Different Love পার্ট ২

0
2419

Story :- #Different_Love
Writer :- গল্পছোঁয়া
Part :- 02

কিন্তু এই ছেলে তো আগের গুলোর থেকেও অনেক বেশি হ্যান্ডসাম, কিউট, ড্যাশিং,চকোলেট বয়।

— আরিয়া,ওই আরিয়া ওদিকে কি দেখিস।

— কিছুনা,ভালো লাগছেনা।
এতো মিউজিক আমার সহ্য হচ্ছে না, মাথায় পেইন শুরু হয়ে গেছে। খেতে দিবে কখন,খেয়েই চলে যাব।

— বিরক্ত লাগছে,এখানকার সবাই একে-অপরকে চিনে।কতো মজা করছে আর আমরা

— আম্মুকে দেখ,দাদি দের সাথে গল্পে মেতেছে। আম্মুর মন রাখতেই তো আসতে হলো,ভাগ্যিস ফোনটা ছিল নাহলে আরও বোরিং লাগতো।

অহনার সাথে কথা বলা শেষ করে আরিয়া আবার চারিদিকে তাকিয়ে তখনকার দেখা ছেলেটাকে খুজতে লাগলো, কিন্তু কোথায় সে।

— অহনা,কয়েকটা পিক তুলে দে তো।
১ম শাড়ী পরলাম,কয়টা পিক না তুললে হয়

পিক তোলা উদ্দেশ্য নয়,আসল উদ্দেশ্য হলো ছেলেটা কে খোঁজা।
আরিয়া শাড়ি পরে একদম হাঁটতে পারছেনা, বারবার পা বেধে যাচ্ছে। এদিক ওদিক পিক তোলার নাম করে কমিউনিটি সেন্টার এর পুরো হল ঘুরলো কিন্তু ছেলেটার দেখা নাই, আজবতো ভ্যানিস হয়ে গেলো নাকি।
মন খারাপ করে আরিয়া আবার এসে চেয়ারে বসে পড়লো,একটু পরে খাবার দিলে তারা খেয়ে নিলো।হাত ধোওয়ার জন্য আরিয়া আর অহনা ওয়াসরুমে গেলো..

— আরিয়া,ক্রাস খাওয়ার মতো কাউকে পেলি??

— একজনকে দেখে ক্রাস খাইচি, সেই দেখতে বইন।পুরা চকোলেট বয়

— কেরে,আমাকেও দেখা

— খুঁজে পাচ্ছি নাতো,আরেকবার দেখতে পেলে তোকে দেখাবোনি।

দুজন হাত ধুয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হতেই আরেকটা কোণায় সেই ছেলেটি কে দেখতে পেলো আরিয়া,কানে ব্লুটুথ লাগানো।ঠোঁট নেড়ে নেড়ে কথা বলছে,আরিয়াতো ফুল ক্রাশড।

