Different Love পার্ট ১

0
3176

জীবনে প্রথম শাড়ি পড়ায় সত্যি সত্যিই নিজের বিয়ে হয়ে যাবে সেটা কল্পনাও করেনি আরিয়া,তাও আবার অপরিচিত এক ছেলের সাথে। নিজের বান্ধবীদের কাছে সবসময় বলতো সে ❝তোদের মধ্যে প্রথম যার অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে তার বিয়েতে আমি সর্বপ্রথম শাড়ি পরবো,তোদের আগে যদি আমার বিয়ে হয় তাহলে নিজের বিয়েতেই প্রথম শাড়ি পরবো।তার আগে আমি কোনোদিন শাড়ি পরবোনা,এটা আমার নিজের কাছে নিজেরই প্রতিজ্ঞা ❞
কিন্তু হঠাৎ এক রিলেটিভ এর বিয়ের অনুষ্ঠানে বাধ্য হয়েই তাকে শাড়ি পড়তে হয়,ভেবেই নিয়েছিলো আরিয়া তার প্রতিজ্ঞা বিফলে গেলো।
কিন্তু কে জানতো ওপরওয়ালা এভাবে তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবে।


Flash back…

এসএসসি পরিক্ষা শেষ হয়েছে ১মাস হচ্ছে।
আরিয়ার এখন পড়াশোনার কোনো প্যারা নেই, বিন্দাস লাইফ তার।
পুরো নাম আফরিন নিশু আরিয়া,এবার এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছে।লম্বায় ৫ফিট ৩ ইঞ্চি, গায়ের রং ফর্সা বাট উজ্জ্বল ফর্সা নাহ।৬মাস আগে নাড্ডু হয়েছিল অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণে, এখন ছেলেদের মাথার মতো চুল গজিয়েছে। চোখগুলো বড়,টানাটানা এবং ঘন পাপড়ি ও ঘন ভুরু রয়েছে। যার জন্য অনেক মায়াবী লাগে তাকে।
বাড়িতে বাবা,মা,এবং ছোট এক বোন আছে,নাম তাবাচ্ছুম অহনা।এবার অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে।বাবার সাধারণ একটা ব্যবসা রয়েছে, মা হাউজওয়াইফ। একদম মিডিলক্লাস ফেমিলি তাদের।
আরিয়ার বদঅভ্যেস হলো টিভি দেখতে দেখতে খাবার খাওয়া,টিভির সামনে না বসে সে খাবার খেতেই পারেনা।
আজও ব্যতিক্রম নয়,টিভিতে কার্টুনস দেখছে,ভাত খাচ্ছে আর বাম হাত দিয়ে ফোনে ফেসবুক চালাচ্ছে।
উহ হু,তার নিজের কোনো ফোন নেই। তার বাবা এখনও স্মার্ট ফোন কিনে দেয়নি, মায়ের বাটন ফোনে ফ্রি ফেসবুকে বান্ধবী দের সাথে কথা বলছিলো।
হঠাৎ আননৌন নম্বর থেকে কল আসায় তার আম্মুকে ফোন দিয়ে দিলো।
কিছুক্ষণ পরে…

— আরিয়া,অহনা।
সুখবর,আর ৭দিন পর তোর মেজো দাদির বড় ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান।বড়লোক মানুষ, বড় অনুষ্ঠান করছে।৬০টা শাড়ি কিনেছে একরকম,মেয়েদের একরকমের শাড়ি পরতে হবে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে। তোদের দুবোনকে সাদা রঙের ব্লাউজ বানিয়ে নিতে বললো। (আরিয়ার আম্মু)

— আম্মু, আমিতো ওদের বাড়ির কাউকেই চিনিনা।মাত্র দুবার গেছিলাম নাটোর শহরে ওদের বাড়ি,আন্টির বিয়েতে। তখন ছোটো ছিলাম আর দু বছর আগে ডক্টর দেখাতে গেছিলাম।কাউকেই চিনিনা,শুধু শুধু শাড়ি পরে কি করবো বলোতো,এন্জয়ও করতে পারবোনা। আর আমি আমার লাইফে কোনোদিন শাড়ী জিনিসটা টাচ করেও দেখিনি,শাড়ি সামলাতে পারবোনা। (আরিয়া)

