Different Love পার্ট ২০

0
1373

Story:- #Different_Love
Writer:- গল্পছোঁয়া
Part:- 20

— আমি তো এরকম মাস্কই পড়ি,তো তোমার বাবা কোই আর মাম্মম কোই??

— সরি,আমি অপলিচিত কাউকে আমার থবকথা বলিনা (বলেই আমান দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো)

কিন্তু মাস্ক পড়া লোকটি এখনও বিস্ময় হয়ে আমানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।


অহনা এখনও সুইমিংপুলের ওখানেই ছিল,আমান অহনার কাছে গিয়ে বায়না করলে অহনা ব্যাগ থেকে ২টা চকলেট বের করে দিলো

— আন্তি,আমি এতকুলো কাবোনা।মাম্মাম বলতে কেবিটি হবে।একতাই কাবো

——একটা বেশি খেলে কিছুই হবে না,চলোতো।

অহনা আমানকে কোলে নিয়ে আরিয়ার কাছে চলে গেলো,গিয়ে দেখে আরিয়া এক ধ্যানে ফোন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখে পানি টইটম্বুর।অহনার বুঝতে বাকি রইলোনা আরিয়ার এমন আচরণের কারণ।অহনা আরিয়া বলে ডাকতেই আরিয়া চোখের কার্ণিশে থাকা পানিটুকু মুছে নিয়ে আমনের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে হাত বাড়ালো।
অহনা আমানকে নামিয়ে দিলে আমান দৌড়ে গিয়ে আরিয়ার কোলে বসলো।
নিজের ছোটছোট হাত দিয়ে আরিয়ার চোখদুটো মুছে দিয়ে গালে কিসি দিলো।

— মাম্মাম তুমি আবাল কাদচো,কেদোনা।
বলতিলামনা আজ বাবাই আসবে,দেকো সত্যিই বাবাই আদবে।পমিস
জানো একতু আগে আমি একতা আঙ্কেল কে দেকিচি,ওই আঙ্কেল না বাবাইয়ের মতো মাস্ক পড়েতিলো আর বাবাইয়ের মতো পাফ্ফিউমও মারতে।

— ওলে বাবা,তা-ই?
তো আঙ্কেলটার সাথে করে বলেছো??

— না,আমিতো উনাকে তিনিনা।
বাবাইয়ের মথো লাগতে বাত সেতো আমার বাবাই না।আমি কিনো আমাদেল থিকরেট কতা বলে দিব হুম।আমি গুড বয় না বলো

— হুম,তুমিতো গুড বয়।একদম ঠিক কাজ করেছো সোনা।
আসো এবার খাবার খেয়ে নাও,তারপর আমরা বাড়ি যাব কেমন।

— কেনরে,প্রোগ্রামের তো অনেক কিছুই বাকি আছে।নাচগান হবে,তুই চলে যাবি কেন? (অহনা)

— প্লিজ অহনা,তুই তো জানিস আমি এসব বিয়ের অনুষ্ঠানে আসতে পছন্দ করিনা।কারণটাও জানিস,কিন্তু আঙ্কেলের রিকুয়েষ্ট ফেলতে পারিনি তাই আসতে বাধ্য হয়েছি।

— যা ভালো বুঝিস কর।

আরিয়া,অহনা,আমান খাবারের জায়গায় গিয়ে খাবার খেয়ে নিলো।মিঃ মুখার্জির থেকে বিদায় নিয়ে,ওনার ছেলে+ছেলেবউকে গিফট দিয়ে বের হওয়ার জন্য রওয়ানা হলো তারা।
রিসোর্ট থেকে বের হতে যাবে তখনই সাউন্ড বক্সগুলো থেকে আওয়াজ ভেসে আসলো,
”আমাদের সবার মাঝে উপস্থিত হয়েছে আমাদের সবার প্রিয় মিঃ আয়মান চৌধুরী,সে এখন আমাদের জন্য গান পরিবেসন করবে।অবশ্যই আমাদের সানজিদ মুখার্জি ও মিসেসঃ সানজিদ মুখার্জি কে ডেডিকেট করে❞

