Different Love পার্ট ১৯

0
1312

Story:- #Different_Love
Writer:- গল্পছোঁয়া
Part:- 19

— আমি বিজি আছি,রাখছি (টুটটুটটুট)
(আর কতো ওয়েট করবো আয়মান,কবে ফিরবে তুমি।আমার,তোমার ছেলের যে তেমাকে বড্ড বেশিই প্রয়োজন।এমন হতভাগা মা আমি যে নিজের সন্তান কেই নিজের বলে পরিচয় দিতে পারছিনা।)

আরিয়ার ভাবনার মাঝেই আরিয়ার ফোনটা আবার বেজে উঠলো, আরিয়া বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর বসের কল।
কল কেটে বসের কেবিনে গিয়ে জানতে পারলো পরশুদিন তার ছোট ছেলের নিয়ে,পারসোনালি ভাবে আরিয়াকে ইনভাইট করেছেন তিনি।আরিয়া আর আমানকে অনেক ভালোবাসেন,আরিয়াকে মেয়ের মতো ভালোবাসেন।তার একান্ত অনুরোধ,আরিয়াকে যেতেই হবে।
আরিয়া সাধারণত এতো বছরে কোনো বিয়ে বাড়ির ত্রিসীমানাতেও যায়নি,অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে সবসময় দূরে দূরেই থাকতো।কিন্তু এবার সে না করতে পারলোনা।
সে মিঃ মুখার্জি(বস) কে কথা দিলো সে যাবে।
তারপর আরিয়া ইনভাইটেশন কার্ড অফিসের সমস্ত এমপ্লয়িদের একেএকে করে দিয়ে দিলো।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আমানকে নিয়ে ফ্ল্যাটে ফিরলো আরিয়া।
ওহো,নিমু এখন রোজের সাথে রোজের ফ্ল্যাটে থাকে।আর এই ফ্ল্যাটে আরিয়া অহনা আর আমান কে নিয়ে থাকে,আরিয়ার রুমে যাওয়ার পারমিশন এখনও কেউ পায়নি?


পরশুদিন আরিয়া লং ন্যাভিব্লু শিপনের একটা ব্লাক গাউন পড়লো,গাউনের ওপর গোল্ডেন সুতোয় হাল্কা কাজ করা আছে।তাই মাথায় গোল্ডেন কালার চায়না হিজাব মারলো।এটাও শিপনের ওড়নার মতোই কিন্তু একটু বেশিই সফ্ট।
চোখে হালকা করে কাজল দিয়ে ঠোঁটে চ্যাপস্টিক দিলো।ফেইসে পন্ডস স্নো ছাড়া হোয়াইট টন ফেইসপাউডার দিয়েছে শুধু।মুখে অতিরিক্ত ওয়েল ওঠে তাই,আরিয়া সাধারণত বেবি পাউডার দিতো কিন্তু ওটা শেষ। তাই অহনার থেকে নিয়ে ফেইসপাউডার টাই দিলো।
আজ কেন জানিনা আরিয়ার একটু সাজতে ইচ্ছে করছে,তাই এতটুকু সেজে নিলো সে।
অহনাও খয়েরী রঙের গাউন পরে মেকওভার করে সুন্দর করে সাজছে।
আরিয়া আমানকে ব্লাক টিশার্ট আর ক্রিম কালার কোর্টপ্যান্ট পড়িয়ে দিলো,আমানতো খুব খুশি।আরিয়া সুন্দর করে চিরুনি দিয়ে আর আয়মানের রেখে যাওয়া জেল দিয়ে আমানের চুল সেট করে দিলো।
আমান তো এমনিতেই আয়মানের কার্বনকপি,কেমনে সেইম টু সেইম হলো আল্লাহই জানে।তারওপর আয়মান যেমন হেয়ারকাট দিতো,আরিয়া আমানেরও সেইম হেয়ার কাট করিয়েছে।
৩বছরের আমান এখনই এক্সারসাইজ করে,এই বয়সে যতটুকু পসিবল।সে তার বাবার মতো সিক্রেট অফিসার হতে চায়।
বলাবাহুল্য,আরিয়া আয়মানের ফেইসবুক থেকে সকল পিকচার আর ভিডিওস নামিয়েছে।আমান রোজ তার বাবার ফটো তে কিসি দিয়ে ঘুমায়,আর ওর বাবার ফিরে আসার অপেক্ষা করে।আয়মান অন্যান্য অফিসার দের ট্রেইনিং দেওয়ার সময় যেসব এক্সারসাইজ ভিডিও ছিল সেগুলে দেখে আমানও সেরকম এক্সারসাইজ করার চেষ্টা করে।
তাছাড়াও পিচ্চি হলে কি হবে,বয়স অনুযায়ী আমান একটু না না অনেক বেশিই চালাক,চতুর,বুদ্ধিমান।রোজ তো মাঝেমধ্যেই আমানকে অফিসে নিয়ে যায়,আয়মানের কেবিনে তার সিটে বসিয়ে রাখে।সবাই আমানকে অনেক ভালোবাসে।
রাহুল,রোজসহ অন্য অফিসার রা তো বলে বাপকা ব্যাটা,আয়মান স্যার আমাদের ছেড়ে গেছেনতো তাতে কি,জুনিয়র আয়মান কে রেখে গেছে।আয়মানের মতোই সেই তেজ,হাসি,এটটিডিউড,হাঁটাচলার স্টাইল,রাগ হলে সমস্ত রাগ দেওয়ালে ঘুষি দিয়ে মেটানো।আরও প্রায় সব লক্ষনই আমানের মধ্যে বিদ্যমান,কেইস নিয়ে ডিসকাসের সময় আমান যদি এখানে থাকে।হুটহাট এমন সব কথা বলে বসে যেগুলো কেস সল্ভ করার জন্য একদম পার্ফেক্ট প্ল্যান।
আরিয়া আমানকে পুরো রেডি করানোর পর চোখের কাজল নিয়ে আমানের চুলে হাত বুলালো..

