথা। (উঠে দাঁড়িয়ে)

— আজ তোকে বলতেই হবে,কি হয়েছে বল আমায়।
তুই নিজে বলেছিলি আমাদের ফ্রেন্ডসার্কেলের মধ্যে যার ১ম বিয়ে হবে তার বিয়েতে জীবনে ১ম শাড়ি পরবি আর অনেক ইন্জয় করবি।কিন্তু কি করলি,তুই বিয়েতে এ্যাটেণ্ড করার বদলে আগেই রাজশাহী চলে আসলি।
প্রতিজ্ঞা ভেঙে যাওয়ায় কি মন খারাপ তোর?? আরে আমরা সবাই মজা করে তোর সাথে এটা নিয়ে ইয়ার্কি করেছি,সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেন বলতো??
আরে সব তো আমাদের হাতে থাকেনা,জীবনে চলার পথে এমন ২-১টা প্রতিজ্ঞা ভাঙতেই পারে।এরজন্য আপসেট হওয়ার তো কিছু হয়নি,আরে…

— কি শুরু করেছিস বলতো,তখন থেকে আমার প্রতিজ্ঞা ভাঙা নিয়ে পরে আছিস।
কোনো প্রতিজ্ঞা ভাঙিনি আমি।
আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা হয়েছে,আল্লাহ নিজেই আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছে বুঝলি…

To be continue…

((মনটা খারাপ, কি থেকে কি লিখলাম নিজেই জানিনা।জানিনা আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে, ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আগামীকাল থেকে গুছিয়ে আরও ভালো করে লেখার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ))

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here