— শাড়ী পড়া বাধ্যতামূলক, তাই তোকেও শাড়ি পরতে হবে।আর আমরা ওখানে যাচ্ছি বেস,আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।৩দিনের অনুষ্ঠান, হলুদ,বিয়ে,বৌভাত।৩দিন থাকবো আমরা। (আম্মু)

— এসএসসি দিয়েছি, সবার ফোন আছে আমার নেই। প্রথমত কাউকে চিনিনা,দ্বিতীয়ত ফোন নাই। সময় কাটাবো কি করে,অহনা তুই কিছু বল।

— আমি কি বলবো বল,আমারও ভালো লাগছেনা।এখন আমরা এরকম করলে আম্মু মন খারাপ করবে,এখন বেচাকেনা খারাপ। আব্বু ফোন কিনে দিবে কি করে,চুপচাপ মানিয়ে নেওয়া ছারা উপায় নেই।

— সেটাই, সবাই যাচ্ছে এন্জয় করতে আর আমরা দুবোন যাচ্ছি নরকে।আমার বয়সী সব মেয়েরা ফোন নিয়ে এটাসেটা করবে আর আমি অসহায়ের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো,জীবনে প্রথম শাড়ি পরবো একটা পিকচার তুলতেও পারবোনা।ধুরর ভাললাগেনা।

দেখতে দেখতে ৬দিন পেরিয়ে গেলো।আরিয়া তার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড নোমান এর কাছে থেকে ৩দিনের জন্য ফোন চাইলো।নোমান আরিয়ার ফেসবুক বেস্ট ফ্রেন্ড, লাইন মারার তালে আছে। কিন্তু আরিয়া বুঝেও না বুঝার ভান করে উড়িয়ে দেয়,এখন উপায় না পেয়ে তার থেকেই ফোন নিলো যাতে কটা পিক তুলতে পারে,ফেসবুকিং করে সময় কাটাতে পারে।
আরিয়া গার্লস স্কুলে পড়েছে,রিয়াল লাইফে কোনো ছেলে বন্ধু নেই, নোমানের সাথে তার ফেইসবুকেই পরিচয়। আরিয়াদের পাশের গ্রামেই তাদের বাড়ি।