অ্যানাউসমেন্ট টা শুনেই আরিয়া থেমে গেলো,আমানকে অহনার কোলে দিয়ে ছুট লাগালো হলরুমের উদ্দেশ্যে।যেখানে নাচ-গানের প্রোগ্রাম চলছে।
অহনাও আরিয়ার পিছুপিছু আমানকে নিয়ে জোরে হেঁটে চললো।
হলরুম অবধি গিয়ে আরিয়া কোমড়ে হাত রেখে হাঁপাতে লাগলো,জোরে কয়েকবার শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ে সামনের ভীড়গুলো ঠেলে সামনে গিয়ে স্টেজের দিকে তাকাতেই আরিয়া থমকে গেলো।
চোখের দৃষ্টি আটকে রইলো তার সামনে স্টেজে দাঁড়ানো মানুষটির দিকে,মানুষটি আর কেউ নয় স্বয়ং আয়মান।

একটা মেয়ে আয়মানের বাহু জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে। আয়মান মাউথস্পিকার হাতে নিয়ে গান করছে,আবার মেয়েটির মুখের সামনে মাউথস্পিকার ধরলে মেয়েটিও গান গাইছে।এককথায় দুজন ডুয়েট গান করছে,সবাই হৈ-হুল্লোড় করে হাততালি দিচ্ছে আর আয়মান রুহি বলে চেঁচাচ্ছে।
আরিয়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, পারিপার্শ্বিক কোনোকিছুই ওর কানে-মস্তিষ্কে কোনো আওয়াজই পৌঁছচ্ছে না।
গান শেষ হলে সবার করতালি তে হুশ আসে আরিয়ার,চোখ থেকে গড়িয়ে পরছে তার অশ্রুধারা।

— আয়মান,দোস্ত।মোর ওয়ান প্লিজ (সানজিদ,মিঃ মুখার্জির ছেলের নাম।যার বিয়ে হলো)

— আই এম সো টায়ার্ড,মাত্র এয়ারপোর্ট থেকে এসেছি।ফ্রেশ হয়ে আসি,তোরা চালিয়ে যা।

— ওহহো আয়মান,প্লিজ আর একটা (রুহি নামের মেয়েটা)

— প্লিজ রুহি,হাত ছাড়ো। (আয়মান হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে গেলো)

আয়মান ওয়াসরুমে গিয়ে বেসিনের ট্যাপ অন করে চোখেমুখে পানি দিচ্ছে,হঠাৎ কারোর অস্তিত্ব অনুভব করতেই পিছে ফিরে তাকিয়ে আরিয়াকে দেখতে পেলো সে।
আরিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে আয়মানের দিকে,আয়মান চোখ ছোট করে ভ্রু-কুচকে তাকাতেই আরিয়া ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো আয়মান কে।
আয়মান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আরিয়াকে টাচ করছেনা সে।

— এতদিন কোই ছিলে তুমি,বলো কোথায় ছিলে।
আমি তো বলেছিলাম তোমার প্রফেশন নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই,তবুও আমায় না বলে হুট করে কোথায় গায়েব হয়ে গেছিলে বলো।এতগুলো বছর ধরে তোমার অপেক্ষা করে যাচ্ছি আমি কিন্তু তুমি ফিরোনি। কেন বলো, বলো কেন ফিরে আসোনি।জানো এতগুলো বছরে কতো কি ঘটে গেছে, কতকিছু ফেইস করেছি আমি। (আয়মান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে)

— দেখুন মিসঃ আপনি ভুল করছেন,আমি..

— শাট আপ,আবার সেই মিসঃ মিসঃ শুরু করেছো।আমি তোমার বিবাহিতা স্ত্রী,তবুও মিসঃ মিসঃ করো কেন (আয়মানকে ছেড়ে অভিমানী স্বরে)

— দেখুন,মিসঃ সরি মিসেসঃ আপনি হয়তো… (আর কিছু বলতে পারলোনা আয়মান, তার আগেই আরিয়া আয়মানের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের দখলে নিয়ে নিয়েছে)

আয়মান কে শক্ত করে জড়িয়ে ডিপলি কিস করছে আরিয়া,কিছুক্ষণ যেতেই আয়মান আরিয়াকে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত উঠিয়ে আবার নামিয়ে নিলো।
রাগি স্বরে ধমক দিয়ে বললো..