— পার্ফেক্ট,তোর বাবার মতোই লাগছে তোকে সোনা।(কপালে চুমু দিয়ে)

— মাম্মা,একটা জিনিস মিসিং

— কি বলো

— পফফিউম,বাবাই যেটা স্পে করতো

— ওও তাইতো,পারফিউম দিতে তো ভুলেই গেছিলাম।আমার বাবাটার সব মনে আছে দেখছি (আরিয়া পারফিউম স্প্রে করে দিলো,সেইম ব্র্যান্ডের পারফিউম আনিয়ে রেখেছে আরিয়া যেগুলো আয়মান ব্যবহার করতো।)

— পাফ্ফেক্ট মাম্মাম,আজ বাবাই আসবে তাইনা মাম্মাম

— (আরিয়া চুপ হয়ে গেলো)

— কেদোনা মাম্মাম,তুমি বলচিলেনা তুমি যেদিন সাজবে থেদিন বাবাই আসবে।দেকো আজ কত সুন্দর সেজেচো,দেকো বাবাই আসবে আমি জানি হিহিহি,কি মজা আজ আমি বাবাইয়ের কোলে উতবো।
আমি আন্তির কাচে যাই,অহনা আন্তিকে বলতে হবে তো আজ বাবাই আতবে।

আমান রুম থেকে চলে গেলো অহনার রুমে,আরিয়া এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের কার্ণিশে আসা পানিটুকু সযত্নে মুছে নিলো।


রিকশা নিয়ে আরিয়া,অহনা আর আমান মিঃ মুখার্জির ছেলের বিয়ের প্রোগ্রামে গেলো।ধনী লোক বিশাল বড় আয়োজন চলছে,বিলাসবহুল রিসোর্ট বুক করা হয়েছে।অহনা হা করে তাকিয়ে আছে,আরিয়া অহনাকে বকা দিয়ে আমানকে কোলে নিয়ে আগেআগে হাঁটা দিলো,অহনাও দৌড় লাগালো আরিয়ার পিছুপিছু।

— মাম্মাম,আমায় কোল থেকে নামাও,আমি হাঁটতে পারিতো।

— না বাবা,জিদ করেনা।দেখোতো এখানে কত ভীড়,হারিয়ে যাবাতো।তখন তোমাকে খুঁজে পাবোনা,তুমি কি বাবাইয়ের মতো মাম্মামকে ছেরে চলে যাবা

— নাআ,আমি আমাল মাম্মামকে অনেক ভালোবাসি (গালে কিসি দিয়ে)

আরিয়া আমানকে নিয়ে মিঃ মুখার্জির কাছে গেলো,অহনার এক বান্ধবীর সাথে দেখা হয়েছে,সে এখন নিজের বান্ধবী কে নিয়ে ব্যস্ত।

— ভালো আছেন আঙ্কেল??