— অহনা,ওই দেখ।

— কোই কেউ নেই তো

আরিয়া তাকিয়ে দেখলো ছেলেটি নেই। অহনা জিজ্ঞেস করায় আরিয়া ওই ছেলেটির বর্ণনা বললো অহনাকে।তারপর দুইবোন মিলে খুজতে লাগলো, কিন্তু ছেলেটি আবার উধাও।এরপরে আরও কয়েকবার আরিয়া ছেলেটা কে দেখেছে বারবার হারিয়ে ফেলেছে।
আরিয়ার মায়ের শরীর খারাপ লাগায় আরিয়া ওর আম্মুকে দাদির বাড়ি রাখতে গেলো,অহনা দাদার সাথে আছে।আরিয়া ওর মা কে সিএনজি তে তুলে দিয়ে আবার আসবে,অহনা সময় কাটানোর জন্য ফোনটা রেখে দিয়েছে।
আরিয়া ওর আম্মুকে কে নিয়ে লিফটে করে নামলো,নামতেই সেই ছেলেটি কে আবার দেখতে পেলো রাস্তায় পার্কিং করা প্রাইভেট কারের ডোর ধরে দাড়িয়ে পানি খাচ্ছে, বোতলে করে।
একটা সিএনজিও দাড়াচ্ছেনা,আরিয়া শাড়ির কুঁচি ধরে ওর আম্মুকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টার থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়ে একটা সিএনজি পেলো,তারপর আম্মুকে সিএনজি তে তুলে দিয়ে আরিয়া আবার কমিউনিটি সেন্টারের দিকে রওয়ানা দিলো।
হঠাৎ নিজের পেছনে ৬-৭টা কুকুর কে দেখে আরিয়া দিলো দৌড়, আরিয়া ভীষণ ভয় পায় কুকুর কে।
পায়ের হিল ফেলে শাড়ী কুচি ধরে যেদিকে দুচোখ যায় দৌড় লাগিয়েছে।অনেক্ষন পরে দৌড়াতে দৌড়াতে একটা টিনের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লো আরিয়া,দরজা বন্ধ করে দরজার সাথে হ্যালান দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে।
কিছুক্ষণ পর খেয়াল হলো সে কোথায় আছে??
কার বাড়িতে ঢুকে পড়লো সে,সামনে তাকাতেই দেখলো ঘরের এক কোণায় ৩জন লোক মদ খাচ্ছে আর তাস খেলছিলো বোধ হয়,কারণ ওখানে তাস আছে। লোক ৩টি আরিয়ার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আরিয়ার ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো,কুকুরদের থেকে বাঁচতে সে যে জ্যন্ত বন কুকুরের কাছে এসে পরেছে।
সাহস সঞ্চয় করে দরজা খুলে বেরোতে যাবে তার আগেই একজন লোক ওর হাত চেপে ধরলো। আরিয়া ক্রমাগত চিৎকার করছে বাঁচাও বাঁচাও বলে,আর সেই লোকের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
লোক গুলো নানান বিশ্রি বিশ্রি কথা বলছে,আরিয়ার হাত যে লোক ধরেছে আরিয়া সেই লোকের হাতে কামড় দিয়ে ছুটতে গিয়ে একটা লোহার সাথে লেগে ব্লাউজের হাতা ছিড়ে গেলো।
লোকগুলো রেগে আরও এগিয়ে আসছে আরিয়ার দিকে,আরিয়া পেছোতে পেছোতে ঘরের মধ্যে থাকা এক টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে গেলো,ঠোঁট কেটে রক্ত পরছে।
শাড়ীও ইতিমধ্যে অর্ধেক খুলে গেছে।
লোকগুলো আরিয়ার প্রায় কাছে এসে পরেছে,একজন ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ আর রক্ষা নেই, কোথায় এসে পরেছে জানেনা আরিয়া।চিৎকার করেওতো লাভ হলোনা,কেউ বাঁচাতে আসেনি।ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো আরিয়া।
বেশকিছুক্ষন হচ্ছে, ওর ওপরে তো কেউ হামলে পড়লোনা,কেউতো টাচও করলো না।ধীরেধীরে চোখ খুলে দেখলো কমিউনিটি সেন্টারের সেই ছেলেটি ওই লোকটার হাত ধরে রেখেছে, যে আরিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো শাড়ি খোলার জন্য।
ছেলেটি ওই লোকটার নাক বরাবর দিলো এক ঘুষি, লোকটা ছিটকে কিছুটা দূরে গিয়ে পড়লো।সাথে থাকা আরও দুজন লোক সেই লোকটিকে তুলে নিয়ে পালালো সেখানে থেকে,ছেলেটি লোকগুলো কে ধরার জন্য এগিয়ে আবার পিছিয়ে আসলো।
গায়ে থাকা হুডি টা খুলে আরিয়ার গায়ের ওপর রাখলো।

—আপনি ঠিক আছেন মিস??

আরিয়া শুধু ওপরনিচে মাথা নাড়লো।যার অর্থ সে ঠিক আছে।

—চলুন,জায়গাটা সেইফ না।এখানে নেশাখোর দের আড্ডাস্থল,উঠুন।

আরিয়া কোনো মতে উঠে দাঁড়ালো,ছেলেটার সঙ্গে বের হতে যাবে তখনই হুরমুর করে ঘরের মধ্যে অনেকগুলো লোকজন ঢুকলো।

—এইযে,এই সেই ছেলেমেয়ে।
এইখানে নোংরামি করতে আসছিল,আমরা আটকাতে লাগছি আর পোলাডা আকিজ রে ঘুষি দিয়া নাক ফাটায় দিছে।

কথাটা শুনে আরিয়া ভালো করে খেয়াল করে দেখলো,তখনকার নেশাখোর ৩জন লোকের মধ্যে ইনি একজন।বাকি দুজনও আছে,ছেলেটি যে লোকের নাক ফাটায় দিছে ওই লোকটা কে এককন বয়স্ক লোক ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
পুরুষ মহিলা অনেক লোকজন রয়েছে। সবাই আরিয়া আর ওই ছেলেটিকে ঘিরে নানান ধরনের বাজে মন্তব্য করে যাচ্ছে।
কথাগুলো ছিল কিছুটা এরকম..