আজ বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ।সকাল থেকে রেডি হওয়া,সব গুছিয়ে নেওয়া ইত্যাদি করতে করতে দুপুর ১১টা বেজে গেছে।
অর্ডার দিয়ে দরজির থেকে ব্লাউজ পেটিকোটও বানিয়ে নিয়েছে আরিয়ার আম্মু।
আরিয়ার আব্বু বিয়ের দিন যাবে,এক্ষুনি যাবেনা।
সাড়ে ১১টার দিকে আরিয়ার আম্মু,আরিয়া আর অহনা বাস ধরে নাটোর শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।দেড়ঘন্টা লাগবে পৌঁছাতে, আরিয়া ব্যাগ থেকে ফোন বের করে নোমানের আইডি লগআউট করে ফেসবুক, মেসেঞ্জারে নিজের আইডি লগইন করে নিলো।
আরিয়া ওর আম্মুকে বলেছে এটা ওর বেস্টু নিমুর ফোন।তাই ফোন নিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি।
দেড় ঘন্টা পর ওরা নাটোর বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে গেলো।বাস থেকে নেমে একটা সিএনজি ধরে দাদির বাড়ি গেলো।দাদি মানে ওর আব্বুর খালা,সম্পর্কে তো দাদিই হয়।এরা সব বড়লোক মানুষ, হাইক্লাস ফেমিলিতে বিলং করে।
আরিয়া একদম জার্নি করতে পারেনা,এই দেড়ঘন্টায় কোনোমতে বমি আটকে রেখেছে। আর কিছুক্ষন থাকলেই বমি হয়ে যেতো।
দাদির বাড়ি পৌঁছে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলো,বিকেলের দিকে রেডি হবে।সন্ধ্যায় হলুদের অনুষ্ঠান,তাও কমিউনিটি সেন্টারে।
দাদির ছোট মেয়ে,নাম রিমি।রিমি ডিভোর্সি,এখন পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। অনার্সে পড়ে।অহংকারে মাটিতে পা পরেনা,রিমি ওর বান্ধবী আর কাজিনদের নিয়ে পার্লারে চলে গেছে। সাজগোজ করতে সন্ধ্যা লেগে যাবে,বড়লোকই ব্যপারসেপার যাকে বলে।
সবার মাঝে আরিয়া আর অহনা অসহায়ের মতো পরে আছে।আরও অনেক রিলেটিভ এসেছে কিন্তু আরিয়ার কেউ পরিচিত নাহ।
বিকাল ৫টার দিকে আরিয়ার আম্মু আরিয়াকে শাড়ি পরিয়ে দিলো, অন্যরা শাড়ি পড়ে কতো ফ্যাশন করছে।কিন্তু আরিয়া নিজের শরীরের এক অংশও দেখতে দেবেনা, পেট ঢাকা ব্লাউজ বানিয়েছে যাতে কোমড় দেখা বা যায়।তবুও দেখা যাচ্ছে, ২০-২৫টা সেফটিপিন লাগিয়ে অবশেষে শাড়ি পরলো।এখন আর পেট, কোমড় দেখা যাচ্ছে না।
আরিয়া সাধারণত মেকআপ করেনা,স্কুল থেকে ২বার পিকনিকে যাওয়ার সময় জোর করে ওর বান্ধবী রা মেকআপ করে দিয়েছিলো।এবার দিয়ে ৫ম বার মেকআপ করছে সে,যার কারণে তার ফেইসে মেকআপ বসেনা।মেকআপের কোনো জিনিসের নামও জানা নেই তার,অহনা সাজগোজ পছন্দ করে। তাই কয়েকরকম মেকআপ সামগ্রি কিনে রেখেছে।
নিজেদের কাছে কমদামি যা মেকআপ আছে সেটা দিয়েই আরিয়াকে মেকআপ করে দিলো অহনা।
একদম হালকা,একে মেকআপ করা বলেনা।যাইহোক মেকআপ শেষে শিপনের ওড়না দিয়ে হিজাব মারলো আরিয়া,কারন ওর মাথায় চুল নেই। আর তাছাড়াও আরিয়া হিজাবেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে মেয়ে ভাবে থাকলে।পিংক শাড়ি, পিংক হিজাব,ঠোটে পিংক লিপস্টিক দিলো।
আরিয়া চুড়ি কখনো পরেনি,কিন্তু শাড়ি পড়ার জন্য আসার সময় পাথরের গোল্ডেন রঙের ১ডজন চুড়ি কিনে এনেছে।সেগুলোই হাতে পরে নিলো,এবং হাই হিল।
বেস আরিয়া রেডি। অহনাও হাল্কা মেকআপ করলো,অহনার মাথা ভর্তি ঘন চুল।সুন্দর করে সেজেছে ও।
আরিয়ার আসলে ছেলে ফ্যাশন বেশি পছন্দ, ছোট থেকেই ছেলেদের পোশাক পড়ে।তাই ওর মনে এখন ছেলে ফ্যাশনেরই প্রভাব পরেছে,এখন বড় হয়েছে বিধায় বাধ্য হয়ে মেয়েদের মতো শালিন পোশাক পরতে হয় তাকে,কিন্তু মনের মাঝে ছেলেছেলে ভাব।মেয়েদের কোনোকিছুই ভালো লাগেনা ওর,যারজন্য সাজগোজের প্রতি কোনো ঝোঁক নেই।
অহনা কে দিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে মুখে ইমুজি লাগিয়ে ফেসবুক ডেইতে পিক আপলোড করলো,ইমুজি ছারা পিক ছারলে ফেঁসে যাবে।কারন ওর ফোন নেই, ফেসবুক চালায় কেউ জানেনা।ছবি ছারলে ওর আব্বু জেনে গেলে কপালে দুঃখ আছে।
শাড়ী পড়ার জন্য ওর ফ্রেন্ড রা তো নানান বিদ্রুপ করে যাচ্ছে, কারন প্রতিজ্ঞা ভেঙে গেছে।এটা নিয়ে আরিয়ার নিজেরও মন খারাপ, নিজের কাছে করা প্রতিজ্ঞা এভাবে ভেঙে গেলো।