— এইতো ভালো,তোমার কি খবর মা?
গতকাল হলুদের রিসেপশনে আসলেনা যে

— আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।
একচুয়ালি আঙ্কেল,আমার ছেলের একটু শরীর খারাপ ছিল তা আরকি আসা হয়নি।

— ওও,এসো সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই।

মিঃ মুখার্জি তার ওয়াইফ, ছেলে,ছেলে বউয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
সনাতন ধর্মের বিয়ে,অবশ্যই অনেক আয়োজন মজা করেই হয়।
কিছুক্ষণ পরে বিয়ে শুরু হলো,আরিয়ার কিছু ভালো লাগছে না তাই ও সাইডে গিয়ে চেয়ারে বসলো আমানকে নিয়ে।

— মাম্মাম,আমি চকলেত কাবো

— বাবু প্লিজ,আমার মাথা ব্যথা করছে।এখন না

— ওইযে,অহনা আন্তি।
আমি আন্তিকে গিয়ে বলি?

—আচ্ছা যাও,বেশি খাবেনা কিন্তু।কেবিটি হবে

—না মাম্মাম,বেশি কাবোনা।একতা কাবো,উম্মাহ।

আমান আরিয়ার গালে কিসি দিয়ে চলে গেলো,আর আরিয়া ফোনে আয়মানের ফটো বের করে একদৃষ্টিতে তে তাকিয়ে আছে।

—এমনই এক বিয়ের অনুষ্ঠানে তোমাকে ১ম দেখেছিলাম আয়মান,এরপর নিমু ছাড়া আর কারোর বিয়েতে যাইনি।আজ এসেছি,জানো তোমার ছেলে বলেছে আজ নাকি তোমাকে খুঁজে পাব।তোমার ছেলে তোমার মতোই ব্রিলিয়ান্ট,বুদ্ধিমান,প্রখর,চতুর হয়েছে।তোমার ছেলে তোমার ফিরে আসার অপেক্ষায় আছে আয়মান,আজ অন্তত ফিরে এসো,অপেক্ষায় আছি তোমার।


আমান অহনার কাছে যেতে যেতেই দেখে অহনা নেই ওখানে,এখানেই তো ছিল কোই গেলো।
এদিকওদিক তাকাতেই দেখলো অহনা রিসোর্টের বাইরে সুইমিংপুলের ওখানে দাঁড়িয়ে ফোন কানে নিয়ে কথা বলছে।আমান সেদিকেই দৌড় লাগালো,হলরুম থেকে বেরোনোর সময় কারোর সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলো।
বেশি ব্যথা লাগেনি,নিজেনিজেই উঠে ব্লেজার ঝাড়তে লাগলো আয়মানের স্টাইলে…

— মেনানস জানেননা নাকি,দেখতে পাননা সামনে কেউ আছে।আপনাদের মতো নোকজনের জন্যই থবাই ব্যথা পায়।আমান দায়গায় কোনো মেয়ে তাকলে কি হতো,থব দোষ মেয়েতারই হতো।

আমান নিজের ব্লেজার ঝেড়ে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখে সামনে থাকা মাস্ক পরিহিত লোকটা ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

— এইযে আন্তেল,টেচু হয়ে গেলেন কেন (লোকটার হাত ধরে)

এবার লোকটার হুস ফিরলো,আমানের দিকে একটু ঝুকে বসলো।

—বাবু,তোমার নাম কি??

— আমাল নাম আমান,আপনি কে??
আমাল বাবাইয়ের মতো মাস্ক পলছেন কেন,এমন মাস্ক শুধু আমাল বাবাই পলে আমি দেকতি (চোখ ছোটছোট করে সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে লোকটির দিকে তাকিয়ে)

— আমি তো এরকম মাস্কই পড়ি,তো তোমার বাবা কোই শুনি আর মাম্মাম কোই???

To be continue….

(লোকটা কে হতে পারে,ইমাজিন করুন তো সবাই)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here