*এখনকার পোলাপাইন এর কামই তো এইডা,যেখানে সেখানে আইসা নোংরামি করবো পরে পেট বাধাইবো।

*এদের মতো ছেলেমেয়ে আমাদের এদিকে আইসা নোংরামি করবো,পরে আমাদের এলাকার পোলাপানের নামে দোষ দিব।

*আগের বারের কথা মনে নাই,কোথাকার কারা আইয়া আকাম-কুকাম করলো আর পরে নাম হলো আমাদের এইখানকার পোলাপান মাইয়াডারে ধর্ষণ করছে।

*এই মাইয়াডারে তো দেইখাই বুঝা যাচ্ছে পোলাডারে সাথে আকাম-কুকাম করা শেষ।
এখনও শাড়িডাও ঠিক করবার পারেনাই

*এই দুইডারে এহোনি বিয়া পরায় দাও,তাইলে আমাদের এরিয়ার বদনাম হইবোনা।

আরও কতো কি বলছে,সেই ছেলেটি তাদের নানান ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কেউ কোনো কথা কানেই নিচ্ছে না।আরিয়াতো কোনমতে হুডিটা শাড়ীর ওপরে পরে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলেটা বারবার বলার চেষ্টা করছে তারা একে-অপরকে চিনেনা,মেয়েটি বিপদে পড়ায় বাঁচাতে এসেছে। কিন্তু কেউ তার কথা বিশ্বাস করছেনা,তারা আজ বিয়ে দিয়েই দম নিবে।
দুজন মহিলা এসে টানতে টানতে আরিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো,আর দুজন লোক সেই ছেলেটি কে।
একজন মহিলা আরিয়া কে শাড়িটা আবার ভালো করে পড়িয়ে দিলো,যে হাতা ছিড়ে গেছিলো,সেই ছেড়া ঢাকবার জন্য শাড়ির আচল কাঁধের ওপর দিয়ে নিয়ে ঢেকে দিলো।মাথার হিজাবটা মোটামুটি ঠিকই আছে, ওতোটা নষ্ট হয়নি।
কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে জোড় করে বিয়ে পড়িয়ে দিলো,এবং রেজিস্ট্রারও হয়েছে। আইনত আর ধর্মীও দুভাবেই বিয়েটা হয়ে গেলো।
কবুল বলার সময় আরিয়া ছেলেটির নাম একটু শুনতে পেয়েছে, পুরো নাম শুনতে পায়নি।ছেলেটার নাম হলো আয়মান।

— এই লও তোমাদের বিয়ের রেজিস্ট্রার কাগজ,আর এইডা আমাদের কাছে থাকলো।কাল যদি তোমাদের এই আকাম-কুকাম এর লাইগা এইহানে পুলিশ আসে তাইলে আমাদের কাছে থাকা এই রেজিস্ট্রার কাগজ দেখামু।আমাদের আর ঝামেলা নাই।
এখন তোমরা আইবার পারো,বউরে লইয়া যত খুশি অকাম করো।এখন আমাদের এলাকা থাইকা ভাগো।

— দেইখা তো ভদ্র ঘরের পোলাপানই মনে হয়,কিন্তু কাম দেখো ছিঃছিঃছিঃ।

আরও কতোগুলো বাজে কথা শুনিয়ে দিয়ে আরিয়া আর আয়মানের কাছে ২টা রেজিস্ট্রার পেপারের কপি ধরিয়ে দিলো দুজন লোক।
আয়মান আগে আগে হাটছে,আর আরিয়া ওর পিছুপিছু । কয়েক মূহুর্তের মধ্যে কি থেকে কি হয়ে গেলো,এক অপরিচিত ছেলের সাথে তার এভাবে বিয়ে হয়ে গেলো।
কি হবে এরপর? জানেনা আরিয়া।


বর্তমান….

To be continue…

((কেমন হচ্ছে বলবেন,গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। নতুন গল্প তাই আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন))

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here