সন্ধ্যার আযানের পর সবাই মিলে রওনা দিলো কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে।
আরিয়ার অনেকদিনর সখ লিফটে ওঠার,কোনোদিন উঠেনি।গ্রামের মেয়েতো,এসব কোই পাবে।
কমিউনিটি সেন্টারে লিফট রয়েছে, এই চান্সে লিফটে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হলো তার।
কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে একটা টেবিলে গিয়ে ওর আম্মুর সাথে বসলো।

— আরিয়া,এখানে কারোর প্রতি ক্রাস খাইছিস?? (অহনা)

— এখন অবধি না,ধুরর সব ছেলের ওপর ক্রাস খাওয়া যায় নাকি।দাদির ছেলে মানে আঙ্কেল, আঙ্কেল বিয়ে করছে ৩০বছর বয়েসে।এখানে সবাই আঙ্কেলের বন্ধু,মানে সবাই আঙ্কেল। এদের ফেইচ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সবকয়ডা ম্যারিড,ক্রাস খাওয়া যাবেনা বুঝলি।

— আচ্ছা, খুঁজতে থাক।
দেখি ক্রাস খাওয়ার মতো কাউকে পাই কিনা

আরিয়া বসে বসে ফোনে ফেসবুকিং করে সময় কাটাচ্ছে, সবাই কতো এন্জয় করছে।কেউ কেউ নাচগান করছে,কতজন ছেলেদের সঙ্গে সেলফি তোলায় বিজি।হয়তো তাদের বিএফ বা অন্যকিছু।
সবাই ময়দা সুন্দরী, পার্লার থেকে সেজে এসেছে।এক রকম শাড়ি সবার,ছেলেদের জন্যেও সবার একরকম পাঞ্জাবি।
হঠাৎ আরিয়ার চোখ আটকে গেলো ব্লাক হুডি ওয়ালা গেঞ্জি পড়া এক ছেলের দিকে,হুডি টা মাথায় তোলা নেই। হলুদ ফর্সা গায়ের রং, চুলগুলো কপালে পরে আছে।ওউ ঠোঁট দুটো অসম্ভব গোলাপি,কালো হুডি গেন্জি আর কালো জিন্স প্যান্টে পুরো চকোলেট বয় লাগছে।আরিয়া তো হা করে তাকিয়ে আছে, ওর লাইফে অনেক ছেলের প্রতি ক্রাস খেয়েছে কিন্তু এই ছেলে তো আগের গুলার থেকেও অনেক বেশি হ্যান্ডসাম,কিউট,ড্যাশিং,চকোলেট বয়…

Story :- Different Love
Writer :- গল্পছোঁয়া
Part:- 01

((প্রথম পর্ব,তাই বিয়ে অবধি আনতে পারলামনা।নেক্সট পর্বে বিয়ে + বর্তমানে নিয়াসবো।১ম পর্ব গুছিয়ে লিখতে পারিনি তবুও কেমন হয়েছে বলবেন??
১ম পর্ব পড়ে ইগনোর না করে ২য় পর্বের জন্য ওয়েট করুন,প্রতিবারের মতো এই গল্পটাও ইন্টারেস্টিং আর রহস্যময় করবো।আর রোমান্টিকও হবে))

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here