— দেখেতো বাচ্চা মেয়ে মনে হয়না,যথেষ্ট বড় হয়েছেন আপনি।ম্যানার্স জানেননা নাকি,আপনি যাকে ভাবছেন আমি সে নই বুঝতে পেরেছেন।এগুলো কি ধরনের অসভ্যতা (টিস্যু বের করে নিজের ঠোঁট মুছতে মুছতে)

— আয়মান??

— আমার নামও জানেন দেখছি,যাইহোক আপনার সাথে কথা বলার মতো ইন্টারেস্ট নেই আমার।
রুহি তুমি কখন আসলে??

আরিয়া পেছনে ঘুরে দেখলো রুহি নামের মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে।

— এইতো,মাত্রই।
তুমি এখানে এই মেয়েটার সাথে কি করছো বেব্স (রুহি)

— নাথিং,চলো যাওয়া যাক।

আয়মান যাওয়ার সময় আরিয়ার দিকে একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো..

— নিজেকে সংযত করতে শিখো,বাচ্চা নও তুমি। (বললই চলে গেলো আয়মান)

আরিয়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কয়েক মূহুর্তের জন্য কি থেকে কি হলো সবটা মাথার ওপর দিয়ে গেলো।
কিন্তু আয়মানের ফিসফিস করে বলা কথাটা বেশ ভাবনায় ফেললো আরিয়া কে,তবুও চোখের পানি যে বাধ মানছেনা।আপন গতিতে ঝরে পরছে পানি।
কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলো অহনা দাঁড়িয়ে আছে।

— আরিয়া আপু,আমি বুঝতে পারছিনা দুলাভাই এমন কেন করছে তোর সাথে।
সবাই তো জানে সে মৃত,এতগুলো বছর পর ফিরে আসলো কিন্তু তোকে কেন চিনছেনা।
আর ওই মেয়েটাই বা কে,কোথায় ছিল এতদিন।

— আমি জানিনা অহনা,বুঝতে পারছিনা।ওটা তো আমার আয়মানই,তুইতো দেখেছিস বল

— হুম দেখেছি,আচ্ছা ওটাতো আয়মান ভাইয়া নাও হতে পারে তাইনা।
আমি শুনেছি পৃথিবীতে একরকম দেখতে ৭জন মানুষ থাকে,হতে পারে এটা অন্যকেউ।আমি শুনে আসলাম ইনি নাকি সানজিদ ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড, আজকেই UK থেকে ফিরেছে শুধু সানজিদ ভাইয়ার বিয়েতে এটেন্ড করতে।
আর রুহি নামের মেয়েটা ওনার উডবি ওয়াইফ।

— আমি বিশ্বাস করিনা ওটা অন্যকেউ।
সেইম ফেইস,সেইম স্টাইল,সেইম গেটআপ,সেইম হেয়ার কাট,সেইম এ্যাটটিডিউড,সেইম কথাবার্তা,সেইম পার্ফিউম, সেইম নাম সব কি করে মিলে যেতে পারে।

— অনেক সময় মিরাক্কল ভাবে মিলে যেতেই পারে তাইনা

— শেষ উপায় আছে আমার কাছে,আমার আয়মানকে আমি ছাড়া ভালো কে চিনে।
ওর উপস্থিতি আমি ফিল করতে পারি।তুই যা-ই বলিস আমি শিওর ওটা আমার আয়মান।
তবুও প্রুফ আমি চাই,আজ রাতেই হবে সেটা।

— কি করতে চাস তুই??

— আঙ্কেল তো এই পুরো রিসোর্ট টা বুক করেছে,আজ আমাদের থাকার জন্যেও রুম বুক করা আছে।আজ এখানেই থাকবো আমরা

— কিন্তু তুই যে মুখার্জি আঙ্কেল কে বললি চলে যাবি।

— সেটা আমি ম্যানেজ করে নিব,আমান কোথায়?

— মুখার্জি আঙ্কেলের কাছে।

— তুই জলদি আমানকে নিয়ে রুমে যা,আমি আঙ্কেলকে বলে চাবি নিয়ে দিচ্ছি।
শোন আমান যেন আয়মানের সামনে কোনোভাবেই না আসে,সময় হলে আমি নিজেই আমানকে আয়মানের সামনে আনবো।

— কি করতে চাচ্ছিস তুই??

To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here